মোবাইলে ইন্টারনেট গ্রাহক কমেছে ১.৩২ কোটি
Published: 15th, March 2025 GMT
দেশে সাত মাস ধরে টানা মুঠোফোন ও মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক কমছে। মানুষ মুঠোফোন ব্যবহারের পেছনে ব্যয়ও কমিয়ে দিয়েছেন।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি পর্যন্ত আগের সাত মাসে মুঠোফোন গ্রাহক কমেছে ৬০ লাখের মতো। একই সময়ে মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কমেছে ১ কোটি ৩২ লাখ।
মোবাইল অপারেটররা বলছে, ইন্টারনেট ব্যবহার কমে যাওয়ার পেছনে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, সরকারের কর বৃদ্ধি ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি দায়ী। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক নতুন কিছু ইন্টারনেট গ্রাহক তৈরি হয়েছিল, সেই প্রবণতাও টেকেনি।
মোবাইল অপারেটরদের পুরোনো অনেক সিম নিয়মিতই নিষ্ক্রিয় হয়। সঙ্গে নতুন সিম বিক্রি হয়; কিন্তু সিমের কর বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। এতে নতুন সিম বিক্রি কমে গেছে বলে জানায় অপারেটরগুলো।
মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, দাম বাড়ায় মানুষ নতুন সংযোগ নিতে কম আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সংযুক্ত রাখা আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি খরচ বাড়ার কারণে প্রয়োজনে বিকল্প সংযোগ নেওয়ার ক্ষেত্রেও অনেকের মধ্যে অনীহা তৈরি হয়েছে।
মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড মিলিয়ে দেশে এখন ইন্টারনেটের মোট গ্রাহক ১৩ কোটির মতো, যা গত জুনে ছিল প্রায় ১৪ কোটি ২২ লাখ।গ্রাহক কত দাঁড়ালবাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ৬ মার্চ মুঠোফোন ও ইন্টারনেট গ্রাহকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, গত জুন মাসে মুঠোফোনের গ্রাহক সর্বোচ্চ ১৯ কোটি ৬০ লাখ ছাড়িয়েছিল। এরপর তা কমতে শুরু করে। জানুয়ারিতে গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ৬৬ লাখের মতো।
সবচেয়ে বেশি কমেছে মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক। গত জুনে ইন্টারনেট গ্রাহক ছিলেন প্রায় ১২ কোটি ৯২ লাখ। এর পরের মাস থেকেই ধারাবাহিকভাবে এই সংখ্যা কমতে থাকে। বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক কমে দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৬০ লাখে।
মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড মিলিয়ে দেশে এখন ইন্টারনেটের মোট গ্রাহক ১৩ কোটির মতো, যা গত জুনে ছিল প্রায় ১৪ কোটি ২২ লাখ। এ সময় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গ্রাহক কিছু বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখের মতো। অপারেটররা বলছে, মানুষ কোথাও ওয়াই-ফাই পেলে ইন্টারনেটে যুক্ত হচ্ছেন। মুঠোফোনে প্যাকেজ কেনা কমিয়েছেন। উল্লেখ্য, সর্বশেষ ৯০ দিনের মধ্যে কেউ একবার ব্যবহার করলেই তাঁকে গ্রাহক হিসেবে ধরা হয়।
ডিজিটালাইজেশনের জন্য এটা ভালো লক্ষণ নয়। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা আছে, পাশাপাশি মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন কি না, এসব জানা দরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেনমোবাইল অপারেটররা বলছে, চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ অতি প্রয়োজনীয় জিনিসের চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছেন। এ কারণে অনেকে ইন্টারনেটে বাড়তি খরচ করতে আগ্রহী নন। অনেকেই একাধিক সিম ব্যবহার করতেন। সেখানে সুবিধা অনুযায়ী ইন্টারনেট প্যাকেজও নেওয়া থাকত; কিন্তু এখন সেটি কমে গেছে। এমনকি ইন্টারনেট প্যাকেজ (এমবি) কার্ডের চাহিদা ও ব্যবহার কমেছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে, অর্থাৎ গত জুনে মুঠোফোন সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করেছিল। এখন সম্পূরক শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) ও সারচার্জ মিলিয়ে মোট করভার ৩৯ শতাংশের বেশি। সরকার করের সঙ্গে মোবাইল অপারেটরগুলো সেবামূল্যও বাড়িয়েছে।
চলতি অর্থবছরে সিমের দামও ১০০ টাকা বেড়ে ৩০০ টাকা হয়েছে। অপারেটররা বলছে, ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো সিমে এখন ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব হয় না। এতে নতুন গ্রাহক আসা কমেছে।
