চট্টগ্রাম মেডিকেলে নবজাতকের মৃত্যু, আয়ার বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ
Published: 15th, March 2025 GMT
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে শনিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। শিশুটির পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালের একজন আয়া অক্সিজেন সিলিন্ডারে পানি সরবরাহ না করায় এ ঘটনা ঘটেছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, অক্সিজেনের কারণে শিশুটি মারা গেছে, তা সঠিক নয়।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, ৯ মার্চ নবজাতকটিকে কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩২ নম্বর নবজাতক ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সে নিউমোনিয়াসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিল। শিশুটিকে সার্বক্ষণিক অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছিল।
নবজাতকটির বাবার নাম বেলাল উদ্দিন। তিনি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার শিলখালির জারুলবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, বকশিশ না দেওয়ায় এক আয়া শিশুটির অক্সিজেন সিলিন্ডারের মুখে পানি সরবরাহ করেননি। এ কারণে তাঁর সন্তান মারা গেছে। ওই আয়া তাঁর কাছে ২০০ টাকা বকশিশ চেয়েছিলেন।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, নবজাতকের মৃত্যুর পর বিষয়টি মৌখিকভাবে হাসপাতালের পরিচালককে জানানো হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নবজাতক বিভাগের প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছেন।
জানতে চাইলে নবজাতক ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান মোহাম্মদ শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, এক লিটারের কম অক্সিজেনের জন্য পানি সরবরাহ করার প্রয়োজন পড়ে না।
এটা কোনো সমস্যা নয়। শিশুটি জন্মগতভাবে অনেক রোগে ভুগছিল। তার অবস্থা খুব খারাপ ছিল। অক্সিজেনের কারণে সে মারা গেছে, তা সঠিক নয়। তবে পানি দেওয়ার জন্য বকশিশ চাওয়াটা কোনোভাবে কাম্য নয়। এ জন্য পরিচালকের নির্দেশে ওই আয়াকে হাসপাতালে আসতে নিষেধ করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অনলাইন রেলের টিকিট বিক্রির সংবাদে সহজের ব্যাখ্যা ও প্রতিবেদকের বক্তব্য
প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ১৩ মার্চ প্রকাশিত ‘অনলাইনে ট্রেনের টিকিটের নাগাল পায় না বহু মানুষ, লাভ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের’ শিরোনামের সংবাদের বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছে সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন (যৌথ)। প্রতিষ্ঠানটি রেলের টিকিট বিক্রির দায়িত্বে নিয়োজিত।
সহজ ডটকম বলেছে, রেলের টিকিট পুরোপুরি অনলাইন হয়নি। এখন রেলের টিকিট অনলাইন ও কাউন্টারে একযোগে বিক্রি করা হয়। অনলাইনে টিকিট বিক্রির কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় না। গুরুত্বপূর্ণ আসনগুলো অনলাইন ও কাউন্টারে সমান সুযোগ দিয়ে বিক্রি করা হয়।
একটি টিকিট বিক্রির বিনিময়ে ২৫ পয়সা নেওয়ার কথা বলে দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদারের এখন সাড়ে ছয় টাকা পাচ্ছে—এই তথ্যের বিরোধিতা করেছে সহজ। তারা বলেছে, কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সহজের কমিশন ও ফি অপরিবর্তিত আছে, যা দরপত্রে উল্লেখিত সব শর্তের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সহজ তাদের বক্তব্যে বলেছে, তারা দায়িত্ব নেওয়ার আগে ৫০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে বিক্রির জন্য বরাদ্দ ছিল। এখন ৬৫-৭০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়।
এ ছাড়া চুক্তি অনুসারে, রেলের বিভিন্ন স্টেশনে ৬০টি মনিটর স্থাপন করা হয়েছে বলে দাবি করেছে সহজ। তবে জিপিএস ট্র্যাকার স্থাপন হয়নি। ফলে এই বিষয়ে রেলের সঙ্গে কার্যক্রম চলমান আছে। চুক্তি অনুসারে, টিকিট বিক্রির জন্য বহনযোগ্য যন্ত্র (পিওএস) সরবরাহ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে সহজ।
প্রতিবেদকের বক্তব্য
রেলের টিকিট অনলাইন ও কাউন্টারে একযোগে ছাড়ার বিষয়টি ঠিক আছে। কিন্তু অনলাইন ও কাউন্টারের কোনটিতে কতটি টিকিট বিক্রি হবে, তা উল্লেখ নেই। এখানেই রেল কর্তৃপক্ষ সহজকে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এখন টিকিট ছাড়ার প্রথম আধা ঘণ্টার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সব টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়ে যায়। কাউন্টারে থাকে কেবল মাঝপথের কম গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনের টিকিট। এ ছাড়া কাউন্টারে টিকিট বিক্রির বেলায় মোবাইলে ওটিপি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটা কাউন্টারে টিকিট কাটার ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ এবং নিরুৎসাহিত করছে। প্রকারান্তরে এটা সহজের সুবিধা করে দিয়েছে।
প্রতি টিকিট ২৫ পয়সায় বিক্রি করবে—এই প্রস্তাব করার কারণেই সহজ অন্যান্য ঠিকাদারের তুলনায় দর প্রস্তাবে অনেক দূর এগিয়ে যায়। কৌশলে তারা বলেছিল বিজ্ঞাপন প্রচার করে ২৫ কোটি ২০ লাখ টাকা আয় করবে। আদতে ২০ কোটি টিকিট ৫ কোটিতে বিক্রি করার ঘোষণা না দিলে কাজটি পেত না সহজ। কিন্তু সহজকে নিয়োগ দেওয়ার পর রেল কর্তৃপক্ষ অনলাইনে টিকিট বিক্রি বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে শতকরা ৭৫ শতাংশ টিকিট থেকে সহজ সাড়ে ৬ টাকা আয় করার সুযোগ পায়, যা নিয়োগের শর্ত ও এবং চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। রেলের সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে এই বাড়তি সুযোগ পাচ্ছে সহজ।
রেলওয়ে নিশ্চিত করেছে, সহজ দায়িত্ব নেওয়ার আগে ২০ শতাংশের কম টিকিট অনলাইনে বিক্রি হতো। সাম্প্রতিক সময়ে গড়ে ৭১ শতাংশ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়। ১৪ মার্চ থেকে ঈদযাত্রায় শতভাগ টিকিট অনলাইনে বেচা হচ্ছে। এর আগের ঈদগুলোতেও শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়েছে।
সহজের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ তিন বছর পেরিয়ে গেছে। মনিটরে গ্রাহককে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করছে না। জিপিএস ট্র্যাকারও স্থাপন করেনি, যা চুক্তির লঙ্ঘন।