হায়রো গিবানিৎসা সাসটাভসিতে থাকেন। এই এলাকার একাংশ সার্বিয়ার, আরেক অংশ বসনিয়া-হার্জেগোভিনার অংশ। সাসটাভসির একাংশকে বসনিয়ায় সার্বিয়ার ছিটমহল হিসেবে বিবেচনা করা হয়, আবার সার্বিয়ার অংশের ছিটমহলকে বসনিয়ার বলে বিবেচনা করা হয়।

হায়রো সাসটাভসি পৌরসভার বসনিয়া অংশের বাসিন্দা। সার্বিয়ার শহর প্রিবয়ের সঙ্গে যুক্ত এটি। বসতিটির প্রধান সড়ক দুই দেশের মধ্য দিয়ে গেছে। ফলে প্রিবয় পৌঁছাতে প্রতিবার হায়রোকে দুটি সীমান্তচৌকি পার হতে হয়৷

হায়রো বলেন, ‘এক সীমান্তে ১০ মিনিট, অন্যটিতেও ১০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। এভাবে দিনে ২০ মিনিট করে ৪০ মিনিট চলে যায় আমার। অথচ ওটা ২০ মিনিটের দূরত্ব।’

হায়রো মূলত অবসর জীবন যাপন করছেন৷ তবে এখনো মাঝেমধ্যে কারিগরের কাজ করেন। মাঝেমধ্যে তাঁকে দিনে তিনবার সীমান্ত পাড়ি দিতে হয়।

হায়রো গিবানিৎসা বলেন, ‘চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়, ফার্মেসি থেকে ওষুধ আনতে হয়। স্ত্রীর পেনশনের জন্য পোস্ট অফিসে যেতে হয়। সব কাজই প্রিবয়ে, শুধু ঘুমাই এখানে।’

সাসটাভসির অন্য ৭০০ বাসিন্দার মতো হায়রোরও বসনিয়া এবং সার্বিয়ার নাগরিকত্ব রয়েছে। পৌরসভার মাঝখানে একটি রাস্তা রয়েছে, যার একদিক সার্বিয়ায়, অন্যদিক বসনিয়ায় শেষ হয়েছে।

সাসটাভসির মেয়র সৎয়েটো ভিলটিক একটি সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে বলেন, ‘দুই দেশের মানুষের মধ্যে সীমান্ত এই সেতুও। যুগোস্লাভিয়ার যুগে এটা একটা দেশ ছিল। ফলে এখনকার মতো সমস্যা ছিল না। এখন আমরা সার্বিয়ায়, কিন্তু আমাদের পেছনে সেতুর অন্য অংশ বসনিয়ায়।’

সীমান্তসমস্যা কীভাবে সাসটাভসির বাসিন্দাদের ভোগাচ্ছে, তা ব্যাখ্যা করেছেন ভিলটিক। এখানকার অধিকাংশ মানুষ পশুপালক এবং আশপাশের বাজারে তাঁরা পণ্য বিক্রি করেন। কিন্তু সীমান্তের কারণে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অনেক।

ভিলটিক বলেন, ‘আমরা চাইলেই যেকোনো কিছু প্রিবয়ের বাজারে নিতে পারি না। সবকিছুর জন্য অনুমতি নিতে হয়। যেমন আমি এক ব্যক্তিকে পনির প্রিবয়ে নেওয়ার অনুমতি দিচ্ছি, যাতে তিনি তা সেখানে বিক্রি করতে পারেন। মানুষ এসবে বিরক্ত। আমরা আশা করি শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হবে। আমরা কারা এবং কী করতে পারি, তা পুরোপুরি স্বচ্ছ হওয়া উচিত।

সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সৎয়েটো ভিলটিককে সার্বিয়াতেই বসবাস করতে হবে এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বসনিয়ার ক্যাফেতে যেতে হবে। হায়রো গিবানিৎসারও প্রতিদিন সীমান্ত পার হতে হবে। অনেক বছর ধরে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন তাঁদের, তারপরও একদিন স্বাধীনভাবে ঘোরাঘুরির আকাঙ্ক্ষা তাঁদের শেষ হয়ে যায়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বসন য়

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় থাকা জাহাজ চট্টগ্রামের উপকূলে

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা একটি তেলবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম উপকূলে অবস্থান করছে। জাহাজটি ভাঙার জন্য চট্টগ্রাম শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে আনার চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে জাহাজটি ইয়ার্ডে আনার জন্য অনাপত্তিপত্র পেতে শিল্প মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।

