উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ার গঠনে সঠিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় নির্বাচন জরুরি
Published: 15th, March 2025 GMT
উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েই শিক্ষার্থীরা যে দুটি বিষয় নিয়ে সবচেয়ে বেশি দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন, তা হলো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন এবং কোন বিষয় নিয়ে পড়বেন।
এই সিদ্ধান্ত শুধু তাঁদের চার বছরের একাডেমিক জীবনই নয়, বরং ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিক্ষার মান, সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি সম্পর্কে জানা ও বোঝা জরুরি। এসব বিষয় নিয়েই ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)-এর উদ্যোগে এবং প্রথম আলো ডটকমের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ টক শো: কী পড়ব, কোথায় পড়ব। অনুষ্ঠানটি গত ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে।
ফেরদৌস বাপ্পীর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)-এর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড.
অনুষ্ঠানের শুরুতেই অধ্যাপক ড. জুড উইলিয়াম হেনিলোর কাছে উপস্থাপক জানতে চান, ইউল্যাবের শিক্ষার্থীরা প্রায়ই বলে থাকেন, এখানকার পরিবেশ অত্যন্ত স্বচ্ছ ও শিক্ষার্থীবান্ধব। এই পরিবেশ তৈরিতে আপনাদের কৌশল কী?
উত্তরে ড. জুড উইলিয়াম হেনিলো বলেন, ‘ইউল্যাব একটি উন্মুক্ত দ্বার নীতি অনুসরণ করে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সরাসরি ই-মেইলের মাধ্যমে শীর্ষ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। আমাদের দরজা সব সময় তাঁদের জন্য খোলা। পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তাঁরা আমাদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে পারে। তাঁদের প্রয়োজন ও সমস্যার কথা জানাতে পারে। এর মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ভালো বোঝাপড়া তৈরি হয়।’
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)-এর উদ্যোগে এবং প্রথম আলো ডটকমের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ টক শো: কী পড়ব, কোথায় পড়ব।উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ইউল য ব অন ষ ঠ
এছাড়াও পড়ুন:
রেলের টিকিটের নাগাল পায় না বহু মানুষ, লাভ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের
সরকারের গণপরিবহন ট্রেন ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। অনলাইনভিত্তিক টিকিট বিক্রির বর্তমান যে ব্যবস্থা, তাতে দেশের মাত্র ৫২ লাখ মানুষ ট্রেনের টিকিট কাটতে পারছে। কালোবাজারি বন্ধের কথা বলে টিকিট বিক্রি অনলাইনভিত্তিক করা হয়েছে। তবে এতে সবচেয়ে বেশি লাভ হয়েছে টিকিটি বিক্রির দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। একটি টিকিট বিক্রির বিনিময়ে মাত্র ২৫ পয়সা নেওয়ার কথা বলে দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদার এখন পাচ্ছে সাড়ে ছয় টাকা।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, বিগত এক দশকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজনীতিক ও রেলের কর্মকর্তারা শুধু আন্তনগর ট্রেন চালুতে জোর দিয়েছেন বেশি। বিপরীতে তাঁরা বন্ধ করে দিয়েছেন ৯৩টি লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন। ফলে নিম্ন আয়ের এবং স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতকারী মানুষের ট্রেনে চড়ার সুযোগ এমনিতেই কমে গেছে। ২০২৩ সাল থেকে টিকিট বিক্রির কার্যক্রম পুরোপুরি অনলাইনকেন্দ্রিক করে ফেলা হয়। এতে আরেক দফা অনলাইন সুবিধা না থাকা ব্যক্তিরা ট্রেনে চড়া থেকে অনেকটা দূরে সরে গেছেন।
