আগামী নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করবে আর জাতীয় নাগরিক পার্টি বিরোধী দল হিসেবে সরকারে থাকবে বলে মনে করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে তাদের দল ৩০-৩৫ শতাংশ ভোট টানতে পারে বলে মনে করছেন।

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিডিবিএল ভবনে এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় সারোয়ার তুষার এসব কথা বলেন। ‘পিপলস ইলেকশন পালস’ শীর্ষক এ আলোচনা সভায় একটি জরিপের ফলাফলও তুলে ধরা হয়। জরিপটি করেছে ইনোভিশন নামের একটি বেসরকারি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। আর এই কাজে সহযোগিতা করেছে ব্রেইন ও ভয়েস ফর রিফর্ম।

আলোচনা সভায় জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, এবারের নির্বাচন খুবই ইন্টারেস্টিং হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘অবভিয়াসলি (স্পষ্টত), এখনো যা সিচুয়েশন (পরিস্থিতি), এক বছরের মধ্যে আমি মনে করি যে বিএনপি গভর্নমেন্ট ফরম করবে এবং আমাদের জন্য বিরোধী দল হওয়াটাই ভালো। বিরোধী দল আসলে ক্যারেক্টার তৈরি করে দলের। আমি দেখতে চাই, দলটা বিরোধী দলে যাক। বিএনপি সরকারে যাক, আমরা বিরোধী দলে যাই।’

সারোয়ার তুষার বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির কিছু সদস্য সংসদে থাকুক, আর বাইরে শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবেও তাঁরা থাকবেন। এটা তাঁর ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা।

সামনে রোমাঞ্চকর সময় আসছে উল্লেখ করে সারোয়ার তুষার বলেন, সেটা যেন রাজনৈতিক হানাহানির পর্যায়ে না যাই। প্রতিযোগিতাটা যেন একটা ডিসেন্ট (ভদ্রতার) পর্যায়ে থাকে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি আগামী নির্বাচনে ৩০–৩৫ শতাংশ ভোট টানতে পারে বলে মনে করেন সারোয়ার তুষার। তাঁর দাবি, জামায়াতে ইসলামীর চেয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির ভোট অবশ্যই বেশি হবে।

জামায়াতে ইসলামীর জনপ্রিয়তা বাড়ছে, এটা ঠিক উল্লেখ করে সারোয়ার তুষার বলেন, দেশে যে ধরনের পরিস্থিতি আছে, ঐতিহাসিকভাবে দেখা গেছে এ রকম পরিস্থিতিতে জামায়াতের জনপ্রিয়তা বেশি থাকে। কিন্তু যখনই ভোট আসবে, জামায়াতের যে ভোট আছে, তার চেয়ে কিছু বাড়বে। জাতীয় নাগরিক পার্টিতে বিএনপি ও জামায়াত—দুই দল থেকেই ভোট আসবে।

আওয়ামী লীগের ভোট এবার জাতীয় নাগরিক পার্টি, বিএনপি ও জামায়াত—তিন দিকেই যাবে বলে মনে করেন সারোয়ার তুষার। তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে যারা তরুণ আওয়ামী লীগার ছিল, ছাত্রলীগার টাইপের ছিল বা একটা ন্যারেটিভের ভিকটিম ছিল বা নিরুপায় হয়ে করেছে—এ রকম একটা বড় (অংশ) এই দিকে (জাতীয় নাগরিক পার্টি) আসার সম্ভাবনা আছে, যদি আমরা সেভাবে তাদেরকে…। কারণ, এটা বাংলাদেশের মানুষ এবং তাঁদেরকে তো আমরা ইয়া করতে পারব না। যাঁদের ক্রিমিনাল রেকর্ড নাই, তাদের সাথে ইয়া কি। তাদেরকে তো একটা জায়গা দিতে হবে এবং সকল দল করছে। বলে লাভ নাই, বিএনপি সারা দেশে আওয়ামী লীগকে শেলটার (আশ্রয়) দিচ্ছে, ক্রিমিনালদেরকে (সন্ত্রাসী) শেলটার দিচ্ছে। এটা আপনারা সবাই জানেন। সে ক্ষেত্রে যারা ভোটার, তাদেরকে তো আমাদের দিকে টানতে চাইব–ই, এটা খুবই ন্যাচারাল।’

