ফেনীতে গত ৭ মাসে অপরাধ বেড়েছে, গত আগস্ট থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৯টি খুন ও ২৭টি ধর্ষণের ঘটনা তারই প্রমাণ। ফাঁড়ি ও থানার টহল পুলিশের কার্যক্রম কমে যাওয়ায় অপরাধের মাত্রা বাড়ছে। তবে হয়রানি ও গায়েবী মামলার ঘটনা কম বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। পুলিশ মামলা নেয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাবধানী। ক্ষেত্র বিশেষে আগে তদন্ত করে তারপর ঘটনার সত্যতা পেলে মামলা নেয়া হচ্ছে।
জেলায় গত সাত মাসে ১৯টি খুন, ৬৫টি চুরি, ১৭টি দস্যুতা ছিনতাই, ৫২টি নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ২৫টি ধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে। এ সকল ঘটনায় ৮১৩টি মামলা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ফেনী জেলায় প্রায় ২০ লাখ মানুষের জন্য রয়েছে ৬টি থানা। এ বিশাল এলাকার জন্য পুলিশ সদস্য রয়েছেন এক হাজার ৩০ জন। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে পুলিশ পুরোপুরি সক্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় অপরাধের হার বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অবশ্য অপরাধ বৃদ্ধির বিষয়টি মানতে নারাজ ফেনী পুলিশ সুপার মো.

হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সারাদেশের সঙ্গে তুলনা করলে ফেনীতে অপরাধের হার তুলনামূলক কম। বিদ্যমান জনবল কাঠামো দিয়ে সামর্থ অনুযায়ী অপরাধীদের ঠেকানোর চেষ্টা করছে পুলিশ। অপরাধ কমিয়ে আনতে টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিশেষ করে রমজান মাসে শপিংমল ও মার্কেটের সড়কগুলো বাড়তি টহল দেয়া হচ্ছে। চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ পেলেই দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ করছে পুলিশ।’
ফেনী পুলিশ সুপার অফিস সূত্র জানায়, জেলার ৬ থানায় ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট মামলা হয়েছে ৮১৩টি। এর মধ্যে হত্যা মামলা হয়েছে ১৯টি, দস্যুতা ১৭টি, চুরি ৬৫টি, ধর্ষণ ২৭টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ৫২টি, অস্ত্র আইনে ৫টি, মাদক মামলা ১৯৮টি, চোরাচালান ২১টি, দ্রুতবিচার আইনে ৬টি, মানব পাচার ২টি, সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭টি, ডিজিটাল সাইবার আইনে ২টি, পর্নোগ্রাফি ১টি, অগ্নিসংযোগ ২টি, প্রতারণা ১৬টি এবং অন্যান্য ৩৬৩টি। তবে ডাকাতির মামলা নেই। ২০২৪ সালের আগস্টে ফেনীর ৬টি থানায় ৫৪টি মামলা হলেও সেপ্টেম্বর থেকে মামলার সংখ্যা বাড়ে। সেপ্টেম্বরে ১১৬টি মামলা, অক্টোবরে ১১৯টি, নভেম্বরে ১৪২টি, ডিসেম্বরে ১২০টি, জানুয়ারিতে ১৪০টি ও ফেব্রুয়ারিতে মামলা হয়েছে ১২২টি।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আগস্ট থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফেনীতে শুধু চুরি, দস্যুতা, ছিনতাই ও খুনের ঘটনা ঘটেছে ১০৮টি; যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে চুরির ঘটনা। জেলার বিভিন্ন এলাকায় গরু চুরির ঘটনা ঘটলেও হয়রানির ভয়ে ভোক্তভোগীরা থানায় মামলা করতে রাজি হন না। ফলে থানার মামলা না থাকায়, সরকারি খাতায় তথ্যও নেই।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ফেনী জেলা সভাপতি শুকদেব নাথ তপন বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর সারাদেশে কিছু সমস্যা হলেও ফেনীতে বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের ওপর কোন নিপীড়ন ঘটেনি। 
শহর থেকে গ্রামগঞ্জে প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় কাজ করেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও অনেক ভালো।’
প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির মহাসচিব মহি উদ্দিন খোন্দকার বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। অন্য সময়ের চেয়ে এখন আইনশৃঙ্খলা অনেক ভালো। গত রমজানে আইনশৃঙ্খলা ও খাদ্য সামগ্রী কোনটাই নিয়ন্ত্রনে ছিল না।’
ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, ‘আগে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের ইশারায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চলত, তাই পুলিশের ওপর জনগণ আস্থা হারিয়ে ফেলে। অন্তর্বর্তী সরকার চেষ্টা করছে, তবু পুলিশের ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনতে সময় লাগছে। আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সহ অন্যান্য বাহিনী কাজ করছে। ফেনীতে অন্য জেলা গুলোর তুলনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন ভালো আছে। ভারতীয় মিডিয়ায় যেভাবে প্রচার প্রচারণা চলছে, ওই ধরনের খুন, ধর্ষণ, চুরি–ডাকাতি এখানে নেই।’
ফেনী জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা আবদুল হান্নান বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে। ফ্যাসিবাদের দোসর ও তাদের সহচররা দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য চেষ্টা করছে। দেশের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য উষ্কানিমূলক কথাবার্তা বলছে। এখানে ৫ আগস্টের পর কোন সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি।’
ফেনী পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘অপরাধ দমনে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। এখন শুধু মামলা নয়, একটা জিডি করতে এলেও কাউকে ফেরত দেয়া হয় না। তবে হয়রানিমূলক মামলা রোধে সব ব্যবস্থাই নেয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে মামলা নেয়া হচ্ছে। কোন নির্দোষ লোক মামলায় আসামী হয়ে যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হন সে ব্যাপারে আমরা সচেতন। ঈদকে সামনে রেখে মোটরসাইকেল টিমসহ টহল টিম বাড়ানো  হয়েছে। আন্তরিকতার সঙ্গে নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে সব থানাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর স থ ত অপর ধ র ক জ কর র জন য র ঘটন আগস ট র আইন

