অভ্যুত্থানে নানা অংশীজন, নানা মানুষের আত্মত্যাগ রয়েছে। প্রত্যেকের আলাদা গল্প রয়েছে। এমন আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। স্বাধীনতার পরে গত ৫৩ বছরে সে আকাঙ্ক্ষাগুলো পূরণ হয়নি। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সেই গণতান্ত্রিক উত্তরণের সুযোগ যেন নষ্ট না হয়।
 
শনিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার ‘জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা এ সব কথা বলেন। বইটি প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন। 

প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং যুগ্ম আহ্বায়ক রশিদুল ইসলাম রিফাত বক্তব্য রাখেন। এ সময় উপদেষ্টা ফাওজুল কবির, ঐক্যমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

আসিফ মাহমুদ বলেন, বইটি শুধু আমার ব্যক্তিগত জায়গা থেকে লেখা। যারা গণঅভ্যুত্থানে যেভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন, সবাই আপনাদের অংশটি লিখুন। যেন আমরা জুলাই অভ্যুত্থানের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাই। আমাদের কাছে যেন একটি পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস থাকে। 

নাহিদ ইসলাম বলেন, আমাদের গল্পগুলোই কেউ যেন শুধু জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প ভেবে না নেয়। এখানে প্রত্যেকের মানুষের গল্প জুলাইয়ের গল্প। এগুলো আমাদের বেশি শোনা উচিত। প্রাইভেটে, মাদরাসা শিক্ষার্থীরা, কুমিল্লায়, নরসিংদীতে কীভাবে আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে তাদের গল্প বেশি আসা দরকার। 

আসিফ নজরুল বলেন, জুলাই অগ্রসেনা যারা নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদেরকে আমরা সতর্ক করে দেই। তোমরা একটা নতুন রাষ্ট্রের স্বপ্ন আমাদের সামনে হাজির করেছো, ইনফ্যাক্ট নব্বই সালেও এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। একাত্তরের পর প্রথমবারের মত। একাত্তরে আমরা যে সুযোগ নষ্ট করেছি, তোমরা সে সুযোগ নষ্ট হতে দিও না। 

তিনি বলেন, সবার অভূতপূর্ব আত্মত্যাগের মধ্যে যে প্রত্যাশা ছিল, সেটা যেন কিছুটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থার কিছু সংস্কার করতে হবে। এই বই পড়ে মনে হয়েছে, মানুষের মনে এই প্রেরণা তাগিদ আরেকটু সৃষ্টি হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বই উপদ ষ ট আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

তরুণরাই মোড় পরিবর্তনের দিশারি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ইতিহাসের নতুন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। জনগণের সামনে আবারও এসেছে গণতান্ত্রিক, স্বাধীন ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার সুযোগ। দেড় হাজার শহীদের রক্ত এবং অসংখ্য ছাত্র-জনতার অঙ্গহানির বিনিময়ে যে নতুন বাংলাদেশের সম্ভাবনা চব্বিশে রচিত হলো, তা ৫ আগস্টের কয়েক দিন আগেও ছিল প্রায় অসম্ভব কল্পনা।

সিন্দাবাদের ভূতের মতো আমাদের ঘাড়ে চেপে বসা ফ্যাসিস্ট শাসন অপরাজেয় ও দুর্লঙ্ঘ একথা ভেবে বসেছিলেন অনেকেই। বিশেষ করে ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের পর ধীরে ধীরে আশাহত হয়ে পড়ছিলেন অনেকেই। ভেবেছিলেন, এই ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশের ভবিতব্য। কিন্তু ইতিহাসের ললাটে গোপনে লিখিত হয়ে গিয়েছিল আরেক গন্তব্য। বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলন জেগে উঠেছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। 

অবশ্য বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্র জাগরণ, ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থান নতুন কিছু নয়। বরং এটাই যেন নিয়ম। যখনই দেশ কোনো গভীর সংকটে নিপতিত হয়, সব আশা নিঃশেষিত হয়ে যায়, তখন ছাত্ররা সামনে চলে আসে। তাদের ডাকে আপামর জনতা পথে নামে। 

