দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ হঠাৎ করে বাড়তে শুরু করেছে। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গত ১০ মার্চ পর্যন্ত সরকার নিট ৩৮ হাজার ৫১০ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। গত জানুয়ারি পর্যন্ত যেখানে সরকারের ব্যাংক ঋণ ছিল ১৩ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। এর মানে প্রথম ৭ মাসে সরকার যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছিল, শেষ এক মাস ১০ দিনে নিয়েছে তার প্রায় দ্বিগুণ। ব্যাংক খাত থেকে ঋণ বাড়ার কারণের মধ্যে রাজস্ব আদায় কম হওয়া, সঞ্চয়পত্র থেকে প্রত্যাশিত ঋণ না পাওয়া এবং বিদেশি উৎস থেকে ঋণছাড় কমে যাওয়া উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, অর্থবছরের শেষ সময়ে স্বাভাবিকভাবে সরকারের ঋণ বেড়ে থাকে। তবে এখন পর্যন্ত যে ঋণ নিয়েছে, লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় তা অনেক কম। আওয়ামী লীগ সরকারের দেওয়া বাজেটে চলতি অর্থবছর ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকার লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকা করেছে। গভর্নর জানিয়েছেন, ব্যাংক খাতের বর্তমান বাস্তবতায় সরকারের ঋণ ৯০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে সীমিত রাখা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান সরকার ব্যয় সংকোচন নীতিতে চলছে। তবে বকেয়া ঋণ ও সুদ পরিশোধ অনেক বেড়েছে। আবার বেতন-ভাতাসহ সরকারের চলতি ব্যয় প্রতিবছর বেড়ে থাকে। তবে চলতি
অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে এনবিআরের রাজস্ব
আদায় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা কমে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকায় নেমেছে। সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ ঋণাত্মক। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে যা ঋণ
নেওয়া হয়েছে, তার চেয়ে এ খাতে আগের দায় শোধ হয়েছে ২ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা বেশি। এ ছাড়া বিদেশি উৎস থেকে ঋণ ছাড় ও প্রতিশ্রুতি কমেছে। সব মিলিয়ে শেষ দিকে এসে
ব্যাংক ঋণে নির্ভরতা কিছুটা বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের গত ১০ মার্চ পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকার ৮৫ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগে নেওয়া ঋণের ৪৭ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পরিশোধ করায় মুদ্রাবাজার সংকোচন হয়। অবশ্য এ সময়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে টাকা ছাপিয়ে ২৯ হাজার ৪১০ কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বাড়াতে যা কিছুটা হলেও সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।
মূলত বিগত সরকারের সময়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপ ঋণের নামে বিপুল পরিমাণের অর্থ আত্মসাৎ করে। এখন আর সে ঋণ ফেরত না আসায় কোনো কোনো ব্যাংক আমানতকারীদের অর্থ ঠিকমতো ফেরত দিতে পারছে না। যে কারণে গত নভেম্বর থেকে তিন দফায় বিশেষ ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী গত ১০ মার্চ সার্বিকভাবে ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ১২ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। গত জুন শেষে যা ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংকে ঋণস্থিতি বেড়ে ৪ লাখ ৪ হাজার ১০৫ কোটি টাকা হয়েছে। গত জুন শেষে যা ছিল ৩ লাখ ১৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। আর বাংলাদেশ ব্যাংকে স্থিতি কমে ১ লাখ ৮ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকায় নেমেছে। গত জুন শেষে যা ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। গত সরকারের সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গোপনে ‘ওভারড্রাফট’ খাতে নেওয়া ৪৮ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা সমন্বয় করে এখন ৬ হাজার ৭৪২ কোটি টাকায় নেমেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এমনিতেই মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা কমেছে। গত বছর আমানত বেড়েছে মাত্র ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এ সময়ে ট্রেজারি বিল এবং বন্ডের বিপরীতে ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগের দায় শোধ করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে ১০ শতাংশে নেওয়া হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশে নেমেছে। মূল্যস্ফীতি আরও কমবে বলে মনে করেন গভর্নর।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র র ঋণ ঋণ ন য় ছ গত জ ন
এছাড়াও পড়ুন:
গ্যাস–সংকটে সিইউএফএলে সার উৎপাদন বন্ধ
গ্যাস–সংকটে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডে (সিইউএফএল) সার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। আজ শুক্রবার সকাল সাতটার দিকে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
এর আগে যান্ত্রিক ত্রুটির (রিঅ্যাক্টরের সমস্যা) কারণে গত ৩ জানুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইউরিয়া সার উৎপাদন বন্ধ ছিল কারখানাটিতে। দেড় মাস পর আবারও কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়ল।
উৎপাদন আবার বন্ধ হয়ে পড়ার বিষয়টি সিইউএফএলের উৎপাদন বিভাগের প্রধান উত্তম চৌধুরী প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘গ্যাস সরবরাহ না থাকায় আজ সকালে উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হয়েছে।’
পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনের জন্য সম্পূর্ণ গ্যাসনির্ভর এ কারখানায় দৈনিক ৪৮ থেকে ৫২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন। গ্যাস–সংকট ও যান্ত্রিক নানা সমস্যা থাকায় গত অর্থবছর কারখানাটিতে প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদিত হয়। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা বছরে প্রায় ২৬ লাখ মেট্রিক টন। তার মধ্যে সিইউএফএলসহ বিসিআইসির অন্যান্য কারখানা প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন করে। অবশিষ্ট ১৬ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া উচ্চমূল্যে আমদানি করতে হয়।
সিইউএফএল সূত্র জানায়, গত দুই বছর কখনো যান্ত্রিক ত্রুটিতে, কখনো গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ ছিল সিইউএফএল। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে শুধু পাঁচ দিন চালু ছিল এ কারখানা। গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়ার পর ১৩ অক্টোবর সিইউএফএল চালু হয়। এ বছরের ৩ জানুয়ারি আবারও যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে দীর্ঘ সময় লাগে কারখানাটি চালু করতে। সর্বশেষ যাবতীয় স্টার্টআপ (কারখানা চালু প্রক্রিয়া) শেষে ২৬ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত আড়াইটার সময় কারখানা চালু হয়।
১৯৮৭ সালের ২৯ অক্টোবর জাপানের কারিগরি সহায়তায় কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে আনোয়ারা উপজেলার রাঙ্গাদিয়ায় সার কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করে সরকার। কারখানা চালু হওয়ার সময় দৈনিক ১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন এবং বার্ষিক ৫ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদনক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে দৈনিক ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছে। পাশাপাশি বার্ষিক ৩ লাখ ১০ মেট্রিক টন অ্যামোনিয়া উৎপাদন করতে পারে সিইউএফএল।