এছাড়াও পড়ুন:

মৌলভীবাজারে শাহ নিমাত্রার (রহ.) দরগাহের ওরস বন্ধের দাবিতে কর্মসূচির ঘোষণা, উত্তেজনা

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ফুলতলা বাজারে হজরত শাহ নিমাত্রার (রহ.) দরগাহের ওরস নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। একটি পক্ষ ওরস বন্ধের দাবিতে আজ শুক্রবার বাদ জুমা উপজেলা সদরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে গত বুধবার রাতে ওরসের দাবিতে ফুলতলা বাজারে মিছিল হয়। আজ সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ওরস শুরু হয়েছে। ।

উপজেলার ফুলতলা বাজারের এক পাশে হজরত শাহ নিমাত্রার দরগাহ। প্রতিবছর সেখানে ওরস অনুষ্ঠান হয়। এতে অনেক লোকজনের সমাগম ঘটে। এবার ১১ থেকে ১৩ এপ্রিল তিন দিনব্যাপী ৫৪তম বার্ষিক ওরস অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এবার ওরসের পোস্টারে কোনো কাফেলায় (ভক্তদের আসর) নারী অথবা নারী শিল্পী রাখা যাবে না বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কয়েক দিন ধরে ওরসের প্রস্তুতি চলছে। এ উপলক্ষে সেখানে অন্তত শতাধিক দোকানপাট বসেছে।

এদিকে গত মঙ্গলবার স্থানীয় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতন এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর করা একটি আবেদন দেওয়া হয়, যাতে ওরস বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। ওই আবেদনে বলা হয়েছে, ফুলতলা বাজারে অবস্থিত ফুলতলা বশির উল্লাহ উচ্চবিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র। ওরসে উচ্চস্বরে গান-বাজনা ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে পরীক্ষার পরিবেশ বিনষ্টের আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা সদরে মাইকিং করা হয়। এতে ফুলতলায় ওরসে অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড বন্ধের দাবিতে আজ বাদজুমা উপজেলা সদরের জাঙ্গিরাই চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

এর আগে গত বুধবার ফেসবুকে খবর ছড়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওরস স্থগিত করা হয়েছে। এরপর ওরস আয়োজনের পক্ষে লোকজন বুধবার রাতে ফুলতলা বাজারে মিছিল বের করেন। এ সময় সেখানে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।

দরগাহ পরিচালনা কমিটির কার্যকরী সদস্য ও ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ইমতিয়াজ গফুর বলেন, গতকাল থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরের পরীক্ষা ১৫ এপ্রিল। ওরস এর আগেই সম্পন্ন হয়ে যাবে। তাই ওরসের কারণে পরীক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কার বিষয়টি সঠিক নয়। ওরস নিয়ে কিছু লোক অপপ্রচার করছেন। প্রতিবারের মতো এবারও ওরস হবে।

ওরসকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না ঘটে, সে ব্যাপারে প্রশাসন তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউএনও বাবলু সূত্রধর।

জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম ভূঁইয়া বলেন, ওরস নিয়ে উত্তেজনা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাঁরা তৎপর আছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত
  • কার্যালয়ের ভেতর আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা, বাইরে খুনের বিচার চেয়ে মানববন্ধন
  • পাগলা মসজিদের দানসিন্দুকে ৮ ঘণ্টার গণনায় মিলল রেকর্ড সাড়ে ৮ কোটি টাকা
  • শোভাযাত্রার মোটিফে আগুন দেওয়া ১ জন চিহ্নিত: আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
  • চারুকলার দুই মোটিফে আগুন দেওয়া ১ জন চিহ্নিত: আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
  • ইউনূস সরকার কতটা চাপমুক্ত
  • ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি: বিকেলে সোহরাওয়ার্দীতে গণজমায়েত
  • শনিবার সোহরাওয়ার্দীতে ‘মার্চ ফর গাজা’
  • ‘মার্চ ফর গাজা’ মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে যাবে না, গণজমায়েত হবে সোহরাওয়ার্দীতে
  • মৌলভীবাজারে শাহ নিমাত্রার (রহ.) দরগাহের ওরস বন্ধের দাবিতে কর্মসূচির ঘোষণা, উত্তেজনা