তিন দিন স্মার্টফোন ব্যবহার বন্ধ রাখলে যে পরিবর্তন আসতে পারে, যা বলছে গবেষণা
Published: 15th, March 2025 GMT
স্মার্টফোন ছাড়া তিন দিন কাটানো কি সম্ভব? বর্তমান যুগে এটি অনেকের কাছেই চ্যালেঞ্জিং মনে হতে পারে। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, মাত্র ৭২ ঘণ্টার জন্য স্মার্টফোন থেকে বিরতি নিলে মস্তিষ্কের কার্যপ্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসতে পারে। গবেষণা অনুযায়ী, স্বল্প সময়ের জন্য স্মার্টফোনের ব্যবহার সীমিত করলেই তা আসক্তির লক্ষণ কমাতে পারে এবং অতিরিক্ত ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাসে সহায়ক হতে পারে।
স্মার্টফোন এখন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়; বরং দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার মুহূর্ত থেকে শুরু করে রাতে ঘুমানোর আগপর্যন্ত এটি আমাদের হাতের নাগালের মধ্যেই থাকে। কিন্তু স্মার্টফোন ব্যবহারে কিছুদিনের জন্য নিয়ন্ত্রণ আনলে কী পরিবর্তন ঘটতে পারে?
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র তিন দিনের জন্য স্মার্টফোন ব্যবহার সীমিত করলে মস্তিষ্কের কার্যপ্রক্রিয়ায় পরিবর্তন ঘটে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাময়িকী ‘কম্পিউটারস ইন হিউম্যান বিহেভিয়ার’–এ প্রকাশিত গবেষণায় দেখানো হয়েছে, স্মার্টফোন ব্যবহারের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনলে কীভাবে মস্তিষ্কের পরিবর্তন তৈরি হয়। গবেষণাটিতে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী ২৫ জন অংশ নেন। পরীক্ষার আগে তাঁদের স্মার্টফোন ব্যবহারের মাত্রা, মানসিক অবস্থা এবং প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতার প্রবণতা মূল্যায়ন করা হয়। এরপর তাঁদের তিন দিনের জন্য স্মার্টফোন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনতে বলা হয়। তবে জরুরি কাজ, দৈনন্দিন কার্যক্রম বা নিকটজনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সীমিত ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।
এই সময় গবেষকেরা ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এফএমআরআই) ব্যবহার করে অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের কার্যক্রম বিশ্লেষণ করেন। তিন দিনের পরীক্ষার পর তাঁদের স্মার্টফোন চালু ও বন্ধ অবস্থায় ছবি দেখানো হলে মস্তিষ্কের ডোপামিন ও সেরোটোনিন সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন দেখা যায়। গবেষকদের মতে, এই দুটি রাসায়নিক আবেগ, মানসিক অবস্থা ও আসক্তি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষকেরা বলছেন, হঠাৎ স্মার্টফোন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনলে প্রত্যাহারজনিত লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যা সাধারণত মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। অতি মাত্রায় স্মার্টফোন ব্যবহারকারী এবং গড় ব্যবহারকারীদের মধ্যেও এই পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। স্মার্টফোন–আসক্তি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও অতিরিক্ত ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাব অনস্বীকার্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে মানসিক চাপ, মনোযোগের ঘাটতি এবং হতাশার ঝুঁকি বাড়তে পারে।
গবেষণার ফলাফল বলছে, মাত্র তিন দিনের জন্য স্মার্টফোন ব্যবহার কমালে মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে। প্রযুক্তিনির্ভর এই সময়ে সুস্থ ডিজিটাল অভ্যাস গড়ে তোলার গুরুত্ব আরও বেশি। স্মার্টফোন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনলে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হতে পারে এবং প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনের সুযোগ তৈরি হতে পারে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ ন র জন য ব যবহ র র
এছাড়াও পড়ুন:
বকেয়া পরিশোধ করলেন সেই পুলিশ কর্মকর্তা
হঠাৎ প্রত্যাহার হওয়া নান্দাইল থানার ওসি ফরিদ আহমেদ অবশেষে কয়েকজন পাওনাদারের টাকা ফেরত দিয়েছেন এবং কয়েকজনকে দ্রুত দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। শুক্রবার বিষয়টি জানাজানি হলে রাতেই বেশ কয়েকজন পাওনাদারকে ডেকে নিয়ে টাকা পরিশোধ করেন।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর নান্দাইল থানার ওসি হিসেবে যোগ দেন ফরিদ আহমেদ। দায়িত্ব পালনকালে নান্দাইলে চুরি-ছিনতাইসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে বলে অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, নান্দাইলে কর্মরত অবস্থায় তিনি বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী কিনে টাকা পরিশোধ করেননি বলেও অভিযোগ ওঠে। এরপরও কয়েকবার জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি হিসেবে পুরস্কৃত হন।
বৃহস্পতিবার জেলা পুলিশ প্রশাসন ওসি ফরিদ আহমেদকে প্রত্যাহার করে ময়মনসিংহ পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করে একটি আদেশ জারি করে। পরদিন শুক্রবার ভোরেই তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগদানের উদ্দেশ্যে নান্দাইল ত্যাগ করেন। এ খবর পেয়ে শুক্রবার সকাল থেকে থানায় আসতে শুরু করেন পাওনাদাররা। তাঁকে না পেয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সবাই চলে যান। স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে চাপে পড়েন প্রত্যাহার হওয়া ওসি ফরিদ।
এরপর শুক্রবার নান্দাইলে এসে বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পাওনাদারদের মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে টাকা পরিশোধ করেন। কারও কারও কাছ থেকে টাকা পরিশোধের সময় চেয়ে নিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
নান্দাইল পৌর বাজারের ইসহাক মার্কেটের পোশাক বিক্রেতা মোফাজ্জল হোসেন খান রেনু জানান, তিনি টাকা পেয়েছেন। শুক্রবার রাতে ওসি ফরিদ ফোন করে একটি জায়গায় ডেকে নিয়ে তাঁর পাওনা ১ লাখ ৪ হাজার ২৫০ টাকা পরিশোধ করেছেন।
সুবর্ণ ইলেক্ট্রনিকসের মালিক ফরহাদ জানান, তিনিও তাঁর বকেয়ার ১১ হাজার টাকা পেয়েছেন। এ ছাড়া অন্য কয়েকজন পাওনাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করে অচিরেই বকেয়া পরিশোধ করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
শনিবার সন্ধ্যায় সাবেক ওসি ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘আমি নান্দাইল থেকে বদলি হয়েছি তা ঠিক, কিন্তু এখনও তো সেখানে আমার জিনিসপত্র রয়ে গেছে। তাই ভেবেছিলাম পরে এক সময় এসে পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করে যাব। কিন্তু এখন সবার দেনাই মিটিয়ে দিয়েছি।’
নান্দাইল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাহিদুল ইসলাম সমকালকে জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অনেকের টাকা ইতোমধ্যেই পরিশোধ করছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। বাকিদের টাকাও দ্রুতই পরিশোধ করবেন।