নরসিংদীতে একের পর একের এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। নরসিংদী ১০০ শয্যা সদর হাসপাতালের আরএমও-এর দেওয়া তথ্য মতে মার্চের ১ তারিখ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত সর্বমোট ৮ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। 

এদের অধিকাংশই দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার, কেউ পরিবারের সদস্যদের দ্বারা নির্যাতিতা, কেউবা আশেপাশের পরিচিত ও অপরিচিত মানুষদের দ্বারা। 

এরমধ্যে পাঁচ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৫০ বছরেরও বেশি বয়সী নারী রয়েছে। বিভিন্ন ভয়-ভীতি, পারিবারিক মানসম্মান রক্ষার চাপ, সামাজিকতা রক্ষা, পারিপার্শ্বিক চাপসহ বিভিন্ন কারণে তারা থানা পর্যন্ত যাওয়ার সাহস পাইনি। বিচারের জন্য দাঁড়াতে পারেনি। এর আগেই ধামাচাপা দিয়ে দেওয়া হয় ধর্ষণের ঘটনাগুলিকে। 

সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে ১৯ ফেব্রুয়ারি মাধবদীতে। এক গর্ভবতী নারীকে তিনদিন আটকে রেখে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে কয়েকজন। ভুক্তভোগী ঐ নারীর স্বামী জামিনের ব্যাপারে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে পাঁচদোনা এলাকায় একটি মার্কেটের কক্ষে আটকে ইকবাল, পাপ্পুসহ ও অজ্ঞাত আরও কয়েকজন মিলে টানা তিনদিন পর্যন্ত মর্মান্তিক পাশবিক নির্যাতন চালায়। এরপর তিনি বাদী হয়ে মাধবদী থানায় মামলা করলে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।


নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী আফরোজা ও মৌমিতা বলেন, “বর্তমানে কোথায়ও নিরাপত্ত বোধ করছি না। কোথাও গেলে ভিতর প্রচণ্ড ভয় কাজ করে। কখন জানি কি হয়ে যায়! প্রতিটি মেয়ে এক অনিশ্চিত নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে। দেশের মধ্যে একের পর এক ধর্ষণ, মেয়েদের উপর নিম্ন-নির্যাতন চলছেই। ৩-৪ বছরের ছোট্ট মেয়েটিও বাদ যাচ্ছে না ধর্ষকদের কবল থেকে। আমাদের নরসিংদীতেও ধর্ষণের এবং নির্যাতনের খবর পাচ্ছি। তাহলে নারীদের নিরাপত্তা সরকার, দেশ, প্রশাসন কতটুকু দিতে পারছে!”

তিনি আরো বলেন, “ধর্ষণের শিকার কেউ হলে, তার তো কোন দোষ নেই দোষ তো ধর্ষকের। কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থা সেই ধর্ষিতা নারীকে আরো কয়েকশ’ বার ধর্ষণ করে। হাসপাতাল হয়, থানাতে হয়, কোর্টে হয়, সমাজে হয়, আপন ও আশেপাশের মানুষদের দ্বারা হয়। সবাইকে জবাবদিহি করতে হয়। নানান রকম প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় শরীরে কোথায় হাত দিয়েছে! কোথায় কি করেছে!”

নরসিংদী ১০০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতাল আরএমও মো.

আশরাফুল ইসলাম বলেন, মার্চের ১ তারিখ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত ৮ জন ধর্ষণের শিকার নারী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আমাদের কাছে ধর্ষণের ঘটনায় রোগী আসলে সবার আগে তার ট্রিটমেন্টের বিষয়টা নিশ্চিত করি। এরপর ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন মহিলা ডাক্তার দিয়ে সম্পাদন করি। ধর্ষণ শিকার নারীরা প্রথমত চিন্তা করে সামাজিকভাবে হেনস্তাসহ, মান সম্মানের কথা। অনেক সময় দেখা যায় দরিদ্র পরিবারের হলে বা খেটে-খাওয়া মানুষ হলে যারা অভিযুক্ত তারা ভিকটিমের উপর বল প্রয়োগ করে। মীমাংসা করে ফেলে।” 

নরসিংদী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর এলাহী বলেন, “প্রশাসনিক দুর্বলতা, আইনের শাসনের অভাব এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি কতটা প্রকট হলে অপরাধীরা বারবার এই ধরনের ন্যাক্কারজনক অপরাধ করার সাহস পায়৷ কতটা পৈশাচিক নির্যাতন করা হয় একজন নারীর উপর। দেখা যায় দিন শেষে সেই ধর্ষণের শিকার নারীরাই বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি ও বিচারের আশায় একেবারেই ভেঙে পড়ে।” 

স্বেচ্ছাসেবক ও জনপ্রিয় হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুল হোসেন মামুন বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ধর্ষণের খবর পাচ্ছি। নরসিংদীতেও খবর পাচ্ছি ধর্ষণের ঘটনা। একের পর এক। এরকম তো দেশ চলতে পারে না।”

