আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে সমন্বিত উদ্যোগ
Published: 15th, March 2025 GMT
আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে সবাইকে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন আইসিটি ইন্ডাস্ট্রিতে যুক্ত সংগঠনের নেতারা।
বক্তারা বলেন, দেশের আইসিটি খাতের সত্যিকারের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমন্বিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করে একটা টেকসই পরিকল্পনা বা রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। সে অনুসারে আইসিটি খাতের সার্বিক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। আর এমন কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে সরকারের সঙ্গে সবাইকে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে।
ইউনাইটেড আইসিটি ফোরামের (ইউআইএফ) উদ্যোগে রাজধানীর গুলশান ক্লাবে আয়োজিত আলোচনা সভা ও ইফতার মহাফিলে অংশ নিয়ে এমন মন্তব্য করেন আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির নেতারা।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সবার আগে দরকার রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন। রাজনীতিতে সহনশীলতা থাকতে হবে। ভিন্নমত থাকলেও অপরপক্ষকে সন্মান জানাতে হবে। শুধু ব্যক্তি বা দল নয়.
ইউনাইটেড আইসিটি ফোরামের আহ্বায়ক ও প্রধান সংগঠক ফয়সল আলিম বলেন, বাংলাদেশের আইসিটি খাতের সত্যিকারের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে আগামী নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে সক্রিয় ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আইসিটি খাতকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজন সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বিএনপি মিডিয়া সেলের সাবেক আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, আইসিটি খাতকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাকে গুরুত্ব দেওয়া।
সাবেক সভাপতি (বেসিস) রফিকুল ইসলাম রাওলি বলেন, বর্তমান বেসিস নেতৃত্বে গতিশীলতা ও কার্যকর উদ্যোগের অভাব সুস্পষ্ট। পুরো আইসিটি শিল্পকে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় এগিয়ে নিতে হলে বেসিসে দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন।
প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বেসিস ও সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির কাউন্সিল ফর কমিউনিকেশন অ্যান্ড আইটির চেয়ারম্যান শাফকাত হায়দার চৌধুরী বলেন, নতুন প্রজন্মের উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও উদ্যোগকে পুঁজি করে আগামী নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বের-ভিত্তিতে আইসিটি খাতকে বৈশ্বিক বাজারে ব্র্যান্ডিং করতে হবে। আমাদের আইসিটির সক্ষমতাকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইস ট খ ত ইন ড স ট র র সব স গঠন আইস ট
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিনিধিত্বমূলক অংশগ্রহণ
