ভারতে আসছে স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা স্টারলিংক। ইতিমধ্যে ভারতের দুটি কোম্পানির সঙ্গে তাদের চুক্তি হয়ে গেছে। কিন্তু স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেটের খরচ সাধারণ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের চেয়ে বেশি। ফলে ভারতের বাজারেও জল্পনাকল্পনা শুরু হয়েছে, স্টারলিংকের ইন্টারনেটের ব্যয় কত পড়বে।

ভারতীয় এয়ারটেল ও জিয়োর সঙ্গে চুক্তি করেছে স্টারলিংক। মাস্কের কোম্পানি ভারতে এলে যে ইন্টারনেটের গতি কয়েক গুণ বাড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে স্টারলিংক সেই সুযোগ পাবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের টেলিকম মন্ত্রণালয়।

স্টারলিংক এখনো ব্যয়ের বিষয়ে ঘোষণা দেয়নি। তবে ভারতের প্রতিবেশী দেশ ভুটানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা দিচ্ছে স্টারলিংক। সেখানকার মডেল ব্যবহার করে ব্যয়সংক্রান্ত মডেল তৈরি করেছে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। হিমালয়ের কোলের দেশটিতে স্টারলিংকের মূলত দুটি প্রকল্প চালু রয়েছে। সেগুলো হলো স্টারলিংক আবাসিক ও স্টারলিংক আবাসিক লাইট।

ভুটানের প্যাকেজ মূল্যের সাপেক্ষে আবাসিক লাইট ব্যবহার করলে প্রতি মাসে গ্রাহকের ইন্টারনেট বাবদ খরচ পড়তে পারে তিন হাজার রুপি। এ ক্ষেত্রে ২৩ থেকে ১০০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট পাচ্ছেন তাঁরা। দৈনিক ব্রাউজিং, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার ও ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্যাকেজটি বেশ লাভজনক হবে বলে প্রচারে জানিয়েছে স্টারলিংক।

অন্যদিকে সাধারণ আবাসিক পরিকল্পনার খরচ কিছুটা বেশি। এই প্যাকেজ বাবদ মাসে খরচ হবে ৪ হাজার ২০০ রুপি—বিনিময়ে ২৫ থেকে ১১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ দেবে স্টারলিংক। এই প্ল্যানে সীমাহীন ডেটা ব্যবহার করতে পারছেন গ্রাহক। নিরবচ্ছিন্নভাবে চলবে গেমিং, এইচডি ভিডিও স্ট্রিমিং ও ভিডিও কনফারেন্স।

এটা তো মাসিক ব্যয়। স্টারলিংক ব্যবহার করতে গেলে একধাপে বড় খরচ আছে একটি। সেটা হলো হার্ডওয়্যারের খরচ। সে ক্ষেত্রেও দুটি সুযোগ থাকবে—স্টারলিংক মিনি ও স্টারলিংক স্ট্যান্ডার্ড। খরচের বড় খাত এটি। এর মধ্যে স্টারলিংক মিনিতে বিল্ট ইন রাউটার থাকবে। ছোট এই ডিভাইসটি ব্যাকপ্যাকে বহন করা যাবে। এর জন্য ব্যয় হবে ১৭ হাজার রুপি।

স্টারলিংক স্ট্যান্ডার্ড হার্ডওয়্যারের জন্য ব্যয় হবে আরও বেশি। এই হার্ডওয়্যারের জন্য ব্যয় হবে ৩৩ হাজার রুপি।

তবে ভারতের ভোক্তাদের ব্যয় আরও বেশি হতে পারে বলে এবিপি লাইভের সংবাদে বলা হয়েছে। মাসিক ব্যয় হতে পারে ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার রুপি আর এককালীন হার্ডওয়্যারের ব্যয় হতে পারে ২০ হাজার থেকে ৩৮ হাজার রুপি। ভারতের বাজারে ইন্টারনেটের মাসিক গড় ব্যয়ের চেয়ে তা অনেক বেশি। ফলে ভারতের বাজার ধরতে কোম্পানিটিকে দাম আরও কমাতে হবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

স্টারলিংকের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে রেসিডেনসিয়াল লাইট প্যাকেজের মাসিক ব্যয় ৮০ ডলার এবং রেসিডেনসিয়াল প্যাকেজের ব্যয় ১২০ ডলার। বাণিজ্যিক সংযোগের মাসিক ব্যয় ১৪০ ডলার থেকে শুরু করে ১ হাজার ৪৯৯ ডলার।

মার্কিন উদ্যোক্তা ও প্রযুক্তিবিদ ইলন মাস্কের মহাকাশ প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স সারা বিশ্বে স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা প্রদান করছে। স্টারলিংক নামের এই সেবা বিশ্বের প্রত্যন্ত এলাকায় তারহীন ইন্টারনেট সেবা প্রদান করছে। শুধু একটি অ্যান্টেনা দিয়েই সরাসরি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাড়ি কিংবা অফিস বা দুর্গম পাহাড়ে ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাচ্ছে।  বিমান, জাহাজ, দুর্গম পাহাড়, জনমানবহীন অরণ্য— সবখানেই স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যায়। এই ইন্টারনেটের গতিও সাধারণ ইন্টারনেটের চেয়ে ভালো।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ র ডওয় য র র ব যবহ র কর স য ট ল ইট

এছাড়াও পড়ুন:

ক্ষুধার ওপর কর, চাপ বাড়ছে গরিবের জীবনে 

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মূল্যস্ফীতির চাপে চরম সংকটে পড়েছেন দেশের রিকশাচালক, দিনমজুর, শিক্ষার্থীসহ নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত নাগরিকরা। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যে ‍মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এর অন্যতম কারণ।
 
