সম্প্রতি ধর্ষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশজুড়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, সেখানে বিভিন্ন মহল থেকে ধর্ষণের সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ড বা ফাঁসির দাবি জোরেশোরে উঠেছে। বিক্ষুব্ধ জনতার একাংশের স্লোগানে ও প্ল্যাকার্ডে ‘ধর্ষকের ফাঁসি চাই’ বা ‘প্রকাশ্যে ফাঁসি চাই’-এর মতো দাবিও দেখা যাচ্ছে।
ফাঁসির দাবি নিয়ে আন্দোলন বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন সময়ে দাবি হিসেবে ‘বিচার’-এর চেয়ে ‘ফাঁসি’ মুখ্য—এটা প্রমাণ করে, এখানে সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ড বা ক্যাপিটাল শাস্তি খুব জনপ্রিয়।
বাংলাদেশে মানবাধিকারের বোঝাপড়ার করুন হালত বোঝা যায় ফাঁসি-সংক্রান্ত আলোচনায়। বর্তমানে বাংলাদেশ যে স্তরে প্রবেশ করেছে, ফাঁসির দাবিকে কেন্দ্র করে যে ফ্যাসিবাদ এখানে কায়েম হয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতার জেরে আমরা বলতে পারি, ফাঁসি বা মৃত্যুদণ্ড নিয়ে আমাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করা দরকার।
কেন ধর্ষণের সাজা হিসেবে জনগণ ফাঁসি চায়বাংলাদেশে ধর্ষণের দৃশ্যমান কোনো বিচার হয় না। যেমন ২০০১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পুলিশের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে যত ধর্ষণের মামলা হয়েছিল, তার মধ্যে রায় ঘোষণার হার ৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং সাজার হার শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ (বাংলা ট্রিবিউন, ২০১৭)।
বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার বেহাল দশা, আইনি ও পুলিশি ব্যবস্থার ঔপনিবেশিক খাসলত, দিনের পর দিন মামলার হয়রানি, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা এবং আইনের ভেতরকার সংকট—সব মিলিয়ে বিচারহীনতার এমন এক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে যে জনগণের মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা তৈরি হয়ে আছে, এ রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার পাওয়া সম্ভব নয়।
জনগণের মধ্যে যখন এমন ধারণা দৃঢ় হয়, তখন তারা একদিকে ফাঁসির মতো সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করে, অন্যদিকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে ধর্ষকের মৃত্যু হলে উল্লসিতও হয়। ক্রসফায়ারের পক্ষে সম্মতি উৎপাদনে ‘ধর্ষণ’কে ব্যবহার করার নজির আমরা দেখেছি আওয়ামী শাসনামলে। মৃত্যুদণ্ডের মতো চরম শাস্তিকে তখন সমাধান হিসেবে দেখতে পছন্দ করে জনগণ।
বাংলাদেশে ‘মৃত্যুদণ্ড’ বা ফাঁসি শাস্তি হিসেবে খুব জনপ্রিয় হলেও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো মৃত্যুদণ্ডকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে মনে করে। তারা মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে কিছু যুক্তি প্রদান করে।
মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত শাস্তি। এর প্রয়োগ হয়ে গেলে সেখান থেকে ফেরত আসার আর উপায় নেই। আইন-আদালতে ভুল হওয়া অস্বাভাবিক নয় এবং পৃথিবীতে এমন অনেক নজির আছে, যেখানে বহু বছর পর কাউকে নির্দোষ প্রমাণিত হতেও দেখা গিয়েছে। কিন্তু শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়ে গেলে ভুল শোধরানোর আর কোনো উপায় থাকে না।
আরেকটি জনপ্রিয় ধারণা হচ্ছে, ফাঁসির মতো চরম শাস্তি দিলে অপরাধপ্রবণতা হ্রাস পায়। কিন্তু মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে অপরাধ কমেছে, পৃথিবীর কোথাও এমন কোনো নজির পাওয়া যায় না। ত্রুটিপূর্ণ বিচারব্যবস্থার সহজ সমাধান হিসেবে মৃত্যুদণ্ড বেশি থাকে। পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ডকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের নজিরও দুনিয়ায় রয়েছে।
