দুই ইউনিয়নবাসীর আতঙ্ক স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা
Published: 15th, March 2025 GMT
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক তোফাজ্জল হোসেন মুফাকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। চাঁদা না দেওয়ায় জেরে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের একাধিক নেতাসহ প্রবাসী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যক্তির বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ ওঠার পর তাঁকে বহিষ্কার করা হয়।
গতকাল শনিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন গাজীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আশরাফ নেওয়াজ চৌধুরী শাওন। বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হাসিবুর রহমান খান মুন্না ও সদস্য সচিব আশরাফ নেওয়াজ চৌধুরী শাওনের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে তোফাজ্জলকে বহিষ্কার আদেশের তথ্য জানানো হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বিএনপি নেতা জানায়, ৫ আগস্টের পর থেকে তোফাজ্জল বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। দলের নাম ভাঙিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে তিনি অর্থ আদায় করছেন। এমনকি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়ন ও মোক্তারপুর ইউনিয়নবাসীর কাছেও তোফাজ্জল মুফা আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছেন। দলবল নিয়ে প্রায়ই হিন্দু পরিবার ও প্রবাসীর বাড়িতে হানা দেন। সেখান থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকাপয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। সম্প্রতি মুফার হাতে কালীগঞ্জের একজন সাংবাদিকও অপদস্থ হন। এসব ঘটনায় সংগঠনের শীর্ষ নেতারা তাঁর প্রতি ক্ষুব্ধ।
তোফাজ্জল হোসেন মুফার ভাষ্য, ‘রাজনীতির সূত্র যারা জানেন না, তারাই কেবল আমার বহিষ্কার আদেশ শোনার পর আলহামদুলিল্লাহ বলেছেন। অথচ রাজনীতিতে পুরস্কার, তিরষ্কার, বহিষ্কার, গ্রেপ্তার স্বাভাবিক ঘটনা।’
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আশরাফ নেওয়াজ চৌধুরী শাওন বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক তোফাজ্জল হোসেন মুফাকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের একাধিক নেতার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এ কারণে সাংগঠনিকভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শৃঙ্খলাবিরোধী এমন কর্মকাণ্ডের অভিযোগ যার বিরুদ্ধেই প্রমাণিত হবে, তাকেই বহিষ্কার করা হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গরম তেল ঢেলে স্ত্রীকে হত্যায় মৃত্যুদণ্ড
দুই বছর আগে রাজধানীর কদমতলী থানার খালপাড় এলাকায় গায়ে গরম তেল ঢেলে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে মিজান সরদার নামে একজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। রোববার সকালে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার আগে আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত মিজান পিরোজপুরের নাজিরপুর থানার বাবুরহাট গ্রামের মৃত আওয়াল সরদারের ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী মীম আক্তার রুপার সঙ্গে ঘটনার ১২ বছর আগে মিজান সরদারের বিয়ে হয়। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। কদমতলীর খালপাড়ের ‘ইসলাম টাওয়ার’ নামে একটি বহুতল ভবনের সপ্তম তলায় বসবাস করতেন তারা। যৌতুকের দাবিতে বিভিন্ন সময় ভুক্তভোগী তার স্বামীর নির্যাতনের শিকার হন। এর আগে আসামি মিজান তার শ্বশুরের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা মূল্যের একটি জমি এবং সাত লাখ টাকা মূল্যের একটি দোকান যৌতুক হিসেবে নেন।
২০২৩ সালের ৬ মে রাত ১০ টার দিকে মিজান সরদার ভুক্তভোগী রুপার কাছে আরও যৌতুকের টাকা দাবি করলে তিনি তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এ কারণে মিজান তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। রাত তিনটার দিকে যখন ভুক্তভোগী ও তাদের সন্তানরা ঘুমাচ্ছিল তখন মিজান সরদার একটি ফ্রাইং প্যানে সয়াবিন তেল গরম করে তার ওপর ঢেলে দেন। এতে গুরুতর দগ্ধ হয়ে ভুক্তভোগী চিৎকার করেন। এ সময় বিল্ডিংয়ের কেয়ারটেকার গিয়ে ভুক্তভোগী ও তার সন্তানদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে যায়। যেখানে তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী রুপার বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ৯ মে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। পরে ২৫ মে ভুক্তভোগী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুর আগে ভুক্তভোগী ১৪ মে ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ মুজাহিদুল ইসলামের কাছে মৃত্যুকালীন জবানবন্দি দেন। একই আদালতে আসামি মিজান সরদার দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
তদন্ত শেষে পুলিশের উপ-পরিদর্শক সরোজিৎ কুমার ঘোষ একই বছরের ৩১ জুলাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলার বিচার চলার সময় আদালত ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।