নরসিংদী জেলা হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মিজানুর রহমান বলেন, “এটেম টু রেপ বা ধর্ষণের ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফিজিক্যাল অ্যাসল্ট বা হ্যারেজমেন্টের রোগী আসে প্রধান দায়িত্ব হলো তার চিকিৎসা জরুরি ভিত্তিতে নিশ্চিত করা। তার নিরাপত্তা প্রদান করা। মানসিক সাপোর্ট দেওয়া।”

নরসিংদী সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, “দেখা যাচ্ছে ৪০ বছর ৫০ বছর ৬০ বছরের বৃদ্ধ আট বছরের দশ বছরের একটি শিশু সন্তানকে ধর্ষণের শিকার করছে। এক্ষেত্রে আমাদের সকল সেক্টরকে সচেতন হতে হবে। ধর্ষণ কমাতে গেলে আমাদেরকে বেশ কিছু কাজ করতে হবে। ধর্ষণ কি! অমানবিক, অনৈতিক এবং পাশবিক নির্যাতন। এটা যদি আমরা বন্ধ করতে না পারি। আমাদের পুরো জেনারেশনটাই নষ্ট হয়ে যাবে।” 

নরসিংদী জেলা পুলিশ সুপার মো. আব্দুল হান্নান বলেন, “নরসিংদী জেলা পুলিশ সর্বাত্মকভাবে ধর্ষণের শিকার নারীদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। অপরাধীদের গ্রেফতার করছে। কয়েকদিন আগে মাধবদীতে যে ধর্ষণে অভিযোগ উঠে। সেই ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আমরা খুব দ্রুত গ্রেপ্তার করি। কোন ধর্ষণকারীকে ছাড় দেওয়া হবে না। যখন যেখানে যে অভিযোগ পাচ্ছি, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং সেটা অব্যাহত থাকবে। নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি।”

ঢাকা/হৃদয়/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

সারাদেশে ‘সাবধানে অনলাইনে’ কর্মসূচি

জাগো ফাউন্ডেশন ও টিকটক নিজস্ব উদ্যোগে ‘সাবধানে অনলাইনে’ কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছে। বাংলাদেশি তরুণদের অনলাইনে নিরাপত্তা ও দায়িত্বশীল ডিজিটাল আচরণে সচেতন করার লক্ষ্যে এমন প্রচারণা কাজ করে। সারাদেশে উদ্যোগটি লক্ষাধিক তরুণ-তরুণীকে অনলাইন নিরাপত্তার বিষয়ে  সচেতন করেছে বলে জানানো হয়।
অনলাইন নিরাপত্তা, টিকটক সেফটি টুলস ও ইয়ুথ অ্যাম্বাসাডরের দায়িত্বের বিষয়ে কর্মশালায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অ্যাম্বাসাডররা কমিউনিটিতে অনলাইন নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করেন। প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের পর দেশের ৬৪ জেলায় ইয়ুথ অ্যাম্বাসাডররা সচেতনতামূলক সেশন পরিচালনা করেন। ওইসব সেশনে তরুণ-তরুণীরা অংশ নেন। বক্তারা অনলাইন হুমকি, ডিজিটাল মাধ্যমের নিরাপদ ব্যবহার ও সাইবার সুরক্ষা নিয়ে আলোচনা করেন। সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে অনলাইন নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে উদ্যোগটি সহায়ক হিসেবে কাজ করছে বলে জানানো হয়।
সাবধানে অনলাইনে বিশেষ প্রচারণার প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, সাবধানে অনলাইনে প্রচারণা প্রমাণ করে, তরুণরাই ডিজিটাল নিরাপত্তার পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা বাংলাদেশের তরুণ সমাজের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট পরিবেশ তৈরিতে কাজ করছি।
অনলাইন নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে জাগো ফাউন্ডেশন ও টিকটক কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। যার মধ্যে অপিনিয়ন আর্টিকেল, প্রেস রিলিজ, এসবিসিসি কনটেন্ট ছাড়াও কয়েকটি সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে সচেতনতামূলক প্রচারণা অন্যতম।
এসব উদ্যোগ সাধারণ জনগণের মধ্যে অনলাইন নিরাপত্তা ও সাইবার আক্রমণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে বলে উদ্যোক্তারা জানান। ইয়ুথ অ্যাম্বাসাডর ক্যাম্পাস অ্যাক্টিভেশন কর্মসূচি ছিল প্রচারণার বিশেষ উদ্দেশ্য। সারাদেশে ২৫৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইয়ুথ অ্যাম্বাসাডররা কর্মশালা পরিচালনা করেন। কর্মশালার মাধ্যমে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী অনলাইন নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়ে সম্যক ধারণা নিয়েছে।
ক্যাম্পাস অ্যাক্টিভেশন শেষে আটটি বিভাগে ডিভিশনাল পর্বে ইয়ুথ অ্যাম্বাসাডররা সাফল্য, অভিজ্ঞতা, চ্যালেঞ্জ ও মতামত উপস্থাপন করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