‘একটা ট্রফি জিততে পারলে আমাদের প্রজন্মের জন্য ভালো হবে’
Published: 15th, March 2025 GMT
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অবসরে শেষ হলো রঙিন জার্সিতে বাংলাদেশের পঞ্চপাণ্ডব যুগ। সাদাপোশাকে একমাত্র মুশফিকুর রহিম চালিয়ে যাবেন খেলা। এই পাঁচ তারার সময়ে বাংলাদেশ স্বর্ণালি সময়। যদিও কোনো বৈশ্বিক ট্রফি ধরা দেয়নি।
সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল থেকে শুরু করে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের অবর্তমানে বাংলাদেশের পতাকা ওড়াবে কারা এখন, এমন আলোচনা চলছে দেশের ক্রিকেটে। এবার এতে শামিল হলেন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ।
মাহমুদউল্লাহর অবসর নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মিরাজ স্বরণ করালেন তাদের সময়েও বাংলাদেশ কোনো ট্রফি জেতেনি, “আমরা কিন্তু এখনও একটাও ট্রফি জিততে পারেনি। তাই আমাদের লক্ষ্য থাকবে আমরা যেকোনো বড় টুর্নামেন্ট জেতা। একটা ট্রফি জিততে পারলে আমাদের প্রজন্মের জন্য ভালো হবে।”
আরো পড়ুন:
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা মাহমুদউল্লাহর
৪ ইনিংসে ৩ ফিফটি, মাহমুদউল্লাহ এবার ছুঁলেন ‘২০০’
মাহমুদউল্লাহর প্রস্থান নিয়ে মন্তব্যে মিরাজ বলেন, “প্রত্যেকটা মানুষেরই একটা সময় নিজের জায়গা থেকে সরে যেতে হয়। তাদের যে দায়িত্বটা ছিল, তারা বাংলাদেশকে একটা ধাপে নিয়ে এসেছে। আমাদের কাজ থাকবে, এখান থেকে আরেকটা ধাপে নিয়ে যাওয়া।”
শনিবার (১৫ মার্চ, ২০২৫) ঢাকা লিগে মোহামেডান-রূপগঞ্জের ম্যাচ শেষে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন মিরাজ। ব্যাট হাতে ২৫ রানের পাশাপাশি বল হাতে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন এই অলরাউন্ডার।
জাতীয় দলে এখন যারা আছেন তাদের সবাইকে নতুন বলতে নারাজ মিরাজ। গুরুত্ব দিয়েছেন পারফরম্যান্সের দিকে, “আমাদের যারা আছি, সবার পারফর্ম করা জরুরি। দলে এখন ৬-৭ জন আছে যারা প্রায় ৭-৮-১০ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছে। সবাইকে নতুন বলা যাবে না। যারা আছে নতুন ২-৩ বছর খেলেছে, তাদের সঙ্গে যারা ৮-৯ বছর খেলেছে তাদের মিলিয়ে একটা পরিকল্পনা করে সমন্বয় নিয়ে এগোতে হবে। আমার মনে হয় যথেষ্ট অভিজ্ঞতা হয়েছে।”
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশের ভরাডুবি হয়েছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ছাড়াও আছে ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ। নিজেদের সেরা সংস্করণে এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে চান মিরাজ।
“এটা একটা প্রক্রিয়া। এখন থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং অটল থাকতে হবে। বিশ্বকাপের যে দুই-আড়াই বছর আছে, এখন থেকেই দলটা সেট-আপ করতে হবে, কে কোন জায়গায় খেলবে সেটা নিয়ে অনুশীলন করতে হবে। ক্রিকেটারদের ওই জায়গায় সুযোগ দিতে হবে। সবাই সবাইকে ব্যাক করতে হবে।”
“বিশ্বকাপের আগে আমাদের যত ওয়ানডে আছে, ক্রিকেটারদের সুযোগ দিতে হবে। আমরা যদি ২-৩ মাস আগে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নেই, তাহলে কঠিন। তবে এখন থেকে যদি সবাই কাজ শুরু করে, সবাই সম্পৃক্ত থেকে যদি আগে থেকে দলটা সেট করে, তাহলে একটা ভালো হবে।”
ঢাকা/রিয়াদ/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এখন থ ক আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা
