চট্টগ্রামে ৫ আগস্টের পর বেড়েছে মামলার হার। তবে চাঞ্চল্যকর মামলার বিচারিক কার্যক্রমে গতি আসেনি। আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু মামলার প্রধান আসামি বাবুল আক্তার জামিন পেয়েছেন। সাক্ষীর চলছে দীর্ঘ জেরা। কোকেন মামলার সাক্ষ্য ক্লোজ হলেও নতুন পিপির আবেদনে ফের সাক্ষ্য নেওয়ার আদেশ দেন আদালত। যদিও পাঁচ মাসে কোনো সাক্ষীকে হাজির করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। জামালখানের আলোচিত শিশু বর্ষা ধর্ষণের পর খুনের তদন্ত শেষ হয়নি তিন বছরেও। ডিএনএ রিপোর্টে আটকে আছে মামলার তদন্ত। বিএনপি নেত্রী শাকিলা ফারজানার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়েই মামলা নিষ্পত্তির নজির তৈরি হয়েছে। মামলার ২৫ আসামিকে খালাস দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
আলোচিত মিতু হত্যা মামলা: চট্টগ্রামের আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার ৫ আগস্টের পর বদলে গেছে গতিপ্রকৃতি। আগে ১৫ দিন পরপর মামলার শুনানির তারিখ পড়লেও এখন এক থেকে দুই মাস পরপর মামলার শুনানির তারিখ পড়ছে। মাঝে দুই দফায় শুনানিতে হাজির হননি সাক্ষী। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষী পুলিশের এডিসি কামরুজ্জামান উপস্থিত হন। তার সাক্ষী ও জেরা এখনও চলমান। ৫ আগস্টের পর মামলার প্রধান আসামি বাবুল আক্তার জামিনে মুক্তি পান কারাগার থেকে। তিনি একটি তারিখ ছাড়া নিয়মিত আদালতে শুনানির সময় হাজির থাকছেন অন্য আসামিদের মতো। মামলাটি চট্টগ্রাম তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো.
ঝুলে গেছে কোকেন মামলার বিচার: চট্টগ্রাম বন্দরের আলোচিত কোকেন চোরাচালান মামলার সাক্ষী ‘শেষ হয়েও হইলো না শেষ’। ৫ আগস্টের আগে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করার পর নতুন পিপির আবেদনে ফের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। আগে মামলার প্রধান আসামি নূর মোহাম্মদের পক্ষের আইনজীবী ছিল আওয়ামী লীগপন্থিরা। এখন পট পরিবর্তনের পর বিএনপিপন্থি সাবেক মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার আসামি নূর মোহাম্মদের আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষের পর নতুন পিপি দায়িত্ব নিয়ে ৪ সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা করতে আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। তবে কোনো সাক্ষী হাজির হননি।
চট্টগ্রাম অতিরিক্ত মহানগর পিপি মোরশেদুর রহমান রোকন বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর কোকেন মামলার নতুন করে চারজনের সাক্ষী নেওয়ার প্রয়োজন উল্লেখ করে আবেদন করলে তা মঞ্জুর করেন আদালত। তারপর গত নভেম্বর মাসে সমন ইস্যু করা হয়। পাঁচ মাসে এখনও কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হননি। আমরা হাজির হওয়ার জন্য চেস্টা করছি।’
শিশু বর্ষা ধর্ষণ ও খুনের তদন্ত শেষ হয়নি: চট্টগ্রামের জামালখানের আলোচিত শিশু বর্ষা খুন ও ধর্ষণ মামলার তদন্ত তিন বছরেও শেষ হয়নি। ডিএনএ রিপোর্টে আটকে আছে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল। নিষ্পাপ সাত বছরের শিশু কন্যা বর্ষাকে নরপশু লক্ষণ সেন (৩০) ধর্ষণ করে হত্যার পর লাশ গুম করে বলে অভিযোগ ওঠে।
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নওশের কুরেশি বলেন, ‘মামলার তদন্ত ডিএনএ রিপোর্টের জন্য আটকে আছে। আদালতের মাধ্যমে একাধিকবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও রিপোর্ট এখনও হাতে আসেনি। রিপোর্ট পেলে তদন্ত দ্রুত শেষ করা হবে।’
২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর নগরের জামালখান এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় শিশু বর্ষা। তিন দিন পর ২৭ অক্টোবর জামালখান সিকদার হোটেলের পেছনে নালা থেকে বস্তাভর্তি বর্ষার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
