খুলনায় চরমপন্থি নেতা শেখ শাহীনুল হক শাহীনকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।‌ শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে খুলনা থানার বাগমারা ব্রিজের কাছে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত শাহীন নগরীর দৌলতপুর থানার কার্তিককুল এলাকার শেখ আব্দুর রশিদের ছেলে। সে খুলনা নগরীর দৌলতপুরের আলোচিত শহীদ ওরফে হুজি শহীদ হত্যা মামলাসহ ৩টি মামলার আসামি। 

খুলনা থানার ওসি সানোয়ার হোসেন মাসুম বলেন, ‘রাতে সন্ত্রাসীরা গুলি করে শাহীনকে হত্যা করেছে। তার মাথায় গুলির দুটি চিহ্ন রয়েছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। তবে কারা এবং কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড তা এখনও জানা যায়নি।’

তিনি আরও জানান, দৌলতপুর থেকে শাহীনকে ডেকে বাগমারা এলাকায় নিয়ে তার পরিচিত কেউ তাকে হত্যা করেছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে।

এর আগে রাত ১০টার দিকে নগরীর শের-এ-বাংলা রোডের হাজীবাড়ি এলাকায় রনি নামের এক ব্যক্তিকে গুলি করে ও কুপিয়ে আহত করা হয়। তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

তালেবানের জোড়াতালির সরকার পতনের দিকে যাচ্ছে?

২০২১ সালে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের পর থেকে আফগানিস্তানের তালেবান তাদের সহিংস আন্দোলনকে একটি কার্যকর সরকারব্যবস্থায় রূপান্তর করার জন্য রীতিমতো সংগ্রাম করে চলেছে। তালেবান সরকারের মধ্যে ঐক্যের একটি বাহ্যিক প্রদর্শন দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এর আড়ালে কট্টরপন্থী তালেবান সরকার গভীর উপদলীয় কোন্দল, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও জন–অসন্তোষে ডুবতে বসেছে।

বিশ্লেষক মাবিন বাইক তাঁর ‘তালেবান’স ইন্টারনাল পাওয়ার স্ট্রাগল: আ রেজিম অন দ্য ব্রিক’ শিরোনামের প্রবন্ধে দেখিয়েছেন, এই গোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় অস্তিত্বগত হুমকি কোনো বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ নয়, বরং গোষ্ঠীটির অভ্যন্তরীণ বিভক্তি।

এ বিভক্তিকে যদি সামাল দেওয়া না যায়, তাহলে সেটা বাড়তেই থাকবে এবং তালেবান সরকারের পতন ডেকে আনবে এবং আফগানিস্তানকে আরেকটি দীর্ঘস্থায়ী সংকটের মধ্যে ফেলে দেবে।

তালেবান সরকারকে এখন সবচেয়ে বড় যে ইস্যুটি সামাল দিতে হচ্ছে, সেটা হচ্ছে, বিভিন্ন উপদলগুলোর মধ্যে সংহতি ধরে রাখা। মোল্লা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার নেতৃত্বে তালেবান আন্দোলন নুরজাই গোত্রকে কেন্দ্র করে আরও বেশি কেন্দ্রীভূত হয়েছে। এ গোত্রের পছন্দ-অপছন্দের কাছে অন্য গুরুত্বপূর্ণ তালেবান নেতারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন।

সংগঠনটির প্রয়াত নেতা মোল্লা ওমর নেতৃত্ব সবার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। আখুন্দজাদাকে সেই স্তরের কর্তৃত্ব অর্জনের জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে। তাঁর অনমনীয় ধরনের নেতৃত্ব তালেবানের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে পরিচয়কেন্দ্রিক বিভাজন গভীর করছে।

মোল্লা ইয়াকুব ও মোল্লা বারাদারের মতো মূল নেতারা তালেবানের মধ্যে নিজস্ব ক্ষমতার ভিত্তি গড়ে তুলেছেন। ফলে তালেবানের মধ্যে বেশ কিছু প্রভাবকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে সংঘাত তৈরি হচ্ছে।

দোহা সংলাপের (যার মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ হয়েছিল) সময় তালেবান আন্দোলন যে ঐক্য দেখাতে পেরেছিল, সেটা অনেকটাই শেষ হয়ে গেছে। এর পরিবর্তে তালেবানের উচ্চপর্যায়ের নেতৃত্বের মধ্যে ক্ষমতার ব্যাপক দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।

একই সঙ্গে ঘরের এবং বাইরে নির্বাসিত বিরোধী গোষ্ঠীগুলো তালেবানের বিরুদ্ধে জমে ওঠা পাহাড়সম অসন্তোষের মধ্যে নিজেদের ভিত্তি গাড়ার জন্য উর্বর ভূমি খুঁজে পাচ্ছে। চরমপন্থী প্রতিদ্বন্দ্বী যেমন ইসলামিক স্টেট, তারা প্রভাব বিস্তার করছে।

আফগানিস্তানের দুর্বল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা নেতৃত্বের এ লড়াইকে তীব্র করেছে। আফগানিস্তানের অর্থনীতি আগে থেকেই ভঙ্গুর ছিল। তালেবান ক্ষমতা দখলের আগে বিদেশি সহায়তা ও প্রবাসীদের পাঠানো আয়ের ওপর দেশটি ব্যাপকভাবে নির্ভর করত।