মুরাদনগরে বৈশাখী মেলা ঘিরে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মৃৎশিল্পীরা। সারা বছর এই কাজের কদর না থাকলেও বৈশাখ রাঙাতে এই সময়টাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় আগের মতো চাহিদা নেই মৃৎশিল্পের। এই পেশায় নেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। তাই প্রায় সারাবছরই অধিকাংশ নারী মৃৎশিল্পীকে অবসর সময় কাটাতে হয়। পুরুষ মৃৎশিল্পীদের অধিকাংশ চলে গেছেন অন্য পেশায়। তবে নববর্ষের আগে সব কাজ ফেলে তারা ছুটে আসেন পুরোনো এই পেশায়। মৃৎশিল্প থেকে সারা বছর কারিগররা আয়ের মুখ না দেখলেও বৈশাখী মেলা ঘিরে থাকে বাড়তি উপার্জনের সম্ভাবনা। এবারও মাসজুড়ে প্রতিটি কুমারপাড়ায় ছিল ব্যস্ততা।
কামাল্লা ও রামচন্দ্রপুর গ্রামের পালপাড়ায় দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। জরাজীর্ণ আবাসগুলোতে কেউ মাটি ঘুটছেন, কেউ সেই মাটি ছাঁচে দিয়ে তৈজসপত্র তৈরি করছেন। কেউবা খেলনা শুকানোর পর রংতুলির আঁচড় দিচ্ছেন। বিশেষ করে শিশুদের চাহিদা মাথায় রেখে তৈরি করা হচ্ছে ছোট ছোট মাটির হাঁড়িপাতিল, মাটির চুলা, শিলপাটা, কড়াই, কলস, কুলা, পুতুল, হাতি, ঘোড়া, নৌকা, টিয়া, সিংহ, দোয়েল, কচ্ছপ, মাছ, হাঁসসহ নানা রকম ফল, ফুল আর বাহারি মাটির ব্যাংক, প্লেট, মগ, গ্লাস, চায়ের কাপ। এ ছাড়া রয়েছে মাটির তৈরি গৃহস্থালি জিনিসপত্র।
কামাল্লা গ্রামের সন্ধ্যা রানী পাল ও শিখা রানী পাল জানান, এখন মাটির জিনিসের তেমন কদর না থাকায় সারাবছর টানাপোড়েনের মধ্যে চলে তাদের সংসার। পূর্বপুরুষের পেশা হওয়ায় ইচ্ছা হলেও ছাড়তে পারছেন না। সারাবছর অবসর সময় পার করলেও বৈশাখী মেলায় মাটির তৈরি খেলনা ও জিনিসপত্রের চাহিদা থাকায় এই সময়ে ব্যস্ততা থাকে তাদের।
কথা হয় মৃৎশিল্পী হরি ভূষণ পালের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, বছরের এই একটি উৎসব ঘিরে তাদের অনেক আশা থাকে। বৈশাখ মাস এলে মেলায় মাটির খেলনা সামগ্রীর চাহিদা বাড়ে। তাই এ সময় কিছু আয় হয়। তিনি হতাশার সুরে বলেন, ‘সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করত, তাহলে ব্যবসাটা ভালোভাবে করতে পারতাম।’
মৃৎশিল্পী কানন বালা জানান, পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। এই মেলা থেকে শখের বসে অনেকে মাটির সামগ্রী, বিশেষ করে মাটির খেলনা কেনেন। তাই এই সময়ে কর্মব্যস্ততা বাড়ে তাদের।
রামচন্দ্রপুর গ্রামের খুশি পাল বলেন, ‘আমার বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই। বিয়ের পর থেকেই এই পেশার সঙ্গে জড়িত। আগে মাটির সামগ্রীর প্রচুর চাহিদা থাকলেও এখন আর তেমন নেই। এই শিল্পের সঙ্গে আমাদের জীবনজীবিকা নির্ভরশীল।’
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুর রহমানের ভাষ্য, আধুনিকতার ছোঁয়ায় মৃৎশিল্প যে হারিয়ে গেছে, বিষয়টি তা নয়। বরং আধুনিকতার ছোঁয়ায় শিল্পকারখানার মাধ্যমে তৈরি হওয়া মাটির তৈজসপত্রর চাহিদা এখন প্রচুর। মুরাদনগরে যদি বেসরকারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এসব মৃৎশিল্পীকে কাজে লাগানো যায়, তাহলে অবশ্যই এই শিল্প থেকে ভালো সুফল পাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি মৃৎশিল্প বাঁচিয়ে রাখতে বিআরডিবি ও সমবায় কার্যালয় থেকে যেন সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়। যেহেতু মুরাদনগরে কোনো মৃৎশিল্পের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নেই, তাই মৃৎশিল্পীদের এই পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে সহজে সরকারি সহায়তা দিতে উপজেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।