‘আমি আমার নিজের ইচ্ছায় কিছুই করিনি। আমাকে বাধ্য করা হয়েছে। ওই ছেলের জন্য আর ওর পরিবারের জন্য আমার জীবন থেকে মনে হয় সব সুখ শান্তি চলে গেছে।’ আত্মহত্যার আগে এমন চিরকুট লিখে গেছে দশম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রী (১৬)। লেখা শেষ না করেই ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে ওই ছাত্রী।

গতকাল শুক্রবার রাতে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে। পরে রাত ১২টার দিকে ওই ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আজ শনিবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাঠানো হয়েছে।

ছাত্রীর স্বজন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্কুলে যাওয়া ও আসার পথে বিভিন্ন সময় তাকে উত্ত্যক্ত করতেন এক তরুণ। বিষয়টি তরুণের পরিবার ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জানায় ছাত্রীর পরিবার। তবে কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তরুণ। গতকাল ওই ছাত্রীর সঙ্গে আরেক সহপাঠীর তোলা ছবির সঙ্গে আজেবাজে ক্যাপশন লিখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন তরুণ। বিষয়টি জানার পর চিরকুট লিখে নিজ কক্ষের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে ওই ছাত্রী।

ছাত্রীর মা অভিযোগ করেন, তাঁর মেয়ে অত্যন্ত ভদ্র ও লাজুক। তাকে বিভিন্ন সময় ছেলেটি কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। বিষয়টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ওই বখাটের পরিবারকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। গতকাল তাঁর মেয়ের সঙ্গে তার এক সহপাঠির তোলা স্বাভাবিক ছবিতে বাজে মন্তব্য লিখে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয় ওই বখাটে। এতে লোকলজ্জার ভয়ে তাঁর মেয়ে আত্মহত্যা করে। তিনি এই হত্যার বিচার চান।

ছাত্রীর বাবা বলেন, আত্মহত্যার আগে তাঁর মেয়ে চিরকুট লিখে গেছেন। চিরকুটে আত্মহত্যার জন্য ওই ছেলেকে দায়ী করে গেছেন। তাঁর মেয়েকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে। তিনি ওই বখাটের ফাঁসি চান।

বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে এলেও তাঁকে জানানো হয় ঘটনার এক দিন আগে। জানার পরে তিনি ওই ছেলে ও তাঁর পরিবারের লোকজনকে ডেকে এনে সাবধান করে দিয়েছিলেন।

ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত তরুণ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপনে আছেন। বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

কামাল হোসেন বলেন, খবর পেয়ে তিনিসহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছেন। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনা হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ওই ছ ত র র পর ব র পর ব র র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

আসছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট

সরকারের ব্যয় ও আয়ের মধ্যে ঘাটতি কম রেখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজনে নজিরবিহীন আগের অর্থবছরের চেয়ে ছোট বাজেট দিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত সরকারের আর্থিক, মুদ্রা এবং মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত  কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভায় আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যা চলতি বাজেটের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম। নতুন বাজেটে বরাদ্দ কমছে মূলত উন্নয়ন খাতে।

সাধারণত চলমান অর্থবছরের তুলনায় পরবর্তী অর্থবছরে কিছুটা হলেও ব্যয় বাড়িয়ে বাজেট দেওয়া হয়। কিন্তু এবার অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কমানো হচ্ছে। নতুন বাজেটে পরিচালন ব্যয় কমানো হচ্ছে না। তবে  উন্নয়ন বাজেট কমানো হচ্ছে। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত সভায় পরিকল্পনা, বাণিজ্য, খাদ্য উপদেষ্টা এবং এসব  মন্ত্রণালয়ের সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যোগ দেন। সভায় আগামী বাজেটের বিষয়ে উপস্থাপনা দেন অর্থসচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার।

অর্থ মন্ত্রাণলয় সূত্র জানায়, নতুন বাজেটে পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৫ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। তবে উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ কমিয়ে রাখা হচ্ছে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার। আগামী বাজেটে এডিপিতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, রাজস্ব আহরণে কাক্ষিত অগ্রগতি না হওয়া এবং বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান কমে যাওয়ায় এডিপিতে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাদ বা স্থগিত রাখার দেওয়ার বিবচেনায়  আগামী অর্থবছরের ব্যয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। তারা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নেওয়া অনেক বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যেয়ে প্রচুর ঋণ নেওয়া হয়েছে। অনেক প্রকল্পে অনিয়ম হয়েছে। বারবার সময় এবং ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। এ প্রবণতা সার্বিক অর্থনীতি বিশেষত ঋণ পরিশোধের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে  অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মেগা প্রকল্প গ্রহণ না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

তারা জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলকমুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি ব্যয় কমানো এবং বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য করতেই আকার কমানো হচ্ছে। তবে আকার কমলেও মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা নিম্নআয়ের মানুষদের স্বস্তি দিতে সামাজিকর সুরক্ষা কর্মসূচিতে উপকারভোগী ও কিছু ক্ষেত্রে ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। একই সঙ্গে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত অগ্রাধিকার পাবে।  

তবে বাজেটের আকার কমলেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা না কমে বরং বাড়ছে। আগামী অর্থবছর সংস্থাটির জন্য ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করছে সরকার। যদিও এনবিআরের পক্ষ থেকে লক্ষমাত্রা ৫ লাখের মধ্যে সীমাদ্ধ রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়।  চলতি অর্থবছর এনবিআরের রাজস্ব লক্ষমাত্রা ছিল  ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। তবে লক্ষমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আহরণ অনেক কম হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে লক্ষমাত্রা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়। 

আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি প্রাক্কলন করা হচ্ছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে যা ছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে ঋণের অর্ধেকেরও বেশি বিদেশি উৎস থেকে এবং  ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ করবে সরকার। এদিকে নতুন অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে সাড়ে ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে যা ধরা হয় ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অবশ্য বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং এডিবির পূর্বাভাস এর চেয়ে অনেক কম। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