Samakal:
2025-03-15@21:20:58 GMT

আলোচিত মামলায়ও গতি নেই

Published: 15th, March 2025 GMT

আলোচিত মামলায়ও গতি নেই

চট্টগ্রামে ৫ আগস্টের পর বেড়েছে মামলার হার। তবে চাঞ্চল্যকর মামলার বিচারিক কার্যক্রমে গতি আসেনি। আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু মামলার প্রধান আসামি বাবুল আক্তার জামিন পেয়েছেন। সাক্ষীর চলছে দীর্ঘ জেরা। কোকেন মামলার সাক্ষ্য ক্লোজ হলেও নতুন পিপির আবেদনে ফের সাক্ষ্য নেওয়ার আদেশ দেন আদালত। যদিও পাঁচ মাসে কোনো সাক্ষীকে হাজির করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। জামালখানের আলোচিত শিশু বর্ষা ধর্ষণের পর খুনের তদন্ত শেষ হয়নি তিন বছরেও। ডিএনএ রিপোর্টে আটকে আছে মামলার তদন্ত। বিএনপি নেত্রী শাকিলা ফারজানার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়েই মামলা নিষ্পত্তির নজির তৈরি হয়েছে। মামলার ২৫ আসামিকে খালাস দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। 
আলোচিত মিতু হত্যা মামলা: চট্টগ্রামের আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার ৫ আগস্টের পর বদলে গেছে গতিপ্রকৃতি। আগে ১৫ দিন পরপর মামলার শুনানির তারিখ পড়লেও এখন এক থেকে দুই মাস পরপর মামলার শুনানির তারিখ পড়ছে। মাঝে দুই দফায় শুনানিতে হাজির হননি সাক্ষী। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষী পুলিশের এডিসি কামরুজ্জামান উপস্থিত হন। তার সাক্ষী ও জেরা এখনও চলমান। ৫ আগস্টের পর মামলার প্রধান আসামি বাবুল আক্তার জামিনে মুক্তি পান কারাগার থেকে। তিনি একটি তারিখ ছাড়া নিয়মিত আদালতে শুনানির সময় হাজির থাকছেন অন্য আসামিদের মতো। মামলাটি চট্টগ্রাম তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো.

জসিম উদ্দিনের আদালতে বিচারাধীন। মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মফিজুল হক ভূঁইয়া।
ঝুলে গেছে কোকেন মামলার বিচার: চট্টগ্রাম বন্দরের আলোচিত কোকেন চোরাচালান মামলার সাক্ষী ‘শেষ হয়েও হইলো না শেষ’। ৫ আগস্টের আগে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করার পর নতুন পিপির আবেদনে ফের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। আগে মামলার প্রধান আসামি নূর মোহাম্মদের পক্ষের আইনজীবী ছিল আওয়ামী লীগপন্থিরা। এখন পট পরিবর্তনের পর বিএনপিপন্থি সাবেক মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার আসামি নূর মোহাম্মদের আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষের পর নতুন পিপি দায়িত্ব নিয়ে ৪ সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা করতে আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। তবে কোনো সাক্ষী হাজির হননি।
চট্টগ্রাম অতিরিক্ত মহানগর পিপি মোরশেদুর রহমান রোকন বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর কোকেন মামলার নতুন করে চারজনের সাক্ষী নেওয়ার প্রয়োজন উল্লেখ করে আবেদন করলে তা মঞ্জুর করেন আদালত। তারপর গত নভেম্বর মাসে সমন ইস্যু করা হয়। পাঁচ মাসে এখনও কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হননি। আমরা হাজির হওয়ার জন্য চেস্টা করছি।’ 
শিশু বর্ষা ধর্ষণ ও খুনের তদন্ত শেষ হয়নি: চট্টগ্রামের জামালখানের আলোচিত শিশু বর্ষা খুন ও ধর্ষণ মামলার তদন্ত তিন বছরেও শেষ হয়নি। ডিএনএ রিপোর্টে আটকে আছে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল। নিষ্পাপ সাত বছরের শিশু কন্যা বর্ষাকে নরপশু লক্ষণ সেন (৩০) ধর্ষণ করে হত্যার পর লাশ গুম করে বলে অভিযোগ ওঠে।
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নওশের কুরেশি বলেন, ‘মামলার তদন্ত ডিএনএ রিপোর্টের জন্য আটকে আছে। আদালতের মাধ্যমে একাধিকবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও রিপোর্ট এখনও হাতে আসেনি। রিপোর্ট পেলে তদন্ত দ্রুত শেষ করা হবে।’
২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর নগরের জামালখান এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় শিশু বর্ষা। তিন দিন পর ২৭ অক্টোবর জামালখান সিকদার হোটেলের পেছনে নালা থেকে বস্তাভর্তি বর্ষার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। 
একজন সাক্ষী নিয়েই মামলা নিষ্পত্তি: চট্টগ্রামে আলোচিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলায় মাত্র একজন সাক্ষী নিয়ে মামলা নিষ্পত্তি করা হয়। গত ১০ মার্চ চট্টগ্রাম সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আবু হান্নানের আদালত এ রায় দেন। জঙ্গি সংগঠন ‘শহীদ হামজা ব্রিগেড’কে অর্থায়ন ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে হওয়া মামলায় বিএনপি নেত্রী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাকিলা ফারজানাসহ ২৫ আসামিকে খালাস দেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালে পিপি আবদুস সাত্তার সরোয়ার জানান, মামলায় সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে দীর্ঘদিন ধরে আসছেন না। একজন মাত্র সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন। একজন সাক্ষীর সাক্ষ্যে আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত আসামিদের বেকসুর খালাস দিয়েছেন।
২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারীর মাদ্রাসাতুল আবু বকর (রহ.)-এ অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। এর আগে ২১ জানুয়ারি হাটহাজারীর ঘটনায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরেকটি মামলায় শাকিলাসহ ৩১ আসামিকে খালাস দেন আদালত।
যদিও আইনজীবী চৌধুরী আবদুল্লাহ বলেন, ‘চট্টগ্রাম আদালতে একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়ে কোনো মামলা নিষ্পত্তির নজির আমরা অতীতে দেখিনি। এই প্রথম দেখতে পেলাম।’ 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: একজন স ক ষ ৫ আগস ট র র আইনজ ব র আল চ ত আল চ ত ম শ ষ হয়

