স্মার্ট নগর ব্যবস্থাপনায় জিআইএস-ডেটাবেজ
Published: 15th, March 2025 GMT
স্মার্ট নগর ব্যবস্থাপনা এবং কার্যকর পরিকল্পনার জন্য জিআইএস (জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম)-ভিত্তিক ডেটাবেজ ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি। জিআইএসের মাধ্যমে ভূমি, অবকাঠামো, পরিবেশ, জনসংখ্যা এবং অন্যান্য স্থানিক তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ ও প্রদর্শন করা যায়। এটি মানচিত্র ও ডেটাবেজের সমন্বয়ে কাজ করে; যা পরিকল্পনা, সম্পদ ব্যবস্থাপনা, দুর্যোগ প্রস্তুতি ও নীতিনির্ধারণেও সহায়তা করতে পারে। উন্নত দেশগুলো ইতোমধ্যে ব্যাপকভাবে জিআইএস প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করেছে। বাংলাদেশে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রশাসনিক ও উন্নয়নসংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড সহজ, গতিশীল ও তথ্যনির্ভর করতে জিআইএসভিত্তিক তথ্য ব্যবস্থার উদ্যোগ অপরিহার্য। একক তথ্য ব্যবস্থাপনার (ওয়ান স্ট্যান্ডপয়েন্ট ডেটা ম্যানেজমেন্ট) মাধ্যমে কৌশলগত পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এটি একটি যুগান্তকারী সমাধান হতে পারে। জিআইএসভিত্তিক তথ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এক প্ল্যাটফর্মেই যাবতীয় তথ্য দেখতে ও বিশ্লেষণ করতে পারেন। একবার ডেটাবেজ তৈরি হয়ে গেলে বিদ্যমান তথ্যের সঙ্গে উন্নয়ন বা সংস্কার অনুযায়ী নতুন তথ্য সংযোজন বা পরিমার্জন করা সহজতর হয়।
জিআইএসভিত্তিক তথ্য ব্যবস্থার অন্যতম সুবিধা হলো, বিভিন্ন প্রশাসনিক শাখার মধ্যে ডেটাবেজ শেয়ার করা। এ ছাড়া এক প্ল্যাটফর্ম থেকেই ভূমি ব্যবহার, সড়ক নেটওয়ার্ক, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সংযোগ, জনসংখ্যার ঘনত্ব, জরুরি সেবা ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া অনেক সহজ ও দ্রুততর হয়। নগরের কৌশলগত পরিকল্পনা ও উন্নয়ন প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় জিআইএস অনন্য ভূমিকা রাখে। কোন এলাকায় নতুন রাস্তা নির্মাণ করা দরকার, কোথায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত করা প্রয়োজন, কোন স্থানে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি– এসব তথ্য জিআইএসের মাধ্যমে সহজেই বিশ্লেষণ করা যায়। এ ছাড়া নতুন বাসস্থান, বাণিজ্যিক ও শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় জরিপ তথ্য সহজেই জিআইএস তথ্য ব্যবস্থায় সংযুক্ত করা যায়; যা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের অনেক নগর ও গ্রামীণ অঞ্চল বন্যাপ্রবণ। জিআইএসভিত্তিক তথ্য ব্যবহার করে বন্যা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করা, জলাবদ্ধতা নিরসন এবং নদীভাঙনের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব। অর্থাৎ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জিআইএস সফলভাবে ব্যবহার করা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বন্যার সময় কোন কোন রাস্তা প্লাবিত হয়েছে অথবা আগামী ৩ ঘণ্টার মধ্যে কোন কোন এলাকা প্লাবিত হবে– তা এই প্রযুক্তির মাধ্যমে সহজেই নির্ধারণ করা যায়। এমনকি জিআইএসনির্ভর মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমেও দুর্যোগ সতর্কতা জনসাধারণের কাছে পৌঁছানো যায়। অস্ট্রেলিয়া ইতোমধ্যে জিআইএসভিত্তিক হ্যাজার্ডনেয়ারমি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এবং হ্যাজার্ডওয়াস ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দুর্যোগ সতর্কতার কাজ শুরু করেছে।
সড়ক নিরাপত্তা ও যানজট নিয়ন্ত্রণে জিআইএসের ব্যবহার বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। এটি আধুনিক স্মার্ট ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য অপরিহার্য প্রযুক্তি। এর মাধ্যমে ট্রাফিকপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ, দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান চিহ্নিতকরণ এবং যানজট নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব। দুঃখজনক হলেও সত্য, সড়ক দুর্ঘটনা এবং এতে হতাহত মানুষের প্রকৃত সংখ্যা বা নির্ভরশীল তথ্য বাংলাদেশের কোনো সরকারি দপ্তর দেওয়ার মতো যোগ্যতা অর্জন করেনি। জিআইএসভিত্তিক তথ্য ব্যাংক এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। অনুরূপ তথ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে অপরাধ বিশ্লেষণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজেও জিআইএস ব্যবহার করা যায়। এর মাধ্যমে কোন এলাকায় অপরাধপ্রবণতা বেশি, কোথায় নজরদারি বাড়াতে হবে, কোথায় নতুন পুলিশ চৌকি স্থাপন করা প্রয়োজন– এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব। এ ছাড়া পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ লাইন, গ্যাস সংযোগ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রাস্তাঘাট ইত্যাদির ডিজিটাল মানচিত্র তৈরি করে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা সহজ হয়। ফলে সেবা প্রদানকারীরা দ্রুত সমস্যা চিহ্নিত করে কার্যকর সমাধান দিতে পারে।