আরও পড়ুনঈদে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু ১৪ মার্চ, স্টেশন-টার্মিনালে থাকবে সিসিটিভি০৯ মার্চ ২০২৫রেলের হিসাবে, এখন প্রায় ৭১ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয় অনলাইনে। বাকি যে ২৯ শতাংশ টিকিট কাউন্টারে বিক্রি হয়, এর প্রায় সবই কম গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ মাঝপথের কম গুরুত্বপূর্ণ এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনে যাওয়ার টিকিটই বেশি বিক্রি হয় কাউন্টারে। এ ছাড়া কাউন্টারে টিকিট কাটার সময় মোবাইল ফোনে ওটিপি নম্বর আসে। গ্রাহক তা দেখালে টিকিট পান। এতে টিকিট কাটতে বেশ সময় লাগছে।
এসব ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় এই গণপরিবহন দেশের শিক্ষিত ও তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানুষের বাহনে পরিণত হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। সব মিলিয়ে অপেক্ষাকৃত কম আয়ের কিংবা গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের জন্য রেলের টিকিট কাটা কঠিন হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অনলাইনে টিকিট বিক্রির উদ্যোগটি ভালো। এতে ইন্টারনেট ব্যবহারে দক্ষ ব্যক্তিরা সহজে টিকিট কাটতে পারছেন। তবে ভালো আসনের টিকিট দ্রুত কেন শেষ হয়ে যায়, দালালেরা ভালো টিকিট আগে থেকে কেটে রাখে কি না, ইন্টারনেট সুবিধাবিহীন মানুষ টিকিট পায় কি না, সে বিষয়গুলো দেখা উচিত; পর্যালোচনা করা উচিত।
২০২২ সাল থেকে রেলের টিকিট বিক্রির দায়িত্বে আছে যৌথভাবে সহজ ডটকম-সিনেসিস-ভিনসেন। প্রতি টিকিট বিক্রির বিনিময়ে তারা ২৫ পয়সা নেবে—এই শর্তে দায়িত্ব পায়। আর অনলাইনে টিকিট বিক্রির জন্য তাদের চার্জ হিসেবে সাড়ে ছয় টাকা পাওয়ার কথা ছিল আগের নিয়ম অনুযায়ী। সহজ দায়িত্ব নেওয়ার আগে ২০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হতো। এখন অনলাইনে টিকিট বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় সাধারণভাবে টিকিটপ্রতি ২৫ পয়সার পাশাপাশি অনলাইন মাশুলের পরিমাণ বেড়ে গেছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, অনলাইনে বিক্রির শুরুতেই সব টিকিটি শেষ—এমন অভিযোগ আছে। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। মানুষ কীভাবে সহজে টিকিট পাবে, সেটা নিয়ে একটা বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে। অনলাইনে টিকিট কাটার ক্ষেত্রে বাড়তি টাকা ঠিকাদারের পকেটে যাওয়ার বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, বিষয়টি তিনি দেখবেন।
আরও পড়ুনসচিব–কর্মকর্তার ফোনে ট্রেনের টিকিট রাখা যাবে না: ফাওজুল কবির খান২৯ অক্টোবর ২০২৪৩ শতাংশ মানুষ টিকিট পাবেনরেলের টিকিট বিক্রির ব্যবস্থাটির নাম বাংলাদেশ রেলওয়ে ইন্টিগ্রেটেড টিকেটিং সিস্টেম (বিআরআইটিএস)। এই ব্যবস্থা চালুর পর ট্রেনের টিকিট পেতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে প্রথমে নিবন্ধন করতে হয়। এরপরই অনলাইনে (মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েবসাইট) টিকিট কাটা যায়।
রেলের সূত্র জানায়, টিকিট পেতে গত অক্টোবর পর্যন্ত ৫২ লাখ ৫৫ হাজার ৯১০ জন নিবন্ধন করেছেন। সর্বশেষ জনশুমারি অনুসারে, দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। এ হিসাবে, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ৩ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ মানুষ ট্রেনের টিকিট কাটতে পারবেন। একজন ব্যক্তি একসঙ্গে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কাটতে পারেন। এ সুযোগ নিলে আরও কিছু মানুষ ট্রেনের টিকিটের আওতায় আসে। এরপরও বিপুল সংখ্যায় মানুষ ট্রেনসেবার আওতার বাইরে রয়ে গেছেন।
টিকিটের নিবন্ধন করতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে রেলসেবা অ্যাপ বা রেলের ওয়েবসাইটে নানা তথ্য জমা করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ইন্টারনেট সেবা থাকা এবং এই বিষয়ে জ্ঞান থাকা জরুরি। এ ছাড়া মুঠোফোনে জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মতারিখ দিয়ে এসএমএস করেও নিবন্ধন করা যায়। এ ক্ষেত্রেও মুঠোফোন থাকা এবং তা দিয়ে নিবন্ধনের নিয়ম জানতে হবে। রেলের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে তেমন প্রচারণাও চালানো হয়নি।
