পোশাক রপ্তানিতে অপ্রচলিত বাজারের অংশ কমছে
Published: 15th, March 2025 GMT
তৈরি পোশাকের অপ্রচলিত বা নতুন বাজারে প্রত্যাশা অনুযায়ী রপ্তানি বাড়ছে না। মোট রপ্তানি আয়ে এ ধরনের বাজারের অংশ কমে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের যে গতিপ্রবাহ, তা মূলত দীর্ঘদিনের প্রচলিত বাজারকে কেন্দ্র করেই। গুটিকয়েক বাজারের প্রতি অতিনির্ভরতাকে রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি হিসেবে দেখা হয়। বিশেষ করে যে কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ কিংবা যুদ্ধ পরিস্থিতি রপ্তানি খাতে ঝুঁকি ডেকে আনে। অতিমারি করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এর বড় উদাহরণ।
প্রচলিত বাজার হিসেবে ২৭ জাতির জোট ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাকে গণ্য করা হয়। ব্রেক্সিটের মাধ্যমে ইইউ থেকে আলাদা হওয়ার পর যুক্তরাজ্যও প্রচলিত বাজার হিসেবে গণ্য হচ্ছে। এর বাইরে সব দেশকে অপ্রচলিত বাজার হিসেবে গণ্য করা হয়। জাপান, অস্ট্রেলিয়া, চীন, ভারত ও তুরস্ক অপ্রচলিত শ্রেণিতে উল্লেখযোগ্য নাম। বিশ্বের ১৯৫টি দেশের প্রায় সবক’টিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়।
দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের পণ্য আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক ধার্য করেছেন। ২৭ জাতির জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যে এখনও শুল্ক আরোপ হয়নি। তবে শুল্ক খড়্গ যে নেমে আসবে, তা নিশ্চিত। ট্রাম্প নিজেই জানিয়ে রেখেছেন, ইইউর ওপর নিশ্চিতভাবেই শুল্ক বসানো হবে। এ বাস্তবতায় বিশ্ব অর্থনীতি কিছুটা অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড.
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবির উপাত্ত অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের গত আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ইইউতে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৩ শতাংশের মতো। রপ্তানির মোট পরিমাণ ১ হাজার ৩৪২ কোটি ডলারেরও বেশি। এতে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে ইইউর হিস্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ দশমিক ১০ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। একইভাবে একক রাষ্ট্র হিসেবে প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রে গত আট মাসে রপ্তানি বেড়েছে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এই বৃদ্ধির ফলে বিশ্ববাজারে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের হিস্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৯১ শতাংশ; যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ। মোট ৫০৭ কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যের তৈরি পোশাক গেছে দেশটিতে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪৩৫ কোটি ডলার।
প্রচলিত অন্য বাজারের মধ্যে কানাডায় রপ্তানি বেড়েছে ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ। রপ্তানি বাজার হিসেবে কানাডার হিস্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ১৬ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। অবশ্য যুক্তরাজ্যের বাজারে হিস্যা কিছুটা কমে এসেছে। গত আট মাসে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৯৪ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ ছিল।
পরিসংখ্যান বলছে, প্রচলিত বাজারে বড় হারে রপ্তানি বৃদ্ধির বিপরীতে অপ্রচলিত শ্রেণির বাজারে রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। এতে মোট রপ্তানিতে এসব দেশের হিস্যা কমে দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ৯০ শতাংশ। গত অর্থবছরে একই সময়ে যা ছিল ১৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। গত আট মাসে অপ্রচলিত বাজারে পোশাকের মোট রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৫৩ কোটি ডলারের কিছু কম। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪২৬ কোটি ডলার।
তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক এবং ডেনিম এক্সপার্টের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল সমকালকে বলেন, পোশাক রপ্তানি সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পশ্চাত সংযোগ শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে হবে। বিনিয়োগ উপযোগী অন্যান্য সেবা ও মানসম্পন্ন অবকাঠামোর প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রচল ত ব জ র দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
ছোট হচ্ছে আগামী বাজেটের আকার
আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের চেয়েও ছোট হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আগামী অর্থবছরের জন্য সাত লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকার বাজেটর প্রস্তাবনার কথা বলা হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে দুই হাজার কোটি টাকা কম। এর আগে মাত্র একবার বাজেটের আকার আগের বছরের চেয়ে কমিয়ে ধরা হয়েছিল।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রবিবার (১৩ এপ্রিল) অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও বাজেট ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভায় নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে। সভা সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই সভায় পরিকল্পনা, বাণিজ্য, খাদ্য উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যোগ দেবেন বলে জানা গেছে। এটি হবে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভা। এর আগে গত বছরের ২ ডিসেম্বর প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের অনুষ্ঠিত কো-অর্ডিনেন্স কাউন্সিলের সভায় আগামী অর্থবছরের জন্য আট লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকার একটি বাজেটের খসড়া তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে ঘাটতি ধরা হয়েছিল দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিবি)’র আকার ছিল দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা।
এখন অর্থবছরের নয় মাস যাওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়ন সন্তোষজনক নয়। নয় মাসে বাজেট বাস্তবায়নের হার মাত্র ৩৬ শতাংশ। বছর শেষে বাস্তবায়নের হার ৭০ ভাগের ওপরে ওঠানো সম্ভব হবে না। এই পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে রাজস্ব আদায়ের নাজুক অবস্থা এবং বিদেশি সহায়তা কমে যাওয়া বাজেট ছোট করার একটি বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে বাজেটের আকার সাত লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করা হলেও পরবর্তীতে তা বাড়িয়ে আট লাখ কোটি টাকার ঘরে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী মে মাসে বাজেট আকার চূড়ান্ত করা হবে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য সরকার মূল্যস্ফীতি নির্ধারণ করতে পারে ৬.৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরেও ছিল মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশ। আর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫.৫ শতাংশ। যা চলতি অর্থবছর ছিল মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশ। এর আগে আগামী অর্থবছরে জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৬ শতাংশ। মূলত আগামী বাজেটে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করার সম্ভাবনা রয়েছে ৬৩ লাখ ১৫ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা। আর বাজেট ঘাটতি ধরা হতে পারে ৩.৬২ শতাংশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে (এনবিআর) সরকারের আয়ের লক্ষ্য হতে পারে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকার মতো। চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এনবিআরের।
জানা গেছে, এনবিআর চাচ্ছে ৫ লাখ টাকার লক্ষ্যমাত্রা নিতে। অন্য দিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের ঋণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণের জন্য চাপ দিয়ে রেখেছে।
এদিকে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য সরকার আগামী অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে পারে। যা চলতি অর্থবছরে রয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।
ঢাকা/হাসনাত/ইভা