দালালের জালে তরুণরা, স্বপ্ন দেখিয়ে সর্বনাশ
Published: 16th, March 2025 GMT
দেশের অন্যতম মানব পাচারপ্রবণ এলাকা মাদারীপুর। অবৈধ পথে ইউরোপ যাওয়ার ঝোঁক রয়েছে এ জেলার যুবকদের। এ ক্ষেত্রে প্রধান রুট মধ্যপ্রাচ্যের দেশ লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ। তবে ছোট নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে অনেকেরই হয় সলিল সমাধি। সেই সঙ্গে ডোবে পরিবারে সুদিন ফেরানোর স্বপ্ন। গত ফেব্রুয়ারিতে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় ভূমধ্যসাগরের ব্রেগা উপকূলে ২০ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মরদেহ পাওয়া যায়। এর ছয়জনই মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার। ১০ জন এখনও নিখোঁজ।
মানব পাচারের জালের ব্যাপ্তি, কীভাবে দালালরা কাজ করে তা জানতে মাদারীপুরে মানব পাচারের শিকার, প্রাণ হারানোদের স্বজন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিচার-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছে সমকাল। তারা জানিয়েছেন, দেশের মানুষই মানব পাচার চক্রের হোতা।
তাদের বড় অংশ দেশে থেকেই তৎপরতা চালায়। মূল দালালরা বিদেশ থেকে সিন্ডিকেট পরিচালনা করলেও কয়েক বছরে একবার হলেও দেশে আসে। তবে পাচারকারীরা গ্রেপ্তার হয় না বললেই চলে। মাঝেমধ্যে স্থানীয় কিছু দালাল গ্রেপ্তার হলেও ‘প্রমাণের অভাবে’ হয় না সাজা। বিচারহীনতার এ চক্রে থামে না মানব পাচার, দীর্ঘ হতে থাকে লাশের মিছিল।
দালালের তিন স্তর
মানব পাচার চক্রের মূল চালিকাশক্তি স্থানীয় দালাল। গ্রাম ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এ ধরনের দালালের সংখ্যা কয়েকশ। এরাই প্রত্যন্ত এলাকার যুবকদের অবৈধ পথে বিদেশ যেতে উৎসাহী করে। এ জন্য পশ্চিমা দেশের উন্নত জীবনের গল্প শোনায়। নিজের ও পরিবারের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখায়। ‘টোপ’ গিললে ইউরোপ পাঠাতে ১৫-১৭ লাখ টাকায় চুক্তি করে।
এর পর তারা ওই ব্যক্তিদের সঙ্গে লিবিয়ায় থাকা মূল দালালের সহযোগীদের পরিচয় করিয়ে দেয়। এদের একটি অংশ দেশে থাকলেও মাঠ পর্যায়ে কাজ করে না। এরা মূলত ভিসা, বিমানের টিকিটের মতো বিষয় দেখে।
এর পর বিভিন্ন রুটে লিবিয়ায় নেয়। এই পর্যায়ের দালালদের অনেকেই লিবিয়াতে থাকে। মাঝেমধ্যে টাকা ও পাসপোর্ট নিতে দেশে আসে তারা।
চক্রের সবার ওপরে রয়েছে লিবিয়ায় থাকা মূল দালাল। এদের বেশির ভাগই বাংলাদেশি। এর বাইরে আছে কিছু মিসরীয় ও লিবিয়ান। এরা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে নৌকার ব্যবস্থা করা, মাঝখানে লিবিয়াতে আটকে নির্যাতনের মাধ্যমে অর্থ আদায় থেকে শুরু করে পাচারের শিকার ব্যক্তির ভবিষ্যৎ পুরোটাই নির্ধারণ করে।
ফাঁদের পর ফাঁদ
মূলত দুটি পথে বাংলাদেশিদের লিবিয়া পর্যন্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি ভারতের চেন্নাই হয়ে শ্রীলঙ্কা, দুবাই; তার পর মিসর থেকে আলজেরিয়া হয়ে লিবিয়া। আরেকটি সরাসরি দুবাই বা কাতার হয়ে লিবিয়া; সেখান থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ।