এছাড়াও পড়ুন:

আদালতে স্তরে স্তরে ‘বকশিশ’ নির্ধারণ

টাকা ছাড়া ফাইল নড়ে না– এটাই রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। হোক তা অফিস কিংবা আদালত। বিচারপ্রার্থীদের পর্যন্ত ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় দিতে হয় ঘুষ! যদিও তা গোপনে। তবে শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি উৎকোচের প্রচলিত রীতি ভেঙে দিয়েছে। সভা ডেকে রেজ্যুলেশন করে ঘুষকে বৈধতা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ঘুষ বা বকশিশের পরিমাণও নির্ধারণ করেছে তারা।
গত বৃহস্পতিবার সমিতির সভার রেজ্যুলেশনের অংশবিশেষ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে সমালোচনার ঝড়।

‘ল্যয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে রেজ্যুলেশনটি প্রকাশ্যে আসে। এতে আদালতের বিভিন্ন স্তরে কোন কাজের জন্য পেশকার, পিয়নদের কত টাকা বকশিশ দিতে হবে, তা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। গত ৬ মার্চ সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় এ বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম কাশেম ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ কামরুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, সভায় আলোচনা শেষে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে পেশকার বা পিয়নকে সিআর ফাইলিংয়ের জন্য সর্বোচ্চ ১০০ টাকা, যেকোনো দরখাস্ত (জিআর/সিআর) ফাইলে ১০০ এবং জামিননামা দাখিলে প্রতি মামলায় ১০০-২০০ টাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গারদখানায় ওকালতনামা স্বাক্ষরে ১০০, সিভিল ফাইলিংয়ে সর্বোচ্চ ২০০ ও হলফনামার জন্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করেছে সমিতি।
আদালতে ঘুষের পরিমাণ সহনীয় পর্যায় নামিয়ে আনা ও বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি ঠেকাতে সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দাবি করেন সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম কাশেম। তবে সিদ্ধান্তকে নজিরবিহীন অ্যাখ্যা দিয়ে বিচারবিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ ও খাটো করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির শেখ মহসিন স্বপন।

শরীয়তপুর আদালতের আইনজীবী মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, ‘সমিতির নতুন নির্বাহী কমিটি প্রথম সভাতে অবৈধ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঘুষ বৈধ করায় সমিতির মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। হঠকারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করলেও তারা আমলে নেননি। এ সিদ্ধান্তে দুর্নীতি ও বিচারহীনতার পরিবেশ আরও জটিল হবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক আইনজীবী বলেন, বর্তমান কমিটি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এসেছে। তারা শুধু অযোগ্য নন, অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ। ঘুষ নেওয়া এবং দেওয়া দেশের আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ, তারাও ভালো করে জানেন। ঘুষকে বৈধতা দেওয়ার এখতিয়ার কোনো আইনজীবী সমিতির নেই। এতে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি আরও বাড়বে। বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের অনাস্থা তৈরি হবে।
এ ব্যাপারে সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম কাশেমকে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ হয়নি। তবে ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ৬ মার্চের আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু কিছু মহলে ভুল বার্তা যাচ্ছে, যার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে আইনজীবী সমিতি। দুর্নীতিমুক্ত ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি। এটি কোনো রেজ্যুলেশন নয়। অনিয়ম ঠেকাতে আমাদের একটি অভ্যন্তরীণ আলোচনা। আমরা চাই– বার ও বেঞ্চের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকুক এবং বিচারব্যবস্থা যেন দুর্নীতিমুক্ত হয়। আশা করি, আমার এ লেখার মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে।
শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির শেখ মহসিন স্বপন বলেন, ‘সভা ডেকে ঘুষের পরিমাণ নির্ধারণ করে রেজ্যুলেশন নজিরবিহীন। আমরা বিস্মিত। তারা বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং খাটো করেছে। কারণ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর এমন লেনদেন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। তাহলে হঠাৎ কেন আমাদের কর্মীদের ঘুষের আওতায় আনা হলো, জানতে চাই।’

শরীয়তপুর কোর্ট পরিদর্শক শিমুল সরকার জানান, বিষয়টি তিনিও শুনেছেন। এখানে ঘুষ লেনদেন হয় কিনা জানেন না। কারও বিরুদ্ধে প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ন্যায়বিচার ও মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে হবে
  • শিশুটিকে ধর্ষণের কথা আদালতে স্বীকার করেছেন হিটু শেখ: আইনজীবী
  • ‘ঘুষকে’ অফিসিয়ালি বৈধতা দিল শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি, সমালোচনা
  • আবরার হত্যা: আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায় রোববার
  • আবরার হত্যা: আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর রায় রোববার
  • আবরার হত্যা: হাইকোর্টের রায় রবিবার
  • বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যা: আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর রায় কাল
  • আদালতে স্তরে স্তরে ‘বকশিশ’ নির্ধারণ
  • ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী খলিলের প্রতি সংহতি জানিয়ে ট্রাম্প টাওয়ারে মার্কিন ইহুদিরা, গ্রেপ্তার ৯৮