চিকিৎসাধীন ‘আসামি’ গ্রেপ্তার, মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন পরিবারের
Published: 16th, March 2025 GMT
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় হেজাজ বিন আলম ওরফে এজাজ আহমেদ ওরফে ইজাজ নামে এক ব্যক্তি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর মারা গেছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়। হত্যা মামলায় এদিন ভোরে ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে ইজাজ শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন বলে অভিযোগ পুলিশের। তবে তার মৃত্যুর পর নানা প্রশ্ন তুলেছে ইজাজের পরিবার।
পুলিশ জানায়, এজাজের বাসা হাজারীবাগ থানা এলাকায়। তিনি মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের ‘ডান হাত’ হিসেব পরিচিত। ১০ মার্চ ডাকাতি মামলায় যৌথ বাহিনী তাকে মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন মোহাম্মদপুর থানার মামলায় তাকে আদালতে পাঠায় পুলিশ। ওই দিনই জামিন পান তিনি।
এজাজের বাবা শাহ আলম খান সমকালকে বলেন, তাঁর ছেলের কিডনিতে পাথর ছিল। গ্রেপ্তারের পর তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। এজাজ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ কারণে তার কিডনির সমস্যা আরও বেড়ে যায়। জামিন পাওয়ার পর জিগাতলার জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। জামিনে থাকা সত্ত্বেও শনিবার ভোরে হাসপাতাল থেকে ডিবি ও মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ এজাজকে ফের গ্রেপ্তার করে। অসুস্থ থাকায় সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ঈদের পর এজাজের ‘বার এট ল’ করতে লন্ডনে যাওয়ার কথা ছিল।
মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, ১০ মার্চ গ্রেপ্তারের আগেই এজাজ শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিল। তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর ১১ মার্চ তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছিল।
ঢামেক হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, গতকাল বিকেল সোয়া ৫টার দিকে এজাজকে ওয়ার্ড থেকে ডায়ালাইসিস বিভাগে নেওয়া হয়। সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়। স্বজন মরদেহটি জোরপূর্বক হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে যান। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ ফের লাশ মর্গে পাঠায়।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসান সমকালকে বলেন, এজাজ জামিন পাওয়ার পর জানতে পারি তিনি জুলাই-আগস্টে ছাত্র হত্যা মামলার আসামি। এর পর তাকে গ্রেপ্তারের জন্য খোঁজা হচ্ছিল। পরে জানা যায়, তিনি জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। গতকাল ভোরে ডিবির সহায়তায় হাসপাতাল থেকে তাকে হেফাজতে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন তার স্বজন সঙ্গে ছিলেন।
পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন কারাভোগের পর ১৫ আগস্ট শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন, সুইডেন আসলাম ও পিচ্চি হেলালের সঙ্গে এজাজ জামিনে মুক্তি পান। এরপর থেকেই তিনি বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, অপহরণসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করছিলেন। সন্ত্রাসী গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তিনি। শতাধিক সন্ত্রাসী সদস্য রয়েছে তার। এজাজের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, এজাজের নেতৃত্বে কিছুদিন আগে এলিফ্যান্ট রোডে এক ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয় ও কোপানো হয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম হ ম মদপ র থ ন
এছাড়াও পড়ুন:
শরীয়তপুরের জাজিরায় আবারও সংঘর্ষ, মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় শতাধিক ককটেল (হাতবোমা) বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
গতকাল রোববার দুপুরে জয়নগর ইউনিয়নের ছাব্বিশপারা এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। এতে এক তরুণের হাতের কব্জিতে গুরুতর ক্ষত হয় এবং আরও একজন আহত হন।
জাজিরা থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জয়নগর ইউনিয়নের ছাব্বিশপারা এলাকায় তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিঠুন ঢালী ও জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হালিম তালুকদারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এই দুই নেতা আত্মগোপনে গেলে স্থানীয় পর্যায়ে তাদের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জসিম তালুকদার ও নুর আলম সরদার।
রোববার দুপুরে দুই পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র ও ককটেল নিয়ে সংঘর্ষের প্রস্তুতি নেয়। এ সময় নুর আলম সরদারের অনুসারীরা প্রতিপক্ষের ওপর ককটেল বোমা নিক্ষেপ করে। এরপর উভয় পক্ষ ঘণ্টা-ব্যাপী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ ও মারামারি। পরে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
সংঘর্ষের কিছু দৃশ্য স্থানীয় এক ব্যক্তির সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ হয়, যা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ৪ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে দেখা যায়, এক পক্ষের সমর্থকরা বালতিতে করে ককটেল নিয়ে প্রতিপক্ষের দিকে নিক্ষেপ করছেন। তাদের হাতে ছিল টেঁটা, রামদা, ছেনদা, বল্লম, ডাল-সুরকি ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র।
সম্প্রতি জাজিরার বিলাশপুরে সংঘর্ষের ঘটনায় খইয়ের মতো ককটেল বিস্ফোরণ দেশজুড়ে আলোচিত হয়। গত ৫ এপ্রিল সেখানে দুই শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, যা এখনও আলোচনায় রয়েছে। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলো ছাব্বিশপারা এলাকায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল আখন্দ বলেন, গতকাল দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বেশ কিছু হাতবোমা বিস্ফোরিত হয় বলে জানতে পেরেছি। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।