কুমিল্লা নগরের জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনাল এলাকা। শনিবার সকালে টার্মিনালের পেছনের অংশে যেতেই চোখে পড়ল কয়েকটি পুরোনো লক্কড়ঝক্কড় বাস। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, বাসগুলোর বেশির ভাগই ফিটনেসহীন। পুরোনো এসব বাসের খোলস বদলে গায়ে রং লাগানো হচ্ছে। চলছে নতুন রূপে ফেরানোর জন্য তোড়জোড়। ঈদযাত্রায় লক্কড়ঝক্কড় এসব বাস মহাসড়কে নামাতে রং ও মেরামত করা হচ্ছে।

শুধু জাঙ্গালিয়া এলাকাই নয়, কুমিল্লার আরও বেশি কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এবার ঈদযাত্রায় সড়ক ও মহাসড়কে নামতে প্রস্তুতি নিচ্ছে লক্কড়ঝক্কড় বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন। যেগুলোর বেশির ভাগের ফিটনেস নেই। তবে হাইওয়ে পুলিশ ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কর্মকর্তারা বলছেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে নামলে ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। যার কারণে শিগগিরই ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছেন তাঁরা।

কুমিল্লা মোটর অ্যাসোসিয়েশনের (বাস মালিক সমিতি) সভাপতি জামিল আহমেদ খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে আমাদের সভা হয়েছে। আমরা বলেছি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি আমাদের কেউ রাস্তায় নামাবে না। ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধে আমরা প্রতিনিয়ত তদারকি করব। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে আমরা নজরদারি বৃদ্ধি করেছি। প্রতিবছরই ঈদকে কেন্দ্র করে একটি চক্র লক্কড়ঝক্কড় ফিটনেসবিহীন বাস মেরামত ও রং করে সড়কে নামিয়ে দেয়। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। আমরা সতর্ক আছি। তবে এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশ ও বিআরটিএকে বেশি সচেতন হতে হবে।’    

শনিবার কুমিল্লার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল জাঙ্গালিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, টার্মিনালের ভেতরের অংশেই অন্তত ১০টি বাসের খোলস বদলে নতুন রং লাগানোর কাজ চলছে। এসব বাসের কোনোটির ইঞ্জিনে ত্রুটি; আবার কোনোটির গায়ের রং উঠে গেছে। কোনোটিতে নেই সিটকভারও। এমন লক্কড়ঝক্কড় বাসগুলো মেরামত আর রং করতে দিন–রাত এক করে কাজ করছেন মিস্ত্রিরা।

মো.

হাসান নামে এক ব্যক্তির ওয়ার্কশপে চলছে তিনটি লক্কড়ঝক্কড় বাসের মেরামত। ঈদের আগেই এসব বাসমালিককে বুঝিয়ে দিতে হবে জানিয়ে মো. হাসান বলেন, ঈদের আগে বাসগুলো ডেলিভারি দিতে হবে। মালিকেরা খুব চাপে রাখছেন। কারণ, ঈদের সময় এই বাসগুলো যাত্রী পারাপার করবে। মিস্ত্রি খরচ, রঙের দাম থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম বাড়ছে; কিন্তু তাঁদের আয় বাড়েনি। পাঁচ বছর আগেও যেই টাকা পেতেন, সেই টাকা দিয়েই পুরোনো বাস মেরামত করতে হচ্ছে। কারণ, এখন অনেক দোকান হয়ে গেছে, প্রতিযোগিতা বেশি। এই এলাকায় আরও বেশি কয়েকটি দোকান পুরোনো বাস মেরামত করে।

কুমিল্লা থেকে ঢাকায় চলাচলকারী একটি পরিবহনের বাসচালক মাহাবুব হোসেন বলেন, ঈদ এলে দেখা যায়, সড়কে কত নামের বাস। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নামিদামি কোম্পানির বাসের নামের আগে বা পরে ‘নিউ সুপার’ লাগিয়ে এসব ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে নামানো হয়। অথচ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লক্কড়ঝক্কড় এসব বাস অকেজো হয়ে সারা বছর পড়ে থাকে। ঈদ বা বিভিন্ন মৌসুমে এগুলো সামান্য মেরামত করেই রাস্তায় নামানো হয়। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে।

জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনাল এলাকার একটি ওয়ার্কশপে নিজের পুরোনো বাস মেরামত করাচ্ছেন কামাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি। কাজ যেন দ্রুত শেষ হয় সেজন্য কামাল নিজেই তদারক করছেন। জানতে চাইলে কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার এই বাসডার নাম বলাকা। আগে ঢাকা-থাইক্কা বরিশাল রুটে চলত। এইবারের ঈদে কুমিল্লা-ঢাকা রুটে চলব। চিন্তা করছি কাম শেষ হইলে তিশা নামে রাস্তায় নামামু। সামনে ঈদ এ জন্য একটু ইঞ্জিনের কাজ আর রং করাইতেছি।’

কুমিল্লা আদর্শ সদরের আলেখারচর, শংকরপুর, ঝাগুরঝুলি, কুমিল্লা সদর দক্ষিণের পদুয়ার বাজার, কুমিল্লা নগরের ঢুলিপাড়াসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে একই দৃশ্য দেখা গেছে। প্রতিটি স্থানেই ওয়ার্কশপের মিস্ত্রিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন লক্কড়ঝক্কড় বাস নতুন রূপে সাজানোর জন্য। ঈদে নতুন রঙের গাড়ি দেখলে যাত্রীরা খুশি হন বলে জানান তাঁরা।

কুমিল্লা আদর্শ সদরের আলেখারচর এলাকার একটি ওয়ার্কশপে পুরোনো গাড়ির বডিতে রঙের কাজ করছেন আতিকুল ইসলাম নামের এক রংমিস্ত্রি। তিনি বলেন, ‘ঈদকে টার্গেট করে পুরোনো গাড়িগুলো রং করে নতুন রূপে সাজানো হচ্ছে, নতুন গাড়ি দেখলে যাত্রীরা আকৃষ্ট হয়ে থাকেন। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে দম ফেলার সময় পাচ্ছি না। সময়মতো ডেলিভারি দেওয়ার জন্য দিনরাত কাজ করছে সবাই। ২০-২২ রমজানের মধ্যেই গাড়ি ভেলিভারি দিতে হবে।’

বিআরটিএর কুমিল্লা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ফারুক আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত হলো সড়ক-মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন কোনো যানবাহল চলাচল করতে পারবে না। এ বিষয়ে আমরা কঠোর হব। বিশেষ করে ফিটনেসবিহীন বাস চলাচল করলে ঈদের সময় ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। আমরা বিষয়টি নিয়ে সতর্ক আছি। শিগগিরই আমরা নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা শুরু করব।’

হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপারের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খাইরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই না ঈদযাত্রায় কোনো মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ুক। তাই আমরা এসব বিষয়ে অভিযান জোরালো করব। ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামলেই মামলা দেওয়াসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে আমাদের সারা বছরই অভিযান থাক, তবে ঈদকে সামনে রেখে শিগগিরই আমরা এ বিষয়ে আরও বেশি পরিমাণে অভিযান শুরু করব। এ ক্ষেত্রে কোন ছাড় দেওয়া হবে না।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র ঘটন র ঝ প রথম আল ক ব স ম র মত ঈদয ত র য় এসব ব স ফ টন স আম দ র আরও ব করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

খালেদা জিয়ার সঙ্গে সুনির্দিষ্ট নয়, বিভিন্ন বিষয়ে সাধারণ আলোচনা হয়েছে: জামায়াতের আমির

লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে নয়, বিভিন্ন বিষয়ে সাধারণ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান।

গত রোববার লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির এবং নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। সেখানে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে শফিকুর রহমান আজ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যে প্রায় ১১ দিনের সফর শেষ করে গত সোমবার তিনি দেশে ফেরেন। এই সফর সম্পর্কে জানাতে আজ দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেল ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দলটি।

জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর মতো বিএনপিও জুলুমের শিকার হয়েছে। ব্যক্তি হিসেবে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও জুলুমের শিকার। দেশ থেকে যাওয়ার আগে আমরা চিন্তা করেছিলাম (খালেদা জিয়ার সঙ্গে) একটা সাক্ষাৎ হবে। কিন্তু যেকোনো কারণেই হোক, সেটি আমরা করতে পারিনি। ইউরোপ সফরে যাওয়ার পর আমার এক পরিবারের সদস্যের সঙ্গে দেখা করতে সেখানে (যুক্তরাজ্য) গিয়েছি। এরপর খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছি।’

