রমজানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিভিন্ন বিভাগ, ব্যাচ, জেলা সংগঠন, সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠনগুলো দলবদ্ধ ইফতার আয়োজন ভিন্নরকম এক আমেজ সৃষ্টি করে। বড় পরিসরে আয়োজিত গণইফতারও চোখে পড়ার মতো। মিলেমিশে এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয় সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির মেলবন্ধন।
গত ১১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে গণইফতার মাহফিলের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে গতকাল শুক্রবার (১৪ মার্চ) গণইফতারের আয়োজন করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের জাবি শাখা। এছাড়া রবিবার (১৬ মার্চ) গণইফতারের ঘোষণা দিয়েছে শাখা ছাত্রশিবির।
তবে রমজানের আমেজ ছড়িয়ে দিতে জাবি শাখা ছাত্রদলও ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নিয়েছে। তারা পর্যায়ক্রমে ক্যাম্পাসের প্রতিটি হলে ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা ও ফ্যাসিস্ট হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে নিহত সকল শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে ইফতার ও দোয়া মাহফিল’ শিরোনামে আয়োজন করছে হচ্ছে ইফতার ও দোয়া মাহফিল।
আরো পড়ুন:
পরীক্ষায় পরিকল্পিতভাবে নাম্বার কমিয়ে দেওয়ার অভিযোগ জাবি শিক্ষার্থীর
লাকি আক্তারের গ্রেপ্তার দাবিতে মধ্যরাতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট হল সংখ্যা ২১ টি। এরমধ্যে ছেলেদের ১১টি, মেয়েদের ১০টি। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, আল বেরুনী হল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল, কাজী নজরুল ইসলাম হলসহ মোট ৮টি হলে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
রবিবার (১৬ মার্চ) ছাত্রী হলগুলোর সম্মিলিতভাবে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে এবং পরবর্তীতে বাকী হলগুলোতেও পর্যায়ক্রমে ইফতার মাহফিল আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনিক বলেন, “পতিত স্বৈরাচার আমলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পবিত্র রমজান মাসে মিলেমিশে আনন্দঘন পরিবেশে ইফতারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল। সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে হলের সিনিয়র-জুনিয়রদের সঙ্গে বসে ইফতার করার ফলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। জাবি ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করার মধ্য দিয়ে ইতিবাচক রাজনীতি ধারা তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর বলেন, “ছাত্রদলের জাবি শাখার উদ্যোগে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে প্রত্যেকটি হলে ধারাবাহিক ইফতর কর্মসূচির অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে আমরা আটটি ছেলেদের হলে ইফতার আয়োজন সম্পন্ন করেছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সম্পর্ক আরো উন্নয়নের চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি।”
তিনি বলেন, “প্রত্যেকটি হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইফতারে অংশগ্রহণ করেছে। বাকি হলগুলোর ইফতার আমরা ২০ রমজানের মধ্যে সম্পন্ন করবো। এছাড়াও আমরা নারী শিক্ষার্থীদের সন্মানে আগামীকাল রবিবার ইফতারের আয়োজন করতে যাচ্ছি।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল র গণইফত র ইফত র র রমজ ন
এছাড়াও পড়ুন:
আমেরিকা-পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনীতি কে চালাবে
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার পর থেকে আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পের এজেন্ডা এবং সে এজেন্ডা আমেরিকা, আর্থিক বাজার ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের ওপর কী প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে নিয়মিতভাবে মন্তব্য করে আসছি।
ট্রাম্প আসার পর অস্থিরতার অভাব হয়নি, তবে তা ছিল অনেকটাই প্রত্যাশিত। কারণ, ট্রাম্পের নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়া যে অগোছালো ও অপ্রত্যাশিত হবে, তা আগেই বোঝা গিয়েছিল।
আমি ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে উল্লেখ করেছিলাম, ট্রাম্পের আগ্রাসনের জবাবে অন্যান্য অর্থনীতি যদি নিজেদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা ও আর্থিক বাজারের ওপর নির্ভরতা কমায়, তাহলে এটি ইতিবাচক একটি দিক হতে পারে। এই বিশৃঙ্খলার মধ্যেও আশার কথা হলো, ইউরোপ ও চীন ইতিমধ্যেই এ ধরনের পরিবর্তনের দিকে এগোতে শুরু করেছে। জার্মানি তাদের ‘ঋণসীমা’ কিছুটা শিথিল করে অতিব্যবস্থাপনার বাইরে গিয়ে জরুরি বিনিয়োগের অনুমতি দিচ্ছে। আর চীন বলছে, তারা অভ্যন্তরীণ ভোক্তা খরচ বাড়ানোর উপায় খতিয়ে দেখছে।
যে দেশগুলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বাজারের ওপর নির্ভর করে, তাদের জন্য এটা পরিষ্কার, যদি যুক্তরাষ্ট্র তার বাণিজ্যযুদ্ধের নীতি একটু কমায়ও, তারপরও নতুন ধরনের বাণিজ্যিক ব্যবস্থার দরকার হবে। অনেক দেশ এখন নিজেদের মধ্যে বেশি বাণিজ্য করতে চাচ্ছে এবং দ্রুত বাড়তে থাকা সেবা খাতে যেসব নিয়মকানুন বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, সেগুলো কমাতে তারা নতুন চুক্তি করার চেষ্টা করছে।
