কুষ্টিয়ায় নিখোঁজের ১২ ঘণ্টা পর তামাকখেতে মিলল নারীর নিথর দেহ
Published: 15th, March 2025 GMT
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় নিখোঁজের ১২ ঘণ্টা পর এক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের মশান গ্রামের একটি তামাকখেত থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহত ওই নারীর নাম সন্দেসী বালা দাসী (৪৫)। তিনি মশান গ্রামের ঋষিপাড়ার বাসিন্দা ঝন্টু দাসের স্ত্রী। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টার পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। পুলিশের ধারণা, তাঁকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করা হতে পারে। তাঁর লাশ উদ্ধারের পর সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও সন্দেসী বালার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সন্দেসী বালা গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার কিছুক্ষণ পর নিজের বাড়ির রান্নার কাজে ব্যবহারের জন্য পাতা কুড়াতে বাড়ি থেকে বের হয়ে পাশের বাগানে যান তিনি। এরপর রাত হয়ে গেলেও আর ফেরেননি। পরিবারের সদস্যরা রাত সাড়ে আটটার পর থেকে তাঁকে এলাকায় খুঁজতে থাকেন। আশপাশের এলাকাতেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। আজ সকাল সাড়ে ছয়টার কিছু সময় পর স্থানীয় কৃষকেরা মাঠে কাজ করতে গিয়ে তামাকখেতের মধ্যে এক নারীর মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে সন্দেসী বালার পরিবারের সদস্যরা গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন।
বারুইপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জিন্নাহ আলী খান বলেন, সন্দেসী গতকাল সন্ধ্যার দিকে পাতা কুড়াতে বাড়ির পাশের বাগানে যান। দীর্ঘ সময় পরেও ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুঁজি করেন, তবে তাঁকে পাওয়া যায় না। সকালে লাশ পাওয়া গেছে। পুলিশকে খবর দিলে মিরপুর থানা-পুলিশ দুপুর ১২টার দিকে লাশ নিয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সন্দেসী বালার কানে সোনার দুল ছিল, সেটা পাওয়া যায়নি। যে তামাকখেতে লাশ পাওয়া গেছে, সেটির পাশের বাগানে মাদকের আড্ডা বসে।
সন্দেসী বালার নিকটাত্মীয় গণেশ দাস বলেন, সন্দেসীর সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ ছিল না। খুবই ভালো ছিলেন তিনি। তাঁকে কেন, কী কারণে হত্যা করা হয়েছে, তা বোঝা যাচ্ছে না।
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শ্বাস রোধ করে তাঁকে হত্যার পর লাশ ফেলে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় হত্যা মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। পুলিশ জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে কাজ করছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চুরির অপবাদ দেওয়ায় শরীরে পেট্রল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা, দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে
কুমিল্লার চান্দিনায় চুরির অপবাদ দেওয়ায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার এক চালক শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে চান্দিনা উপজেলা সদরের সরকারি হাসপাতালসংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
মো. সবুজ নামের ওই চালককে চান্দিনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাতেই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, আগুনে সুবজের শরীরের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সবুজ চান্দিনা উপজেলার বাড়েরা ইউনিয়নের গড়ামারা গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে। তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চান্দিনা উপজেলা সদরের বেলাশহর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চান্দিনা সদরের হাসপাতাল সড়কের ইউনুছ মিয়ার অটোরিকশা গ্যারেজ ভাড়া নিয়ে সবুজসহ তিনজন ওই গ্যারেজে তাঁদের অটোরিকশা রাখেন। পালাক্রমে তাঁরা তিনজন পাহারাও দেন। প্রায় চার মাস আগে এক রাতে পাহারার দায়িত্ব ছিলেন সবুজ। ওই দিন রাত আনুমানিক দুইটার দিকে গ্যারেজে তালা দিয়ে সবুজ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে যান। ওই সময় চোরচক্র দুটি অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়। পরদিন ওই ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে মানিক নামের একজনকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়। সেদিন রাতেই পুলিশ মানিককে ছেড়ে দেয়। পরে স্থানীয় কয়েকজন মাতবর সবুজকে চোর আখ্যা দিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। কিন্তু সবুজ জানান, তিনি ওই রায় মানেন না এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার ক্ষমতাও তাঁর নেই।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় স্থানীয় কয়েকজন মাতবরের প্ররোচনায় সালাউদ্দিন নামের এক ব্যক্তি সবুজকে আটক করে তাঁর অটোরিকশা নিয়ে যান। এ সময় তাঁকে চোর আখ্যা দিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে চাপ দেওয়া হয়। একপর্যায়ে সে প্রকাশ্যে শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
সুবজের স্ত্রী খুশি আক্তার বলেন, ‘মাতবররা চোর ধরে ছেড়ে দিছে আর আমার স্বামীরে চুরির অপবাদ দিয়ে জরিমানা করেছে। আমার স্বামী চোর আখ্যা দেওয়ার এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নিজের শরীরে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। গরিবের জন্য আইন নাই, বিচার নাই। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
গতকাল রাতে চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাবেদ উল ইসলাম বলেন, ‘অটোরিকশা চুরির ঘটনায় সময় মানিক, সাইফুল ও নাজমুল নামের তিনজনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা হয়। ওই চুরির ঘটনায় সবুজকে দায়ী করে চাপ সৃষ্টি করলে সে অপমান সহ্য করতে না পেরে নিজের গায়ে পেট্রল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে জেনেছি। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’