স্মৃতির আলোয় জুলাইয়ের উত্তাল দিন
Published: 16th, March 2025 GMT
জুলাই অভ্যুত্থানের অগ্নিঝরা দিনগুলো উঠে এসেছিল আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে থাকা তরুণদের স্মৃতিচারণায়। আন্দোলনে শহীদ, আহত ব্যক্তিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সমবেদনা ছিল তাঁদের কণ্ঠে। আর ছিল দেশে আবার যেন কোনো স্বৈরতন্ত্র ফিরে না আসে, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করার প্রত্যয় ও প্রত্যাশা।
গতকাল শনিবার বিকেলে এই স্মৃতিচারণার সুযোগ ঘটে জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু নামে প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত বইয়ের আনুষ্ঠানিক প্রকাশনা অনুষ্ঠানে। বইটি লেখা হয়েছে জুলাইয়ে স্বৈরাচার উৎখাত করা গণ-আন্দোলন নিয়ে। লিখেছেন সেই গণ–আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক, বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বেলা তিনটায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল প্রথমা প্রকাশন।
অনুষ্ঠানের মধ্যমণি ছিলেন বইটির লেখক আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। আলোচনায় অংশ নিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও যুগ্ম সদস্যসচিব রিফাত রশিদ।
রাষ্ট্রকে গণ-অভ্যুত্থানের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে নিতে হবে। সেই চেষ্টায় কাজ চালিয়ে যেতে আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার বইটি উদ্বুদ্ধ করবে। আসিফ নজরুল, আইন উপদেষ্টা, অন্তর্বর্তী সরকারঅনুষ্ঠানে জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী তরুণ প্রজন্মের নেতা-কর্মীরা ছাড়াও ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের রেল, সড়ক ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বিশেষ সহকারী মনির হায়দার, গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরীসহ দেশের সাহিত্য–সংস্কৃতি অঙ্গনের তরুণ ও বিশিষ্টজনেরা। অনুষ্ঠানে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিদের বিপুল সমাগম ছিল উৎসাহব্যঞ্জক।
প্রথমা প্রকাশনের প্রধান সমন্বয়কারী মশিউল আলম অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ। তিনি বলেন, প্রথমা প্রকাশন জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে এর আগে আরও পাঁচটি বই প্রকাশ করেছে। এই বইয়ের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, লেখক নিজেই জুলাই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ছিলেন। ঘটনার ভেতর থেকে অভ্যুত্থানের বিষয়গুলো তিনি যেভাবে দেখেছেন, তা তুলে ধরেছেন। ভারসাম্য বজায় রেখে সাহসিকতার সঙ্গে তিনি অভ্যুত্থানের পর্যায়গুলোর বিবরণ দিয়েছেন। ভবিষ্যতে জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস রচনা ও গবেষণায় এই বই আকরগ্রন্থ হিসেবে ভূমিকা রাখবে।
আসিফ নজরুল বইটি সম্পর্ক বলেন, লেখা খুব সাবলীল। গল্পের মতো করে ঘটনার পরম্পরা তুলে ধরা হয়েছে। ঘটনাগুলো অভিভূত হওয়ার মতো। জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র, পুলিশ, সাধারণ মানুষ মিলিয়ে এত চরিত্র, এত ঘটনা রয়েছে যে সবার ভূমিকা মনে রাখা কঠিন। সবকিছুর বর্ণনা দেওয়াও কঠিন। বইটিতে সংক্ষিপ্ত আকারে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া প্রথমা প্রকাশন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন উপদ ষ ট প রথম সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বন্ধ ব্যাংক থেকে যেভাবে শক্তিশালী ইস্টার্ন ব্যাংক
শুরুতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ব্যাংক চালাবে ব্যাংকাররা, আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করব না। ব্যাংক মুনাফায় না যাওয়া পর্যন্ত আমরা প্রথম পাঁচ বছর লভ্যাংশ, সভার সম্মানীসহ কোনো সুবিধা নিইনি। এর ফলে ইস্টার্ন ব্যাংক এখন বাজারের সেরা– শওকত আলী চৌধুরী, চেয়ারম্যান, ইস্টার্ন ব্যাংক
