কুষ্টিয়ায় বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে আট বছরের এক শিশুকে যৌন নিপীড়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দুপুরে সদর উপজেলার হরিনারায়ণপুর ইউনিয়নে ঘটনাটি ঘটে।

এদিকে, বিষয়টি জানাজানি হলে শনিবার (১৫ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে অভিযুক্ত ব্যক্তির দোকান ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ জনতা।

অভিযুক্ত দোকানির নাম সাগজত (৫০)। তিনি মুদি দোকান চালান। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক। 

আরো পড়ুন:

লক্ষ্মীপুরে চাঁদা না পাওয়ায় শ্রমিকদের মারধর করলেন যুবদল নেতা

সুনামগঞ্জে ৯ বছরের শিশুকে ‌‘ধর্ষণচেষ্টা’, অভিযুক্তের বাড়ি ভাঙচুর 

ভুক্তভোগী শিশুর মা জানান, ঘটনার দিন তার ৮ বছরের মেয়ে সাগজতের দোকানে যায়। সেসময় বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে তার মেয়েকে দোকানের মধ্যে ডে‌কে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন সাগজত। পরে মে‌য়ে বাড়িতে এসে বিষয়টি জানায়। পরে মেয়ের দাদি ও প্রতিবেশী  কয়েকজন নারীকে নিয়ে সাগজতের দোকানে যান তিনি। বিষয়টি জানতে চাইলে সাগজত ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। সেসময় সবাই মিলে বিষয়টি স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে জানানো হয়। ফাঁড়ির ইনচার্জ তাদের থানা ও হাসপাতালে যেতে বলেন। অনেক টাকা খরচ হবে এমন চিন্তা করে আর যাননি। 

এলাকাবাসী জানায়, সাগজতের বিরুদ্ধে এর আগেও এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এর আগের বার ভুক্তভোগী মেয়েটির বয়স ১৪ বছরের হওয়ায় তার দরিদ্র পরিবার লোক লজ্জায় বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বাধ্য হন। 

নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পর থেকেই একটি পক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দিকে দৌঁড়ঝাঁপ শুরু করেছে। তাদের অধিকাংশই একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের পদ প্রত্যাশী। শোনা যাচ্ছে, দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি সমঝোতা করার চেষ্টা করছেন তারা। যার মধ্যে ৫০ হাজার টাকা ভুক্তভোগীর পরিবার ও বাকি টাকা সমঝোতাকারীরা পাবেন। বিষয়‌টি জানাজা‌নি হ‌লে আজ দুপুর ১২টার দি‌কে বিক্ষোভ করতে থাকেন স্থানীয় জনতা। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা সাগজতের দােকানে ভাঙচুর চা‌লি‌য়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। 

ভুক্তভোগী শিশুর বাবা বলেন, “ঘটনার দিন আমি ঢাকায় ছিলাম। বাড়ি আসলে আমার স্ত্রী ঘটনাটি আমাকে জানায়। রাত অনেক হওয়ায় পরদিন সকালে আমি সাগজতের দোকানে গিয়ে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাই। তিনি ভুল স্বীকার করে মাপ চাওয়ার পর রাগান্বিত হয়ে তাকে তিনটা ঘুষি মারি। তখন আশপাশের লোকজন এসে ঠেকি‌য়ে দেয়। পরে একজন এসে মোটরসাইকেলে করে তাকে নিয়ে যায়। আমি গরিব বলে সবাই পাশ কেটে যাচ্ছে।” 

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ওসি মেহেদী হাসান বলেন,‌ “স্থানীয় কিছু শিক্ষার্থী সাগ‌জোত না‌মে এক ব্যক্তির টং দোকা‌নে আগুন ধ‌রিয়ে ‌দি‌য়ে‌ছে। পু‌লিশ ঘটনাস্থ‌লে গি‌য়ে প‌রি‌বেশ শান্ত ক‌রে‌ছে। ভুক্ত‌ভোগী প‌রিবার‌টি এখনো থানায় কোনো অ‌ভি‌যোগ দেইনি। প‌রিবার‌টির সঙ্গে কথা হ‌য়ে‌ছে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ বছর র ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

উপদেষ্টা আসিফের আশ্বাসে ইমির কর্মসূচি স্থগিত

ধর্ষণের বিচারসহ পাঁচ দাবিতে গত আট দিন ধরে শাহবাগে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি কর্মসূচি স্থগিত করেছেন। আজ শনিবার সন্ধ্যায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের আশ্বাসে তিনি কর্মসূচি স্থগিত করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ইমি সমকালকে বলেন, ‘সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ শাহবাগে আসেন। এ সময় আমাদের পাঁচ দফা দাবির প্রত্যেকটি সুনির্দিষ্টভাবে সময় উল্লেখ করে পূরণের আশ্বাস দেন তিনি। তাঁর প্রতি আস্থা রেখে আমি আপাতত আমার অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেছি। আশা করছি আপাতত আর রাস্তায় থাকতে হবে না। এরপরও যদি প্রয়োজন হয় আবার, বারবার রাস্তায় নেমে আসব।’

সাত দিন টানা অবস্থানে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, শরীর একেবারে ভেঙে পড়েছে। বিশ্রাম দরকার। সবাই আমার, আমার সহযোদ্ধারা যারা আজকে আট দিন সবসময় আমাকে আগলে রেখেছেন, আমাদের জন্য দোয়া রাখবেন।   

এর আগে গত ৮ মার্চ তিনি শাহবাগে লাগাতার অবস্থান করা শুরু করেন। এরপর নানান পর্যায় থেকে নানাজন তার সঙ্গে এসে সংহতি জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে শামসুন নাহার হল সংসদের নির্বাচিত ভিপি। তিনি জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। পরে নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপিতে আর যোগ দেননি।

তার দাবির মধ্যে রয়েছে- ধর্ষণ ও বলাৎকারের সম্পূর্ণ বিচার কার্যক্রম নিম্ম আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পন্ন করতে হবে এবং দ্রুত রায় কার্যকর করতে হবে। প্রতিটি থানায় একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তার নারী ও শিশু নির্যাতন একটি ইমারজেন্সি ক্রাইসিস রেস্পন্স টিম গঠন করতে হবে। একই সঙ্গে থানার অভ্যন্তরে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধারা-২৪ সংশোধন করে সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভুক্তভোগীর পরিচয় প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। ধর্ষণের শিকার ভিক্টিমের মানসিক, শারীরিক এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ সরকারকে নিতে হবে।

নারী ও শিশুর উপর সংঘটিত সকল নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির জন্য সরকারকে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। স্কুল-কলেজের পাঠ প্রস্তুকে নৈতিক শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা পাঠদানের বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