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিম্ন আয়ের মানুষরা এখন এক বেলা খাবার বাদ দিচ্ছেন, বোতলজাত পানি কিনতে পারছেন না, রুটি-বিস্কুটেই পেট চালিয়ে নিচ্ছেন। অথচ এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর রয়েছে ৭.৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট)। এই করনীতি গরিবের জীবনে চাপ আরও বাড়িয়ে তুলছে। গবেষণাটি পরিচালনা করেছে তরুণদের দ্বারা পরিচালিত গবেষণা সংস্থা ‘ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্ক’।

দেশের ১,০২২ জন নাগরিকের ওপর পরিচালিত এই জরিপে দেখা গেছে, ৯৯ শতাংশ উত্তরদাতা কোনো না কোনো সময় খাবার বাদ দিতে বাধ্য হয়েছেন কেবল অর্থাভাবে। তাদের মধ্যে অধিকাংশের আয় ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে, এবং এর নিচেও আয়ের সংখ্যা কম নয়।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৬০ শতাংশ সকালের নাশতা বাদ দেন। দুপুর বা বিকেলের খাবারও বাদ দিতে হয় অনেক সময়। কারণ খাবার কেনার সামর্থ্য অনেক সময় তাদের থাকে না।
ভাতের বিকল্প সস্তা ও পেট ভরানো খাবারের মধ্যে বিস্কুট, কলা, পরোটা, ডিম এগিয়ে আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিস্কুট। ৫২৩ জন উত্তরদাতা এটিকে তাদের প্রিয় ও সাশ্রয়ী খাবার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বিস্কুটের ওপরও রয়েছে ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভ্যাট কার্যত গরিবের খাবার থেকে কর আদায় করার শামিল। খাদ্যপণ্য হিসেবে যেসব আইটেম গরিব মানুষের নিত্যদিনের রসদ, তাদের ওপর ভ্যাট বসিয়ে বাজেট ভারসাম্য আনা সামাজিক ন্যায়ের পরিপন্থি। 

জরিপে ৯০৪ জন বলেছেন, তারা বোতলজাত পানি কিনতেই পারেন না। বোতলজাত পানিকে তারা বিলাসদ্রব্য বিবেচনা করেন।

জরিপ বলছে, ৮৯৭ জন মনে করেন আগের বাজেট তাদের প্রয়োজনকে গুরুত্ব দেয়নি। ৭০১ জন সরাসরি বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য বিবেচনায় এখানে ভ্যাটের হার অনেক বেশি। এই শ্রেণির মানুষের জন্য একটি টাকাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। কর নীতিতে সামান্যতম পরিবর্তনই দরিদ্র এই শ্রেণির জন্য একবেলার খাবার পাওয়া না পাওয়ার পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।

তবে হতাশার মাঝেও এবার নতুন সরকারের কাছে আশাবাদী হয়েছেন অনেকে। জরিপে ৭১২ জন অংশগ্রহণকারী বলেছেন—তারা আশা করছেন, অন্তবর্তীকালীন সরকার এবারের বাজেটে তাদের কথা শুনবে। তাদের দাবি, ‘সহানুভূতির দরকার নেই, দরকার ন্যায্যতার।’

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬০৫ জন বলেছেন—নিম্নআয়ের মানুষের জন্য কর কমানো উচিত। ১৯৫ জন বলছেন, ভর্তুকি ও সহায়তা বাড়ানো দরকার। ১৯৩ জন চান—ধনীদের ওপর কর বাড়ানো হোক।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের দাবি, পণ্যের দাম কমানো, জনবান্ধব বাজেট, ভ্যাট হ্রাস এবং বাজারদর স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করাই যেন বাজেটের মূল লক্ষ্য হয়। তবে অনেকেই কোনো প্রত্যাশা করেননি সংশয় বা নিরাশার কারণে।

চলতি অর্থবছরের মাঝপথে এসে গত জানুয়ারিতে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়ায় সরকার। ওই তালিকায় বেকারিপণ্য, বিস্কুট ও কেকও ছিল। এসব পণ্যে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। এরপর সমালোচনার মুখে গত ফেব্রুয়ারিতে ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭.৫ শতাংশ করা হয়। গত রমজানে নিত্যপণ্য বিবেচনায় নিয়ে এক মাসের জন্য কর ছাড় দেওয়া হলেও, এসব পণ্যে ৭.৫ শতাংশ কর বহাল রয়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, রমজানে যখন এই খাদ্যপণ্যগুলোকে ‘নিত্যপ্রয়োজনীয়’ হিসেবে বিবেচনা করে ভ্যাট ছাড় দেওয়া হয়, তখন বছরের বাকি সময়ে তা আবার কীভাবে ‘অপ্রয়োজনীয়’ পণ্য হয়ে পড়ে? 

গবেষণার উপসংহারে বলা হয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ওপর ভ্যাট দরিদ্রদের ওপর অসামঞ্জস্যভাবে চাপ সৃষ্টি করছে এবং তাদের সাশ্রয়ী খাবার পাওয়ার সুযোগ আরও সীমিত করে তুলছে। সরকারের উচিত নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ওপর থেকে ভ্যাট বাতিল করা অথবা সর্বোচ্চ ৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা। এতে নিম্নআয়ের মানুষের ওপর অর্থনৈতিক চাপ কমবে এবং মৌলিক পুষ্টি নিশ্চিত হবে। একই সঙ্গে বিলাসপণ্যের ওপর কর বাড়িয়ে একটি ন্যায্য অর্থনীতি গড়ে তোলা সম্ভব। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