ব্যাংকটিকে আজকের এই পর্যায়ে পৌঁছাতে কী কৌশল কাজে দিয়েছে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইস্টার্ন ব্যাংক শুরুতেই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশের ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্রাহক হিসেবে বেছে নেয়। এ জন্য শুরুতে এসএমই ও খুচরা ঋণ ছিল না। শুরু থেকে আমরা ব্যক্তি নয়, প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু করি। এ জন্য আমাদের ব্যাংকে সবকিছু লিখিত আছে। ইস্টার্ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পর্ষদের ভূমিকা কী হবে, তা পরিষ্কার করা আছে। এসব কারণে ইস্টার্ন ব্যাংক আজ এই পর্যায়ে।’
আলী রেজা ইফতেখার আরও বলেন, ‘আমাদের গ্রাহক কে হবেন, এ ব্যাপারে আমরা খুব সচেতন। সব নিয়ম লিখিত। এ জন্য আমার কাছে কোনো ফাইল পড়ে থাকে না। আমার সিদ্ধান্তের জন্য কাউকে অপেক্ষায়ও থাকতে হয় না। আমি কখনো কাউকে ঋণ দেওয়ার জন্য কোনো নির্দেশনা বা পরামর্শ দিইনি। ঋণ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ আছে। তারাই এটা দেখে।’
বিসিসিআই থেকে ইস্টার্ন ব্যাংক
পাকিস্তানি ব্যাংকার আগা হাসান আবেদি ১৯৭২ সালে ব্যাংক অব ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ইন্টারন্যাশনাল (বিসিসিআই) প্রতিষ্ঠা করেন। বিসিসিআইয়ের ২৫ শতাংশ মূলধন ছিল ব্যাংক অব আমেরিকার এবং ৭৫ শতাংশ মূলধন ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবির শাসক শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের। ব্যাংকটি লুক্সেমবার্গে নিবন্ধিত ছিল এবং তার প্রধান কার্যালয় ছিল পাকিস্তানের করাচি ও যুক্তরাজ্যের লন্ডনে। ব্যাংকটি চালুর এক দশকের মধ্যেই ৭৮টি দেশে ৪ হাজারের বেশি শাখার মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্প্রসারণ করে। এর মধ্যে বাংলাদেশও ছিল। ব্যাপকভাবে কার্যক্রম সম্প্রসারণের কিছুদিন যেতে না যেতেই ব্যাংকটিতে অর্থ পাচার এবং অন্যান্য আর্থিক অনিয়মের ঘটনা ঘটে। এ কারণে বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যাংকটির সম্পদ জব্দ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯১ সালে এসে ব্যাংকটি বন্ধ হয়ে যায়।
নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বড় তিনটি বিদেশি ব্যাংকের একটি ছিল বিসিসিআই। অন্য দুটি ছিল এএনজেড গ্রিন্ডলেজ ও আমেরিকান এক্সপ্রেস। বিসিসিআই ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেলে আমানতকারীদের নিরাপত্তার পাশাপাশি বিদেশি লেনদেন বাধাগ্রস্ত হবে, এ জন্য ব্যাংকটির বিষয়ে তখনকার সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৯১ সালের ৬ জুলাই রাতে বিসিসিআইয়ের কার্যক্রম সীমিত করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ৮ জুলাই তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ব্যাংকটির কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত জাতীয় সংসদকে অবহিত করেন। জাতীয় সংসদে ইস্টার্ন ব্যাংক পুনর্গঠন স্কিম পাস করা হয়। তখন ব্যাংকটির আমানত ছিল ৫৫০ কোটি টাকা। এসব আমানতকারীর একটি অংশকে আমানতের বিপরীতে ব্যাংকের শেয়ার নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। যদি তাঁরা শেয়ার নিতে আগ্রহী না হন, তবে আমানত ফেরত পেতে ৫-১০ বছর লাগবে বলে জানানো হয়। এই প্রস্তাব পাওয়ার পর আমানতকারীদের একটি অংশ ব্যাংকের শেয়ার নিতে আগ্রহী হন। তখন ১০০ টাকা জমার বিপরীতে ১০০ টাকার শেয়ার দেওয়া হয়। যাঁরা ওই সময় শেয়ার নিয়েছিলেন, তাঁরাই এখন ব্যাংকটির বড় শেয়ারধারী ও পরিচালক। বড় আমানতকারীদের পাশাপাশি সরকারও ব্যাংকটির ৬০ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়।
আলী রেজা ইফতেখার