‘সকলে থামুন, এখানে বাঘের পায়ের ছাপ’, তারপর কী হলো
Published: 15th, March 2025 GMT
ভটভট শব্দে সচল হলো ট্রলারের ইঞ্জিন। বন বিভাগের হড্ডা টহল ফাঁড়ির বনকর্মীদের সঙ্গী হয়েছি। গন্তব্য গহিন সুন্দরবন। হেঁটে হরিণশিকারিদের পেতে রাখা ফাঁদ উদ্ধার করবেন বনরক্ষীরা। সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক শরিফুল ইসলামের সহায়তায় দলের সঙ্গে আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছে।
সাতসকালে বনের মধ্যকার খাল দিয়ে এঁকেবেঁকে শিবসা নদীতে গিয়ে পড়ে ট্রলার। ভাটার টানে নদীর তীরে চর জেগেছে। ট্রলারে বসে একটু খেয়াল করলে বনের ভেতরটাও দেখা যায়। সকালের স্নিগ্ধ আলোয় হরিণের পাল ঘুরে বেড়াচ্ছে, দৌড়ঝাঁপ করছে বানরের দল। ট্রলারে দাঁড়িয়ে দলের অন্য সদস্যদের গন্তব্য ও করণীয় সম্পর্কে সংক্ষেপে ধারণা দেন দলনেতা ফরেস্টার সাবিত মাহমুদ। তিনি খুলনার কয়রার হড্ডা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
শিবসা নদী ধরে ঘণ্টাখানেক ট্রলার চলার পর পৌঁছে গেলাম বনের একটি খালের মুখে। দুপাশে ঘন বন। সুন্দরী, কেওড়া, গেওয়া, বাইন, গোলপাতাসহ নানা জাতের গাছ। বনরক্ষীরা জানালেন, এটি ভারানীর খাল। যে খাল দিয়ে এক খাল থেকে আরেক খালে যাওয়া যায়, সেটাই ভারানীর খাল। এসব খালঘেঁষা বনেই বেশি ফাঁদ পাতে হরিণ শিকারিরা।
ট্রলারের ইঞ্জিন বন্ধ হলো। খালের পাড়ে একটি গেওয়াগাছে বাঁধা হলো ট্রলার। লাফিয়ে খালপাড়ের কাদাপানি মাড়িয়ে সবাই জঙ্গলে উঠলাম। বনভূমিজুড়ে শূলের মতো মাথা উঁচু করে আছে অসংখ্য শ্বাসমূল। তার ভেতর দিয়ে হরিণ চলাচল করেছে, তারই খুরের ছাপ। সেই ছাপ ধরে গহিন বনের মধ্যে অস্ত্রধারী বনরক্ষীদের সঙ্গে হেঁটে এগোতে থাকি। গাছপালাগুলো এতটাই ঘন যে কয়েক হাত দূরের কিছুও দেখা যায় না।
ঘন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে শিকারির পেতে রাখা ফাঁদ খুঁজতে খুঁজতে এগোতে থাকেন বনরক্ষীরা। তাঁদের অনুসরণ করে হাঁটাও কঠিন। কারণ, শ্বাসমূল, আঠালো কাদা আর ঝুলে থাকা জটপাকানো লতাগুল্ম। এক হাতে ক্যামেরা উঁচিয়ে ধরে এর মধ্যেই এগিয়ে চলছিলাম। হঠাৎই জঙ্গলের ভেতর কিসের যেন শব্দ, মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়াই। পরক্ষণেই দেখতে পেলাম, পাশের হেঁতালঝোপ দিয়ে একটি বন্য শূকর দৌড় দিল।
সুন্দরবনে গহিনে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বনরক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের গহিনে গাছের ডাল থেকে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করলেন দুই জেলে
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বাদুজুলি খালের পাশে গাছের ডাল থেকে এক বয়স্ক নারীকে উদ্ধার করেছেন দুই জেলে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে ওই নারীকে উদ্ধার করে তাঁরা লোকালয়ে নিয়ে আসেন।
উদ্ধার হওয়া নারীর বয়স আনুমানিক ৬৫ বছর। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর নাম শুকুরুন নেছা; স্বামীর নাম গফফার। তাঁদের একটি ছেলে আছে, নাম রফিকুল। এ ছাড়া তিনি আর কিছু বলতে পারছেন না।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের সোরা গ্রামের আলমগীর খাঁ ও রহমান গাজী ওই নারীকে উদ্ধার করেছেন। তাঁরা জানান, দুই সপ্তাহ আগে তাঁরা বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনের নদ-নদীতে কাঁকড়া ধরতে যান। ফিরে আসার সময় গতকাল সন্ধ্যার দিকে সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশনের বাদুজুলি খালের পাশে একটি গাছের ডালে এক বৃদ্ধ নারীকে দেখতে পান। তাঁকে গাছ থেকে নামিয়ে গাবুরা ইউনিয়নে নিয়ে আসেন। পরে গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে এ ঘটনা জানিয়েছেন। ওই বৃদ্ধা বর্তমানে আলমগীর খাঁর পরিবারের কাছে আছেন।
গাবুরা ইউপির চেয়ারম্যান জি এম মাছুদুল আলম বলেন, ‘শুনেছি, সোনা গ্রামের আলমগীর খাঁ ও রহমান গাজী নামের দুই জেলে একজন বৃদ্ধাকে সুন্দরবন থেকে উদ্ধার করেছেন। বর্তমানে তিনি অসুস্থ আছেন।’
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষকের সহকারী কর্মকর্তা হাবিবুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের কোনো খবর তাঁর জানা নেই। বিষয়টির তিনি খোঁজ নেবেন।