প্রতি শলাকা সিগারেটের দাম ৯ টাকা করার দাবি তরুণ চিকিৎসকদের
Published: 15th, March 2025 GMT
শিশু-কিশোর ও তরুণদের নাগালের বাইরে নিতে প্রতি শলাকা সিগারেটের দাম সর্বনিম্ন ৯ টাকা করার দাবি জানিয়েছেন তরুণ চিকিৎসকরা।
দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত তরুণ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাদের দাবি বাস্তবায়ন করা হলে ধূমপান হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি গত অর্থবছরের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি রাজস্ব আয় হবে।
শনিবার (১৫ মার্চ) ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে তামাকপণ্যের ব্যবহার হ্রাসকরণে তরুণ চিকিৎসকদের করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালায় এসব কথা বলেন তারা।
কর্মশালায় হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, নিত্যপণ্যের তুলনায় বাংলাদেশে তামাকপণ্য সস্তা। ফলে, শিশু-কিশোর ও তরুণরা সহজেই এ ক্ষতিকর নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছেন। তাই, তাদের নাগালের বাইরে নিতে তামাকপণ্যের ওপর বেশি কর আরোপ ও মূল্য বৃদ্ধি করতে হবে।
কর্মশালায় আরো বলা হয়, বর্তমানে সিগারেটের চারটি মূল্যস্তর (নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ ও প্রিমিয়াম) থাকায় তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ সঠিকভাবে কাজ করছে না। তাই, আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্র করে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৯০ টাকা নির্ধারণ করা হলে শিশু-কিশোর ও তরুণরা ধূমপানে নিরুৎসাহিত হবে। একইসঙ্গে প্রতি শলাকা বিড়ির সর্বনিম্ন দাম ১ টাকা করার দাবি জানানো হয়। এটি বাস্তবায়ন করা হলে, ধূমপান হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হবে। এতে দীর্ঘ মেয়াদে প্রায় ৯ লাখ তরুণসহ মোট ১৭ লাখের বেশি মানুষের অকালমৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।
কর্মশালায় সন্ধানীর কেন্দ্রীয় কমিটির নবনির্বাচিত সভাপতি আব্দুল মোতালিব শান্ত বলেন, “চিকিৎসক হিসেবে আমাদের তামাকের ক্ষতি সম্পর্কে সাধারণ মানুষদের সচেতন করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তামাকপণ্যের ক্ষতি সম্পর্কে জোরালো প্রচার চালাতে হবে।”
শিশু-কিশোর ও তরুণদের হাতের নাগালের বাইরে নিতে তামাকপণ্যের দাম কার্যকরভাবে বৃদ্ধি করার আহ্বান জানান তিনি।
কর্মশালায় তরুণ চিকিৎসকরা বলেন, বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহার কমাতে চিকিৎসকদের এগিয়ে আসতে হবে। তামাকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে রোগীদের সচেতন করতে হবে। পাশাপাশি তামাকের ব্যবহার কমাতে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন এবং তামাক পণ্যের ওপর উচ্চ হারে কর ও মূল্য বৃদ্ধি করতে হবে।
কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা.