এসব কারণে আন্তর্জাতিক সংগঠনসমূহ মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন উপায়ে শেখ হাসিনার বিচার করার ক্ষেত্রেও এই প্রশ্নটি উঠেছে। যেহেতু আমাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড রয়েছে, সেহেতু ইতিমধ্যে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিংয়ের প্রতিবেদন উল্লেখ করেছে, তারা এ বিচারপ্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে না।
ধর্ষণের সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ড কেন বিপজ্জনক২০২০ সালের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ষণের সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ড আইনে যুক্ত হয়েছিল। তখন এ আলোচনা অনেকেই করেছিলেন। আজকেও একই দাবির পুনরাবৃত্তি নতুন করে পুরোনো আলাপ করতে বাধ্য করছে।
শুধু ধর্ষণ কেন, পৃথিবীতে কোনো অপরাধই মৃত্যুদণ্ডের কারণে কমেছে, এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড লৈঙ্গিক সহিংসতাকে নজিরবিহীন স্তরে নিয়ে যাবে। আইনের ভেতরকার সংকটগুলোকে আমলে না নিয়ে কেবল আইনকে কঠোর থেকে কঠোরতর করলে সহিংসতার চক্র বৃদ্ধি পাবে। অনেকেই বলে থাকেন, ধর্ষণের সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ড হলে ধর্ষণের পর হত্যা করার প্রবণতাও বৃদ্ধি পেতে পারে। মৃত্যুদণ্ডকেন্দ্রিক এ আলোচনা নারীর প্রতি সহিংসতার কাঠামোগত বিভিন্ন দিক রয়েছে এবং তার সঙ্গে ধর্ষণের সম্পর্ককে উপেক্ষা করে।
বাংলাদেশের বাস্তবতাও যদি আমরা আমলে নিই, তাহলে দেখব যে এখানে দুটো ঘটনা খুব বেশি ঘটে। একদিকে প্রচুর ভুয়া ধর্ষণের মামলা হয় এবং অন্যদিকে বিভিন্ন কারণে ঘটনা ‘নথিভুক্ত’ করার প্রবণতাও কম। ভুক্তভোগীকে থানায় গিয়ে মামলা করতে গেলে যে ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে হয় বা সামাজিক চাপে ঘটনাকে তারা চেপে যান, হয়তোবা নানাবিধ ‘আপস’ করতে বাধ্য হন। ধর্ষণের সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ড একদিকে ‘সামাজিক ফয়সালা’র প্রবণতা বৃদ্ধি করবে, অর্থাৎ ঘটনা আরও কম নথিভুক্ত হবে। যেহেতু প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ড, সেহেতু নানা চাপ দিয়ে আপসে মিটমাট করার চেষ্টাই বেশি করা হবে আমাদের সমাজবাস্তবতায়। অন্যদিকে এটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ‘ধর্ষণ’ মামলাকে ব্যবহারের প্রবণতাও বৃদ্ধি করবে।
আইনের ভেতরে যে ধরনের পুরুষতান্ত্রিক উপাদান আছে, যা এই বিচারপ্রক্রিয়াকে ধীর করে বা খোদ ভুক্তভোগীর জন্য বিচার পাওয়াকে কঠিন করে তোলে বা ভুক্তভোগীকে আরেক দফা ভিকটিমে রূপান্তর করে, সেগুলোকে তাড়াতে হবে। বিচারব্যবস্থাকে সচল করতে হবে। বিচারব্যবস্থায় যত গাফিলতি হবে, তত বেশি সমাজে আরও ‘কঠোর’ দাবির উত্থাপন ঘটতে থাকবে। এমনকি ‘ক্রসফায়ার’ হাজির হতে পারে এ অছিলায়।মৃত্যুদণ্ড নারীর অধিকারের পরিপন্থী ব্যবস্থাদুনিয়াজুড়ে যাঁরা নারীর অধিকার নিয়ে কাজ করেন, তাঁরা ধর্ষণের সাজা হিসেবে ফাঁসির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তাঁরা বলেন, ধর্ষণের সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ড নারী অধিকারের পরিপন্থী একটি পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থা।
