মদিনায় নবীজির (সা.) রওজা শরিফের দক্ষিণ পাশে একটি খোলা জানালা আছে। মসজিদে নববির সালাম গেট দিয়ে সামনে এগোতে থাকলে হাতের ডান পাশে চোখে পড়বে জানালাটি। এর একটা ইতিহাস রয়েছে, যে-কারণে জানালাটি প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে খোলা। এটা হজরত হাফসা (রা.)-এর জানালা। জানালাটি কখনো বন্ধ হয়নি। নবীজির (সা.) রওজা মোবারককে সালাম দেওয়ার জন্য পশ্চিম দিক থেকে প্রবেশ করে পূর্ব দিকে বের হতে হয়। রওজা শরিফ বরাবর এসে হাতের বামে উত্তরমুখী হয়ে সালাম দিতে হয়। নবীজি (সা.
মসজিদে নববির পূর্ব পাশে সারিবদ্ধভাবে ছিল নবীজির (সা.) স্ত্রীদের ঘর। আয়েশা (রা.) ও হাফসার (রা.) ঘর ছিল মুখোমুখি। মাঝে একটি গলিপথ। যে গলিপথ দিয়ে সবাই রওজায় সালাম করতেন।
আরও পড়ুনমদিনার প্রাণকেন্দ্র মসজিদে নববি০৩ জুন ২০২৪হজরত ওমরের (রা.) খেলাফতের সময় ১৭ হিজরিতে মসজিদে নববি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হলে রওজায় সালাম দেওয়ার সুবিধার্থে হাফসা (রা.) ঘরটি সরিয়ে ফেলার প্রয়োজন দেখা দেয়। তিনি তখনো সেই ঘরে বাস করেন। ওমর (রা.) চিন্তায় পড়ে গেলেন। কীভাবে তিনি মেয়ে হাফসাকে (রা.) বলবেন ঘরটি ছেড়ে দিতে। অবশেষে মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। হাফসার (রা.) ঘরের প্রতিটি কোনায় নবীজির (সা.) স্পর্শ ও স্মৃতি। এই ঘর তাঁকে ছাড়তে হবে, কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। তাঁর কান্না দেখে ওমর (রা.) ফিরে গেলেন।
পরদিন আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)-কে পাঠালেন। আরও অনেকে তাঁকে অনুরোধ করল। কিন্তু তিনি অনড়। তাঁকে বলা হলো, এই হুজরার (ঘরের) বিনিময়ে মদিনার সবচেয়ে বড় বাড়িটি তাকে উপহার হিসেবে দেওয়া হবে। তাতেও তিনি রাজি হলেন না। কিছুদিন পর হজরত ওমর (রা.) পুত্র আবদুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে আবার তাঁর কাছে এলেন। এবার ভাই আবদুল্লাহ বোনের কাছে আবেদন রাখলেন যেন তিনি মুসলিমদের স্বার্থে ঘরটি ছেড়ে দেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বাড়িও হাফসার (রা.) হুজরার সঙ্গেই লাগোয়া ছিল। তিনি বোনকে অনুরোধ করলেন তার বাড়িতে এসে ওঠার জন্য। তিনি বোনের জন্য এই বাড়ি ছেড়ে অন্যখানে চলে যাবেন। যেহেতু এই বাড়িটিও তো তাঁর হুজরার সঙ্গেই, সুতরাং তিনি নবীজির (সা.) কাছেই অবস্থান করবেন।
আরও পড়ুনযেভাবে নির্মিত হলো মসজিদে নববি০৭ মার্চ ২০২৫এবার তিনি সম্মত হলেন। তবে শর্ত রাখলেন, আবদুল্লাহ ইবনে ওমরের যে বাড়িতে তিনি উঠছেন রওজা শরিফ বরাবর তার দেয়ালে একটি জানালা খুলতে হবে এবং জানালাটি কখনো বন্ধ করা যাবে না। যেন জানালা দিয়ে রওজার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারেন। হজরত ওমর (রা.) কথা দিলেন যে কখনো এ জানালাটি বন্ধ করা হবে না।
আজ থেকে হাজার বছর আগে হাফসা (রা.) ইন্তেকাল করলেন এবং এর মধ্যে বহুবার মসজিদে নববির পুনঃনির্মাণ ও সম্প্রসারণ করা হয়, কিন্তু কেউই হজরত ওমর (রা.) এর প্রতিশ্রতি ভঙ্গ করেননি। সে কারণে খোলা জানালাটি আজও নবীপ্রেমের একটি নিদর্শন হিসেবে রয়ে গেছে।
আরও পড়ুন মসজিদে নববি ভ্রমণ করা যাবে ঘরে বসেই৩০ জানুয়ারি ২০২৩উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
একটি জানালার শাশ্বত স্মৃতি