তবে এই পথের পদে পদে রয়েছে ফাঁদ। সরাসরি ইউরোপ পাঠানোর কথা বলে প্রথম ধাপেই জনপ্রতি ১৫-১৭ লাখ টাকা নেওয়া হলেও লিবিয়া পৌঁছানোর পর ভোল পাল্টায় দালালরা। বেশি টাকা আদায়ে দেশটির বিভিন্ন স্থানে আটকে রেখে চালানো হয় নির্যাতন। এর পর সেই নির্যাতনের ভিডিও বাংলাদেশে স্বজনের কাছে পাঠিয়ে আদায় করা হয় মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ। এভাবে প্রাথমিক চুক্তির দুই থেকে তিন গুণ টাকা আদায় করা হয়। অনেককে আবার লিবিয়া নেওয়ার পর মাফিয়া চক্রের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। তারাও নির্যাতনের মাধ্যমে যত পারে অর্থ আদায় করে। নির্মম নির্যাতনে অনেকে প্রাণও হারান।
এমনই ফাঁদের শিকার হন মাদারীপুর শহরের কাজল ঘরামীর ছেলে শাকিলুর রহমান ঘরামী, ভাগনে হাবিবুল্লাহ ও শ্যালক আজাদ হোসেন। তাদের স্পেন পৌঁছে দিতে জনপ্রতি ১৭ লাখ টাকায় চুক্তি করে সদরের দত্ত কেন্দুয়া গ্রামের লালু ফকিরের ছেলে আব্বাস ফকির। তিনি আবার দ্বিতীয় স্তরের দালাল রিপন সরদারের বোনজামাই। এই রিপন পাচারের শিকারদের ভারতের মুম্বাই হয়ে লিবিয়া পাঠান বলে নামই হয়ে গেছে ‘মুম্বাই রিপন’।
হাবিবুল্লাহ সমকালকে বলেন, কথা ছিল মরক্কো দিয়ে স্পেন নেওয়ার। তবে তাদের ভারতের চেন্নাই হয়ে শ্রীলঙ্কা, দুবাই; তার পর মিসর থেকে আলজেরিয়া হয়ে লিবিয়া পাঠায়। গত বছরের ২৪ অক্টোবর লিবিয়া পৌঁছানোর পর মোবাইল, মানিব্যাগ ও পাসপোর্ট নিয়ে কিছুক্ষণ পর পুলিশে ধরিয়ে দেয়। চার দিন জেলে থাকার পর সেখান থেকে চারজনকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় একটি দল। পরে বুঝতে পারি, যারা ছাড়িয়ে নিয়েছে, তারা মাফিয়া। চারজনের কাছ থেকে ২৫ লাখ করে মোট এক কোটি টাকা দাবি করে ওরা। পরে ৯৬ লাখ টাকা দিয়ে ছাড়া পাইছি।
আরও তিন ভুক্তভোগী রাজৈর উপজেলার রাজীব, আরিফ ও হাবিব জানান, উপজেলার বদরপাশা গ্রামের দালাল মিলন মাতুব্বরের প্রলোভনে তারা ইতালি যেতে চেয়েছিলেন। পরে লিবিয়ায় একটি ঘরে আটকে রেখে অতিরিক্ত টাকার জন্য দিন-রাত চালানো হয় নির্যাতন। এক-দুই দিন পরপর একটি করে রুটি ও সামান্য ডাল দেওয়া হতো তাদের। টাকা আসতে দেরি হলে সেটিও জুটত না। প্রতিদিন পা ওপরে বেঁধে পেটানো হতো। সেই নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো হতো পরিবারকে। এভাবে তিন পরিবারের কাছ থেকে ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হলেও তাদের ইতালি পাঠানো হয়নি। টাকা আদায় শেষে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয়। পরে দেশে ফিরে আসেন তারা।
বিপুল পরিমাণ অর্থ দেওয়ার পরও যে ইউরোপে পৌঁছানো যাবে, তার নিশ্চয়তা নেই। স্থানীয়, সহযোগী ও মূল দালালকে সন্তুষ্ট করার পরই পাচারের শিকারদের ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে নৌকায় তোলা হয়। এটি পরিচিত ‘গেম দেওয়া’ হিসেবে। তবে ছোট নৌকায় ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ মানুষ তোলা হয়। এই নৌকাগুলোয় দালাল চক্রের কেউ থাকেও না। সমুদ্রে দিকনির্দেশনা থেকে শুরু করে নৌকা চালানো সবকিছুই করেন হালকা প্রশিক্ষণ পাওয়া পাচারের শিকার ব্যক্তিরা। এতে প্রায়ই নৌকা ডুবে বা পথ হারিয়ে সলিল সমাধি হয় আরোহীদের।
জীবনের হুমকি জেনেও ছুটছে
