ক্ষমতা নয়, বিশ্বাস করি গণতন্ত্রের রাজনীতিতে
Published: 15th, March 2025 GMT
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, ‘ক্ষমতা আর মন্ত্রী-মিনিস্টার হওয়ার জন্য, পদ-পদবির জন্য রাজনীতি করি না। আমরা রাজনীতি করি দেশের মানুষের জন্য, জনগণের জন্য। সন্ত্রাসের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমরা সততা ও গণতন্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি।’
গতকাল শনিবার নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল শহর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা আইনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। কেউ যদি মনে করে রাজনীতিকে পুঁজি করে তারা ধনদৌলত ও সম্পদ আহরণ করবে, যেটা আওয়ামী লীগ সরকার করেছিল, তাহলে তাদের পরিণতিও আওয়ামী লীগের মতো হবে। আমরা সততা ও গণতন্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি।’
মঈন খান বলেন, বিএনপির কোনো কমিটিতে যদি টাকার বিনিময়ে আওয়ামী দোসরদের আশ্রয় দেওয়া হয়, তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমরা ১৭ বছর ধরে আন্দোলন করেছি। এ সময় প্রায় ৫০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়েছে স্বৈরাচার সরকার। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার বুকের রক্তকে অসম্মান করা যাবে না। যদি কেউ অসম্মান করে, তবে আইনের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ সময় পলাশ উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ সাত্তারের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক বাহাউদ্দীন ভূঁইয়া মিল্টন, সহসভাপতি আওলাদ হোসেন জনি, অ্যাডভোকেট কানিজ ফাতেমা, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিকী, যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ও পৌর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আলম মোল্লা প্রমুখ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ষমত ব শ ব স কর র র জন ত ত গণতন ত র ব এনপ র র জন য উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে
মানবাধিকার, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী যারা, তাদের হাতেই ফিলিস্তিনে জাতিগত নিধন, স্বাধীনতা হরণ ও গণতন্ত্রের সমাধি রচিত হচ্ছে। এই প্রহসন যেন সভ্যতার সঙ্গে উপহাস। আসলে এরা বর্ণচোরা মুনাফিক। ১৯১৭ সালে ইংরেজরা ফিলিস্তিনে অনুপ্রবেশ করে ও ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে এবং ইহুদিরা ফিলিস্তিনে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা অন্যায়ভাবে মুসলমানদের ফিলিস্তিন ভূমিকে মুসলমান ও ইহুদিদের মধ্যে ভাগ করে দেয়। ১৯৪৮ সালের ১৫ মে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে জায়নবাদী অবৈধ ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষিত হয়। তখন থেকে মুসলমানদের প্রতি ইহুদিদের জুলুম, নির্যাতন ও অত্যাচারের মাত্রা বাড়তে থাকে, যা আজও চলছে।
১৯৬৭ সালে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েল ‘মসজিদুল আকসা’ জবরদখল করে। এর পর থেকে মুসলিম জনগণ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ সূচনা করে। ১৯৭৯ সাল থেকে ‘আল–আকসা’ মসজিদ মুক্তির লক্ষ্যে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ প্রতিবছর রমজান মাসের শেষ দশকের শুক্রবার ‘আল–কুদস’ দিবস পালন করে। তখন থেকে সারা বিশ্বে এ দিনটি ফিলিস্তিন মুক্তির ও বিশ্ব মুসলিম ঐক্যের প্রতীক রূপে পালিত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে সম্মিলিতভাবে দৃঢ়রূপে ধারণ করো, আর পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সুরা-৩, আল–ইমরান, আয়াত: ১০৩)
মুসলিম বিশ্বকে দাবিয়ে রাখার জন্য এবং মধ্যপ্রাচ্যের তেলসম্পদ লুণ্ঠনের জন্য আমেরিকা ও ইউরোপ দাবার ঘুঁটি হিসেবে ইসরায়েলকে ব্যবহার করছে এবং আরব শাসকদের জুজুর ভয় দেখিয়ে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে তাদের ঘাঁটি স্থাপন করেছে। ইরান ও ইয়েমেন ছাড়া প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্রকে আমেরিকা তাঁবেদার বানিয়ে নিয়েছে। এভাবে ছলে-বলে-কলে–কৌশলে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে ইসরায়েলের স্বীকৃতি ও ইসরায়েলের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করতে বাধ্য করা হচ্ছিল। এ সময় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার কথা ভুলে যাওয়ার উপক্রম হলো। বিশ্ব জনসংখ্যার ২৫ ভাগ মুসলিম পৃথিবীর ৭৫ ভাগ প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক হয়েও মানবতাবিরোধী আমেরিকার কাছে দাসখত দিল।
আন্তর্জাতিক আদালত অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের জালিম প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও আমেরিকা তাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে। জাতিসংঘে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত এলেও আমেরিকা তাতে ভেটো দিয়ে তা বানচাল করে দিচ্ছে।
অন্যদিকে ইসরায়েল ফিলিস্তিনে ত্রাণসহায়তা প্রবেশে বাধা দিয়ে গৃহহীন ফিলিস্তিনিদের দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছে। স্কুল, হাসপাতাল ও আশ্রয়কেন্দ্রে বোমাবর্ষণ করছে। জাতিসংঘের স্থানীয় অফিস ও কর্মীদের গাড়িতে, ত্রাণবাহী গাড়িতে, ত্রাণকর্মীদের ওপর, এমনকি সংবাদকর্মীদেরও হামলা চালিয়ে নির্বিচার হত্যা করে যাচ্ছে।
সারা পৃথিবী তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। আরব শাসকেরা গদি হারানোর ভয়ে নিশ্চুপ। ইউরোপ-আমেরিকায় ছাত্র-জনতা ও সচেতন নাগরিক সমাজ প্রতিবাদ জানাচ্ছে, স্বৈরাচার শাসকগোষ্ঠী তা কঠোর হস্তে নিপীড়নের মাধ্যমে দমন করছে। বাংলাদেশসহ কিছু মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের জনগণ প্রতিবাদ সমাবেশ করে যাচ্ছে। কিন্তু ওআইসি, ওপেক, আরব লিগ ও জাতিসংঘ বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধতে নির্বিকার।
এ অবস্থা চলতে থাকলে জনরোষ ও জনবিস্ফোরণ পরিবর্তিত হবে, যুদ্ধ বন্ধ না করলে খোদ আমেরিকা তাদের অবস্থান হারাবে। তাদের ঘাঁটিগুলো অনিরাপদ হবে, তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হবে।
আসুন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীনতা সুরক্ষায় সোচ্চার হই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি কোনো অন্যায় দেখে, তবে তা স্বহস্তে (বলপ্রয়োগের মাধ্যমে) পরিবর্তন করবে, যদি তা সম্ভব না হয়, তবে মুখের কথায় (কূটনৈতিক সমঝোতায়) তা পরিবর্তন করবে, যদি তা–ও সম্ভব না হয়, তবে মনের (পরিকল্পনা) দ্বারা তা পরিবর্তনের সচেষ্ট থাকবে; এটা হলো দুর্বলতম ইমান, এরপর ইমানের কোনো অংশ অবশিষ্ট নেই।’ (সহিহ মুসলিম শরিফ)
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী, যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
[email protected]