উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের মন্তব্য মনগড়া: হেফাজতে ইসলাম
Published: 15th, March 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ফেসবুক পোস্টের প্রতিবাদ জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এক বিবৃতিতে হেফাজত বলেছে, ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম একটি রাজনৈতিক দলের ‘প্রক্সি’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে—মাহফুজ আলমের এমন দাবি মনগড়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
আজ শনিবার গণমাধ্যমে ওই বিবৃতি পাঠায় হেফাজতে ইসলাম। বিবৃতিতে হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা মহিঊদ্দিন রব্বানী বলেন, সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য কাম্য নয়। হেফাজত কখনো কারও ‘প্রক্সি’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়নি।
দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, পূর্ব বাংলায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও ব্রাহ্মণ্যবাদী জমিদারগিরির বিরুদ্ধে গণমানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা, রাজনৈতিক অধিকার ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার লড়াইয়ের যে পথ দেখিয়েছিলেন হাজী শরীয়তুল্লাহ ও শহিদ তিতুমীর, সেটিরই উত্তরসূরি শাপলার চেতনা। বিপরীতে ন্যায়বিচার ধ্বংস করে ফাঁসির দাবিতে জালিম ব্রাহ্মণ্যবাদী জমিদার শ্রেণির প্রেতাত্মা হয়ে আবির্ভূত হয়েছিল শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ।
মাওলানা মহিঊদ্দিন রব্বানী বলেন, ২০১৩ সালে আধিপত্যবাদী দিল্লির পৃষ্ঠপোষকতায় রাষ্ট্রীয় মদদে ইসলাম নির্মূলের বাসনায় মেতে উঠেছিল শাহবাগী ফ্যাসিবাদ। তারই প্রতিবাদে শাপলা চত্বরে হেফাজত গিয়েছিল গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের ন্যায্য দাবি নিয়ে।
তৎকালীন আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার গণহত্যা চালিয়েছিল উল্লেখ করে বিবৃতিতে হেফাজতের এই নেতা বলেন, বিচারিক হত্যাকাণ্ড ও গণহত্যার উসকানিদাতা শাহবাগীরা ইতিহাসে অপরাধী হিসেবে স্বীকৃত। যারা ইতিহাস বিকৃত করবে এবং শাহবাগীদের তোষণ করবে, তারা কায়েমি স্বার্থান্বেষী হিসেবে চিহ্নিত হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, শাহবাগীরা সব সময় বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী ছিল; শাপলার চেতনা বাংলাদেশপন্থী। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শাপলা চত্বরের অনুপ্রেরণায় প্রায় ৭৭ জনের বেশি মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী শহিদ হন; কিন্তু শাহবাগীরা আধিপত্যবাদী দিল্লির এজেন্ট এবং আওয়ামী ফ্যাসিবাদ কায়েমের বরকন্দাজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এখনো তারা দেশের আলেম-ওলামা, তৌহিদি জনতা ও ইসলামের বিরুদ্ধে সব ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। শাহবাগীরা এখন প্রতিবিপ্লবের কোনো ষড়যন্ত্র করলে তা ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দেওয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন এই নেতা।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শরীয়তপুরের জাজিরায় আবারও সংঘর্ষ, মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় শতাধিক ককটেল (হাতবোমা) বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
গতকাল রোববার দুপুরে জয়নগর ইউনিয়নের ছাব্বিশপারা এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। এতে এক তরুণের হাতের কব্জিতে গুরুতর ক্ষত হয় এবং আরও একজন আহত হন।
জাজিরা থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জয়নগর ইউনিয়নের ছাব্বিশপারা এলাকায় তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিঠুন ঢালী ও জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হালিম তালুকদারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এই দুই নেতা আত্মগোপনে গেলে স্থানীয় পর্যায়ে তাদের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জসিম তালুকদার ও নুর আলম সরদার।
রোববার দুপুরে দুই পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র ও ককটেল নিয়ে সংঘর্ষের প্রস্তুতি নেয়। এ সময় নুর আলম সরদারের অনুসারীরা প্রতিপক্ষের ওপর ককটেল বোমা নিক্ষেপ করে। এরপর উভয় পক্ষ ঘণ্টা-ব্যাপী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ ও মারামারি। পরে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
সংঘর্ষের কিছু দৃশ্য স্থানীয় এক ব্যক্তির সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ হয়, যা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ৪ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে দেখা যায়, এক পক্ষের সমর্থকরা বালতিতে করে ককটেল নিয়ে প্রতিপক্ষের দিকে নিক্ষেপ করছেন। তাদের হাতে ছিল টেঁটা, রামদা, ছেনদা, বল্লম, ডাল-সুরকি ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র।
সম্প্রতি জাজিরার বিলাশপুরে সংঘর্ষের ঘটনায় খইয়ের মতো ককটেল বিস্ফোরণ দেশজুড়ে আলোচিত হয়। গত ৫ এপ্রিল সেখানে দুই শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, যা এখনও আলোচনায় রয়েছে। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলো ছাব্বিশপারা এলাকায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল আখন্দ বলেন, গতকাল দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বেশ কিছু হাতবোমা বিস্ফোরিত হয় বলে জানতে পেরেছি। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।