এখন বৈধ অর্থায়নের উৎস সীমিত হয়ে গেছে। ফলে তালেবান সরকারকে হাজি বশির নুরজাইয়ের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত খনি পরিচালনার আয় এবং সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরোপ করা ব্যাপক করের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
ফলে আফগান এলিটদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে বিশাল একটা ব্যবধান তৈরি হয়েছে। জানুয়ারি মাসে স্থানীয় আফগান মুদ্রার মান অবনমনের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। আবার ইউএসএআইডির সহযোগিতা বন্ধের কারণে খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে।

পুঁজি পাচার নিয়ন্ত্রণে জানুয়ারি মাসে তালেবান সরকার অদক্ষ একটা পদক্ষেপ নেয়। বিমানবন্দর দিয়ে ৫ হাজার ডলার এবং স্থলবন্দর দিয়ে ৫০০ ডলারের বেশি স্থানান্তর করার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

ফেব্রুয়ারি মাসে বিতর্কিত স্থাপনা নির্মাণ বিতর্কে পাকিস্তানের সঙ্গে তোর্কহাম সীমান্ত বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে খাদ্যসহ অন্যান্য পণ্য সরবরাহে বাধা তৈরি হয়। প্রায় পাঁচ হাজার ট্রাক সীমান্তে আটকে যায়।

একই সঙ্গে তালেবানের কট্টর নীতি, বিশেষ করে নারী অধিকারের ওপর বিধিনিষেধ বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে স্তিমিত করে দিয়েছে। পশ্চিমা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক দাতারা সেই ধরনের সরকারের সঙ্গে কাজ করতে শঙ্কিত থাকে, যারা তাদের অবস্থানের ক্ষেত্রে অনড়। ফলে ইতিমধ্যেই ধুঁকতে থাকা অর্থনীতিকে আরও চাপের মধ্যে ফেলে দেয়।

তালেবান সরকারের অস্থিতিশীলতার আরেকটি বড় কারণ হলো, কঠোর সামাজিক ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ শিথিল করতে তারা একেবারেই রাজি নয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রতিবেশী দেশগুলোর অব্যাহত আহ্বানের পরও তালেবান নাগরিক স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নারীদের শিক্ষার ওপর বিধিনিষেধ কঠোর করেছে।

এই পদক্ষেপগুলো বিশ্ব সম্প্রদায় থেকে আফগানিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। এটি কূটনৈতিক স্বীকৃতি কিংবা বাইরে থেকে বড় অঙ্কের আর্থিক সমর্থন পাওয়া অসম্ভব করে তুলেছে।

তালেবানের অতিরিক্ত দমনমূলক নীতির কারণে সৌদি আরব ও অন্য উপসাগরীয় দেশগুলো আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে কম আগ্রহ দেখাচ্ছে।

এমনকি যেসব দেশ ঐতিহাসিকভাবে তালেবানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল, সেসব দেশও এখন ন্যূনতম সহযোগিতার বাইরে বাড়তি কিছু দিতে দ্বিধাগ্রস্ত। কেননা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কি প্রতিক্রিয়া দেয়, সে জন্য তারা উদ্বিগ্ন।

ওয়াশিংটনে ক্ষমতার পালাবদলের পর ইউএসএআইডির অর্থায়ন বন্ধ করার বিষয়টি নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে। রিপাবলিকান সিনেটর টিম শেডি ‘কোনো করদাতা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন করতে পারে না’ শীর্ষক যে বিলটি এনেছেন, তার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে মার্কিন ফেডারেল সহযোগিতা যাতে আফগানিস্তানে না পৌঁছায়।

মার্কিন আইনপ্রণেতারা আশঙ্কা করছেন, মার্কিন করদাতাদের অর্থ চরমপন্থী উপাদানগুলোতে কার্যকরভাবে বা কার্যত সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে ইন্ধন জোগাতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্টনি ব্লিঙ্কেন স্বীকার করেছেন, কিছু ক্ষেত্রে আমেরিকার আধুনিক অস্ত্র তালেবানের কাছে গেছে। এসব ঘটনায় ট্রাম্প প্রশাসন আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া পুরোপুরি বন্ধ করার মতো সিদ্বান্ত নিতে পারে।

একই সঙ্গে ঘরের এবং বাইরে নির্বাসিত বিরোধী গোষ্ঠীগুলো তালেবানের বিরুদ্ধে জমে ওঠা পাহাড়সম অসন্তোষের মধ্যে নিজেদের ভিত্তি গাড়ার জন্য উর্বর ভূমি খুঁজে পাচ্ছে। চরমপন্থী প্রতিদ্বন্দ্বী যেমন ইসলামিক স্টেট, তারা প্রভাব বিস্তার করছে।

প্রতিবেশীরা আফগানিস্তানের এই পরিস্থিতির প্রভাব কী হবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। গোপনে তারা বিকল্প শক্তিগুলোকে সমর্থন দিতে পারে।

মোহাম্মদ বুরহান, পাকিস্তানের কায়েদে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ অ্যানালিস্ট
এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তালেবানের জোড়াতালির সরকার পতনের দিকে যাচ্ছে?