রাতের আঁধারে প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় জনতার হাতে আটক বরিশালের গৌরনদী উপজেলা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মাইনুল ইসলাম পলাশকে সংগঠন থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে।

শনিবার (১৫ মার্চ) সকালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি আকবর হোসেন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের আদর্শ, শৃঙ্খলা ও ইসলামী নৈতিকতা পরিপন্থি কর্মকাণ্ড জড়িত হওয়ার অভিযোগে গৌরনদী উপজেলার ‘সাথী’ ও উপজেলা সেক্রেটারি মাইনুল ইসলাম পলাশকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার (বাতিল) করা হয়েছে।

ছাত্রশিবির সবসময় ছাত্রদের মধ্যে ইসলামী নৈতিকতা ও চারিত্রিক উৎকর্ষতা অর্জন এবং সবধরনের কবিরা গুনাহ হতে দূরে থাকার প্রশিক্ষণের উপর জোর দিয়ে জনশক্তি গঠন করে থাকে। এরপরও কখনো কারও মাঝে মানবিক দূর্বলতার প্রকাশ ঘটা অসম্ভব ও অবাস্তব কিছু নয়। এমন কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে সংগঠনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে যথাসম্ভব দ্রুত সময়ের মধ্যে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

আরো পড়ুন:

গাজীপুরে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা বহিষ্কার

নরসিংদী শহর যুবদলের আহ্বায়ক বহিষ্কার

গৌরনদী উপজেলার ওই ঘটনা জানার পর সঙ্গে সঙ্গে মাইনুল ইসলাম পলাশের সাংগঠনিক সাথী পদ ও দায়িত্ব মুলতবি করা হয় এবং ছাত্রশিবিরের বরিশাল জেলা সেক্রেটারির নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, মাইনুলের বক্তব্য নিতে না পারলেও (পুলিশ হেফাজতে থাকায়) অন্যান্য সাক্ষ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে ঘটনার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। এরপর জরুরি দায়িত্বশীল মিটিং-এ সর্বসম্মতিক্রমে তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার (বাতিল) করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

ইসলামী ছাত্রশিবির বরিশাল জেলা সভাপতি আকবর হোসেন বলেন, ২৫ সেশনে দায়িত্ব পেয়েছিল মাইনুল ইসলাম পলাশ। বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি জানার পরপরই তাকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দিবাগত ভোর রাতে মাইনুল ইসলামকে এক সৌদি প্রবাসীর স্ত্রীর ঘরে আপত্তিকর অবস্থায় ধরে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে প্রবাসীর স্ত্রীসহ মাইনুলকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। মাইনুল উজিরপুর উপজেলার পশ্চিম শোলক গ্রামের শাহ আলম ফকিরের ছেলে।

গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো.

ইউনুস মিয়া বলেন, অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকার দায়ে ওই দুইজনকে জনরোষ থেকে রক্ষা করে থানায় নিয়ে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

ঢাকা/পলাশ/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রব স র স ত র স গঠন থ ক বর শ ল উপজ ল গ রনদ গঠন ক

এছাড়াও পড়ুন:

বেলুচিস্তানের বিএলএ কারা?

পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ বেলুচিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, তারা মঙ্গলবার পেশোয়ারগামী ট্রেন জাফর এক্সপ্রেস ছিনতাইকারী সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শেষ করেছে। এরই মাধ্যমে ৩৪৬ জন যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে। সামরিক বাহিনী বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) ৩৩ জন হামলাকারীকে হত্যা করেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিএলএর কার্যক্রমের পরিধি ও দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। কেবল গত বছরে তারা ১৫০টিরও বেশি আক্রমণ চালিয়েছে, যারই ধারাবাহিকতা এই ট্রেন ছিনতাই। 
১৯৪৭ সালের আগস্টে ভারত থেকে দেশ ভাগের ছয় মাস পর, ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান বেলুচিস্তানকে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে। তখন থেকেই প্রদেশটি বেশ কয়েকটি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সাক্ষী। ২০২৩ সালের জনশুমারি অনুসারে, পাকিস্তানের আনুমানিক ২৪ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখের বাসস্থান বেলুচিস্তান। কয়লা, সোনা, তামা ও গ্যাসের মতো প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এটি দেশের সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চল। 

