‘চুল কাটার অপমান সইতে না পেরে’ তরুণের গলায় ফাঁস, ৪ মাস পর মৃত্যু
Published: 15th, March 2025 GMT
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক সালিসে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে এনামুল খান (১৯) নামের এক তরুণের মাথার চুল কেটে দেন একজন ইউপি সদস্য। জনসমক্ষে ‘এমন অপমান সইতে না পেরে’ চিরকুট লিখে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ওই তরুণ। তখন কোনোমতে বেঁচে গেলেও চার মাস ভুগে গতকাল শুক্রবার ওই তরুণ মারা গেছেন।
এনামুল খান চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নের লোহারটেক গ্রামের আইয়ুব খানের ছেলে। গত বছরের ১৩ নভেম্বর দুপুরে নিজের কক্ষে চিরকুট লিখে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি।
পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ১০ নভেম্বর বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালিয়ে একটি গরুর বাছুরকে আহত করেন এনামুল। এ ঘটনায় দুই দিন পর ১২ নভেম্বর সন্ধ্যায় চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নের লোহারটেক গ্রামে সালিস বসে। সালিসে এনামুলকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করার পাশাপাশি তাঁর মাথার চুল কেটে নেওয়া হয়। ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের উপস্থিতিতে চুল কাটেন ইউপি সদস্য সরোয়ার মৃধা। লোকলজ্জার কারণে পরদিন দুপুর ১২টার দিকে নিজের কক্ষে চিরকুট লিখে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এনামুল। পরিবারের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে চরভদ্রাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে আইসিইউতে তিন মাস চিকিৎসাধীন ছিলেন এনামুল। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত ১২ ফেব্রুয়ারি তাঁকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। বাড়িতে আসার এক মাস দুই দিন পর গতকাল রাত আটটার দিকে মারা যান এনামুল।
এ ঘটনায় গত বছরের ১৪ নভেম্বর এনামুলের চাচা রাজু খান বাদী হয়ে ইউপি সদস্য সরোয়ার মৃধা ও ওই গ্রামের বাসিন্দা টুকু প্রামাণিককে আসামি করে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে একটি মামলা করেন। মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান।
এনামুলের বাবা আইয়ুব খান বলেন, জরিমানা করে ক্ষান্ত না হয়ে তাঁর ছেলের চুল কেটে দেন সালিসের লোকজন। যে কারণে লজ্জা-অভিমানে এনামুল আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। অনেক চেষ্টা করেও তিনি ছেলেকে বাঁচাতে পারেননি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ছেলের চিকিৎসার জন্য তাঁর ছয় লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। ছেলের মৃত্যুর জন্য দায়ী সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য ইউপি সদস্য সরোয়ার মৃধার মুঠোফোন নম্বরে কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে কথা হয় তাঁর ছেলে সাইফুর রহমান মৃধার সঙ্গে। সাইফুর বলেন, ‘চুল কাটা এবং লোকলজ্জার কারণে আত্মহত্যার এ চেষ্টার ঘটনা ঘটলে ১২ নভেম্বরই এ ঘটনা ঘটত। এক দিন পরে ঘটায় এর পেছনে নিশ্চয় অন্য কোনো কারণ আছে। আমার বাবা কোনো অন্যায় করেননি। সালিসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাবা চুল কেটেছিলেন।’
চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজাদ খান বলেন, তিনি একাধিকবার ঢাকায় এনামুলকে দেখে এসেছেন। চিকিৎসা বাবদ টাকাও দিয়েছেন।
চরভদ্রাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রেনে সুমি শহরে রাশিয়ার হামলায় নিহত ৩৪, ‘ভয়াবহ ঘটনা’ বললেন ট্রাম্প
ইউক্রেনের সুমি শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৩৪ জন নিহত এবং ১১৭ জন আহত হওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কিয়েভের পশ্চিমা মিত্ররা। রাশিয়ার প্রাণঘাতী এই হামলার সমালোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রবিবার মধ্যরাতে সুমি শহরের কেন্দ্রস্থলে দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে, যা স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং কংগ্রেস সেন্টারের কাছে বিস্ফোরিত হয়। রক্তাক্ত মৃতদেহ রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে।
আরো পড়ুন:
রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ভারতীয় ওষুধ কোম্পানির গুদাম ধ্বংস
পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের দূতের ৪ ঘণ্টা বৈঠক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলাকে ‘ভয়াবহ ঘটনা’ বলে বর্ণনা করেছেন, অন্যদিকে জার্মানির সম্ভাব্য চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করেছেন।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। রুশ বাহিনী কাছাকাছি সীমান্তের ওপারে একটি বড় হামলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
এই হামলাটি এমন এক সময় ঘটল, যখন ইউক্রেনের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ট্রাম্পের নেতৃত্বে আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে চাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের চতুর্থ বছর চলছে।
ট্রাম্প ওয়াশিংটনে ফিরে যাওয়ার সময় এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকরা রাশিয়ার হামলা সম্পর্কে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি মনে করি, এটি ভয়াবহ ঘটনা এবং আমাকে বলা হয়েছে যে তারা ভুল করেছে।” কিন্তু ট্রাম্প এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলেননি।
রোববার জেলেনস্কি রাশিয়ার আক্রমণের ফলে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞ আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তার দেশ সফর করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউক্রেনীয় নেতা মার্কিন টেলিভিশন সিবিএসে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “দয়া করে, যেকোনো ধরনের আলোচনার আগে, যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সামরিক ও বেসামরিক মানুষের ওপর রাশিয়ার হত্যাযজ্ঞ এবং হাসপাতাল ও গির্জায় ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে আসুন।”
ফ্রিডরিখ মের্জ, যিনি আগামী মাসে জার্মানির নতুন চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি জার্মানির সরকারি টেলিভিশন এআরডিকে বলেছেন, ইউক্রেনের সুমি শহরে রাশিয়া যে ধরণের হামলা চালিয়েছে তা একটি ‘গুরুতর যুদ্ধাপরাধ’।
জার্মানির বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ বলেছেন, এই হামলাটি ‘শান্তির জন্য রাশিয়ার কথিত প্রস্তুতির আসল রূপ উন্মোচন করেছে’।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ রাশিয়াকে ‘মানবজীবন, আন্তর্জাতিক আইন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার প্রতি স্পষ্ট অবজ্ঞা’ করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, “রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। ফ্রান্স তার অংশীদারদের সঙ্গে এই লক্ষ্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করছে।”
আক্রমণটিকে ‘বর্বর’ বলে বর্ণনা করে ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডের লেইন বলেছেন, “আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন করে রাশিয়া আগ্রাসী ছিল এবং এখনও আছে।”
তিনি বলেন, “যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। হামলা বন্ধ না হওয়া এবং ইউক্রেনের শর্তাবলী অনুসারে ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত ইউরোপ অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে এবং রাশিয়ার ওপর শক্তিশালী চাপ বজায় রাখবে।”
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর পেয়ে জাতিসংঘ প্রধান ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং হতবাক’।
তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে বেসামরিক নাগরিক এবং বেসামরিক বস্তুর ওপর আক্রমণ নিষিদ্ধ।” তিনি আরো বলেন, “এই ধরনের যেকোনো আক্রমণ, যেখানেই ঘটুক না কেন, অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।”
রবিবারের জোড়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ছিল চলতি বছরে ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সবচেয়ে মারাত্মক আক্রমণ।
চলতি মাসের শুরুতে ৪ এপ্রিল ইউক্রেনের ক্রিভি রিহ শহরে আরেকটি রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ২০ জন নিহত এবং ৬১ জন আহত হন। সেসময় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছিল যে, তারা একটি রেস্তোরাঁয় ‘ইউনিট কমান্ডার এবং পশ্চিমা প্রশিক্ষকদের’ একটি সভা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
তবে এর স্বপক্ষে রাশিয়া কোনো প্রমাণ সরবরাহ করেনি ।
ঢাকা/ফিরোজ