তাঁদের যুক্তি মোতাবেক, ধর্ষণের সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ড—এ ধারণার গোড়ায় রয়েছে এক পুরুষতান্ত্রিক পূর্বানুমান। ধর্ষণ যেন হত্যা বা খুনের চেয়ে ভয়াবহ এক পরিণতি। ‘ইজ্জত’-এর পুরুষতান্ত্রিক ধারণা থেকে এটার জন্ম হয়, নারীর জীবনে ধর্ষণই সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনা এবং ধর্ষণের শিকার হওয়ার মাধ্যমে নারীর ‘ইজ্জত’ ভূলুণ্ঠিত হয়। সে নারীর যেন সমাজে আর কোনো স্থান নেই। জীবনের চেয়ে ‘সতীত্ব’কে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। এটা একদিকে যেমন ‘ইজ্জত’ বা ‘সতীত্ব’-এর পুরুষতান্ত্রিক পূর্বানুমানগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করে, তেমনি সমাজে খুন বা হত্যাকে স্বাভাবিক বা প্রত্যাশিত অপরাধে পরিণত করে।
ফলে গবেষকেরা বলেন, ধর্ষণের সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ড আসলে নারী অধিকারের প্রশ্নে পশ্চাৎযাত্রা। কাঠামোগত লিঙ্গবৈষম্য, যা কিনা নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতাকে টিকিয়ে রাখে ও জায়েজ করে, তা থেকে মনোযোগ দূরে সরিয়ে নিয়ে যায় মৃত্যুদণ্ডকেন্দ্রিক আলোচনা। মৃত্যুদণ্ড আসলে ধর্ষণকে তো দূর করেই না, বরং রাষ্ট্র ও সমাজকে ধর্ষণের সংস্কৃতিকে মোকাবিলা করা থেকে দূরে রাখে। যে যুক্তিতে মৃত্যুদণ্ডের কথা বলা হয়, তা পুরুষতান্ত্রিক ভাষা ও কাঠামোর পুনরুৎপাদনই করে। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি-সংক্রান্ত আলোচনা ভুক্তভোগীর পুনর্বাসনকেও প্রায়ই এড়িয়ে যায়।
জুলুমের কাঠামো ভাঙাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে নারী নিপীড়ন ও নারীর ওপর কর্তৃত্ববাদী চর্চার প্রতিবাদে দেশজুড়ে আন্দোলন চলছে। এ আন্দোলন আসলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানেরই ধারাবাহিকতা। যে নারীর অংশগ্রহণ ছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম চাবিকাঠি, অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে জনপরিসরে নারীর উপস্থিতিকে সংকুচিত করার যে মহড়া চলছে কত দিন যাবৎ, তার পরিপ্রেক্ষিতে এ আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম।
তবে আমাদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের ভাষা ও বয়ান যেন স্বৈরতান্ত্রিক বা জুলুমবাজির চক্রের মধ্যে গিয়ে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জুলুমের বিরুদ্ধে আমরা যে ভাষা ও পদ্ধতি দাঁড় করাব, সেটা যেন আরেক জুলুমের হাতিয়ার না হয়ে ওঠে। এমন সংকটকালীন মুহূর্তে বহু জনতুষ্টিবাদী দাবি উঠতে পারে, যেগুলো পরবর্তী সময়ে নিপীড়নমূলক হাতিয়ার হয়ে উঠবে। নিপীড়নমূলক সব আইনের ন্যায্যতা উৎপাদন করা হয়ে থাকে এমন সংকটের অজুহাতেই।
আইনের ভেতরে যে ধরনের পুরুষতান্ত্রিক উপাদান আছে, যা এই বিচারপ্রক্রিয়াকে ধীর করে বা খোদ ভুক্তভোগীর জন্য বিচার পাওয়াকে কঠিন করে তোলে বা ভুক্তভোগীকে আরেক দফা ভিকটিমে রূপান্তর করে, সেগুলোকে তাড়াতে হবে। বিচারব্যবস্থাকে সচল করতে হবে। বিচারব্যবস্থায় যত গাফিলতি হবে, তত বেশি সমাজে আরও ‘কঠোর’ দাবির উত্থাপন ঘটতে থাকবে। এমনকি ‘ক্রসফায়ার’ হাজির হতে পারে এ অছিলায়।
ইনসাফের দাবিকে কোনো বে-ইনসাফির উপলক্ষ হয়ে উঠতে দেওয়া যাবে না। নারীর নিরাপত্তার জন্য আন্দোলনকে আরেক সহিংসতার ভাষিক কথকথার চক্র তৈরির উপলক্ষ করতে দেওয়া যাবে না।
সহুল আহমদ লেখক ও গবেষক
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র প রবণত ব যবস থ র পর প আম দ র অপর ধ একদ ক
এছাড়াও পড়ুন:
ফ্যাসিস্টরা নানাভাবে অভ্যুত্থানকে ধ্বংসের চেষ্টা করছে: জোনায়েদ সাকি
ফ্যাসিস্টরা নানাভাবে জুলাই অভ্যুত্থানকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেছেন, দেশের মানুষ যখন বিরাট এক অভ্যুত্থান করে নতুন বাংলাদেশের যাত্রা দেখছেন, তখন অনেকেই যেন ওই শেখ হাসিনার অপতৎপরতার মতো নানাভাবে আবার দখলদারি করতে এবং জনগণের কণ্ঠ ও স্বাধীনতা রুখে দিতে চান।
রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আজ শুক্রবার বিকেলে এক বিক্ষোভ সমাবেশে জোনায়েদ সাকি এ কথা বলেন। গণসংহতি আন্দোলনের উদ্যোগে ‘গাজা ও রাফার মজলুম ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের নৃশংস গণহত্যা’র প্রতিবাদে ওই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বাংলাদেশের মজলুমরা আজ যদি ঐক্যবদ্ধ হই, আমরা যেমন অভ্যুত্থান করে হাসিনাকে পালাতে বাধ্য করেছি...। বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করে এ দেশে গণতন্ত্র কায়েম করতে পারব এবং সকলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারব।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ চায় তারা নিজের মর্যাদা নিয়ে বাঁচবে, নিজের চিন্তা ও মত প্রকাশ করতে পারবে, এ জন্য ভয় পেতে হবে না। ছাত্ররা হলে থেকে নিজের চিন্তা প্রকাশ করতে পারবে, আবরার ফাহাদের মতো শহীদ হতে হবে না। তিনি আরও বলেন, কেউ যদি এটা বন্ধ করতে চায়, তারা হাসিনারই পথ অবলম্বন করছে। শেখ হাসিনার নতুন রূপে হাজির হওয়া বাংলাদেশের মানুষ বরদাশত করবে না।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ হচ্ছে সেটাই, যখন আপনার নিজের মত অন্যর ওপর চাপিয়ে দিতে চান। আপনি আপনার মত প্রকাশ করবেন, অন্যকে আহ্বান করবেন। মত প্রকাশ করার জন্য জবরদস্তি করার অধিকার কারও নেই। জবরদস্তি মানেই ফ্যাসিবাদ।’
ইসরায়েলের জায়নবাদী প্রকল্প এক ভয়ংকর ফ্যাসিবাদী প্রকল্প মন্তব্য করে জোনায়েদ সাকি বলেন, বছরের পর বছর ধরে তারা ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ, নিপীড়ন ও দখলদারত্ব চালিয়ে আসছে, তা মানব জাতির জন্য কলঙ্ক। ফিলিস্তিনের জনগণের পক্ষে বিশ্বের সব বিবেকবান মানুষের ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শান্তিকামী মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বের দরবারে এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে পদক্ষেপ নিন, রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে সোচ্চার হোন।’
গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক বলেন, বাংলাদেশেও নানা নির্যাতন দেখেছি। এ দেশে ধর্মীয় নির্যাতনকে কেন্দ্র করে পাশের দেশ ভারত তাদের ফায়দা তুলতে চায়। নানা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
বাংলাদেশের নারীরা নানাভাবে আক্রমণের শিকার হচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, মাজারে যাঁরা ধর্মচর্চা করেন, তাঁদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। ফ্যাসিস্টরা নানাভাবে অভ্যুত্থানকে ধ্বংস করতে চাইছে।
গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, বিশ্বের যত নিপীড়িত মানুষ আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে নিপীড়িত হচ্ছে ফিলিস্তিনের জনগণ। অথচ তাদের এই নিপীড়ন দেখেও না দেখার ভান করে তথাকথিত বিশ্ব বিবেক। তিনি বলেন, একদিকে সারা দুনিয়ার বিবেকবান মানুষ ফিলিস্তিনের জনগণের পক্ষে সোচ্চার, অন্যদিকে ট্রাম্প-নেতানিয়াহু জুটি গাজায় গণহত্যা চালিয়ে সেখানে প্রমোদনগরী তৈরির স্বপ্ন দেখছে। এই নব্য ফ্যাসিবাদীদের বিরুদ্ধে শান্তিকামী বিবেকবান গণতন্ত্রকামী মানুষের ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, তরিকুল সুজন প্রমুখ। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন কৃষক মজুর সংহতির সাধারণ সম্পাদক আলিমুল কবীর, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহিম চৌধুরীসহ ঢাকা জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা–কর্মীরা।