ব্যাটিংয়ে নাঈম-জাকির-শামীমদের করুণ দশা!
Published: 15th, March 2025 GMT
ভালো দল গড়েও প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ভালো ফল পাচ্ছে না ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেটে। ব্যাটসম্যানরা রীতিমত ভুগছেন রান তুলতে। বোলাররা দলকে লড়াইয়ে রাখলেও ব্যাটিংয়ে নাঈম শেখ, জাকির হাসান, শামীম হোসেন পাটোয়ারীদের করুণ দশা।
শনিবার (১৫ মার্চ) লিগের পঞ্চম রাউন্ডের খেলায় মাত্র ৮৯ রানে অলআউট হয়েছে তারা। গাজী গ্রুপ তাদের হারিয়েছে ৯৪ রানের বিশাল ব্যবধানে।
বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে আগে ব্যাটিং করতে নেমে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ১৮৩ রানের বেশি করতে পারেনি। জবাব দিতে নেমে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে মাত্র ৮৯ রানে শেষ হয় প্রাইম ব্যাংকের ইনিংস।
আরো পড়ুন:
‘একটা ট্রফি জিততে পারলে আমাদের প্রজন্মের জন্য ভালো হবে’
তামিমদের কাছে পাত্তাই পাননি আকবর-আফিফরা
ওপেনার নাঈম শেখ ১৫ রানে ফেরেন সাজঘরে। জাকির হাসানের ব্যাট থেকে আসে ১১ রান। ১২ রান করেন শাহাদাত হোসেন দিপু। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ২১ রান করেন রিশাদ হোসেন। ভালো করতে পারেননি শামীম হোসেন পাটোয়ারী। ৪ রানে থামে তার ইনিংস। অধিনায়ক ইরফান শুক্কুর ছিলেন নিষ্প্রভ (২)।
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের হয়ে বল হাতে ৪.
এর আগে এনামুল হক বিজয়ের ৪৮ ও আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের ৩৫ রানে গাজী গ্রুপ মাঝারি মানের পুঁজি পায়। তাদের ব্যাটিংও ভালো হয়নি। এনামুল ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৪৮ রান করেন। আমিনুল ৭১ বলে ৩৫ রান করেন ২ বাউন্ডারিতে। এছাড়া ১৯ বলে ২৪ রান করেন আব্দুল গাফফার।
বল হাতে প্রাইম ব্যাংকের হয়ে ৩টি করে উইকেট নেন আরাফাত সানী ও নাহিদুল ইসলাম।
পাঁচ ম্যাচে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের এটি চতুর্থ জয়। প্রাইম ব্যাংকের সমান ম্যাচে তৃতীয় হার।
ঢাকা/ইয়াসিন
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ন কর ন উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
কাবাডির সাফল্য এলো যার হাত ধরে
৭ মার্চ ইরানের তেহরানে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ এশিয়ান নারী কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জপদক জিতেছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। দুই দশক পর এশিয়ান কাবাডিতে পদকজয়ী বাংলাদেশ দলে রেইডার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন অধিনায়ক শ্রাবণী মল্লিক। নানান চড়াই–উতরাই পেরোনো এই স্বপ্নবাজকে নিয়ে লিখেছেন ইমাম হোসেন মানিক
এশিয়ান কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপে সর্বশেষ ২০০৫ সালে ব্রোঞ্জ জিতেছিল বাংলাদেশ নারী কাবাডি দল। দীর্ঘ দুই দশক পর ৭ মার্চ তেহরানে ষষ্ঠ এশিয়ান নারী কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জপদক জিতেছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। ওইদিন গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ জেতে ৪২-২৭ পয়েন্টে। তবে সেমিফাইনালে স্বাগতিক ইরানের কাছে হেরে যায় ৪১-১৮ পয়েন্টে। টুর্নামেন্ট শেষ হয় ৮ মার্চ। এতে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত।
ইতিহাসে চোখ
বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি। এই খেলাকে ঘিরে দেশে কিংবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তেমন কোনো জৌলুস নেই বললেই চলে! এশিয়ান কাবাডিতে ছেলেরা সর্বশেষ পদক জিতেছিলেন ১৯৮৮ সালে আর এশিয়ান গেমসে ২০০৬ সালে। সেই তুলনায় এশিয়ান পর্যায়ে মেয়েদের এই সাফল্য ভবিষ্যতে আরও বড় কিছুর আশা জাগানোর মতোই। ২০০৫ সালে মেয়েদের প্রথম আসরেই ব্রোঞ্জ জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই দলের অধিনায়ক শাহনাজ পারভীন বর্তমান নারী কাবাডি দলের কোচ। কোচের দায়িত্বে ছিলেন জাতীয় দলের সাবেক কোচ আবদুল জলিল। পুরোনো নথি ঘেঁটে দেখা যায়, ওই আসরের সেমিফাইনালে ভারত ৫৭-২৪ পয়েন্টে শ্রীলঙ্কাকে এবং জাপান ৩৮-১৪ পয়েন্টে হারিয়েছিল বাংলাদেশকে। পরে সেমিফাইনালে হেরে গেলেও শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ দু’দলকেই ব্রোঞ্জজয়ী দেখানো হয়। ১৯৮০ সাল থেকে হচ্ছে এশিয়ান কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপ। যদিও নারীদের অংশগ্রহণ ২০০৫ থেকে। আগের পাঁচবারের চারবারই সোনা জেতে ভারত। একবার চ্যাম্পিয়ন হয় দক্ষিণ কোরিয়া। প্রথম আসরে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা ব্রোঞ্জ নিয়ে দেশে ফেরেন। সেবার ভারতের হায়দরাবাদে টুর্নামেন্টের
সেমিফাইনালে জাপানের কাছে ৩৮-১৪ পয়েন্টে হেরেছিলেন তারা। এরপর ২০০৭, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে আর অংশ নেয়নি বাংলাদেশ।
থাইল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালের পথে
এশিয়ান নারী কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে থাইল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালের জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। যদিও ইরানে এশিয়ান নারী কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছিল ভারতের বিপক্ষে হার দিয়ে। তবে গ্রুপের বাকি দুই ম্যাচে
মালয়েশিয়াকে ৫২-১২ ব্যবধানে ও থাইল্যান্ডকে ৪২-২৭ ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনাল ও ব্রোঞ্জ নিশ্চিত করেন লাল-সবুজের মেয়েরা। সেমিতে অবশ্য স্বাগতিক ইরানের কাছে হেরে যায় ৪১-১৮ ব্যবধানে। তবে কোচ শাহনাজ পারভীন মালেকা এতেই সন্তুষ্ট। তাঁর মতে, ‘নারী কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপে আমাদের এই অর্জন অনেক গর্বের। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমরা পদক হারিয়েছিলাম। আবার ফিরিয়ে আনতে শুরু করেছি। আমাদের জন্য কিছু করলে আমরা দেশকে আরও কিছু দিতে পারব।’ অধিনায়ক শ্রাবণী মল্লিক বলেন, ‘আমাদের চেয়ে শক্তিশালী দলগুলোর সঙ্গে আমরা খেলেছি। এসব দলের সঙ্গে আমাদের ম্যাচ ছিল অনেক চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু আমাদের মনোবল ছিল। আমরা মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডকে হারাতে পারবো। সবাই খুব ভালো খেলছে। তাই তাদের হারাতে পেরেছি। আসলে অনেকদিন আমাদের কোনো সাফল্য ছিল না। কাবাডিতে সাফল্য খরা ছিল। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা তার অনেকটাই উৎরে যেতে পেরেছি।’
শ্রাবণী যেভাবে এলেন কাবাডিতে
শ্রাবণী মল্লিকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা নড়াইলে। বাবা রতন মল্লিক জড়িত কৃষিকাজের সঙ্গে। মা গৃহিণী। বড় দুই ভাইয়ের একজন টাইলস মিস্ত্রির কাজ করেন। অন্যজন থাকেন দেশের বাইরে। বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে শ্রাবণী ছোটবেলা থেকেই খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। স্থানীয় কেবিএম গার্লস হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়কালীন ফুফাতো বোন একদিন তাঁকে নিয়ে যান ক্রিকেট খেলতে। ক্রিকেট মনে ধরে না শ্রাবণীর। কিছুদিন পর স্থানীয় কোচ রবি রজিবুলের মাধ্যমে নাম লেখান কাবাডিতে। তরিকুল ইসলাম নামের স্থানীয় আরেক কোচের কাছেও নেন কাবাডির পাঠ। এরপর এই স্কুল বালিকাই যোগ দেন বিজেএমসির ক্রীড়া দলে। দীর্ঘ দিন সেখানেই খেলেন তিনি। কাবাডির পাশাপাশি শটপুটও খেলতেন। বিজেএমসির হয়ে আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় শটপুটে সোনাও জেতেন শ্রাবণী। শটপুটে জাতীয় পর্যায়ে ২০১৭ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত সোনা জিতে তাক লাগিয়ে দেন এই স্বপ্নবাজ!