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ২৯ দেশের ৫৫ হাজার ৪১৩ জন ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে ঢুকেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১১ হাজার ২৩১ জনই ছিলেন বাংলাদেশি (২০ দশমিক ৩ শতাংশ)। ২০২৩ সালেও সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৩০৩ বাংলাদেশি এভাবে ইতালিতে গেছেন। আর ২০২১ ও ২০২২ সালে নাগরিকত্বের ভিত্তিতে বাংলাদেশিরা ছিলেন তৃতীয়।
মানব পাচার বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে ডুবে গত এক দশকে ২৫ হাজারের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে। যাদের মধ্যে বছরে অন্তত ৫০০ বাংলাদেশি মারা গেছেন।
মাদারীপুরে এভাবে মারা যাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা কম নয়। প্রতি ঘরে না হলেও গ্রামে এমন পরিবার আছে একাধিক। সবকিছু জেনেও এভাবে মৃত্যুমুখে নিজেকে সঁপে দেওয়া নিয়ে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তিকে প্রশ্ন করা হয়। তারা জানান, এর প্রধান কারণ প্রতারণামূলক তথ্য। বাকপটু স্থানীয় দালালরা টার্গেট ব্যক্তিকে জানান, একবার ইউরোপ যেতে পারলেই রাতারাতি কোটিপতি হওয়া যাবে। এর পাশাপাশি কাকে কাকে ইউরোপ পাঠিয়েছেন, তারা কেমন ভালো আছেন, সেই গল্পও শোনানো হয়। এতেই ফাঁদে পড়েন গ্রামের সহজ-সরল মানুষ। নিজের পরিবারের সম্পদ-জমি দালালের হাতে দিয়ে পাড়ি দিতে চান স্বপ্নের রাজ্যে। দালালের পরামর্শে অনেক সময় তারা পরিবারকেও জানান না। একেবারে শেষ মুহূর্তে যখন জানান, তখন আর কারও কিছু করার থাকে না।
এমনই একজন গত ফেব্রুয়ারিতে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির পর নিখোঁজ রাজৈরের কুদ্দুস বেপারি। ইতালি যেতে দালালকে প্রায় ‘৬০ লাখ টাকার’ দুই বিঘা জমি লিখে দেন তিনি। তবে পরিবারকে জানান একদম শেষ মুহূর্তে। কুদ্দুসের মা শান্তি বেগম বলেন, ‘হঠাৎ দুপুরে ভাত না খাইয়া পোলা আমারে বলছে, মা আমি যাই। জিগাইলাম কোথায় যাস? মা, লিবিয়া যাই। জিগাইলাম কেডা নেয়? বলে মনির দালাল নিতেছে। তার পরই চলে গেছে।’ স্ত্রী দিনা আক্তারকেও জানান ওই সময়ই। দিনা বলেন, ‘হঠাৎ একদিন বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় সে আমারে বলল, মনির দালালের মাধ্যমে লিবিয়া যাচ্ছে।’
কয়েক বছরেই আঙুল ফুলে কলাগাছ
দেশের মানুষ ভূমধ্যসাগরে ডোবে, মুক্তিপণের টাকা না দিতে পেরে নির্যাতনে মরে। তবে দালালদের কিছুই হয় না। উল্টো মাত্র কয়েক বছরের দালালিতেই কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তোলে তারা।
ফেব্রুয়ারিতে নৌকাডুবির শিকার ১৬ জনকে লিবিয়া পাঠিয়েছিল স্থানীয় দালাল হরিদাসদি গ্রামের স্বপন মাতুবর, মজুমদারকান্দি গ্রামের মনির হাওলাদার ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার বাবলাতলার রফিক শিকদার। তাদের মধ্যে মনির শুধু নিখোঁজ কুদ্দুস বেপারির কাছ থেকেই প্রায় ৬০ লাখ টাকার দুই বিঘা জমি লিখে নেন।
কুদ্দুসের মা শান্তি বেগম বলেন, ‘পোলার কাছ থেকে দুই বিঘা ভুঁই (জমি) লেইখা নিছে মনির দালাল। দুই বিঘার দাম হবে আনুমানিক ৬০ লাখ টাকা। আমরা এর কিছুই জানি না। মনির কইছিল, বড় শিপে (জাহাজ) নেবে। কিন্তু সে প্লাস্টিকের একটা বোট দিয়া আমার ছেলেরে মাইরা ফেলছে মনে হয়। দুই বিঘা জমিও নিল, ছেলের প্রাণটাও নিল দালাল।’