এ সময় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট ফর গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন, ভয়েস ফর রিফর্ম প্লাটফর্মের সহ-আহ্বায়ক ও বিডিজবসের প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুর, ইনোভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়াত সারওয়ার, অর্থনীতিবিদ অনন্য রায়হান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ব্রেইনের নির্বাহী সফিকুর রহমান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স র য় র ত ষ র বল ন সরক র ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

তিতুমীর কলেজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতার ওপর ছাত্রদলের হামলা

তিতুমীর কলেজের নাটোর জেলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদের ইফতার মাহফিলে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর সানির ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শনিবার (১৫ মার্চ) বিকেল ৩টার দিকে কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক খাজা মাইনুদ্দিনের নেতৃত্বে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা হাতুড়ি ও দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে সানিকে গুরুতরভাবে আঘাত করে।

প্রত্যক্ষদর্শী ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিদ মাহমুদ বলেন, “দুপুরে আমি গণিত বিভাগের দিকে গেলে সানি ভাই আমাকে ডাক দেয়। আমি সেখানে গিয়ে বসার কিছুক্ষণ পর আকিব এবং খাজা আসে। ওরা এসে বলে, তোমরা যে এখানে ইফতার মাহফিল করছো, কার থেকে অনুমতি নিয়েছো? এ কথা বলে তারা ব্যানার খুলতে যায়। সানি ভাই বাঁধা দিতে গেলে খাজা হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে।”

আরো পড়ুন:

বাকৃবি ও ইবি শাখা ছাত্রদলের গণইফতার

২ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা

তিনি বলেন, “হামলার পর আহতাবস্থায় সানি ভাইকে চিকিৎসার জন্য দ্রুত ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার চিকিৎসার জন্য ছয়টি সেলাই দেওয়া লেগেছে।”

হামলার বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক খাজা মাইনুদ্দিন বলেন, “আমরা নাটোর জেলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদের একটি ইফতার মাহফিল করেছি। কিন্তু আজ জাহাঙ্গীর সানির নেতৃত্বে নিষিদ্ব সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী নিয়ে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। আমরা তাদের গিয়ে বাঁধা দিয়েছি। ব্যানার খুলতে গেলে জাহাঙ্গীর সানি আমার ওপর হামলা করে। সেখানে আমার ছোট ভাই আবিকও উপস্থিত ছিল।”

কিন্তু জাহাঙ্গীর সানির ওপর হামলার সময় উপস্থিত না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে আবিক বলেন, “কলেজে নাটোর জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ একটাই আছে। আমি আজ ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখতে পাই, নাটোর জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের নামে ছাত্রলীগের পুনর্বাসন হচ্ছে। বাংলা বিভাগ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির সঙ্গে আমার পূর্বের বিরোধ ছিল।”

তিনি বলেন, “বাংলা বিভাগ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতিকে ক্যাম্পাসে পেয়ে আমি তাকে থানায় দিতে চাই, তখন সে আমার ওপর হামলা করে। পরে শুনতে পারি, জাহাঙ্গীর সানি হাতুড়ি নিয়ে খাজা মঈনুদ্দিন ভাইকে হামলা করতে আসে। তখন জাহাঙ্গীর সানির ঘুষিতে খাজা মঈনুদ্দিন আহত হয়।”

এ বিষয়ে তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমাম হোসেন বলেন, “এটা তাদের জেলা ছাত্র কল্যাণের বিষয়। এতে ছাত্রদলের কোন সম্পৃক্ততা নেই। তবে সংগঠন যদি তার বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ পায়, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এদিকে, এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার (১৫ মার্চ) মাগরিবের নামাজ শেষে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তিতুমীর কলেজ শাখা। এ সময় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

ঢাকা/হাফছা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