কাঙ্ক্ষিত সংস্কার, যথাযথ বিচার ও সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি বলেন, সরকার কখনো বিএনপি, কখনো ছাত্রদের মন জুগিয়ে চলতে গিয়ে নিজেদের অবস্থান দুর্বল করে ফেলছে। এই সরকার যদি তার লক্ষ‍্য অর্জনে সফল না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে বলেও সতর্ক করেন।

আজ শনিবার চট্টগ্রামের হোটেল আগ্রাবাদে এবি পার্টি চট্টগ্রাম মহানগর আয়োজিত ইফতার মাহফিলে দলের চেয়ারম্যান এ কথা বলেন। রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীদের সম্মানে এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এবি পার্টির বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

মজিবুর রহমান বলেন, ‘এবারের রমজানে অন‍্যান‍্যবারের মতো দ্রব্যমূল‍্য বাড়েনি, বিদ‍্যুতের লোডশেডিং নিয়েও কোনো তেলেসমাতি ঘটেনি, যানজট নিয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ আরও আন্তরিক হলে আমরা আরেকটু স্বস্তি পেতাম।’ তিনি বলেন, ‘এ থেকে আমরা বুঝলাম যে সরকার আন্তরিক হলে অনেক কিছুই করা সম্ভব।’

এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘অধ্যাপক ইউনূস প্রথমে বললেন তিনি আমাদের সহযোদ্ধা এবং তাঁর কথা আমাদের শুনতে হবে। আমরা এটাকে সাদরে গ্রহণ করেছিলাম। তিনি যেভাবে চেয়েছেন, সেভাবেই উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেছেন। রাজনৈতিক দলগুলো কোনো আপত্তি করেনি। ইদানীং তিনি বলা শুরু করেছেন; তিনি আমাদের সহযোগী এবং আমরা যেভাবে চাই সেভাবে তিনি করবেন। কম সংস্কার চাইলে ডিসেম্বরে আর বেশি সংস্কার চাইলে আগামী বছরের জুনে নির্বাচন।’

নির্বাচন নিয়ে অধ্যাপক ইউনূসের বক্তব্যকে ‘সরকারের পিছু হটার লক্ষণ’ উল্লেখ করে মজিবুর রহমান বলেন, সংস্কার ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে একটি টেকসই জাতীয় ঐক‍্য প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে হলেও পতিত ফ‍্যাসিবাদের আবার উত্থান ঘটবে। এ সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউই তখন রেহাই পাবে না।

চট্টগ্রাম মহানগর এবি পার্টির আহ্বায়ক গোলাম ফারুকের সভাপতিত্বে ও চট্টগ্রাম মহানগর যুগ্ম সদস্যসচিব ইঞ্জিনিয়ার যায়েদ হাসান চৌধুরীর সঞ্চালনায় ইফতার মাহফিলে আরও বক্তব্য দেন এবি পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.

) দিদারুল আলমসহ অন্য নেতারা।

ইফতার মাহফিলে বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি, জনসংহতি আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, শিক্ষক প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, লেখক, বুদ্ধিজীবীসহ চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যোগ দেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ হঠাৎ বাড়ছে

দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ হঠাৎ করে বাড়তে শুরু করেছে। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গত ১০ মার্চ পর্যন্ত সরকার নিট ৩৮ হাজার ৫১০ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। গত জানুয়ারি পর্যন্ত যেখানে সরকারের ব্যাংক ঋণ ছিল ১৩ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। এর মানে প্রথম ৭ মাসে সরকার যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছিল, শেষ এক মাস ১০ দিনে নিয়েছে তার প্রায় দ্বিগুণ। ব্যাংক খাত থেকে ঋণ বাড়ার কারণের মধ্যে রাজস্ব আদায় কম হওয়া, সঞ্চয়পত্র থেকে প্রত্যাশিত ঋণ না পাওয়া এবং বিদেশি উৎস থেকে ঋণছাড় কমে যাওয়া উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, অর্থবছরের শেষ সময়ে স্বাভাবিকভাবে সরকারের ঋণ বেড়ে থাকে। তবে এখন পর্যন্ত যে ঋণ নিয়েছে, লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় তা অনেক কম। আওয়ামী লীগ সরকারের দেওয়া বাজেটে চলতি অর্থবছর ব্যাংক  থেকে ১  লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকার লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকা করেছে। গভর্নর জানিয়েছেন, ব্যাংক খাতের বর্তমান বাস্তবতায় সরকারের ঋণ ৯০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে সীমিত রাখা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান সরকার ব্যয় সংকোচন নীতিতে চলছে। তবে বকেয়া ঋণ ও সুদ পরিশোধ অনেক বেড়েছে। আবার বেতন-ভাতাসহ সরকারের চলতি ব্যয় প্রতিবছর বেড়ে থাকে। তবে চলতি

অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে এনবিআরের রাজস্ব
আদায় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা কমে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকায় নেমেছে। সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ ঋণাত্মক। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে যা ঋণ
নেওয়া হয়েছে, তার চেয়ে এ খাতে আগের দায় শোধ হয়েছে ২ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা বেশি। এ ছাড়া বিদেশি উৎস থেকে ঋণ ছাড় ও প্রতিশ্রুতি কমেছে। সব মিলিয়ে শেষ দিকে এসে
ব্যাংক ঋণে নির্ভরতা কিছুটা বাড়ছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের গত ১০ মার্চ পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকার ৮৫ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগে নেওয়া ঋণের ৪৭ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পরিশোধ করায় মুদ্রাবাজার সংকোচন হয়। অবশ্য এ সময়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে টাকা ছাপিয়ে ২৯ হাজার ৪১০ কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বাড়াতে যা কিছুটা হলেও সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। 
মূলত বিগত সরকারের সময়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপ ঋণের নামে বিপুল পরিমাণের অর্থ আত্মসাৎ করে। এখন আর সে ঋণ ফেরত না আসায় কোনো কোনো ব্যাংক আমানতকারীদের অর্থ ঠিকমতো ফেরত দিতে পারছে না। যে কারণে গত নভেম্বর থেকে তিন দফায় বিশেষ ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী গত ১০ মার্চ সার্বিকভাবে ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ১২ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। গত জুন শেষে যা ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংকে ঋণস্থিতি বেড়ে ৪ লাখ ৪ হাজার ১০৫ কোটি টাকা হয়েছে। গত জুন শেষে যা ছিল ৩ লাখ ১৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। আর বাংলাদেশ ব্যাংকে স্থিতি কমে ১ লাখ ৮ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকায় নেমেছে। গত জুন শেষে যা ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। গত সরকারের সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গোপনে ‘ওভারড্রাফট’ খাতে নেওয়া ৪৮ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা সমন্বয় করে এখন ৬ হাজার ৭৪২ কোটি টাকায় নেমেছে। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এমনিতেই মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা কমেছে। গত বছর আমানত বেড়েছে মাত্র ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এ সময়ে ট্রেজারি বিল এবং বন্ডের বিপরীতে ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগের দায় শোধ করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে ১০ শতাংশে নেওয়া হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশে নেমেছে। মূল্যস্ফীতি আরও কমবে বলে মনে করেন গভর্নর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