একজন সাক্ষী নিয়েই মামলা নিষ্পত্তি: চট্টগ্রামে আলোচিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলায় মাত্র একজন সাক্ষী নিয়ে মামলা নিষ্পত্তি করা হয়। গত ১০ মার্চ চট্টগ্রাম সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আবু হান্নানের আদালত এ রায় দেন। জঙ্গি সংগঠন ‘শহীদ হামজা ব্রিগেড’কে অর্থায়ন ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে হওয়া মামলায় বিএনপি নেত্রী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাকিলা ফারজানাসহ ২৫ আসামিকে খালাস দেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালে পিপি আবদুস সাত্তার সরোয়ার জানান, মামলায় সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে দীর্ঘদিন ধরে আসছেন না। একজন মাত্র সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন। একজন সাক্ষীর সাক্ষ্যে আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত আসামিদের বেকসুর খালাস দিয়েছেন।
২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারীর মাদ্রাসাতুল আবু বকর (রহ.)-এ অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এর আগে ২১ জানুয়ারি হাটহাজারীর ঘটনায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরেকটি মামলায় শাকিলাসহ ৩১ আসামিকে খালাস দেন আদালত।
যদিও আইনজীবী চৌধুরী আবদুল্লাহ বলেন, ‘চট্টগ্রাম আদালতে একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়ে কোনো মামলা নিষ্পত্তির নজির আমরা অতীতে দেখিনি। এই প্রথম দেখতে পেলাম।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: একজন স ক ষ ৫ আগস ট র র আইনজ ব র আল চ ত আল চ ত ম শ ষ হয়
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিনা ভোটে জয়ী হচ্ছেন সবাই
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি- সাধারণ সম্পাদকসহ ২১টি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা। আগামী ১৬ এপ্রিল সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে।
আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থীদের অভিযোগ, নির্বাচনে অংশ নিতে তারা ফরম নিতে পারেননি। ফরম নিতে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বলেও জানান তারা।
গতকাল শুক্রবার (১১ এপ্রিল) ছিল চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। এই দিন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সবগুলো পদে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পাওয়া যায়নি।
আরো পড়ুন:
নির্বাচনী প্রচারে পোস্টার না রাখার কথা ভাবছে ইসি
বাপ ডাইক্কা নির্বাচন দেওন লাগব, বললেন বিএনপির ফজলুর রহমান
মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট তারিক আহমদ জানান, ২১টি পদের জন্য ২১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। যাচাই-বাছাইয়ে সবগুলোই উৎরে গেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় সবাইকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
মনোননয়ন জমা দেওয়া ২১টি পদের মধ্যে ১৪টি পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা হলেন- সভাপতি আবদুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি কাজী মো. সিরু, অর্থ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, পাঠাগার সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশরাফী বিনতে মোতালেব, ক্রীড়া সম্পাদক মঞ্জুর হোসেন এবং সদস্য আহসান উল্লাহ, আসমা খানম, বিবি ফাতেমা, মেজবাহ উল আলম, রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী, রাহিলা গুলশান ও সাজ্জাদ কামরুল হোসেন।
সাতটি পদে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা হলেন- সহ-সভাপতি আলমগীর মোহাম্মদ ইউনুস, সহ-সম্পাদক ফজলুল বারী, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুল জব্বার এবং সদস্য শাহেদ হোসেন, হেলাল উদ্দিন, রোবায়তুল করিম ও মোহাম্মদ মোরশেদ।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী আইনজীবী মো. আবদুর রশীদ লোকমান বলেন, “নির্বাচনে অংশ নিতে আমরা ফরম নিতে পারিনি। দুপুর ও বিকেলে আমরা দুই দফায় সমিতির লাইব্রেরি থেকে মনোনয়ন ফরম কিনতে গিয়ে বাধার শিকার হয়েছি।”
বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার বলেন, “আমরা ২১ জন ফরম নিয়েছি। অন্যরা ফরম না নিলে আমাদের তো কিছু করার নেই। তাদের সৎ সাহস নেই। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সময় যারা ছাত্র-জনতার ওপর লাঠি নিয়ে হামলা করেছিল, তারা নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে।”
ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