অধিকার প্রতিষ্ঠার নানা স্তর-স্তরায়নের কাঠামোগত প্রক্রিয়ার মধ্যে পৃথিবীর প্রযুক্তিকালের এ সময়ে শারীরিক নারী অস্তিত্বের অবস্থানসূত্রে দাঁড়িয়ে নির্ণীত হচ্ছে অধিকারের গ্রন্থিসূত্র। নানা পাল্লায় নির্ণীত হচ্ছে নারীর অবস্থান এবং একক অবস্থানে থেকে নারীর অবস্থানগত পীড়ন। বিশ্বব্যাপী নারীর অধিকারিক দৃশ্যপট সামগ্রিক অর্থে উঠে আসছে না। এ ক্ষেত্রে করণ ও কারণের কোনোটিকেই ক্ষুদ্রপ্রয়াসে বিবেচনা করা কঠিন।
জনসংখ্যার হিসাবে নারীর আনুপাতিক হার বেশি হলেও এ দেশে নারী নানা অবস্থানেই অধস্তন; ফলে কেন্দ্র পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়ন সার্বিক পরিস্থিতিতে বিবেচনায় আনে না। যদিও অবস্থানের গুণগত কাঠামোর দিকটি প্রান্তিক নারীর অবস্থানকে সমানুপাতিক না হলেও, পরিবর্তনের সমান্তরাল চিত্রটি তুলে ধরছে।
বিশ্বায়নের যুগে ‘নারী’ শব্দটি একটি বহুল প্রেক্ষিতে বারবার সামনে এসেছে নারীর উন্নয়নের প্রশ্নে। যদিও দুটি বিষয় বিচারের সমীকরণ ভিন্নগতির। এ ক্ষেত্রে জেন্ডার সমতার বিষয়টি প্রাধান্য পায় নারীকে প্রান্তে রেখে; কেন্দ্রে অবস্থানকৃত পুরুষতন্ত্রকে প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচনা করা নারীর অবস্থান সর্বদাই সেখানে অধস্তন। অধঃস্তন থেকে স্বল্পসংখ্যক নারীর ঊর্ধ্বতন অবস্থানে চলে আসায় পৃথিবীর ইতিহাস একটি পরিক্রমাকাল। এ পরিক্রমাকালীন ইতিহাসের বিভিন্ন জরিপ সংখ্যায় চিত্র নানা সময় তৈরি করা হয়েছে। এসব সমীকরণে নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের বিষয়গুলোর মতো রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কাঠামোগত বিষয়গুলো সচেতনভাবেই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে; যদিও রাজনৈতিক ও ক্ষমতার সাংগঠনিক কাঠামোগত বিষয়টি নির্ধারিত হলে উন্নয়নের বিষয়টি ত্বরান্বিত হওয়া হবে সময়ের ব্যাপার মাত্র।
নারী বঞ্চনার ইতিহাস দীর্ঘকালের। বিশেষত বিরাজমান পুরুষতান্ত্রিক সমাজকাঠামো নারী সমাজের সার্বিক উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন এবং সমমর্যাদার অবস্থান তৈরির বাধা এবং এটি কোনো ট্যাবু নয়। বিপরীতক্রমে দেখা যায়, পরিবর্তনশীল সমাজ কাঠামোর পরিক্রমায় নারীর অবস্থানগত পরিবর্তন ঘটছে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রতিক্রিয়ায়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নারীদের মতোই বাংলাদেশের নারীরা ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রের দিক থেকে; কিন্তু সীমিত সে আনুপাতিক হারের চিত্র ও অবস্থান পিছিয়ে পড়া নারীর জন্য কতটা ইতিবাচক তা প্রশ্নসূচক।
বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক ধর্মীয় আবহে নারী প্রসঙ্গটি ছিল পর্দা অথবা গৃহবন্দি আবহে। এই আবহের মধ্যে প্রথম বেরিয়ে আসার প্রবণতা হিন্দু সমাজের, যদিও কেবল প্রথা ভেঙে সে সময় বেরিয়ে আসাটাই ছিল প্রবল বিরুদ্ধতার কাজ। সতীদাহ প্রথা বিলোপ আর বিধবা বিবাহ প্রচলনের দাবিও মাত্রই বিষয়টি সচেতনভাবে প্রবল অসচেতনতার চিত্র হাতে তুলে ধরে। সমান্তরালে পর্দাপ্রথা, পারিবারিক অবরোধ ভেঙে মুসলিম নারীদের বাইরে আনার ব্যাপারটি বাংলাকেন্দ্রিক এই যাত্রার পুরোধা একজন নারীর। এটি অত্যন্ত সচেতনভাবেই ঘটেছে। ঔপনিবেশিক আবহে জাতিগত পরিচয় প্রাপ্তি এবং মুক্তির চালচিত্র প্রতিষ্ঠার সমন্বয়বাদী সামাজিক প্রচেষ্টায় নারীর অংশগ্রহণ পরিপূর্ণ নিশ্চিত না হলেও চোখে পড়ার মতো এবং এটি পরিবর্তনের ইঙ্গিতবহ। একটি জাতিরাষ্ট্রের ভাবনায় রাজনৈতিক অধিকারজনিত এ সমন্বয় সূত্রটি প্রতিষ্ঠিত না থাকলে সার্বিক উন্নয়ন যে কতটা ব্যবহৃত তা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরপর আমরা টের পাই। