কক্সবাজারের ঈদগাঁওয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের এক সমন্বয়কের পিতাকে উপজেলার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও বিচারের দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। শনিবার দলটির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাতের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই নিন্দা ও বিচারের দাবি জানানো হয়।

এতে বলা হয়, শুক্রবার কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে জুলাই অভ্যুত্থানের সমন্বয়ক সাইদুল হুদার পিতা হাবিবুল হুদাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। হামলায় সাইদুল হুদার পরিবারের আরও তিন সদস্য আহত হয়েছেন।

এনসিপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক এর আগে বিভিন্ন মামলায় কারাবন্দী ছিল। এদিকে এই ঘটনার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পার হলেও এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত কেউই আইনের আওতায় আসেনি, যা স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয়তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি এই হত্যা ও হামলার সঙ্গে জড়িত প্রত্যককে অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে এবং ভুক্তভোগী পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জোর দাবি জানায়।

আরও পড়ুনকক্সবাজারে গুলি করে এক ব্যক্তিকে হত্যা১১ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সব জ র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

সাত কলেজ নিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়, চলবে ভিন্ন মডেলে

ঢাকার সরকারি সাত কলেজের জন্য নতুন যে বিশ্ববিদ্যালয় হতে যাচ্ছে, সেটির নাম হবে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি (ডিসিইউ)। নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়টি চলবে ‘হাইব্রিড মডেলে’। এখানে ৪০ শতাংশ ক্লাস হবে অনলাইনে আর ৬০ শতাংশ ক্লাস হবে সশরীর।

নতুন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনকার মতো একেকটি কলেজে সব বিষয় পড়াশোনা হবে না। এক বা একাধিক কলেজে অনুষদভিত্তিক ক্লাস হবে। যেমন সরকারি তিতুমীর কলেজে হতে পারে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত বিষয়গুলোর ক্লাস। এভাবে অন্যান্য কলেজে হতে পারে অন্যান্য অনুষদভুক্ত বিষয়ের ক্লাস।

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে। এ কমিটি গতকাল রোববার সাত কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নির্ধারণ করেছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল নিয়ে এখন আলাপ–আলোচনা চলছে। সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়টি চলবে ‘হাইব্রিড মডেলে’। এখানে ৪০ শতাংশ ক্লাস হবে অনলাইনে আর ৬০ শতাংশ ক্লাস হবে সশরীর।

গতকালের সভায় উপস্থিত ইডেন মহিলা কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, সভায় সবকিছু বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামটি ঠিক করা হয়েছে।

ঢাকার এই সাত সরকারি কলেজ হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ। শিক্ষক এক হাজারের বেশি।

এই কলেজগুলো একসময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ছিল। ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর এই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু অধিভুক্ত করার পর থেকে যথাসময়ে পরীক্ষা নেওয়া, ফল প্রকাশসহ বিভিন্ন দাবিতে সময়–সময় আন্দোলন করে আসছিলেন এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। আট বছরে ক্ষুদ্র সমস্যাগুলো পুঞ্জীভূত হয়ে বড় রূপ নেয়। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত জানুয়ারিতে এই সাত কলেজকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করার কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ঢাকার এই সাত সরকারি কলেজ হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ। শিক্ষক এক হাজারের বেশি।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে এসব কলেজে আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে না। এরপর এই সাত বড় কলেজের জন্য পৃথক একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ নেয় সরকার। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে। প্রাথমিকভাবে এ কমিটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়’ করার বিষয়ে আলোচনা করেছিল।

গতকালের সভায় এই সাত কলেজের জন্য ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি এবং ঢাকা ফেডারেল ইউনিভার্সিটি করার পক্ষে মত আসে। শেষ পর্যন্ত আলোচনায় ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নাম নির্ধারণ করা হয়। গতকাল এ সিদ্ধান্তের পর ইউজিসির সামনে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা আনন্দ–উল্লাস করেন।

আরও পড়ুন৭ কলেজের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হচ্ছে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি১৮ ঘণ্টা আগেযে মডেলে চলবে শিক্ষা কার্যক্রম

সাত কলেজের মধ্যে এখন ইডেন মহিলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ বাদে বাকিগুলোয় স্নাতক–স্নাতকোত্তরের পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিকেও শিক্ষার্থী পড়ানো হয়। উচ্চমাধ্যমিকের জন্য বেশি সুনাম ও ঐতিহ্য আছে ঢাকা কলেজসহ একাধিক কলেজের। সাত কলেজের শিক্ষকেরা আবার বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা। এ অবস্থায় উচ্চ মাধ্যমিক স্তর ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মর্কতাদের এসব কলেজে রেখে একটি ভিন্ন রকমের মডেলে বিশ্ববিদ্যালয়টি করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

এখন যেমন একেকটি কলেজে অনেকগুলো বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তরে পড়ানো হয়। নতুন মডেলের বিশ্ববিদ্যালয়ে তা হবে না। পরিকল্পনা হলো কলেজগুলোতে অনুষদভিত্তিক ক্লাস হবে। কোন কলেজে কোন অনুষদভুক্ত বিষয়ের ক্লাস হবে, তা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। যেমন সরকারি বাঙলা কলেজে মানবিক অনুষদের ক্লাস হতে পারে। সরকারি তিতুমীর কলেজে হতে পারে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের বিষয়গুলোর ক্লাস। এভাবে অন্যান্য কলেজে অন্যান্য অনুষদের বিষয়ের ক্লাস হবে। ক্লাসগুলো হবে অনলাইন ও সশরীর মিলে।

এ–সংক্রান্ত কমিটির সদস্য ও ইউজিসির সদস্য (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, এসব মডেল নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

ইউজিসির ওই কর্মকর্তার ভাষ্য, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় না হওয়া পর্যন্ত একটি কলেজের অধ্যক্ষকে প্রশাসক করে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা চালু হতে পারে।আপাতত চলবে প্রশাসকের অধীন

ইউজিসির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ঠিক হওয়ার পর এখন অনেকগুলো কাজ করতে হবে। তাঁদের চিন্তা হলো আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আইন প্রণয়নের কাজটি শেষ করা। এখন কমিটির মাধ্যমে আইন মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় আইনের খসড়া হবে। এরপর সেটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হতে পারে।

সাত কলেজের শিক্ষকেরা আবার বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা। এ অবস্থায় উচ্চ মাধ্যমিক স্তর ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মর্কতাদের এসব কলেজে রেখে একটি ভিন্ন রকমের মডেলে বিশ্ববিদ্যালয়টি করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় না হওয়া পর্যন্ত ইউজিসির তত্ত্বাবধানে সমন্বিত কাঠামোর অধীন চলবে সাত কলেজের কাজ। এ কাঠামোর প্রধান হিসেবে কাজ করবেন সাত কলেজের যেকোনো একজন অধ্যক্ষ। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর, ভর্তি দপ্তর, রেজিস্ট্রার দপ্তর ও হিসাব দপ্তরের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। যেসব শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন চলমান শিক্ষা কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বর্তমান ব্যবস্থা চালু রাখবে। আর ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সমন্বিত কাঠামোর মধ্যে চলবে। ইউজিসির এমন সুপারিশ বাস্তবায়ন করার জন্য ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অনুরোধ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ইউজিসির ওই কর্মকর্তার ভাষ্য, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় না হওয়া পর্যন্ত একটি কলেজের অধ্যক্ষকে প্রশাসক করে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা চালু হতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