রেলওয়ের ৩৫৮ কোটি টাকার ‘লাগেজ ভ্যান’ কাজে আসছে না
Published: 15th, March 2025 GMT
রেলওয়েকে লাভজনক করতে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি পণ্য পরিবহনের কথা বলে ৩৫৮ কোটি টাকায় ১২৫টি লাগেজ ভ্যান কেনা হয়েছিল। এগুলো চালু করে লাভ তো হয়নি, উল্টো এখন এগুলো রেলওয়ের ‘গলার কাঁটায়’ পরিণত হয়েছে।
এখন এসব লাগেজ ভ্যান পরিচালনার দায়িত্ব বেসরকারি খাতে দিতে চায় রেলওয়ে। গত ৫ জানুয়ারি রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এক সভায় লাগেজ ভ্যান বেসরকারি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা বা ভাড়ায় দেওয়ার বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেন।
অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাগেজ ভ্যান কেনার পরামর্শ দিয়েছিলেন। রেলওয়ের কর্মকর্তারা নানা পরিকল্পনা করলেও বাস্তবে এসব লাগেজ ভ্যান ব্যবহারে কৃষক ও উদ্যোক্তাদের তেমন উৎসাহী করতে পারেনি। কৃষকদের জন্য বিশেষ ট্রেন চালু করেও পণ্য পরিবহনে ব্যর্থ হয়েছে রেল।
এর আগে চীন থেকে আনা ডেমু ট্রেনও ব্যর্থ প্রকল্পে পরিণত হয়। এখন একই পথে যাচ্ছে লাগেজ ভ্যান প্রকল্প। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপযোগিতা বিবেচনা না করে জনগণের কষ্টের টাকায় এ ধরনের কেনাকাটার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের শাস্তি দিতে হবে।
সরবরাহকারীদের সুবিধা দিতে রেলের অনেক কেনাকাটা হয়। এসব লাগেজ ভ্যান কেনার আগে উপযোগিতা যাচাই করা হয়নি। কারণ, তাঁরা জানেন, এটার জন্য কাউকে জবাবদিহি করতে হবে না।বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পরিবহনবিশেষজ্ঞ মো.সামছুল হক
রেলওয়ের নথিপত্র বলছে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে রেলওয়ের বহরে ১২৫ লাগেজ ভ্যান যুক্ত হয়। পুরোনো লাগেজ ভ্যান ছিল ৫০টি, যার ১৮টি সচল ছিল। নতুন লাগেজ ভ্যান যুক্ত হওয়ার আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পার্সেল পরিবহনে আয় হয়েছিল ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বরে লাগেজ ভ্যানগুলো যুক্ত হওয়ার পর শেষ তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) মাত্র ২২ লাখ টাকা বেড়ে আয় হয়েছিল ২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
লাগেজ ভ্যান থেকে আয় বাড়াতে গত বছরের ২৪ অক্টোবর খুলনা, পঞ্চগড় ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে তিন জোড়া ‘কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন’ চালু করেছিল রেলওয়ে। কিন্তু কৃষকদের কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে চালুর এক সপ্তাহের মধ্যে এসব ট্রেন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ২৪ অক্টোবর যাত্রার প্রথম দিন কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন পঞ্চগড় ছেড়েছিল কোনো পণ্য ছাড়াই।
ব্যবসায়ীরা বলেন, ট্রাকে যশোর থেকে ঢাকায় সবজি পাঠাতে প্রতি কেজিতে দুই টাকা খরচ পড়ে। সেখানে ট্রেনে করে পাঠাতে খরচ সাড়ে ৪ টাকার মতো। এ ছাড়া তিন-চারবার সবজি ওঠানো-নামানোতে পণ্য নষ্ট হবে।
কেন কাজে লাগছে না‘বাংলাদেশ রেলওয়ের মাধ্যমে ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের (বেসরকারি) পার্সেল এবং গুডস পরিবহন নীতিমালা ২০২৪’-এর খসড়া প্রণয়নে গত ৫ জানুয়ারি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে সভা হয়।
সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, সভায় রেলের যুগ্ম মহাপরিচালক এ এম সালাহ উদ্দীন বলেন, রেলে যে লাগেজ ভ্যান রয়েছে, তার মাত্র ৫ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে। নীতিমালা করে বেসরকারি খাতে লাগেজ ভ্যান ইজারা বা ভাড়া দিলে রাজস্ব বৃদ্ধি সম্ভব হবে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রেলওয়ের লাগেজ ভ্যানগুলো ব্যবহার করে সর্বোচ্চ সুফল পেতে তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু ফল পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পরিবহনবিশেষজ্ঞ মো. সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সরবরাহকারীদের সুবিধা দিতে রেলের অনেক কেনাকাটা হয়। এসব লাগেজ ভ্যান কেনার আগে উপযোগিতা যাচাই করা হয়নি। কারণ, তাঁরা জানেন, এটার জন্য কাউকে জবাবদিহি করতে হবে না। সে কারণেই বিগত সরকার এত বেশি দেউলিয়া ছিল। টাকার অপচয় যে যেভাবে করুক, সবাইকে সুরক্ষা দেওয়া হতো। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এসব ল গ জ ভ য ন কর মকর ত র লওয় র ব সরক র পর বহন প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
নওগাঁ মেডিকেল কলেজ বন্ধ হলে চাল-আম সরবরাহ বন্ধের হুঁশিয়ারি
নওগাঁ মেডিকেল কলেজ বন্ধ করা হলে চাল ও আম সরবরাহ বন্ধসহ কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নওগাঁ মেডিকেল কলেজ রক্ষা আন্দোলন কমিটি। আজ শনিবার দুপুরে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড়ে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ বন্ধের অপচেষ্টার প্রতিবাদে ডাকা প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
নওগাঁ জেলার সর্বস্তরের জনগণ ও নওগাঁ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী, বিএনপি, জামায়াত, বাসদ, একুশে পরিষদ নওগাঁসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
এর আগে গতকাল শুক্রবার বিকেলে নওগাঁ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের আহ্বানে নওগাঁ মেডিকেল কলেজের চলমান ইস্যু নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নওগাঁ মেডিকেল বন্ধের অপচেষ্টা রুখতে বিএমএ নওগাঁর সভাপতি ইস্কেন্দার হোসেনকে আহ্বায়ক করে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ রক্ষা আন্দোলন কমিটি গঠিত হয়।
নওগাঁ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মুক্তার হোসেন বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে তাঁরা জেনেছেন নতুন যে ছয়টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে, সেগুলোর মান যে পর্যায়ে উন্নত হওয়ার কথা ছিল সেই পর্যায়ে নাকি আসেনি। যার কারণে সরকার এসব কলেজের শিক্ষার্থীদের অন্য মেডিকেল কলেজে নিয়ে নেবে। এরপর এই ছয়টি মেডিকেল কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে এখনো বন্ধের চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
নওগাঁ মেডিকেল কলেজ রক্ষা আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক ইস্কেন্দার হোসেনের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসমবায়বিষয়ক সম্পাদক, নওগাঁ পৌরসভার সাবেক মেয়র নজমুল হক প্রমুখ।
সমাবেশে ইস্কেন্দার হোসেন বলেন, ‘নওগাঁ মেডিকেল কলেজ কখনোই মানহীন হতে পারে না। আমাদের এখানে শিক্ষার্থী অনুপাতে প্রতি চারজন শিক্ষার্থীর জন্য একজন করে শিক্ষক আছে। আমার মনে হয় না এটি বাংলাদেশের আর কোনো মেডিকেল কলেজে আছে। এখানে যাঁরা শিক্ষক আছেন তাঁরা সবাই উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন। রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যে ২৬টি মেডিকেল কলেজে পরীক্ষা হয় সেই পরীক্ষায় বরাবরই নওগাঁ মেডিকেল কলেজ প্রথম স্থান কিংবা দ্বিতীয় স্থানে থাকে। ভালো ফলাফল সত্ত্বেও এই মেডিকেল কলেজ বন্ধের সিদ্ধান্ত সরকারের হঠকারিতা। এই কলেজ বন্ধ করা হলে নওগাঁ থেকে চাল, আম সরবরাহ বন্ধ, অনশনসহ কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
সমাবেশে বক্তারা বলেন, শুধু ভবন না থাকা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান যাচাইয়ের মাপকাঠি হতে পারে না। সরকারি প্রতিষ্ঠান মানহীন হলে এর দায়ভার সরকারের। মান উন্নয়ন না করে উল্টো সরকার যে মানহীন আখ্যা দিয়ে মেডিকেল কলেজ বন্ধ করতে যাচ্ছে, এটি হঠকারী সিদ্ধান্ত ছাড়া কিছুই না। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে মেডিকেল শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতের বিশাল ঘাটতি তৈরি হবে। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা সংকুচিত হয়ে পড়বে।