বামপন্থী ছাত্র, শ্রমিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের গণমিছিল স্থগিত, শহীদ মিনারে সমাবেশ
Published: 15th, March 2025 GMT
পূর্বঘোষিত গণমিছিল কর্মসূচি স্থগিত করেছে বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্র, শ্রমিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। গণমিছিল না করলেও সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। ওই সমাবেশ থেকেই গণমিছিল স্থগিতের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাহিদ শাহরিয়ার রেজা।
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার পরে শহীদ মিনারের পাদদেশে সমাবেশ শুরু হয়ে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শেষ হয়। হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়নের বিচার এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অপসারণের দাবিতে আজ দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বামপন্থী ছাত্র, শ্রমিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর গণমিছিল করার কথা ছিল। গণমিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর ঘুরে টিএসসিতে শেষ করার কথা ছিল।
কর্মসূচির উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, জাসদ ছাত্রলীগ (বিসিএল), বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, চারণ সাংস্কৃতিক সংসদ, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি) ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ।
স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাহিদ শাহরিয়ার রেজা সমাবেশে বলেন, ‘উগ্রবাদী গোষ্ঠী আমাদের এ আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য নানা ধরনের চক্রান্ত করে আসছে। পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারও এ ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় পুনর্বাসনের স্বপ্ন দেখছে। তাদের মনোবাসনা প্রগতিশীল ছাত্র-যুবসমাজ পূরণ হতে দেবে না।’
সমাবেশ থেকে নারী ও শিশু নিপীড়ন, ধর্ষণ, খুনের বিচার এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে লিখিত বক্তব্য দেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দীন। এতে বলা হয়, মাগুরার শিশুটির মৃত্যুতে সারা দেশ শোকাহত। কিন্তু ওই শিশুর মতো ঘটনা বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। বরগুনায় কিশোরী ধর্ষণ, বিচার চাওয়ায় কিশোরীর বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। সরকার ধর্ষকদের বিচার করতে না পারলেও ধর্ষণের প্রতিবাদে আন্দোলনকারী ওপর খড়্গহস্ত হয়েছে। পুলিশ দিয়ে হামলা করে পরবর্তী সময়ে তাদের নামেই মামলা করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্রমাগত অভ্যুত্থানের চেতনা থেকে বিচ্যুত হচ্ছে। সব নাগরিকের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।
লিখিত বক্তব্যে ৭টি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হচ্ছে, ১.
সমাবেশে বক্তব্য দেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, সমাজতন্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ই, জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি গৌতম শীল, যুব ইউনিয়নের নেতা জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, বেলা ১১টায় জুলাই গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করাসহ দুই দফা দাবিতে জাতীয় জাদুঘরের সামনে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ‘প্রতিবাদী জুলাই জমায়েত’ শুরু হয়। পরে তাঁরা শহীদ মিনার অভিমুখে একটি মিছিল নিয়ে রওনা হন। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের কাছে যাওয়ার আগেই পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পরে পুলিশের অনুরোধে তাঁরা মিছিলটি নিয়ে আবার জাতীয় জাদুঘরের সামনে ফিরে এসে তাঁদের কর্মসূচি স্থগিত করেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ব চ র করত গণম ছ ল
এছাড়াও পড়ুন:
‘গণ–অভ্যুত্থানপরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে’
গণ–অভ্যুত্থানপরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে। ছাত্র-জনতার এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠগুলোর সহাবস্থান লক্ষ্য করছি। এই রাজনৈতিক সহনশীলতার সংস্কৃতি জারি রাখতে হবে। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) ইফতার মাহফিল ও ‘গণ–অভ্যুত্থানপরবর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান এ কথাগুলো বলেন।
শুক্রবার বিকেল পাঁচটা থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) ক্যাফেটেরিয়ায় এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ডুজার সদস্যদের জুলাই আন্দোলনে যে নির্ভীক ভূমিকা ছিল তা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে আমি আশা করি। তিনি আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল আয়োজনের জন্য ডুজার সদস্যরাসহ উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাহবুব মোর্শেদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সামিতির আয়োজনে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে যে সহাবস্থান ও সহনশীলতার পরিচয় পেয়েছি, সেটি ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকলে একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব। উপস্থিত ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে আমি সে সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি।’
উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ডুজা সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি বলেন, গণ–অভ্যুত্থানে ছাত্রসংগঠনগুলোর যে একতা আমরা দেখেছি, সেটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। ছাত্ররাজনীতি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে ভয় ছিল, সেটি দূর করতে আপনাদের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা প্রয়োজন। যেকোনো সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়িয়ে গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনার মাধ্যমে সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করতে হবে।
সভায় ছাত্রনেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির, বাংলাদেশ ইমলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (একাংশ) সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ এর সেক্রেটারি জেনারেল শেখ মাহবুবুর রহমান নাহিয়ান, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি রাগীব নাঈম, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ এবং স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক জামালুদ্দীন মুহাম্মদ খালিদ।
বক্তব্যে ছাত্রনেতারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়েছেন।