পূর্ব আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্র কমোরোসের পতাকাবাহী ওই জাহাজের নাম ‘ইতাগুয়া’। ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) দেওয়া জাহাজটির শনাক্তকারী নম্বর ৯১০২২৭৭। জাহাজটি ইতিমধ্যে সমুদ্রে চলাচলের ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এ ধরনের জাহাজ সাধারণত জাহাজ ভাঙা মালিকেরা কিনে থাকেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইরানের জ্বালানি তেল পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে জাহাজটির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

সমুদ্রে চলাচলকারী সব জাহাজের ভৌগোলিক অবস্থান পর্যবেক্ষণ করে ভেসেল ফাইন্ডার নামের একটি ওয়েবসাইট। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ শনিবার সকাল সাতটা পর্যন্ত জাহাজটির অবস্থান চট্টগ্রাম উপকূলে দেখা যাচ্ছিল।

জানতে চাইলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়া শাখার যুগ্ম সচিব সুলতানা ইয়াসমিন প্রথম আলোকে বলেন, ইতাগুয়া নামের জাহাজটি চট্টগ্রামের একটি শিপইয়ার্ডে আনতে অনাপত্তিপত্রের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয় এখনো অনাপত্তিপত্র দেয়নি বলেন জানান তিনি।

ইরানের জ্বালানি তেল পরিবহনে যুক্ত ট্যাংকারগুলো চলাচল নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ‘ইউনাইটেড এগেইনস্ট নিউক্লিয়ার ইরান’। তাদের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, ৩ লাখ টন তেল পরিবহনে সক্ষম ইতাগুয়া ১৯৯৭ সালে জাপানে নির্মাণ করা হয়। মূলত নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা জ্বালানি তেল পরিবহন করতে ইরান যে ‘শ্যাডো ফ্লিট’ (ছায়া জাহাজবহর) ব্যবহার করে, তার একটি হচ্ছে এই জাহাজ।

ইউনাইটেড এগেইনস্ট ইরানের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মোট ৮৪ লাখ ৮৬ হাজার ২০৭ লাখ ব্যারেল তেল পরিবহন করেছে জাহাজটি। ইরানের ন্যাশনাল ইরানিয়ান ট্যাংকার কোম্পানির অধীনে জাহাজটি তেল পরিবহন করত। প্রতিষ্ঠানটিও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে।

সমুদ্রপথে মালামাল পরিবহন সংক্রান্ত খবরাখবর দেওয়া নিউজপোর্টাল ট্রেড উইন্ডের তথ্যমতে, বাংলাদেশে স্ক্র্যাপ জাহাজের প্রতি টনের দাম ৫৫০ মার্কিন ডলার থেকে কমে ৫০০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু প্রথম আলোর হাতে আসা ইতাগুয়া বিক্রির চুক্তি অনুযায়ী, মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা এই জাহাজ প্রতি টন ৪৩৫ ডলারে বিক্রির সমঝোতা হয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি হলো ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য সীমিত করা এবং বিভিন্ন বাণিজ্যের ওপর শর্তারোপ করা। ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কে গেলে ট্রাম্প প্রশাসন থেকে হুমকির বিষয়ও আছে।

খন্দকার মোয়াজ্জেম বলেন, এ মুহূর্তে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উচিত অনাপত্তিপত্র স্থগিত করে বৈশ্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা। কারণ, ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেখান থেকে কী সিদ্ধান্ত আসছে, তার ওপর ভিত্তি করে এগোনো ভালো হবে।

জাহাজভাঙা শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈশ্বিক জোট ‘এনজিও শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্ম’–এর তথ্যমতে, একটি জাহাজের কার্যকাল যখন শেষ হয়, তখন জাহাজটি নানা ধরনের ক্ষতিকর বর্জ্যে পূর্ণ থাকে। এ ধরনের জাহাজ ভাঙতে হলে বিশেষায়িত দক্ষতা ও ইয়ার্ডের প্রয়োজন হয়, যা বাংলাদেশের নেই।

এ প্রসঙ্গে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এসব জাহাজের সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রসহ পরিবেশদূষণে ভূমিকা আছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, জাহাজগুলো বর্জ্যমুক্ত হয়ে আসছে কি না, সেটাও শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিশ্চিত করা জরুরি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