স্কুলছাত্র আয়াজ হত্যা: আসামিদের দণ্ড বহাল থাকবে কি না, জানা যাবে কাল
Published: 15th, March 2025 GMT
এক দশকের বেশি সময় আগে ঢাকার গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের ছাত্র আয়াজ হক হত্যা মামলায় আসামিদের দণ্ড বহাল থাকবে কি না, তা আগামীকাল রোববার জানা যেতে পারে। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিলের ওপর রোববার রায়ের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
আসামিদের করা আপিলের ওপর শুনানি শেষে গত ২৫ ফেব্রয়ারি বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের জন্য ১৬ মার্চ দিন ধার্য করেন। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, আসামিদের আপিল রায়ের জন্য বেঞ্চটির রোববারের কার্যতালিকায় ৯ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে।
এর আগে ওই মামলায় ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত রায় দেন। আসামিরা তখন সিটি কলেজের ছাত্র ছিলেন। রায়ে ইনজামামুল ইসলাম ওরফে জিসানকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তৌহিদুল ইসলাম, মশিউর রহমান, আবু সালেহ মো.
আদালতে জিসানের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বদিউজ্জামান তপাদার শুনানিতে ছিলেন।
আরও পড়ুনস্কুলছাত্র আয়াজ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে হাইকোর্টে তলব০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৪ সালের ৯ জুন সিটি কলেজের প্রীতি ফুটবল টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি ও খরচ বাবদ টাকা তোলার বিষয় নিয়ে আয়াজের বড় ভাই সিটি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আশদিন হকের সঙ্গে আসামিদের কথা-কাটাকাটি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে ওই দিন বিকেলে ধানমন্ডি থানার জিগাতলায় যাত্রীছাউনির কাছে আয়াজকে একা পেয়ে আসামিরা ছুরিকাঘাত করেন। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় তাঁর বাবা আইনজীবী শহীদুল হক ২০১৪ সালের ৯ জুন ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন। ২০১৫ সালের ১৩ মে ধানমন্ডি থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক এসআই সাহিদুল বিশ্বাস আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বোনকে ফ্ল্যাট দিতে সই জালিয়াতি করেন টিউলিপ
যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে তাঁর বোন আজমিনা সিদ্দিকের কাছে বাংলাদেশে সম্পত্তি হস্তান্তরের সময় জাল নোটারি নথি ব্যবহারের অভিযোগ এনেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির তদন্তে জানা গেছে, বোনের কাছে ঢাকায় ফ্ল্যাট হস্তান্তর করতে টিউলিপ জাল নোটারি পাবলিক ব্যবহার করেছেন। নোটারি পাবলিকে ব্যবহৃত আইনজীবীর সইটিও ছিল জাল।
গতকাল শুক্রবার যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। দুদকের দাবি, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে তাঁর রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে ঢাকার পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পের সরকারি প্লট নিজ ও তাঁর পরিবারের জন্য নিশ্চিত করেন। এর মাধ্যমে তিনি অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির বরাদ্দ থেকে উপকৃত হয়েছেন। সংস্থাটির আরও দাবি, টিউলিপ একটি ভুয়া নোটারি নথি ব্যবহার করে ঢাকার গুলশানের একটি ফ্ল্যাট তাঁর বোন আজমিনা সিদ্দিকের নামে হস্তান্তর করেছেন।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত অভিযোগপত্রে বলা হয়, দুদক এখন আদালতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করবে, যা প্রসিকিউশনের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকবে। অভিযোগ গ্রহণ হলে মামলাটি বিচারিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করবে।
এর আগে বিতর্কের মুখে গত জানুয়ারিতে টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ– তিনি বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগী ছিলেন। এ অভিযোগ প্রকাশিত হলে তিনি যুক্তরাজ্যে ব্যাপক রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়েন। টিউলিপ বরাবরই তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
ব্রিটিশ গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসন কর্তৃত্বপরায়ণতা জন্য পরিচিত, যা গত আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মুখে পতন ঘটে। এর পরই হাসিনা পরিবারের দুর্নীতি, ভূমি দখল ও অবৈধ আর্থিক লেনদেনের নানা অভিযোগ সামনে আসতে থাকে।
দুদক জানায়, তারা শেখ হাসিনার পরিবারের একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। সংস্থাটি আরও জানায়, এ অভিযোগের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অবৈধ ব্যবহারের তদন্ত আরও বিস্তৃত করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা সরকারি জমি বরাদ্দের জন্য নিয়ম ভেঙেছেন এবং প্রচলিত বরাদ্দ পদ্ধতিকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের জন্য জমি নিশ্চিত করেছেন।
কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেন, এটা তো কেবল ‘টিপ অব দ্য আইসবার্গ’। আরও অনেক অভিযোগ এখন দুদকের তদন্তাধীন, যা সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ পরিবারের বিশাল দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরবে। ঢাকার উপকণ্ঠে পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্প নিয়ে দুদক বলছে, এ প্রকল্প থেকে শেখ হাসিনা, তাঁর সন্তান ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের নামে অবৈধভাবে ৬০ কাঠা (প্রায় এক একর) সরকারি জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
তদন্তকারীদের অভিযোগ, ঢাকায় ইতোমধ্যে একটি সম্পত্তির মালিক হওয়ার কারণে টিউলিপ সিদ্দিক পূর্বাচল প্রকল্পের প্লট পাওয়ার যোগ্য ছিলেন না। তবে তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা নিয়ম পরিবর্তন ও বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে এ জমি বরাদ্দ নিয়েছেন। তারা সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নির্ধারিত জমি লটারির পদ্ধতি পাশ কাটিয়ে প্লটের মালিক হন।
দুর্নীতি দমন কমিশন বলছে, ঢাকার গুলশান এলাকায় একটি ফ্ল্যাট আজমিনা সিদ্দিকের নামে হস্তান্তর করেন টিউলিপ। এতে ভুয়া নোটারি নথি ব্যবহার করা হয়েছে। এ নোটারি নথিতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী সিরাজুল ইসলামের সিল ব্যবহার করা হয়। তিনি এ নথি সইয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, তিনি জানিয়েছেন, যদিও সিলটি আমার নামে, কিন্তু স্বাক্ষরটি আমার নয়। তিনি শুধু তাঁর চেম্বারে বসে নোটারি নথি অনুমোদন করেন। টিউলিপ কিংবা আজমিনা সিদ্দিকের সঙ্গে তার আগে কোনো পরিচিতি ছিল না।
বিতর্কিত নথিটি ২০১৫ সালের, যখন টিউলিপ সিদ্দিক লেবার পার্টির সংসদ সদস্য ছিলেন। তবে তখনও তিনি যুক্তরাজ্যের সরকারের মন্ত্রী হননি। দুদকের দাবি, প্রকৃত সম্পত্তির মালিকানা গোপন করা ছিল এ জালিয়াতির উদ্দেশ্য।