গ্রাহক কমার পেছনে আরেকটি কারণ বলছে অপারেটররা। সেটি হলো আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দলটির নেতা-কর্মীদের একটি অংশের দেশত্যাগ। এই গ্রাহকেরা মুঠোফোনে অনেক টাকা খরচ করতেন। পটপরিবর্তনে আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যবসায়ীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবসাও ভালো যাচ্ছে না। অনেকে চাকরিচ্যুত হয়েছেন। ফলে এসব মানুষের আয়ের ওপর প্রভাব পড়েছে এবং যা মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যায়ও প্রভাব ফেলছে।
আরও কিছু পরোক্ষ প্রভাবের কথা জানায় অপারেটররা। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ‘মানি ফ্লো’ (অর্থ সরবরাহ) আগের মতো নেই। সবাই খুব সাবধানী। এ ধরনের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এমনটা হয়ে থাকে। গ্রাহক কমে যাওয়ার জন্য সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং উচ্চ হারের ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক ও সিমের করের কথা জানান গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশনস শারফুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।
অন্যদিকে বাংলালিংকের চিফ করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, গ্রাহকসংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকলে এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হবে।
মানুষ মুঠোফোনের ব্যয়ও কমিয়েছেন। গ্রামীণফোনের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী তাদের গ্রাহকেরা ব্যয় কমিয়েছেন গড়ে ১৩ টাকা। ২০২৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে গ্রাহকের মাসিক ব্যয় ছিল গড়ে ১৬১ টাকা, যা ২০২৪ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে হয়েছে ১৪৮ টাকা। রবির গ্রাহকপ্রতি রাজস্ব ১৪৭ টাকা থেকে কমে ১৪২ টাকা হয়েছে। মুঠোফোনে খরচ কমিয়েছেন গ্রাহকেরাদেশের অন্যতম শীর্ষ অপারেটর গ্রামীণফোনের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) সক্রিয় ডেটা ব্যবহারকারী ছিলেন ৪ কোটি ৯৩ লাখ, যা চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) কমে হয় ৪ কোটি ৮০ লাখ।
দেশের অন্যতম অপারেটর রবির আর্থিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে ফোরজি ডেটা ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৬৩ লাখ, যা দ্বিতীয় প্রান্তিকে ছিল ৩ কোটি ৭৬ লাখ।
মানুষ মুঠোফোনের ব্যয়ও কমিয়েছেন। গ্রামীণফোনের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী তাদের গ্রাহকেরা ব্যয় কমিয়েছেন গড়ে ১৩ টাকা। ২০২৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে গ্রাহকের মাসিক ব্যয় ছিল গড়ে ১৬১ টাকা, যা ২০২৪ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে হয়েছে ১৪৮ টাকা। রবির গ্রাহকপ্রতি রাজস্ব ১৪৭ টাকা থেকে কমে ১৪২ টাকা হয়েছে।
এত গ্রাহক কমে যাওয়াকে উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ডিজিটালাইজেশনের জন্য এটা ভালো লক্ষণ নয়। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা আছে, পাশাপাশি মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন কি না, এসব জানা দরকার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত ক পর স থ ত কম য় ছ ন গ র হক র র জন ত ক গ র হক ক ব যবহ র গত জ ন অন য য় সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জার্মানির ভিসার অপেক্ষায় দেশের ৮০ হাজার শিক্ষার্থী
জার্মানির ভিসার অপেক্ষায় রয়েছেন ৮০ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। ২০২৪ ও ২০২৫ সালের চলতি মাসের মধ্যে এসব ভিসা আবেদন করেন শিক্ষার্থীরা।
আজ বুধবার নিজের এক্স হ্যান্ডেলে এক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রোস্টার।
রাষ্ট্রদূত ট্রোস্টারের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে ১০ হাজার ৯৫৫ জন, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১০ হাজার ৬৩৫, তৃতীয় প্রান্তিকে ১৬ হাজার ৪৬৯ এবং শেষ প্রান্তিকে ১৪ হাজার ৪৭৬ জন শিক্ষার্থী জার্মানির ভিসার জন্য আবেদন করেন। এছাড়া ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত আবেদন জমা দিয়েছেন ৮ হাজার ৭৬২ জন শিক্ষার্থী। এ নিয়ে মোট আবেদনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৯ হাজার ৮৮০।