পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তানে এক ভয়াবহ নাটকীয় ঘটনায় ১১ মার্চ সশস্ত্র বিদ্রোহীরা একটি যাত্রীবাহী ট্রেন দখল করে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী দ্রুত অভিযান চালিয়ে শত শত জিম্মিকে মুক্ত করেছে। ট্রেনটি বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটা থেকে উত্তরের পেশোয়ারে যাচ্ছিল, আর তাতে ছিলেন বেশ কিছু সেনা কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য।

বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) কোনো বিলম্ব না করেই হামলার দায় স্বীকার করে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান-এ পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা জানায়, এটি পাকিস্তানের ‘দীর্ঘদিনের ঔপনিবেশিক দখলদারত্ব এবং বেলুচ জনগণের বিরুদ্ধে চালানো যুদ্ধাপরাধের’ প্রতিশোধ।

১৯৪৮ সালে ভারত বিভক্তির কয়েক মাস পর বেলুচিস্তান পাকিস্তানের অংশ হয়ে গেলে তখন থেকেই অঞ্চলটি পাকিস্তানি রাষ্ট্রের অবহেলার শিকার। দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত ও ভাষাগত বৈচিত্র্য সামলাতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারকে একের পর এক বিদ্রোহ দমন করতে হয়েছে।

সাম্প্রতিক এই ট্রেন অপহরণের ঘটনায় বিএলএ দাবি করে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে বেলুচ রাজনৈতিক কর্মী, নিখোঁজ ব্যক্তি ও বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে, নইলে তারা জিম্মিদের হত্যা করবে। এরপর সেনাবাহিনী দুই দিন ধরে কঠোর অভিযান চালায়। অভিযানে ৩৩ জন বিদ্রোহী, ২১ যাত্রী ও ৪ সেনাসদস্য নিহত হন।

এই নজিরবিহীন হামলা আবারও পাকিস্তান সরকারকে কঠিন প্রশ্নের মুখে ফেলেছে—বেলুচিস্তানের বাড়তে থাকা অসন্তোষ ও সশস্ত্র বিদ্রোহ দমনে তাদের কৌশল আসলে কতটা কার্যকর?

বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) একটি স্বাধীনতাকামী সংগঠন। ২০০০-এর দশকের শুরুতে তারা আত্মপ্রকাশ করে। পাকিস্তান সরকার ও বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ একে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

আরও পড়ুনবেলুচিস্তান কেন স্বাধীন হতে চায়১৪ মার্চ ২০২৫

অন্যান্য তুলনামূলক নরমপন্থী বেলুচ জাতীয়তাবাদী দলের মতো বিএলএ পাকিস্তানের অংশ হিসেবে টিকে থাকতে চায় না। তারা চায় সম্পূর্ণ স্বাধীন বেলুচিস্তান।

বেলুচ জনগণের অসন্তোষের মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার ও সেনাবাহিনীতে পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব না থাকা। জাতীয়তাবাদীরা অভিযোগ করে, পাকিস্তান সরকার বেলুচিস্তানের কয়লা, সোনা, তামা ও গ্যাসের মতো প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণ করছে। অথচ স্থানীয় বেলুচ জনগণ তাতে কোনো সুবিধা পাচ্ছে না।

উদাহরণস্বরূপ, সোনা ও তামার খনির রাজস্বের বেশির ভাগ অংশই যায় এটি পরিচালনাকারী চীনা কোম্পানি ও পাকিস্তান সরকারের পকেটে। বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক সরকার পায় মাত্র ৫ শতাংশ।

চাঘাই পাকিস্তানের সবচেয়ে খনিজসমৃদ্ধ জেলা। অথচ এ জেলা পাকিস্তানের সবচেয়ে অনুন্নত অঞ্চলগুলোর একটি। স্থানীয় শ্রমিকেরা অভিযোগ করেন, খনিতে তাঁদের শুধু নিম্ন মানের কাজ দেওয়া হয়। তাঁরা ভয়াবহ নিরাপত্তাহীন অবস্থায় কাজ করতে বাধ্য হন।

দীর্ঘদিনের অবহেলার কারণে বেলুচিস্তান পাকিস্তানের সবচেয়ে দরিদ্র ও পশ্চাৎপদ প্রদেশ হিসেবে রয়ে গেছে। মানব উন্নয়ন সূচকে (এইচডিআই) ২০১৭ সালে এটি ০.