এলাকাবাসী জানান, মনির দুই বছর আগেও করতেন দর্জির কাজ। ওই সময় পাশের এলাকার লিটন মাতুবরকে পিটিয়ে হত্যার অন্যতম আসামি ছিলেন। মামলাটি মীমাংসার জন্য নিহত লিটনের ভাতিজা আকাশ মাতুবরকে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইতালি পাঠান মনির। এর পর থেকেই তিনি ইতালিতে মানব পাচারের বড় দালাল হয়ে ওঠেন। গত দুই বছরে এই কারবার করে বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন তিনি।
এই মনির আবার কাজ করেন উপজেলার কবিরাজপুর গ্রামের কাইয়ুম শেখের হয়ে। কাইয়ুম লিবিয়ায় থেকে পাসপোর্টসহ অন্য বিষয় দেখেন। এর পর দেশে এসে মনিরের ‘ম্যানেজ করা’ ব্যক্তিদের লিবিয়া নিয়ে যান। তারও দেশে আছে বিপুল পরিমাণ সম্পদ।
মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের আরেক বড় দালাল মুম্বাই রিপন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাঁর নেটওয়ার্ক রয়েছে। লিবিয়ায় জিম্মি করে মাদারীপুর শহরের শাকিলুর রহমান ঘরামী, হাবিবুল্লাহ ও আজাদের পরিবারের কাছ থেকে যে ৭২ লাখ টাকা নেওয়া হয়, তা দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে তোলা হয়। তাদের কাছ থেকে গত বছরের ১১ অক্টোবর প্রথম সাড়ে চার লাখ টাকা নেন মুম্বাই রিপন। এর পর ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে তাদের কাছ থেকে ধাপে ধাপে নেওয়া হয় বাকি টাকা।
বিচার ও সমঝোতার রাজনৈতিক-অর্থনীতি
দেশীয় দালাল। মানব পাচারের জাল বিছানোও দেশে। তবুও এই জাল ছিঁড়তে না পারার পেছনে কাজ করে বিচারহীনতা ও সমঝোতার নামে অদ্ভুত এক রাজনৈতিক-অর্থনীতি।
জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় এবং ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে মৃত্যুর পর মামলা যে হয় না, তা নয়। তবে গ্রেপ্তার হয় না অধিকাংশ আসামি। দেশের বাইরে থাকায় মূল অভিযুক্তরা বেশির ভাগ সময় থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আবার দেশে এলেও অর্থ ছিটিয়ে ঠিকই পুলিশের হাত ফাঁকি দেয়। গ্রেপ্তার হলেও কয়েক দিন পরই বেরিয়ে যায় জামিনে। আর বিচার শেষে সাজা হয়েছে এমন নজির খুবই কম।
মাদারীপুর পুলিশ সূত্র জানায়, জেলায় ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মানব পাচারের মামলা হয়েছে প্রায় দেড়শ। এতে ৭৯৮ আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে অর্ধশতের মতো। ২০২৪ সালে মানব পাচারের ১৮টি মামলায় অভিযোগপত্র এবং ২৮টিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এখনও তদন্তাধীন ৫৯ মামলা। আর চলতি বছর কোনো মামলারই অভিযোগপত্র অথবা চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা পড়েনি।
আদালত থেকে জানা যায়, গত কয়েক বছরে কোনো মামলারই বিচার শেষ হয়নি। সব মামলাই বিচার শেষের আগে মীমাংসা হয়ে গেছে।
এই মীমাংসার নামেই হয় মূল সর্বনাশটা। স্থানীয়রা জানান, দালালদের নামে মামলা হলেই স্থানীয় মাতবরদের একটি দল সক্রিয় হয়ে ওঠে। ভুক্তভোগী পরিবারকে নানাভাবে তারা বোঝাতে থাকে। অনেক সময় হুমকি-ধমকিও দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত মাত্র কয়েক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েই মামলা তুলে নেওয়া হয়। এই টাকার পরিমাণও নির্ধারণ হয় ভুক্তভোগীর আর্থসামাজিক অবস্থার ভিত্তিতে। যে যত ক্ষমতাবান, তার ক্ষতিপূরণের পরিমাণও বেশি। এতে আইনের বাইরেই থাকে দালালরা।
যা বলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো.
