আগামীকাল রোববার কোম্পানি পর্যায়ের করদাতাদের বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দেওয়ার শেষ দিন হওয়ার কথা। ইতিমধ্যে তা আরও দেড় মাস সময় বাড়ানো হয়েছে। আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত রিটার্ন দিতে পারবে কোম্পানি।

সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এই সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে।

সাধারণত ১ জুলাই থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত রিটার্ন দিতে পারে কোম্পানি করদাতারা। কিন্তু এবার দুই দফা সময় বাড়ানো হলো। বর্তমানে প্রতি বছর গড়ে ৫০ হাজারের মতো কোম্পানি রিটার্ন দেয়। সারা বছরের আয়-ব্যয়ের খবর জানিয়ে এসব কোম্পানি করপোরেট কর দেয়।

এই পর্যন্ত যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহ পরিদপ্তর থেকে প্রায় সোয়া দুই লাখ কোম্পানি নিবন্ধন নিয়েছে। তাদের বার্ষিক আয়কর বিবরণী দাখিল করা বাধ্যতামূলক।

এ দিকে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের রিটার্ন জমার সময় শেষ হয়। এ বছর সব মিলিয়ে ৩৯ লাখ ৭৩ হাজার ৭৫৭ জন করদাতা রিটার্ন দিয়েছেন। এনবিআর কর পেয়েছে মাত্র ৩ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: করদ ত

এছাড়াও পড়ুন:

দুই ভাগ হচ্ছে এনবিআর

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান জানিয়েছেন, রাজস্ব কার্যক্রম সংস্কারের লক্ষ্যে এনবিআর ভেঙে রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আলাদা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ঈদের আগেই দুই ভাগ হয়ে যাবে এনবিআর। কার্যক্রম শুরু হবে নতুন অর্থবছরের প্রথম থেকেই। বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘আয়কর আইন, ২০২৩: সংস্কার ও প্রেক্ষিত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ তথ্য জানান। এতে সভাপতিত্ব করেন বিসিএস ট্যাক্সেশন ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ব্যরিস্টার মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকী, স্বাগত বক্তব্য দেন মহাসচিব সৈয়দ মহিদুল হাসান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কর কমিশনার ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ মামুন।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘টক অব দ্য কান্ট্রি- ট্যাক্স পলিসি এবং কর ব্যবস্থাপনা আলাদা হচ্ছে। এটা এতদিন অনুমান ছিল। সামনে বাস্তবে রূপ পাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা বুধবারও ডেকে জানিয়েছেন, ঈদের আগেই আলাদা হওয়ার বিষয়টি পাস হবে। আগামী ১ জুলাই থেকেই এর কার্যকম শুরু হবে।’

বিষয়টা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এর যে কাঠামো, সফটওয়্যার, সেটা তৈরি করার জন্য যথেষ্ট সময় লাগে। তবে দ্রুত করতে পারলে অসম্ভব বলে কিছু নেই। এনবিআর সেদিকেই এগোচ্ছে।’

আব্দুর রহমান খান বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদের নীতিগত সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছিল। আইনের একটা খসড়া করা হয়েছে। সেটি অচিরেই উপদেষ্টা পরিষদে উঠবে এবং জারি হবে। সেখানে বিশদভাবে এনবিআর যা চাচ্ছে বা সরকার যে নির্দেশনা দিয়েছে, সেটা হলো রাজস্ব নীতি একটা বিভাগ হবে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, যেটা এনবিআরের প্রধান কাজ, আইন প্রয়োগ করা, সেটার জন্য আলাদা একটা বিভাগ হবে। এই দুটো বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করবে। কিছু সমন্বয়ের ব্যবস্থা থাকবে। কিছু বাইরের লোকও থাকবে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের জন্য। রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় যাঁরা অভিজ্ঞ, তাঁরাই এই কাজগুলো করবেন।’

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কর কমিশনার ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ মামুন। তিনি বলেন, দেশের কর-জিডিপি অনুপাত খুবই কম যা ৩ দশমিক ২ শতাংশ। এর অন্যতম কারণ, অনেক বেশি কর অব্যাহতি দিতে হয়। যার কারণে কর ব্যয় অনেক বেশি। কর ব্যবস্থাপনায় অসঙ্গতি দূর করতে প্রশাসনিক সংস্কার, তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর আয়কর বিভাগ বিনির্মাণের সংস্কার, আইন ও বিধি সংস্কার এবং সকল অংশীজনের দৃষ্টিভঙ্গির সংস্কার প্রয়োজন। 

আয়কর আইনের অসঙ্গতির বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কর-জিডিপির হার অত্যন্ত কম, এটা সত্য। জিডিপির হিসাব নিয়ে অনেকেই বলেন, এটি অতিরঞ্জিত। তবে কর অব্যাহতির কারণে রাজস্ব কম আহরণ হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে কর অব্যাহতির সংস্কৃতিটা চর্চা চলছে। এখান থেকে ধীরে ধীরে বের হতে হবে। 

আব্দুর রহমান বলেন, দেশে যে পরিমাণ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে তা প্রতিযোগিতামূলক দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। এর কারণ, সুশাসনের অভাব। এখানে গুরুত্ব দিতে হবে। যদি বলা হয়, কর দিতে হবে না। উল্টো সরকারি কোষাগার থেকে প্রণোদনা দেওয়া হবে, তারপরও দেশে বিনিয়োগ আসবে কি না সন্দেহ। কারণ, তাদের যে ধরনের সেবা প্রয়োজন, সেটা ঠিক মতো দিতে পারি না। আইনের শাসন একেবারেই অনুপস্থিত। 

রাজস্ব আয় বাড়াতে আইন প্রয়োগের ওপর জোর দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, যাঁরা করদাতা নন, তাঁরাও কর দেন। গৃহিণী, ছাত্রছাত্রী, তাঁরাও ব্যাংকে টাকা রাখেন। তাঁদের মুনাফা থেকেও কর আদায় হয়। এটা প্রত্যক্ষ কর। এখনও রাজস্ব আয়ের দুই-তৃতীয়াংশ আসে পরোক্ষ কর থেকে। তার মানে এখনও গরিব মানুষেরা বাংলাদেশে কর দেয়। এটাই সত্য। ৫৩ বছর ধরে ঘাটতি বাজেট চলছে। প্রচুর ঋণ হয়েছে। ঋণের কিস্তি ও সুদ পরিশোধ করা এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

অনুষ্ঠানে এনবিআর সদস্য জি এম আবুল কালাম কায়কোবাদ বলেন, ব্যবসার পরিধি অনুযায়ী উৎসে কর নির্ধারণ করা হয়। সব ব্যবসার আয় ও মুনাফা এক রকম নয়। মুনাফার ভিত্তিতে উৎসে কর বিভিন্ন রকম করা হয়েছে। এগুলোর পুনর্বিবেচনা করা হবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যেভাবে বেড়ে যায় কার্যকরী করহার
  • দুই ভাগ হচ্ছে এনবিআর