এই দেখা করার মূল উদ্দেশ্য তাঁর (খালেদা জিয়া) খোঁজখবর নেওয়া ছিল বলে উল্লেখ করেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, তাঁরা তাঁদের অতি সম্মান ও ভালোবাসার সঙ্গে গ্রহণ করেন। যেহেতু তিনি তাঁর ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বাসায় অবস্থান করছেন, কাজেই তিনিও (তারেক রহমান) সেখানে থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক। তিনিও ছিলেন। দুই দলের দায়িত্বশীল ব্যক্তি এক জায়গায় বসলে সেখানে রাজনীতির কথা হবে না, এটা কি বাস্তব! বাস্তব নয়। কথা তো হয়েছে, কিন্তু সুনির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি। নির্বাচন কখন হবে, কীভাবে হবে, বিচারপ্রক্রিয়া কীভাবে হবে, না হবে—বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাধারণ আলোচনা হয়েছে।

জামায়াতের আমির বলেন, রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু সেটা যেন মতবিরোধে রূপ না নেয়। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই মতপার্থক্য থাকুক, নয়তো রাজনীতিবিদেরা অন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু এ–ও প্রত্যাশা করি, এটি যাতে মতবিরোধে রূপ না নেয়। ওটা পার্থক্য পর্যন্ত থাকুক। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের রাজনীতিবিদেরা অনেক সময় বিষয়গুলো খেয়াল করেন না বা করি না। এটা করতে হবে। যদি আমরা দেশকে ভালোবাসি, তাহলে এই ভালোবাসার, শ্রদ্ধার জায়গায়, মিউচুয়াল রেসপেক্টের জায়গায় আসতে হবে। আমার ওপিনিয়ন (মতামত) আমি দিব, কিন্তু এটা বলতে পারব না যে এটাই করতে হবে। আমি ওপিনিয়ন দিয়ে বলব যে এটা করলে আমার দেশ ও জাতির উপকার হবে। আর এটা আমি করতে দিব না, যে যা–ই চাক, এটাও রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ভাষা নয়।’

আরও পড়ুনলন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াতের আমিরের সাক্ষাৎ১৫ এপ্রিল ২০২৫

ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমন্ত্রণে সম্প্রতি ব্রাসেলসে সফরে যায় জামায়াতের প্রতিনিধিদল। সেখানে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে শফিকুর রহমান বলেন, ‘এটি নিয়ে অবশ্যই কথা হয়েছে। আওয়ামী লীগের ব্যাপারে তাঁরা জানতে চেয়েছেন? হ্যাঁ, চেয়েছেন। সবাই চাননি, দুয়েকটি জায়গায় তাঁরা চেয়েছেন। আমরা তাঁদের বলেছি, আমাদের দেশে কেবল একটা গণহত্যা হয়ে গেছে। শহীদের মা, শিশুরা এখনো কান্নাকাটি করছে। স্ত্রীরা কান্নাকাটি করছে। আহতরা কেউ কেউ এখনো হাসপাতালের বেডে আছে। আমরা জাতি হিসেবে তাদের আমাদের যা করণীয়, সেটাও পুরোপুরি করে উঠতে পারিনি। গোটা জাতি ট্রমাটাইজড। কারণ, জুলাই-আগস্ট এই সময়টায় সরকার কার্যত গোটা জাতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এই আন্দোলন কোনো একক দলের বা পক্ষের ছিল না। এটা ছিল জনতার আন্দোলন।’

আরও পড়ুনআগামী রমজানের আগেই নির্বাচন চায় জামায়াত১৬ এপ্রিল ২০২৫

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হওয়া তিনটি নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) তো অপার সুযোগ পেয়েছিল। একটানা তিনটা নির্বাচন তাদের অধীনে করেছে, কিন্তু সেই নির্বাচনগুলোকে নির্বাচন রাখল না কেন! তারা তো নির্বাচনের জান কবজ করেছে। এমনকি জনগণ তো বলে, তাদের (আওয়ামী লীগ) যারা সমর্থন করে, তারাও নির্বাচনের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল, তারাও ভোট দিতে যায়নি। দিস ইজ ফ্যাক্ট। তো সে রকম একটা দলকে বাংলাদেশের জনগণ এই মুহূর্তে গ্রহণ করবে কি না এবং আওয়ামী লীগও তাদের মানসিকতা পরিবর্তন করেছে কি না, এটা বিশাল প্রশ্ন। এ কথা বলার পর তারা (বিদেশি) আর কিছু বলেনি। তারা ওখানেই থেমে গেছে। রিয়েলিটি (বাস্তবতা) সবাইকে মেনে নিতে হবে এবং দিস ইজ রিয়েলিটি।’

আরও পড়ুনতিন দাবি পূরণ হলেই আগামী রোজার আগে নির্বাচন হতে পারে: জামায়াতের আমির৩ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