কারা মানব পাচারে জড়িত, তা ‘ওপেন সিক্রেট’ হওয়ার পরও কেন পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে না– জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূলত মামলার বেশির ভাগ আসামিই বিদেশে থাকায় তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয় না। আর মাঝেমধ্যে এরা দেশে এলেও লুকিয়ে আসায় পুলিশ সব সময় তথ্য পায় না। এর পরও এদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালায় পুলিশ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ব র র উপজ ল র পর ম ণ র পর ম ত র হয় মন র দ ক জ কর র একট বছর র ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
৪৪১ কোটি টাকা লভ্যাংশ দেবে লাফার্জহোলসিম
গত বছরের জন্য শেয়ারধারীদের ৪৪১ কোটি টাকা নগদ লভ্যাংশ দেবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের বহুজাতিক কোম্পানি লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট। এর মধ্যে ২২০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ২২০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা আগামী বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম শেষে বিতরণ করা হবে।
লাফার্জহোলসিম গত বছরের জন্য মোট ৩৮ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ১৯ শতাংশ ছিল অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ। বাকি ১৯ শতাংশ চূড়ান্ত লভ্যাংশ। গত বুধবার অনুষ্ঠিত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভা থেকে চূড়ান্ত এই লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের এই তথ্য জানিয়েছে।
লভ্যাংশের পাশাপাশি লাফার্জহোলসিম গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যও প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে কোম্পানিটির মুনাফা ২১২ কোটি টাকা বা ৩৬ শতাংশ কমেছে। মুনাফা কমে যাওয়ায় ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে কোম্পানিটির লভ্যাংশও কমেছে। ২০২৩ সালে লাফার্জহোলসিম শেয়ারধারীদের মধ্যে লভ্যাংশ হিসেবে মোট ৫৮১ কোটি টাকা বিতরণ করেছিল। ওই বছর অন্তর্বর্তী ও চূড়ান্ত মিলিয়ে মোট ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে কোম্পানিটি। গত বছর লভ্যাংশের হার কমে ৩৮ শতাংশে নেমেছে। আর লভ্যাংশ বাবদ বিতরণ করা অর্থের পরিমাণ কমেছে ১৪০ কোটি টাকা।
কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটির লভ্যাংশ কমেছে মূলত মুনাফা কমে যাওয়ায়। আর মুনাফা কমেছে বিক্রি কম হওয়ায়। গত বছর কোম্পানিটি ২ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। আগের বছর কোম্পানিটি বিক্রি করেছিল ২ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকার। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে লাফার্জহোলসিমের বিক্রি ৮৫ কোটি টাকা বা ৩ শতাংশ কমেছে।
ব্যবসা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে কোম্পানিটি দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন। কোম্পানিটি বলছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যেও কোম্পানিটির ব্যবসায় বড় ধরনের প্রভাব পড়েনি। তার বড় কারণ ছিল সিমেন্টের বাইরে চুনাপাথরসহ কোম্পানির অন্যান্য ব্যবসা থেকে ভালো আয়। কোম্পানিটি বলছে, গত বছর তাদের চুনাপাথরের ব্যবসায় ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ কারণে বছর শেষে সার্বিকভাবে ব্যবসায় বড় ধরনের কোনো ধাক্কা লাগেনি।
এদিকে গত বছরের জন্য অন্তর্বর্তী ও চূড়ান্ত লভ্যাংশ মিলিয়ে কোম্পানিটি ৪৪১ কোটি টাকার যে লভ্যাংশ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার বড় অংশই পাবেন কোম্পানিটির দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা। কারণ, কোম্পানিটির শেয়ারের বড় অংশই তাঁদের হাতে। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে এটির দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের হাতে ছিল ৬৪ দশমিক ১৫ শতাংশ শেয়ার। সেই হিসাবে ঘোষিত মোট লভ্যাংশের মধ্যে ২৮৩ কোটি টাকা পাবেন এসব উদ্যোক্তা। যার মধ্যে অর্ধেক তাঁরা পেয়েও গেছেন। বাকি লভ্যাংশের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পাবেন ৮৭ কোটি টাকা, ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পাবেন ৬৮ কোটি টাকা আর বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পাবেন ৩ কোটি টাকা। যার অর্ধেক অর্থ এরই মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ হিসেবে পেয়েও গেছেন শেয়ারধারীরা।
গত বছর শেষে লভ্যাংশ ও মুনাফা উভয়ই কমে যাওয়ায় শেয়ারবাজারে গতকাল লাফার্জহোলসিমের শেয়ারেরও দরপতন হয়েছে। ঢাকার বাজারে এদিন কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ১ শতাংশ বা ৫০ পয়সা কমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৪৮ টাকায়। দিন শেষে কোম্পানিটির প্রায় দুই কোটি টাকার সমমূল্যের শেয়ারের হাতবদল হয়।