বেলুচিস্তানে সর্বশেষ আন্দোলন শুরু হয় ২০০০ সালের গোড়ায়। প্রাথমিক লক্ষ্য প্রদেশের জনগণের জন্য সম্পদের বৃহত্তর অংশ নিশ্চিত করা হলেও, শিগগিরই তারা পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি তোলে। বিএলএ ১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে এবং ২০০০-এর দশকের গোড়ায় আত্মপ্রকাশ করে। বিএলএর নেতৃত্বে ছিলেন প্রবীণ বালুচ জাতীয়তাবাদী নেতা নবাব খায়ের বখশ মারির ছেলে বালাচ মারি।
২০০৬ সালে সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফের নেতৃত্বে সরকার বিশিষ্ট বালুচ জাতীয়তাবাদী নেতা নবাব আকবর বুগতিকে হত্যা করার পর বিদ্রোহ তীব্রতর হয়। বছরের পর বছর ধরে বিএলএ পাকিস্তান থেকে বেলুচিস্তানের সম্পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি দল হিসেবে নিজেদের আলাদা করে তুলেছে। মধ্যপন্থি বালুচ জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলো প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে কথা বললেও বিএলএ কখনও মধ্যম পন্থা অনুসরণ করেনি।

২০১০ সালে এই গোষ্ঠী তাদের আত্মঘাতী দল মাজিদ ব্রিগেড চালু করে, যা কয়েক বছর ধরে সুপ্ত ছিল। ২০১৮ সালে দলটি জনপ্রিয়তা লাভ করে, যখন আসলাম বালুচ তাঁর নিজের ছেলেকে বেলুচিস্তানের দালবান্দিন শহরে কর্মরত চীনা প্রকৌশলীদের লক্ষ্য করে হামলা চালাতে পাঠিয়েছিল। এতে তিন চীনা নাগরিকসহ পাঁচজন আহত হয়, তবে আসলামের ছেলে ছাড়া আর কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। 
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিএলএর সবচেয়ে বড় শক্তি হলো তরুণ ও সুশিক্ষিত সৈন্যদের তালিকাভুক্ত করার ক্ষমতা। বিশেষজ্ঞ আকবরের মতে, ‘তরুণ, শিক্ষিত যোদ্ধাদের নিয়োগ করা এখন আর কোনো চ্যালেঞ্জ নয়। কারণ, এই গোষ্ঠী বালুচ তরুণদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, যদিও এর কার্যক্রম বিতর্কিত।’ যদিও বিএলএর তহবিলের উৎসগুলো অস্পষ্ট; বিশ্লেষকরা একাধিক রাজস্ব উৎসের কথা বলেছেন। তার মধ্যে রয়েছে চাঁদাবাজি, চোরাচালান ও মাদক পাচারের মতো অবৈধ কার্যকলাপ।

পাকিস্তান সরকার দাবি করে, ভারত বিএলএকে অর্থায়ন করে। কিন্তু আকবরের মতে, আফগানিস্তানে বছরের পর বছর কাটিয়ে বেশির ভাগ বিএলএ নেতৃত্ব পাকিস্তানে আগমন করেন। তাঁর মতে, সরকারের এসব দাবি হুবহু গ্রহণ করা কঠিন। বিশেষজ্ঞ আকবরের মতে, ‘প্রায় প্রতিটি ইস্যুতে ভারতকে দোষারোপ করার প্রবণতা পাকিস্তানের রয়েছে। এ কারণে দৃঢ় প্রমাণ ছাড়া এ ধরনের দাবি গ্রহণ করা কঠিন।’ ‘যদি সরকার ভারতীয় সমর্থনের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দিতে পারে, তবেই কেবল তাদের অভিযোগের গুরুত্ব রয়েছে। তবে যা স্পষ্ট তা হলো, বিএলএর একটি শক্তিশালী তহবিলদাতা রয়েছে এবং এর যোদ্ধারা বিদ্রোহের জন্য বিশেষভাবে তৈরি উচ্চ পেশাদার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে।’
আকবর বলেন, প্রশাসনের ব্যর্থতা ও প্রাদেশিক সরকারের প্রতি ‘অসন্তোষ’-এ হতাশ জনসাধারণের মধ্যে বিএলএ তার প্রভাব বাড়াতে সাহায্য করে।
পর্যবেক্ষক আকবরের মতে, ‘অনেকে প্রাদেশিক সরকার বিশেষত বেলুচিস্তানের জনগণের চেয়ে ইসলামাবাদের প্রতি বেশি অনুগত বলে মনে করে। কারণ এটি জোরপূর্বক গুমের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে শক্ত অবস্থান নিতে অস্বীকার করে।’

আবিদ হোসেন: পাকিস্তানের ইসলামাবাদে আলজাজিরার ইংরেজি ডিজিটাল সংবাদদাতা; আলজাজিরা থেকে সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তামিমদের কাছে পাত্তাই পাননি আকবর-আফিফরা
  • বেলুচিস্তানের বিএলএ কারা?
  • বহাল তবিয়তে শওকত আকবর, অপরাধ কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ ৭ গ্রামবাসী