আরও পড়ুনট্রেনের টিকিট শেষ দুই মিনিটেই, এ কেমন ডিজিটাল সমাধান?২৫ জানুয়ারি ২০২৫নিবন্ধনের পর আগ্রহী ব্যক্তির স্মার্টফোন বা কম্পিউটার জাতীয় ডিভাইস থাকতে হবে। তারপর এতে থাকতে হবে ইন্টারনেট সংযোগ। এ ছাড়া অনলাইনে টিকিট কাটার টাকা পরিশোধ করার জন্য ব্যাংকের কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। কারণ, টাকা পরিশোধ করতে হয় অনলাইনে।
জনশুমারি অনুসারে, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩১ শতাংশ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ নাগরিক কম্পিউটার ব্যবহার করেন, ল্যাপটপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২ দশমিক ৯ শতাংশ, আর মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী ৮৯ দশমিক ৯ শতাংশ। কিন্তু এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ ফিচার ফোন ব্যবহারকারী।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দেশের অর্ধেক মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না। স্মার্টফোনের ব্যবহার এখনো কম। ডিজিটাল বৈষম্য এখানে অনেক থাকার পরও একটি সেবাকে পুরোপুরি অনলাইনে করে সাধারণ মানুষদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। রেলের টিকিট একবারের জন্য নয়। এটা প্রতিনিয়তই লাগে। অনলাইন সেবা অবশ্যই থাকতে হবে। কিন্তু যাঁরা পিছিয়ে আছেন, তাঁদের জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা রেখে এ ধরনের সেবা চালু করতে হতো। যাঁরা ডিজিটাল সেবা গ্রহণে পিছিয়ে আছেন, তাঁদের জন্য রেলের বিকল্প ব্যবস্থা কী, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রয়োজন।
বর্তমানে প্রতিদিন আন্তনগর ট্রেনের প্রায় ৩০ হাজার টিকিট বিক্রি হয়। একই সময়ে অনলাইন ও কাউন্টারে টিকিট ছাড়া হয়। স্বভাবতই প্রথম ঘণ্টাতেই অনলাইনে প্রায় সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়।
রেলের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, অনলাইনে টিকিট বিক্রি বৃদ্ধির পর কালোবাজারি বন্ধ হয়নি। দক্ষ কালোবাজারিরা সাধারণ যাত্রীদের চেয়ে দ্রুত টিকিট কাটার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে। তাই অনলাইনে ‘এক মিনিটে টিকিট শেষ’—এমন অভিযোগ সর্বত্র।
আরও পড়ুনট্রেনের টিকিট নতুন পদ্ধতিতে যেভাবে কাটা যাবে০১ মার্চ ২০২৩লাভ হলো সহজের২০০৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত টানা ১৫ বছর ট্রেনের টিকিট বিক্রি করে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস)। এর আগেও তারা এই দায়িত্ব পালন করে। সিএনএস প্রতি টিকিটে ২ টাকা ৯৯ পয়সা নিত। আর অনলাইনে টিকিট বিক্রি করলে পেত সাড়ে ছয় টাকা। অবশ্য তখন ২০ শতাংশের মতো টিকিট অনলাইনে বিক্রি হতো।
টিকিট বিক্রির জন্য ঠিকাদার নিয়োগে ২০২০ সালে দরপত্র আহ্বান করে রেলওয়ে। সহজ ডটকম পাঁচ বছরে ৩০ কোটি ২৫ লাখ টাকায় ২০ কোটি টিকিট বিক্রি করে দেওয়ার প্রস্তাব করে। তবে তাদের প্রস্তাবটি ছিল কিছুটা ভিন্ন। তারা রেলের কাছ থেকে মাত্র ৫ কোটি টাকা নেবে বলে উল্লেখ করে। বাকিটা বিজ্ঞাপন থেকে আয় করার কথা। এ হিসাবে প্রতিটি টিকিট বিক্রির জন্য সরাসরি মাত্র ২৫ পয়সা পায় তারা। অন্যদিকে সিএনএস ২৪ কোটি টাকায় ২০ কোটি টিকিট বিক্রির প্রস্তাব দেয়। অর্থাৎ প্রতি টিকিটের জন্য তাদের প্রস্তাবিত মাশুল ছিল ১ টাকা ২০ পয়সা।
কম দর প্রস্তাব করে সহজ ডটকম টিকিট বিক্রির দায়িত্ব পায়।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, দরপত্রে পাঁচ বছরে ৮ কোটি টিকিট অনলাইনে এবং ১২ কোটি কাউন্টারে বিক্রি হবে—এমন প্রক্ষেপণ করা হয়েছিল। কিন্তু সহজকে দায়িত্ব দেওয়ার পর প্রথমে ঈদে শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়। পরে অনলাইনে বিক্রির বিষয়টিই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এতে প্রায় ২০ কোটি টিকিটের ৭০ শতাংশই অনলাইনে বিক্রি করার সুযোগ পাচ্ছে সহজ।