মদিনায় নবীজির (সা.) রওজা শরিফের দক্ষিণ পাশে একটি খোলা জানালা আছে। মসজিদে নববির সালাম গেট দিয়ে সামনে এগোতে থাকলে হাতের ডান পাশে চোখে পড়বে জানালাটি। এর একটা ইতিহাস রয়েছে, যে-কারণে জানালাটি প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে খোলা। এটা হজরত হাফসা (রা.)-এর জানালা। জানালাটি কখনো বন্ধ হয়নি। নবীজির (সা.) রওজা মোবারককে সালাম দেওয়ার জন্য পশ্চিম দিক থেকে প্রবেশ করে পূর্ব দিকে বের হতে হয়। রওজা শরিফ বরাবর এসে হাতের বামে উত্তরমুখী হয়ে সালাম দিতে হয়। নবীজি (সা.) এখন যেখানে শুয়ে আছেন সেটি ছিল আয়েশা সিদ্দিকার (রা.) ঘর। এর ঠিক তার বিপরীত দিকে দক্ষিণ পাশের দেয়ালেই জানালাটির অবস্থান। এখানেই ছিল হজরত ওমরের (রা.) মেয়ে হাফসার (রা.) ঘর।
মসজিদে নববির পূর্ব পাশে সারিবদ্ধভাবে ছিল নবীজির (সা.) স্ত্রীদের ঘর। আয়েশা (রা.) ও হাফসার (রা.) ঘর ছিল মুখোমুখি। মাঝে একটি গলিপথ। যে গলিপথ দিয়ে সবাই রওজায় সালাম করতেন।
আরও পড়ুনমদিনার প্রাণকেন্দ্র মসজিদে নববি০৩ জুন ২০২৪হজরত ওমরের (রা.) খেলাফতের সময় ১৭ হিজরিতে মসজিদে নববি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হলে রওজায় সালাম দেওয়ার সুবিধার্থে হাফসা (রা.) ঘরটি সরিয়ে ফেলার প্রয়োজন দেখা দেয়। তিনি তখনো সেই ঘরে বাস করেন। ওমর (রা.) চিন্তায় পড়ে গেলেন। কীভাবে তিনি মেয়ে হাফসাকে (রা.) বলবেন ঘরটি ছেড়ে দিতে। অবশেষে মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। হাফসার (রা.) ঘরের প্রতিটি কোনায় নবীজির (সা.) স্পর্শ ও স্মৃতি। এই ঘর তাঁকে ছাড়তে হবে, কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। তাঁর কান্না দেখে ওমর (রা.) ফিরে গেলেন।
পরদিন আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)-কে পাঠালেন। আরও অনেকে তাঁকে অনুরোধ করল। কিন্তু তিনি অনড়। তাঁকে বলা হলো, এই হুজরার (ঘরের) বিনিময়ে মদিনার সবচেয়ে বড় বাড়িটি তাকে উপহার হিসেবে দেওয়া হবে। তাতেও তিনি রাজি হলেন না। কিছুদিন পর হজরত ওমর (রা.) পুত্র আবদুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে আবার তাঁর কাছে এলেন। এবার ভাই আবদুল্লাহ বোনের কাছে আবেদন রাখলেন যেন তিনি মুসলিমদের স্বার্থে ঘরটি ছেড়ে দেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বাড়িও হাফসার (রা.) হুজরার সঙ্গেই লাগোয়া ছিল। তিনি বোনকে অনুরোধ করলেন তার বাড়িতে এসে ওঠার জন্য। তিনি বোনের জন্য এই বাড়ি ছেড়ে অন্যখানে চলে যাবেন। যেহেতু এই বাড়িটিও তো তাঁর হুজরার সঙ্গেই, সুতরাং তিনি নবীজির (সা.) কাছেই অবস্থান করবেন।
আরও পড়ুনযেভাবে নির্মিত হলো মসজিদে নববি০৭ মার্চ ২০২৫এবার তিনি সম্মত হলেন। তবে শর্ত রাখলেন, আবদুল্লাহ ইবনে ওমরের যে বাড়িতে তিনি উঠছেন রওজা শরিফ বরাবর তার দেয়ালে একটি জানালা খুলতে হবে এবং জানালাটি কখনো বন্ধ করা যাবে না। যেন জানালা দিয়ে রওজার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারেন। হজরত ওমর (রা.) কথা দিলেন যে কখনো এ জানালাটি বন্ধ করা হবে না।
আজ থেকে হাজার বছর আগে হাফসা (রা.) ইন্তেকাল করলেন এবং এর মধ্যে বহুবার মসজিদে নববির পুনঃনির্মাণ ও সম্প্রসারণ করা হয়, কিন্তু কেউই হজরত ওমর (রা.) এর প্রতিশ্রতি ভঙ্গ করেননি। সে কারণে খোলা জানালাটি আজও নবীপ্রেমের একটি নিদর্শন হিসেবে রয়ে গেছে।
আরও পড়ুন মসজিদে নববি ভ্রমণ করা যাবে ঘরে বসেই৩০ জানুয়ারি ২০২৩