ঢাকা/হাসান/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত ম কপণ য র
এছাড়াও পড়ুন:
কমেছে অর্থছাড়, যাচাই–বাছাই হবে ভারতীয় ঋণের প্রকল্প
ভারতীয় ঋণের অর্থছাড় কাঙ্ক্ষিত হারে হচ্ছে না। গত সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) মাত্র আট কোটি ডলারের মতো অর্থছাড় করেছে ভারত। ভারতীয় গুচ্ছ ঋণ বা লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় এই অর্থ দিচ্ছে দেশটি। একদিকে কমেছে অর্থছাড়, অন্যদিকে নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতিও মিলছে না।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য থেকে এই চিত্র পাওয়া গেছে। এদিকে এলওসির অর্থে নেওয়া প্রকল্পগুলো যাচাই–বাছাই করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য দুই দেশের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।
গত আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভারতের বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বিশেষ করে আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেনের সড়কের ভারতীয় ঠিকাদার ভারতের কর্মীদের নিয়ে দেশে ফিরে যান। ফলে চার মাসের মতো প্রকল্পটির কাজ বন্ধ ছিল। এমন আরও কয়েকটি প্রকল্প আছে, যেখানে ভারতীয় ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন কিংবা কাজের গতি কমে গেছে। এসব কারণে মূলত এলওসির অর্থছাড় কমে গেছে বলে মনে করেন ইআরডি কর্মকর্তারা। বর্তমানে ভারতীয় ঋণে পরিবহন ও অবকাঠামো খাতের আটটি প্রকল্প চলমান আছে।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই-জানুয়ারি—এই সাত মাসে এলওসির আওতায় মাত্র ৮ কোটি ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার ছাড় করেছে ভারত। এ সময়ে ভারত নতুন ঋণের কোনো প্রতিশ্রুতিও দেয়নি। গত অর্থবছরের পুরো সময়ে যত অর্থছাড় হয়েছে, চলতি অর্থবছরের সাত মাসে ওই অর্থের চার ভাগের এক ভাগ ছাড় হয়েছে।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নতুন প্রেক্ষাপটে কোন প্রকল্প অগ্রসর করা হবে, কোনটা করা হবে না, এসব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তাই হয়তো অর্থছাড় কমেছে। তিনি আরও বলেন, অর্থনীতির জন্য জরুরি এমন প্রকল্পই এলওসির আওতায় রাখা উচিত। এ ছাড়া প্রকল্পের কেনাকাটার শর্ত শিথিল করা নিয়ে কতটা অগ্রগতি হয়, তা–ও এখন দেখার বিষয়।
গত জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ভারত সব মিলিয়ে এলওসির আওতায় ১৮৮ কোটি ডলার ছাড় করেছে। এ ছাড়া ২০১০, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে তিনটি এলওসিতে বাংলাদেশকে মোট ৭৩৬ কোটি ডলার ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু প্রতিশ্রুতির পরও কাঙ্ক্ষিত হারে অর্থছাড় হয়নি।
কোন বছর কত এলগত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বশেষ তিন বছরে ৩০ কোটি ডলারের বেশি অর্থছাড় করেছে ভারত। ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতের এক্সিম ব্যাংক ৩১ কোটি ১৪ লাখ ডলার ছাড় করেছে। এর আগের দুই অর্থবছরে যথাক্রমে ৩৩ কোটি ৭০ লাখ ও ৩২ কোটি ৯৩ লাখ ডলার ছাড় হয়েছে।
কোভিডের প্রথম দুই অর্থবছরে অর্থছাড় বেশ কম ছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৪ কোটি ১১ লাখ ডলার দিয়েছিল ভারত, তার আগের বছরে ছাড় হয়েছিল ১৪ কোটি ৮ লাখ ডলার।
প্রকল্প তালিকা যাচাই-বাছাই হবেতিনটি এলওসিতে সড়ক ও রেল যোগাযোগ, জ্বালানি, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ অবকাঠামো খাতে এ পর্যন্ত ৩৬টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি শেষ হয়েছে। চলমান আছে আটটি প্রকল্প। বাকি ১৩টি প্রকল্প পরামর্শক ও ঠিকাদার নিয়োগ কিংবা প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরির পর্যায়ে রয়েছে। এখন এসব প্রকল্প যাচাই–বাছাই করার বিষয়ে একমত হয়েছে দুই দেশ।
৫ ও ৬ মার্চ দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত এলওসি পর্যালোচনা সভা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রকল্প তালিকা আবার যাচাই–বাছাই করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব মিরানা মাহরুখ এবং ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লাইন অব ক্রেডিটের পরিচালক সুজা কে মেনন নিজ নিজ দেশের পক্ষে সভায় নেতৃত্ব দেন।
জানা গেছে, এলওসির প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি কমিটি থাকবে। এই কমিটি প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলো কেন দীর্ঘসূত্রতায় পড়ল, তা খুঁজে বের করে সমাধানের চেষ্টা করবে। প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো থেকে শুরু করে প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যন্ত সমস্যা চিহ্নিত করা হবে। প্রয়োজনে প্রকল্প বাদ দেওয়ার সুপারিশ করবে এই কমিটি।