ধর্ষণের দায় স্বীকার করে হিটু শেখের জবানবন্দি
Published: 16th, March 2025 GMT
মাগুরায় আট বছরের শিশু আছিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি হিটু শেখ সব দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। গতকাল শনিবার মাগুরা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায়ের আদালতে জবানবন্দির পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আছিয়ার ওপর বর্বর পাশবিক নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় হিটু সাত দিনের রিমান্ডে ছিল। রিমান্ডে নেওয়ার তিন দিনের মাথায় সব দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয় সে। এখনও এই মামলায় তিনজন হেফাজতে রয়েছে। তারা হলো– আছিয়ার বড় বোন হামিদার স্বামী সজীব হোসেন ও তার মা এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক এক ভাই।
মামলার অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে মাগুরা সদর থানার ওসি আইয়ুব আলী সমকালকে বলেন, হিটু শেখ পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সব দায় স্বীকার করেছে। তার ভাষ্য ছিল– শিশুটিকে দেখে সে মানসিক ভারসাম্য ও হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ে।
এর আগেও হিটু শেখের বিরুদ্ধে নারী নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আরও কিছু অভিযোগের ব্যাপারে শুনেছি। তবে তার বিরুদ্ধে এর আগে কেউ কোনো মামলা দেয়নি। এখন তাই নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে হত্যা-সংক্রান্ত যে বিধান আছে, সেভাবেই চার্জশিট দেওয়া হবে। যত দ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
নিহত শিশুটির মামা ইউসুফ বিশ্বাস বলেন, আমরা ধর্ষকসহ সব অপরাধীর ফাঁসি চাই। আর বোনের পরিবার যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারে আশা করি সরকার সেটা করবে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আছিয়ার বাবা অসুস্থ হওয়ার পর তিনি এখন কর্মক্ষম নন। এখন অনেকেই এ পরিবারটিকে আর্থিক সহযোগিতা করছে।
পরিবারকে আইনি সহায়তা ও পুনর্বাসনের দায়িত্বে মন্ত্রণালয়
আছিয়ার পরিবারকে আইনি সহায়তা ও পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। গতকাল মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, মাগুরায় ধর্ষণ ও নির্যাতনে মারা যাওয়া শিশুটির বিষয়ে সব ধরনের আইনি সহায়তা মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নেওয়া হবে। এ ছাড়া তার পরিবার ও বড় বোনের মানসিক স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য পুনর্বাসন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন শারমিন এস মুরশিদ। তিনি এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আছিয়ার বাড়িতে জামায়াত আমির
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা.
গতকাল সকালে আছিয়ার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হেলিকপ্টারে করে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সব্দালপুর ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নামেন তিনি। সেখান থেকে সোনাইকুন্ডী গোরস্তানে গিয়ে আছিয়ার কবর জিয়ারত করেন। এর পর সোনাইকুন্ডী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জামায়াতে ইসলামীর মাগুরা জেলা শাখার আয়োজনে শিশু আছিয়ার রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে জামায়াত আমির সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, আছিয়ার ঘটনায় মামলার বিচারে যে ৯০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে, সেটা আমরা মেনে নিয়েছি। কিন্তু সতর্ক করে দিতে চাই, এটা ৯১ দিন হলেও আমরা মানব না। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত না করলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। ধর্ষণের বিচার একমাত্র ফাঁসি।
এর পর জামায়াতের আমির জারিয়া গ্রামে আছিয়ার বাড়িতে যান। তখন তার মা বাড়িতে ছিলেন না। এ সময় আছিয়ার খালা বেগম রোকেয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং পরিবারটি যেন ভালোভাবে চলতে পারে সে রকম একটা ব্যবস্থা করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
৫ মার্চ মাগুরার নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়ে আছিয়া ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। পরদিন অচেতন অবস্থায় তাকে মাগুরা আড়াইশ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে মাগুরা হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে শিশুটিকে নেওয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে থেকে সেদিনই উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুই দিন পর ৮ মার্চ তাকে সেখান থেকে সিএমএইচে নেওয়া হয়। এর পর ১৩ মার্চ সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যায় আছিয়া।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ য় স ব ক র কর ও শ শ ব ষয়ক র পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
শরীয়তপুরের জাজিরায় আবারও সংঘর্ষ, মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় শতাধিক ককটেল (হাতবোমা) বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
গতকাল রোববার দুপুরে জয়নগর ইউনিয়নের ছাব্বিশপারা এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। এতে এক তরুণের হাতের কব্জিতে গুরুতর ক্ষত হয় এবং আরও একজন আহত হন।
জাজিরা থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জয়নগর ইউনিয়নের ছাব্বিশপারা এলাকায় তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিঠুন ঢালী ও জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হালিম তালুকদারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এই দুই নেতা আত্মগোপনে গেলে স্থানীয় পর্যায়ে তাদের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জসিম তালুকদার ও নুর আলম সরদার।
রোববার দুপুরে দুই পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র ও ককটেল নিয়ে সংঘর্ষের প্রস্তুতি নেয়। এ সময় নুর আলম সরদারের অনুসারীরা প্রতিপক্ষের ওপর ককটেল বোমা নিক্ষেপ করে। এরপর উভয় পক্ষ ঘণ্টা-ব্যাপী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ ও মারামারি। পরে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
সংঘর্ষের কিছু দৃশ্য স্থানীয় এক ব্যক্তির সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ হয়, যা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ৪ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে দেখা যায়, এক পক্ষের সমর্থকরা বালতিতে করে ককটেল নিয়ে প্রতিপক্ষের দিকে নিক্ষেপ করছেন। তাদের হাতে ছিল টেঁটা, রামদা, ছেনদা, বল্লম, ডাল-সুরকি ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র।
সম্প্রতি জাজিরার বিলাশপুরে সংঘর্ষের ঘটনায় খইয়ের মতো ককটেল বিস্ফোরণ দেশজুড়ে আলোচিত হয়। গত ৫ এপ্রিল সেখানে দুই শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, যা এখনও আলোচনায় রয়েছে। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলো ছাব্বিশপারা এলাকায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল আখন্দ বলেন, গতকাল দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বেশ কিছু হাতবোমা বিস্ফোরিত হয় বলে জানতে পেরেছি। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।