৪২১ স্কোর করে, যা দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম। তুলনায় সবচেয়ে উন্নত প্রদেশ পাঞ্জাবের এইচডিআই ০.৭৩২।

২০০৬ সালে বিশিষ্ট বেলুচ নেতা নওয়াব আকবর বুগতি সেনা অভিযানে নিহত হওয়ার পর বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন আরও জোরালো হয়ে ওঠে। এরপর পাকিস্তান সরকার বিএলএকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং প্রদেশটিতে সামরিক অভিযান আরও তীব্র হয়।

বেলুচিস্তানের বোলান জেলায় লিবারেশন আর্মির পুড়িয়ে দেওয়া ট্রাক

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ক স ত ন সরক র ব এলএ সবচ য়

এছাড়াও পড়ুন:

ধর্ষণের বিচার, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ, মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে কাফনমিছিল

মাগুরায় শিশুকে ধর্ষণ–হত্যাসহ সব ধর্ষণের বিচার, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ ও ছাত্রনেতাদের নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন কাফনমিছিল করেছে। আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে এই মিছিল শুরু হয়।

কাফনমিছিল শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য দেন মামলায় অভিযুক্ত বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের দীর্ঘ ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ধারাবাহিকতায় জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়েছে। হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশের জনগণ সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকার হারিয়ে প্রজায় পরিণত হয়েছিল, জনগণের কোনো নায্য দাবি তারা মেনে নেয়নি। সে সময় দেখা যেত শত ব্যর্থতার পরও জনদাবিকে অগ্রাহ্য করত।

সৈকত আরিফ বলেন, ‘বর্তমান সরকারের মাঝেও আমরা সে ধরনের চরিত্র দেখতে পাচ্ছি। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সাত মাস পরও যখন ধর্ষণ-খুন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারছে না, তখন এই ব্যর্থতার দায় নিয়ে জনগণ যখন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করছে, তখন সরকার সেই জনদাবিকে অগ্রাহ্য করছে। এমনকি বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষকে নিজেদের গোষ্ঠীস্বার্থে ব্যবহার করে ঘটনা অন্যদিকে প্রবাহিত করার ষড়যন্ত্র করতে দেখছি।’

ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা দেখেছি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ব্যর্থতা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্রসংগঠন এমনকি উপদেষ্টাদের কেউ কেউ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলেছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ প্রসঙ্গে সকল রাজনৈতিক দল, ছাত্রসংগঠন ও উপদেষ্টাদের স্পষ্ট অবস্থান জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে। তাঁরা পদত্যাগ চান কি না; না চাইলে কেন চান না, তা জনগণের জানার অধিকার আছে। আমরা আশা করব, তাঁরা সেই অবস্থান পরিষ্কার করবেন।’

পরে কাফনমিছিলটি রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে শুরু হয়ে ভিসি চত্বর ঘুরে আবার রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে শেষ হয়।

কাফনমিছিলে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ফেডারেশনের আহ্বায়ক আরমানুল হক, অর্থ সম্পাদক ফারহানা মানিক মুনা, কেন্দ্রীয় সদস্য সাইদুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠক সীমা আক্তারসহ অন্য নেতারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচন বিলম্বিত করার টালবাহানা জনগণ মেনে নেবে না: নজরুল ইসলাম খান
  • নির্বাচন বিলম্বিত করার টালবাহানা জনগণ মেনে নেবে না: নজরুল ইসলাম 
  • শেখ হাসিনার মতন ফ্যাসিবাদের উত্থান আর বাংলাদেশে হবে না : সজল 
  • বিএনপির সামনে সুযোগ অনেক, কিন্তু...
  • রাখাইনে সহায়তা পাঠাতে ঢাকার অনুমোদন লাগবে
  • আলো না ফুটলেও অন্ধকার তো কাটছে না
  • বাংলাদেশকে করিডোর দিতে জাতিসংঘের আহ্বান
  • ঈদের আগেই প্রস্তুত হচ্ছে মিরপুরের ৬০ ফিট রাস্তা: ডিএনসিসি প্রশাসক
  • ধর্ষণের বিচার, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ, মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে কাফনমিছিল