সহজ অনলাইন কিংবা কাউন্টার—সব টিকিট থেকেই প্রথমে পাচ্ছে ২৫ পয়সা। আবার শুধু অনলাইনে বিক্রি করা প্রতিটি টিকিটের জন্য পাচ্ছে বাড়তি সাড়ে ছয় টাকা। একজন ব্যক্তি একসঙ্গে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কাটতে পারে। অনলাইনে তা চারটি হিসাবেই গণ্য করে সহজকে বিল দেওয়া হয়। একটি টিকিট কাটার জন্য সফটওয়্যারের যে ব্যবহার, চারটির জন্য একই ব্যবহার হলেও বিল পাচ্ছে বাড়তি।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, চুক্তি অনুসারে পাঁচ বছরে সহজ টিকিট বিক্রি ও বিজ্ঞাপন সব মিলিয়ে ৩০ কোটি টাকা পেত। অনলাইনে বেশি টিকিট বিক্রি হওয়ার কারণে বিজ্ঞাপনের আয় ছাড়াই তারা ৯২ কোটি টাকা বাড়তি আয়ের সুযোগ পাচ্ছে।
অনলাইনে কেনা টিকিটের জন্য গ্রাহকের কাছ থেকে বাড়তি ২০ টাকা নেওয়া হয়। এর মধ্যে সহজ পাচ্ছে সাড়ে ছয় টাকা। আরও সাড়ে ছয় টাকা যায় যে ব্যাংকিং গেটওয়ের মাধ্যমে দাম পরিশোধ করা হয়, সেই প্রতিষ্ঠানে। সরকার ভ্যাট হিসেবে পায় তিন টাকা। বাকি চার টাকা রেলওয়ে কল্যাণ ট্রাস্টের।
অনলাইনে টিকিট বিক্রির ফলে বাড়তি সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে সহজ ডটকমের প্রশাসন বিভাগের প্রধান ও প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা আমিনুল হক প্রথম আলোকে বলেন, অনলাইনে টিকিট বিক্রিতে অনেক খরচ। ফলে বেশি সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি ঠিক নয়।
প্রতিষ্ঠানটির অপারেশন বিভাগের প্রধান সন্দ্বীপ দেবনাথও দাবি করেন, অনলাইনে টিকিট বিক্রিতে তাঁদের আয় বেশি হলেও খরচও অনেক। কারণ, পুরো ব্যবস্থাটি তাঁদের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়।
আরও পড়ুনট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু, প্রথম আধা ঘণ্টায় ৬০ লাখ ‘হিট’০২ জুন ২০২৪চুক্তি অনুযায়ী অনেক কিছুই হয়নিরেলওয়ে সূত্র জানায়, সিএনএসের সঙ্গে পরোক্ষভাবে ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তৎকালীন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন আওয়ামী লীগের আইনজীবী নেতা ছিলেন। আইন অঙ্গনে দুজনের মধ্যে বিরোধ ছিল। সুজন রেলমন্ত্রী হয়ে যেকোনো মূল্যে সিএনএসকে বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নেন। অবশ্য সিএনএসের বিরুদ্ধেও অভিযোগ ছিল যে তারা প্রভাব খাটিয়ে একাধিকবার রেলের টিকিট বিক্রির দায়িত্ব পেয়ে নানা অজুহাতে বাড়তি টাকা তুলে নিয়েছে। সহজ ডটকম বেসরকারি বাসের টিকিট অনলাইনে বিক্রি করার মধ্য দিয়ে এই ব্যবসায় এসেছে।
সহজের সঙ্গে করা চুক্তি অনুসারে, রেলের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোতে বড় ৬০টি মনিটর স্থাপন করার কথা। এসব মনিটরে ট্রেন গমনাগমন, কোচের সিরিয়াল নম্বর, ট্রেনের অবস্থান ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য সরবরাহের কথা। ট্রেনের বর্তমান অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য ঠিকাদারের পক্ষ থেকে রেলের প্রতিটি ইঞ্জিনে জিপিএস ট্র্যাকার স্থাপন এবং তা রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা। তবে এর অনেক কিছুই হয়নি। এ ছাড়া বহনযোগ্য যন্ত্রের মাধ্যমে (পিওএস) টিকিট বিক্রির কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন ভোগান্তি এড়াতে যন্ত্রের ব্যবহারের কথা হয়। তা–ও কার্যকর নেই বলে রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এই বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও গণপরিবহন–বিশেষজ্ঞ সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, রেলে যে পরিমাণ বিনিয়োগ হয়েছে, সে হারে যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা বাড়েনি। কেন বাড়েনি এই জবাবদিহি করতে হবে। সক্ষমতা বাড়ালে কালোবাজারি বন্ধে এত কিছুর দরকার হবে না। তিনি আরও বলেন, অনলাইনে টিকিট কাটতে খরচ কম হওয়ার কথা। বাড়তি টাকা নেওয়া হলে তা অবশ্যই অনিয়ম।
আরও পড়ুনট্রেনের টিকিট পুরোটা অনলাইনে দেওয়া কতটা যৌক্তিক০৬ এপ্রিল ২০২৩