রাজধানীতে ছিনতাইয়ের চেষ্টার সময় গ্রেপ্তার ৫: ডিএমপি
Published: 15th, March 2025 GMT
রাজধানীতে পৃথক তিনটি এলাকায় ছিনতাইয়ের চেষ্টা এবং ছিনতাই করে পালিয়ে যাওয়ার সময় পাঁচ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। গতকাল শুক্রবার তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের পক্ষ থেকে আজ শনিবার দুপুরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, তেজগাঁও, মিরপুর ও উত্তরা হাউস বিল্ডিং এলাকায় ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে পাঁচ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন মো.
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা ক্রসিংয়ের উত্তর সিগন্যালের যাত্রীছাউনির সামনে দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক তেজগাঁও জোনের সার্জেন্ট মো. সোহরাব হোসাইন। গতকাল বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে কয়েকজন ছিনতাইকারী বাসের এক যাত্রীর টাকা ছিনতাই করে পালাচ্ছিলেন। তখন সোহরাব হোসাইন লোকজনের সহায়তা নিয়ে তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেন। তাঁরা হলেন মো. সাজ্জাত হোসেন, মো. ওয়াসিম আকরাম ও মো. সুমন। তাঁদের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর মিরপুরের সেতারা টাওয়ারের সামনে দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক মিরপুর জোনের সার্জেন্ট মো. রবিন রানা। তিনি এ সময় ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে মো. সুলতান মাহমুদ খান নামের এক ব্যক্তিকে ধাওয়া করে গ্রেপ্তার করেন। এ ছাড়া রাজধানীর উত্তরা হাউস বিল্ডিং এলাকায় গতকাল দিবাগত ১২টার দিকে ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে মোহাম্মদ শান্তকে গ্রেপ্তার করেন ট্রাফিক উত্তরা-পূর্ব জোনের সার্জেন্ট শাহাদাত হোসেন শান্ত। এসব ঘটনায় পৃথক মামলা করা হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর গতক ল ড এমপ
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশকে করিডোর দিতে জাতিসংঘের আহ্বান
রোহিঙ্গাদের আবাসভূমি মিয়ানমারের রাখাইনে চলছে যুদ্ধপরিস্থিতি। সেখানে শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরিতে প্রথমে দরকার সহিংসতা বন্ধ করা। এর পর মানবিক সহায়তা বৃদ্ধির মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পথে সমাধান বের করা। আর বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মানবিক সহায়তা রাখাইনে পৌঁছাতে ঢাকার অনুমোদন ও সহযোগিতা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
সফরের শেষ দিনে শনিবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে যৌথ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
রাখাইনের দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি মোকাবিলা ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রভাব সাংবাদিকের প্রশ্নে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, বর্তমানে রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও আরাকান বাহিনীর মধ্যে সংঘাত চলছে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা অত্যন্ত কঠিন। এ সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি। শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী সব দেশকে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে সহিংসতা বন্ধ এবং একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথ তৈরি হয়।
তিনি বলেন, সহিংসতা বন্ধ হলে সংলাপের মাধ্যমে প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাধানের পথ বের হবে এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের পথ সুগম হবে। একই সময়ে মিয়ানমারে মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি করতে হবে, যেন শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের জন্য যথাযথ পরিবেশ তৈরি হয়। এ জন্য আমাদের আলোচনায় বাংলাদেশ থেকে মানবিক সহায়তা পাঠানোর সম্ভাবনা নিয়ে কথা হয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অনুমোদন ও সহযোগিতা প্রয়োজন।
মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে চাইলে গুতেরেস বলেন, নিষেধাজ্ঞা একটি সম্ভাব্য ব্যবস্থা। তবে মিয়ানমারের বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞা অনুমোদন করানো কঠিন হতে পারে। নিষেধাজ্ঞা সম্ভব না হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলোকে একত্রিত হয়ে লড়াই বন্ধ ও গণতন্ত্রের পথ সুগমে চাপ প্রয়োগ করতে হবে।
ব্রিফিংয়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে কোনো নিশ্চয়তা পেয়েছেন কি না– প্রশ্নে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা চাই তারা (রোহিঙ্গা) সম্মান ও নিরাপত্তার সঙ্গে ফেরত যাক। বিষয়টি জাতিসংঘ মহাসচিব আমাদের বলেছেন। আমরা বিশ্বাস করি, এ বিষয়ে জাতিসংঘ আমাদের সহায়তা দিয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান সীমান্তের ওপারে রয়েছে। আমরা সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করছি। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ, এখানে আমি রোহিঙ্গা কর্তৃপক্ষ বলছি না। কারণ আমরা জানি, রাখাইনে নতুন শক্তির উদয় হয়েছে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে। আমরাও চাপ তৈরি করতে চাইছি, যাতে রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফেরত যেতে পারে।’
রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠানোর বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব কোনো অনুরোধ করেছেন কিনা প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বেশ কিছুদিন এটি নিয়ে আলাপ চলছে। বিষয়টি অপারেশনাল এবং আমরা আলোচনা করব।’ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত আনার জন্য জাতিসংঘের সহায়তা চাওয়া হয়েছে কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশ ঘিরে ভুল তথ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁর এ সফর ভুল তথ্য ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচার এবং বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টার পাল্টা জবাব। গুতেরেসের সমর্থনের আশ্বাস আমাদের সংস্কার প্রক্রিয়ায় সাফল্য ও জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গণতান্ত্রিক উত্তরণে সহায়তা করবে।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের ভেতরে ও বাইরে থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। তৌহিদ হোসেন আরও বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং দেশের প্রকৃত রূপান্তরের জন্য সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রশংসা করেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রতি জাতিসংঘের পূর্ণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তা করবেন এবং এদেশের জনগণের পাশে থাকবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
আন্তোনিও গুতেরেস জানান, তিনি জাতীয় অভিযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে বাংলাদেশে এসে বিশেষভাবে আনন্দিত। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বৃহৎ পরিসরে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য জনগণের আশাকে স্বীকৃতি দিচ্ছে জাতিসংঘ। তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। একটি ন্যায়সঙ্গত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই ভূমিকা রাখতে হবে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমি আশ্বস্ত করছি, জাতিসংঘ শান্তি, জাতীয় সংলাপ, আস্থা ও নিরাময়ে সহায়তা করতে প্রস্তুত। সবার জন্য টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যত গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে কাজ করবে। এদেশের মানুষ তাদের অবিচল অংশীদার হিসেবে জাতিসংঘের ওপর নির্ভর করতে পারে।
তিনি বলেন, প্রতি বছর আমি একটি সংহতি সফর করি এবং কঠিন পরিস্থিতিতে বসবাসকারী মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে সময় কাটাই। তাদের সঙ্গে রোজা পালন করি এবং তাদের দুর্দশার বিষয়টি বিশ্বব্যাপী সামনে নিয়ে আসতে সহায়তা করি। এ বছর আমি রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আতিথ্যদানকারী বাংলাদেশিদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে এদেশে আসার সিদ্ধান্ত নিই। আপনার সঙ্গে রোজা রাখা ও ইফতার করা আপনার ধর্ম এবং সংস্কৃতির প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধার প্রমাণ। শুক্রবার আমি কক্সবাজারে অত্যন্ত চমকপ্রদ সফর করেছি।
গুতেরেস বলেন, রমজান আমাদের বিশ্বজনীন মূল্যবোধের কথা মনে করিয়ে দেয়, যা মানবতাকে সংযুক্ত করে: সহানুভূতি ও উদারতা। শান্তি, উন্নয়ন এবং মানবিক ত্রাণের প্রতি আপনার অঙ্গীকারের মাধ্যমে বাংলাদেশ এ মূল্যবোধের একটি জীবন্ত প্রতীক। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় সবচেয়ে অবদানকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে তিনি বলেন, আমরা জানি সেখানে (মিয়ানমার) পরিস্থিতির অবনতি ক্রমশ বাড়ছে। রাখাইনসহ মিয়ানমারজুড়ে সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ফলে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটছে এবং অভ্যন্তরীণ ও সীমান্ত পেরিয়ে বাস্তুচ্যুতি ঘটছে। আমি মিয়ানমারের সবপক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন, আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুসারে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও সহিংসতায় উসকানি রোধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
জাতিসংঘের মহাসচিব আরও বলেন, আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও বেশি দায়িত্বগ্রহণ এবং শরণার্থী ও তাদের আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়– উভয়ের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক এবং রাজনৈতিক সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ করে যাব। আমরা একটি গভীর মানবিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে। আর্থিক সহায়তায় কাটছাঁটের ঘোষণায় এ বছর আমাদের সামনে নাটকীয় ঝুঁকি রয়েছে। ভয়াবহ পরিণতির শুরুই হবে খাদ্য রেশনের তীব্র হ্রাস দিয়ে।