প্রতিভা ও আক্ষেপ
বিজেএমসিতে স্থায়ী কোনো চাকরি ছিল না। খেলে মাসিক ভাতা পেতেন ছয় হাজার টাকা। একটা সময় বিজেএমসির ক্রীড়া দল বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ আনসার দলে যোগ দেন শ্রাবণী। আনসারের জার্সিতে লড়েন শটপুট, কুস্তি এবং কাবাডিতে। ২০১৪ সালে রোলবলের জাতীয় দলেও খেলেছেন শ্রাবণী। জাতীয় কুস্তিতে ৭৬ কেজি ওজন শ্রেণিতে সোনা জেতেন তিনি। ২০১৮ সালে জাকার্তায় এশিয়ান গেমসে প্রথমবার জাতীয় নারী কাবাডি দলে নাম লেখান শ্রাবণী। ২০১৯ সালে কাঠমান্ডুতে এসএ গেমসের নারী কাবাডি দলের হয়ে দেশকে ব্রোঞ্জ জেতান তিনি। জীবনের নানা বাঁক পেরিয়ে জাতীয় দলের পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশের হয়ে খেলছেন শ্রাবণী। তবে একটি সরকারি চাকরির আক্ষেপ এই সাহসী তরুণীর।
তবু ঘুরে দাঁড়িয়েছেন যেভাবে
দুঃসহ জীবন পাড়ি দিয়েছেন এবং এখনও দিচ্ছেন এই দুঃসাহসী তরুণী। ২০২১ সালে প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। নেন কড়া ডোজের ওষুধ। তারই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বেড়ে যায় ওজন। তবু দমে যাননি তিনি। দেশের হয়ে খেলেন নবম বাংলাদেশ গেমস। ২০২৪ সালও তাঁর জন্য ছিল ভয়াবহ। অসুস্থতার ছোবলে ঘুরে আসেন মৃত্যুর দুয়ার থেকে। দীর্ঘদিন ছিলেন হাসপাতালে। সেই দুর্বিষহ দিনে বাঁচার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। ডাক্তার তো বলেই দিয়েছিলেন, মাস তিনেক বাঁচতে পারেন। একা বসে কাঁদতেন। সেই কষ্টের দিন কাটিয়ে উঠেছেন নিজের মানসিক শক্তিতে ভর করে। দেশের জন্য, পরিবারের জন্য এবং নিজের স্বপ্ন ধরার জন্য তিনি ফের খেলায় ফিরেছেন। দেশের জন্য সাফল্য নিয়ে এসেছেন।
আগামীর স্বপ্ন
আগামীর স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে শ্রাবণী মল্লিক বলেন, ‘আমি পাঁচ বছর কাবাডি খেলিনি। তাই আমার কাছে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এই আসর। তাছাড়া কাবাডি ফেডারেশনকে রেজাল্ট দিতে পেরেছি, এটি অনেক বড় কিছু আমাদের জন্য। আগামীর স্বপ্নের কথা বলতে হলে বলব, আমাদের সামনে কাবাডি বিশ্বকাপ আছে। সেই বিশ্বকাপে খেলে ভালো ফলাফল নিয়ে আসতে চাই দেশের জন্য। এর জন্য চাই দীর্ঘমেয়াদি ক্যাম্প। উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বাংলাদেশ কাবাডি
ফেডারেশনকে ২৫ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে যুব ও ক্রীড়া
মন্ত্রণালয়। আশা করি, এর ফলে আমাদের নারী কাবাডি দল ভালো প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সামনের বিশ্বকাপে ভালো অর্জন এনে দিতে পারবে দেশকে।’এমন বিশ্বাস আমাদেরও; এগিয়ে যাবে লাল-সবুজের সাহসী মেয়েরা!