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা উচ্চশিক্ষিত হয়েছি ঠিক, কিন্তু আমাদের সাংস্কৃতিক উন্নয়ন হয়নি।’ একই সঙ্গে নারীর পোশাকের বিষয়ে তিনি বরং ভিন্নমাত্রা যুক্ত করে বলেন, ‘আমাদের দেশে কর্মক্ষেত্রে নারীরা বরং পেশাগত পোশাক পরিধানে এখনও অভ্যস্ত হয়ে ওঠেননি।’ যেটি খুব জরুরি বলে তিনি মনে করেন।
সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ এ দেশে নারীর রাজনৈতিক আন্দোলনের যাত্রাপথে একটি মাইলফলক। এ পর্যায়ে নারীরা নির্যাতিত হওয়ার সংখ্যাটি যেমন দৃশ্যমান, তেমনি ছিল নারীর সশস্ত্র অংশগ্রহণ। কখনও সরাসরি, কখনও পরোক্ষে, কখনও আড়ালে। নারীশক্তির প্রয়োজন এ সময়ে পর্যায়ভুক্ত হতে পারে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে। ১৯৭২ সালের প্রণীত বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানের ১০, ২৭, ২৮ (১, ২, ৩, ৪), ২৯(১), ৩২, ৬৫(৩) ধারায় রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথম নারীর সমতাবিষয়ক স্বীকৃতি পাওয়া যায়।
রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রধারায় নারীর অংশগ্রহণ ও তাঁর প্রতিনিধিত্বকেন্দ্রিক নারীর অবস্থান নির্ধারিত হয়েছে পারিবারিক অবস্থান থেকে। যেটি মধ্যবিত্তীয় নারীর ক্ষেত্রে কেবল যাত্রা শুরুর কাল কিংবা সর্বোচ্চ প্রয়োজন। তাই বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের বাহ্যিক চিত্র একটি বিচিত্রাকার প্রাণীর মতো। স্পর্শে যার অস্তিত্ব একটি বহুমাত্রিক নারীর জীবনপ্রবাহ, পারিবারিক অবস্থান সামাজিক স্তরায়ণ, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং রাষ্ট্রীয় ভৌগোলিক অবস্থানের সঙ্গে শিক্ষার সঠিক চিত্র নানাভাবে জড়িত। প্রতিটি স্তরীভূত সামাজিক বিক্রিয়ার সমন্বয় ছাড়া বিভিন্ন অঙ্গনে নারীর স্বল্পসংখ্যক অবস্থান দৃশ্যত মূল্যায়ন করা হলেও অবস্থানগত মূল্যায়ন জরুরি। বিগত সময়ে সরকারপ্রধান, বিরোধীদলীয় নেতা, গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে নারীরা অবস্থান করলেও, সঠিক ও গুণগত অবস্থান এখনও মৌলিক পরিবর্তন আনতে পারেনি। সুতরাং নারীর অধিকারে তখনই সঠিক উপাদানের সফল বাস্তবায়ন সম্ভবপর হবে, যখন একটি ক্ষমতাকাঠামো ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রতিটি স্তরে নারী যথার্থ অর্থেই ক্ষমতায়িত হবে। বাংলাদেশের সব অঙ্গনে প্রত্যাশিত ক্ষমতায়নের দৃশ্যপট বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে নারী কেন্দ্রের ক্ষমতায়ন নয়, বরং প্রান্তের নারীর কাছেও পৌঁছে যাবে। বেগম রোকেয়ার ‘উদ্ভট শকট’ কিংবা ‘গোলাপ লতিকায় কাঁঠালের’ কথা তো সবাই জানি; জানি না কেবল পড়শী বাড়ির প্রান্তিক নারী কেমন আছে। জানতে হবে– কেননা সমতারও সমতা প্রয়োজন। v
লেখক: কবি, কথাসাহিত্যিক