এটা হয়তো আমাদের কৃষি অধ্যুষিত সমাজের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য। একটা বিশেষ মনোগঠন। যে মনোগঠনের কেন্দ্রে আছে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সম্পর্কে এক আশাপ্রদ রূপকল্প। কৃষক সমাজে বহু বছর ধরে এই রূপকল্প প্রচলিত যে ভবিষ্যতে তাদের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সন্তানটি পরিবারের দায়িত্বভার গ্রহণ করবে। পরিবারটিকে নতুন এক ভবিষ্যতের দিকে পরিচালনা করবে। এই রূপকল্প আজও জাগরূক। শুধু গ্রামীণ সমাজে নয়, গ্রাম থেকে আসা শহুরে মধ্যবিত্ত সমাজেও পরিবারগুলো বিশ্বাস করে, ছেলেমেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয় পাস করে পরিবারের দায়িত্ব নেবে এবং ভাগ্য ফেরাবে। 

পরিবারগুলোর এই খণ্ড খণ্ড স্বপ্ন হয়তো ইতিহাসের বিশেষ দিনক্ষণে যৌথ স্বপ্নে পরিণত হয়। জনগণের একটি বড় অংশ সমস্বরে জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণের দায়িত্ব ছাত্রদের হাতে তুলে দেয় অথবা ছাত্ররা সেই দায়িত্ব তুলে নিলে জনসাধারণের পক্ষ থেকে এক বাক্যে তাতে সমর্থন জানিয়ে দেওয়া হয়। 

আমরা ১৯৫২ সালে, ১৯৬৯ সালে, ১৯৯০ সালে এমন ঘটনা ঘটতে দেখেছি। যখনই জাতি কোনো গভীর সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে এবং সেই সংকট থেকে উত্তরণের পথ দেখিয়েছে ছাত্ররা, তখনই সাধারণ জনগণ জেগে উঠেছে। প্রশ্নহীনভাবে পথে নেমে সংকট থেকে জাতিকে উদ্ধার করেছে।

তবে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান আগের গণঅভ্যুত্থান ও আন্দোলনগুলোর চেয়ে অনেক বিস্তৃত ও গভীর ছিল। হতাহতের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। ছাত্ররা প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করেছিল যে তারা সত্যিই পরিবর্তন চায়। সেই প্রাণের বিনিময়ে মানুষ তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হয়েছিল। জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিস্টদের তাড়িয়ে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছিল।

আমরা এখন সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকে গেছি। তরুণরা তাদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিবর্তন ও পুনর্গঠনের যে রূপরেখা হাজির করেছিল, তা নিয়ে চারদিকে ব্যাপক আলোচনা চলছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার অভূতপূর্ব দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করে চলেছে। সংস্কারের জন্য চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। দ্বিমত অবশ্যই থাকবে। সমাজে নানা মত থাকলে নানা পথও থাকবে। কিন্তু তরুণরা এমন এক বাস্তবতা তৈরি করেছে, মানুষের মনে এমন এক স্বপ্ন জাগিয়ে দিয়েছে– যা থেকে ফিরে আসা খুব কঠিন। 

পুনর্গঠিত নতুন এক বাংলাদেশ তৈরি না হলে এবার বিপুলভাবে আশাহত হয়ে পড়বে জাতি। ফলে এই কর্মযজ্ঞকে সফল করে তুলতে হবে। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, গণজাগরণের মধ্য দিয়ে তরুণরা যে স্বপ্ন বপন করেছে, তাকে জাগরূক রাখতে হবে। স্মরণে, উদযাপনে তারুণ্যের শক্তি যেন বাংলাদেশকে নতুন অভিযাত্রায় নিয়ে যেতে পারে সেজন্য যে কোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। 

হার না মানা যে শহীদেরা অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন, তাদের কথা মনে রেখে সহযোদ্ধাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে তারুণ্যের উৎসবে পরিণত করতে হবে।

মাহবুব মোর্শেদ: লেখক ও সাংবাদিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কথা শোনা যখন বন্ধ করেছে, তখন থেকে বিএনপির পতন শুরু: ফরহাদ মজহার
  • ক্ষমা করিস না মা, দ্রোহ হয়ে ছড়িয়ে পড়িস
  • তরুণরাই মোড় পরিবর্তনের দিশারি