একথা অনস্বীকার্য, জিআইএসভিত্তিক তথ্য ব্যবস্থা চালু করার জন্য প্রাথমিক ব্যয় এবং প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এটি অনেক বেশি লাভজনক ও টেকসই সমাধান দেয়। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশের অধিকাংশ সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন এই ব্যয় বহন করতে পারবে এবং ইতিবাচক ফল পেলে তারা এ প্রযুক্তিতে আরও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে। তথ্য ব্যবস্থাটি কার্যকরভাবে পরিচালনা করার জন্য অবশ্যই প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবল লাগবে। বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কোথাও জিআইএসে দক্ষ জনবল নেই। আশার কথা হলো, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অনেক শিক্ষার্থী জিআইএসে দক্ষতা অর্জন করছেন এবং তারা দক্ষ জনবল হিসেবে কাজ করতে প্রস্তুত। এখন প্রয়োজন শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও নীতিনির্ধারকদের জিআইএস প্রযুক্তির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়া। সঠিক প্রশিক্ষণ এবং সফল উদাহরণের মাধ্যমে তাদের উদ্বুদ্ধ করা গেলে এই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে উন্নত দেশের সিটি কাউন্সিল বা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে জিআইএসের ব্যবহার বিষয়ে কর্মশালা আয়োজন এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে তথ্য ব্যবস্থা উন্নয়নের পরিকল্পনা করা যেতে পারে। এ ছাড়া জিআইএসভিত্তিক গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম বৃদ্ধি আবশ্যক। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে জিআইএসভিত্তিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে।
যাহোক, জিআইএসভিত্তিক তথ্য ব্যবস্থা বাংলাদেশের নগর ব্যবস্থাপনা, বন্যা ব্যবস্থাপনা, যানজট নিরসন, দুর্ঘটনা মানচিত্রায়ণ, উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, পর্যবেক্ষণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে। বিশ্বব্যাপী যেভাবে জিআইএসের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেভাবে বাংলাদেশও এ প্রযুক্তির সুফল গ্রহণ করুক– এটিই প্রত্যাশা। পরিশেষে দাবি করছি, অচিরেই স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো জিআইএস প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে একটি তথ্যনির্ভর ও স্মার্ট নগর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করুক।
ড.
mprges@ru.ac.bd
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ আইএস র ব যবহ র র জন য গ রহণ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক’ সন্ত্রাসী নিহত
‘ইরাক এবং বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক সন্ত্রাসীদের অন্যতম’ ইরাক ও সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নেতা নিহত হয়েছেন। ইরাকের প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি জানিয়েছেন, আবদুল্লাহ মক্কি মুসলিহ আল-রুফায়ি, যিনি আবু খাদিজা নামেও পরিচিত, তিনি ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইরত মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের সহায়তায় ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট বছরের পর বছর ধরে সিরিয়া ও ইরাকের লাখ লাখ মানুষের উপর নির্যাতন চালিয়েছে। গোষ্ঠীটি মধ্যপ্রাচ্য, পশ্চিম এবং এশিয়ায় পুনরায় ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে।
২০১৪ সালে ইরাক ও সিরিয়ার এক-চতুর্থাংশ এলাকাজুড়ে খিলাফত ঘোষণা করেন আইএসের সাবেক নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি। এরপর ২০১৯ সালে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় মার্কিন বিশেষ বাহিনীর অভিযানে তিনি নিহত হন। এই অভিযানে গোষ্ঠীটি ভেঙে পড়ে। গত জুলাই মাসে মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ড জানায়, গোষ্ঠীট সম্প্রতি ‘পুনর্গঠনের’ চেষ্টা করছে।
ঢাকা/শাহেদ