একটি জোট হিসেবে জি-৭-এর বাকি দেশগুলো (কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান ও যুক্তরাজ্য) একত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সমান শক্তিশালী। এর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের ‘ইচ্ছুকদের জোট’-এর অন্য সদস্যদের যোগ করলে ট্রাম্পের আনা অনেক ক্ষতিই পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হতে পারে।
একইভাবে যদি চীন তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) ভারত ও অন্যান্য বড় উদীয়মান অর্থনীতির সঙ্গে সমন্বয় করে পুনর্গঠন করতে পারে, তাহলে তা বৈপ্লবিক পরিবর্তন ডেকে আনতে পারে।
এ ধরনের পদক্ষেপগুলো যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি ও হুমকির প্রভাব কিছুটা কমাতে পারবে। তবে এ কাজগুলো সহজ হবে না, যদি সহজ হতো, তাহলে ইতিমধ্যেই হয়ে যেত। আজকের বাণিজ্য ও আর্থিক কাঠামো গড়ে উঠেছে নানা রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিতে এবং চীনের উপকারে আসতে পারে, এমন যেকোনো পরিবর্তন ট্রাম্প প্রশাসন ঠেকাতে চাইবে।
বড় বড় অন্য অর্থনীতিগুলো কীভাবে নিজেদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ায়, বিনিয়োগ সক্রিয় করে এবং নতুন বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলে, তা এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি ব্রুগেল নামের থিঙ্কট্যাংক ও নেদারল্যান্ডসের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আয়োজিত এক সম্মেলনে (গ্লোবালাইজেশন ও ভূ-অর্থনৈতিক বিভাজন) আমি আবার মনে করিয়ে দিলাম, ২০০০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি কতটা একপাক্ষিকভাবে হয়েছে।
২০০০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বার্ষিক নামমাত্র জিডিপির একটি সরল বিশ্লেষণে দেখায়, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইউরো জোন ও ভারত—এই চারটি দেশ মিলে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির প্রায় ৭০ শতাংশের জন্য দায়ী, যার মধ্যে আবার যুক্তরাষ্ট্র ও চীনই প্রায় ৫০ শতাংশ শেয়ার করেছে।
এ তথ্য আবারও প্রমাণ করে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হুমকির জবাব হিসেবে অন্যত্র আরও বেশি অভ্যন্তরীণ চাহিদা তৈরি করতে হবে। তবে বাস্তবতা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব অর্থনীতিতে অংশ কমে যাওয়ার ক্ষতি একা পুষিয়ে দিতে সক্ষম একমাত্র দেশ চীন।
কিন্তু যদি চীন একা কাজ না করে? ধরো, ইউরোপ যেমন এখন বিনিয়োগ ও প্রতিরক্ষা খাতে খরচ বাড়াচ্ছে, এতে শুধু ইউরোপ নয়, বরং যুক্তরাজ্যের মতো অন্য দেশগুলোরও উপকার হবে। আর ভারতও গত কয়েক বছরে অনেক দেশের তুলনায় বেশি গতিতে এগোচ্ছে, তাই ওরাও চাইলে দেশের ভেতরে চাহিদা বাড়ানোর কিছু সুযোগ পেতে পারে। তাহলে যদি এই দেশগুলো একসঙ্গে মিলে পরিকল্পনা করে আর একে অপরের সঙ্গে নীতি ঠিক করে নেয়, তাহলে কি আরও ভালো কিছু হতে পারে না?
এ ধরনের সমন্বয় হয়তো ২০০৯ সালের লন্ডন জি-২০ সম্মেলনের মতো বিশাল বৈশ্বিক প্রভাব ফেলবে না, যেখানে বৈশ্বিক আর্থিক সংকট ও তার পরিণতি মোকাবিলায় ব্যাপক সংস্কার ও নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছিল। তবে যদি এই দেশগুলো বিশ্বকে একটি স্পষ্ট বার্তা দেয় যে তারা নিজেদের মধ্যে অর্থনৈতিক নীতি সমন্বয় ও অভিন্ন লক্ষ্যে পৌঁছাতে পরামর্শ চালিয়ে যাচ্ছে, তাহলে সেটি বিশ্বজুড়ে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সর্বশেষ কথা হলো, ব্রুগেল সম্মেলনে উপস্থাপিত একটি বিষয় আমার মনে গেঁথে আছে। এটি ছিল ব্রুগেলের সিনিয়র ফেলো আন্দ্রে সাপিরের উপস্থাপিত একটি চার্ট। সেই চার্টে জাপানের অর্থনৈতিক উত্থান এবং চীনের বর্তমান উত্থানের মধ্যে সাদৃশ্য তুলে ধরা হয়। ১৯৯০-এর দশকে জাপানের জিডিপি যখন যুক্তরাষ্ট্রের ৭০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছিল, তখন আমেরিকার বড় একটি ভয় ছিল—তারা পিছিয়ে পড়বে। এখন চীনকে নিয়েও একই ভয় দেখা যাচ্ছে।
কিন্তু আসলে যুক্তরাষ্ট্র কী চায়? তারা কি শুধু এই প্রমাণ দিতে চায়, নামমাত্র হিসাবে তাদের অর্থনীতি সবচেয়ে বড়, নাকি তারা নিজেদের নাগরিকদের জন্য ধনসম্পদ ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে চায়?
এই দুটি বিষয় এক নয়। বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের যে বিষয়টি বোঝার দরকার, তা হলো অন্য দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন আসলে আমেরিকানদেরও আরও বেশি সম্পদশালী করে তুলতে পারে। হয়তো একদিন আমেরিকার নাগরিকেরা এমন কোনো নেতৃত্ব বেছে নেবে, যারা এই মৌলিক অর্থনৈতিক বাস্তবতাটি বুঝতে পারবে। তবে আপাতত তারা হয়তো আরও অনেক বছর অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তায় ভুগতেই থাকবে।
জিম ও’নিল গোল্ডম্যান স্যাকস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সাবেক চেয়ারম্যান এবং যুক্তরাজ্যের সাবেক অর্থমন্ত্রী
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