যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় থাকা জাহাজ চট্টগ্রামের উপকূলে
Published: 15th, March 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা একটি তেলবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম উপকূলে অবস্থান করছে। জাহাজটি ভাঙার জন্য চট্টগ্রাম শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে আনার চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে জাহাজটি ইয়ার্ডে আনার জন্য অনাপত্তিপত্র পেতে শিল্প মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।
পূর্ব আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্র কমোরোসের পতাকাবাহী ওই জাহাজের নাম ‘ইতাগুয়া’। ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) দেওয়া জাহাজটির শনাক্তকারী নম্বর ৯১০২২৭৭। জাহাজটি ইতিমধ্যে সমুদ্রে চলাচলের ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এ ধরনের জাহাজ সাধারণত জাহাজ ভাঙা মালিকেরা কিনে থাকেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইরানের জ্বালানি তেল পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে জাহাজটির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
সমুদ্রে চলাচলকারী সব জাহাজের ভৌগোলিক অবস্থান পর্যবেক্ষণ করে ভেসেল ফাইন্ডার নামের একটি ওয়েবসাইট। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ শনিবার সকাল সাতটা পর্যন্ত জাহাজটির অবস্থান চট্টগ্রাম উপকূলে দেখা যাচ্ছিল।
জানতে চাইলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়া শাখার যুগ্ম সচিব সুলতানা ইয়াসমিন প্রথম আলোকে বলেন, ইতাগুয়া নামের জাহাজটি চট্টগ্রামের একটি শিপইয়ার্ডে আনতে অনাপত্তিপত্রের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয় এখনো অনাপত্তিপত্র দেয়নি বলেন জানান তিনি।
ইরানের জ্বালানি তেল পরিবহনে যুক্ত ট্যাংকারগুলো চলাচল নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ‘ইউনাইটেড এগেইনস্ট নিউক্লিয়ার ইরান’। তাদের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, ৩ লাখ টন তেল পরিবহনে সক্ষম ইতাগুয়া ১৯৯৭ সালে জাপানে নির্মাণ করা হয়। মূলত নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা জ্বালানি তেল পরিবহন করতে ইরান যে ‘শ্যাডো ফ্লিট’ (ছায়া জাহাজবহর) ব্যবহার করে, তার একটি হচ্ছে এই জাহাজ।
ইউনাইটেড এগেইনস্ট ইরানের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মোট ৮৪ লাখ ৮৬ হাজার ২০৭ লাখ ব্যারেল তেল পরিবহন করেছে জাহাজটি। ইরানের ন্যাশনাল ইরানিয়ান ট্যাংকার কোম্পানির অধীনে জাহাজটি তেল পরিবহন করত। প্রতিষ্ঠানটিও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে।
সমুদ্রপথে মালামাল পরিবহন সংক্রান্ত খবরাখবর দেওয়া নিউজপোর্টাল ট্রেড উইন্ডের তথ্যমতে, বাংলাদেশে স্ক্র্যাপ জাহাজের প্রতি টনের দাম ৫৫০ মার্কিন ডলার থেকে কমে ৫০০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু প্রথম আলোর হাতে আসা ইতাগুয়া বিক্রির চুক্তি অনুযায়ী, মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা এই জাহাজ প্রতি টন ৪৩৫ ডলারে বিক্রির সমঝোতা হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি হলো ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য সীমিত করা এবং বিভিন্ন বাণিজ্যের ওপর শর্তারোপ করা। ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কে গেলে ট্রাম্প প্রশাসন থেকে হুমকির বিষয়ও আছে।
খন্দকার মোয়াজ্জেম বলেন, এ মুহূর্তে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উচিত অনাপত্তিপত্র স্থগিত করে বৈশ্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা। কারণ, ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেখান থেকে কী সিদ্ধান্ত আসছে, তার ওপর ভিত্তি করে এগোনো ভালো হবে।
জাহাজভাঙা শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈশ্বিক জোট ‘এনজিও শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্ম’–এর তথ্যমতে, একটি জাহাজের কার্যকাল যখন শেষ হয়, তখন জাহাজটি নানা ধরনের ক্ষতিকর বর্জ্যে পূর্ণ থাকে। এ ধরনের জাহাজ ভাঙতে হলে বিশেষায়িত দক্ষতা ও ইয়ার্ডের প্রয়োজন হয়, যা বাংলাদেশের নেই।
এ প্রসঙ্গে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এসব জাহাজের সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রসহ পরিবেশদূষণে ভূমিকা আছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, জাহাজগুলো বর্জ্যমুক্ত হয়ে আসছে কি না, সেটাও শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিশ্চিত করা জরুরি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত ল পর বহন অন য য় জ হ জট
এছাড়াও পড়ুন:
সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ পেছাল ১১৭ বার
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আজ মঙ্গলবারও আদালতে জমা পড়েনি। এ নিয়ে এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ ১১৭ বার পেছানো হলো।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে আজ এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের ধার্য দিন ছিল। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পক্ষ থেকে আজ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি।
আগামী ২১ মে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নতুন দিন ঠিক করেছেন ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলাম।
এক যুগ পর সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দেওয়া হয়েছে। গত বছরের ৪ নভেম্বর মামলার আগের তদন্ত সংস্থা র্যাবের কাছ থেকে মামলার নথিপত্র বুঝে নিয়েছে পিবিআই। সংস্থাটি এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছে।
মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজিজুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘র্যাবের কাছ থেকে মামলাসংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র বুঝে পেয়েছি। তদন্তকাজ নতুন করে শুরু করেছি।’
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় এই সাংবাদিক দম্পতি নৃশংসভাবে খুন হন। সাগর মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক ছিলেন। রুনি ছিলেন এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক।
সাগর-রুনি হত্যার ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। প্রথমে এই মামলা তদন্ত করছিল শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ। চার দিন পর মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।
তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ৬২ দিনের মাথায় ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। এরপর আদালত র্যাবকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন। তখন থেকে মামলাটির তদন্ত করছে র্যাব।
২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি লিখিতভাবে র্যাব আদালতকে জানিয়েছিল, সাগর-রুনির বাসা থেকে জব্দ করা আলামতের ডিএনএ পর্যালোচনায় অজ্ঞাতপরিচয় দুই পুরুষের উপস্থিতি মিলেছে। অজ্ঞাতপরিচয় দুই পুরুষকে শনাক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রের ইনডিপেনডেন্ট ফরেনসিক সার্ভিসেস (আইএফএস) ল্যাবে ডিএনএ পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ছবি প্রস্তুতির চেষ্টা চলছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ডিএনএ ল্যাবের ফলাফল জেনেছে র্যাব। তবে অজ্ঞাতপরিচয় দুজনের ডিএনএ থেকে ছবি তৈরির সন্তোষজনক ফল আসেনি।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে দুজন জামিনে, বাকি ছয়জন কারাগারে।
৩০ সেপ্টেম্বর সাগর ও রুনি হত্যা মামলার তদন্তে বিভিন্ন সংস্থার অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। স্বরাষ্ট্রসচিবের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তদন্ত শেষে ছয় মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।