বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), জেল আপিল ও আপিলের ওপর আগামীকাল রোববার রায় ঘোষণা হতে পারে।

বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের রোববারের কার্যতালিকায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল ও জেল আপিল রায়ের জন্য রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, রাষ্ট্র বনাম মেহেদী হাসান রাসেল এবং অন্যান্য শিরোনামে রায়ের জন্য ডেথ রেফারেন্সটি কার্যতালিকায় রয়েছে। ডেথ রেফারেন্সের নিচে লেখা আংশিক শ্রুত; এর সঙ্গে আপিল ও জেল আপিলগুলো রয়েছে।

ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), জেল আপিল ও আপিলের ওপর শুনানি নিয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। এখন রায়ের জন্য আদালতের রোববারের কার্যতালিকায় এলো।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আবরারের বাবা চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘আসামিরা পরস্পর যোগসাজশ করে ছাত্রশিবিরের কর্মী সন্দেহে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে আবরারকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছেন।’ অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

ওই মামলায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের (ডেথ রেফারেন্স) জন্য বিচারিক আদালতের রায়সহ নথিপত্র ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এসে পৌঁছায়, যেটি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নথিভুক্ত হয়।

ফৌজদারি কোনো মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে কারও মৃত্যুদণ্ড হলে, তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যেটি ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা জেল আপিল ও নিয়মিত আপিল করতে পারেন। সাধারণত ডেথ রেফারেন্স ও এসব আপিলের ওপর একসঙ্গে হাইকোর্টে শুনানি হয়ে থাকে।

ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের পর কারাগারে থাকা দণ্ডিত ব্যক্তিরা কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জেল আপিল ও আপিল করেন। পৃথক জেল আপিল গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানির জন্য ২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি হাইকোর্টে ওঠে। সেদিন আদালত তা শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। পাশাপাশি নিয়মিত আপিল করেন কারাগারে থাকা দণ্ডিত আসামিরা। আসামিদের এই ডেথ রেফারেন্স, জেল আপিল ও আপিলের ওপর হাইকোর্টে একসঙ্গে শুনানি হয়।

গত বছরের ২৮ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে শুনানি শুরু করে। এরপর পেপারবুক থেকে উপস্থাপনের মাধ্যমে গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে পুনরায় শুনানি হয়। সেদিন থেকে মধ্যে এক দিন ছাড়া প্রতি কার্যদিবসে শুনানি হয়। সর্বশেষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শুনানি নিয়ে আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো.

আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার, খন্দকার বাহার রুমি, নূর মুহাম্মদ আজমী ও রাসেল আহম্মেদ এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল জব্বার জুয়েল, লাবনী আক্তার, তানভীর প্রধান ও সুমাইয়া বিনতে আজিজ শুনানিতে ছিলেন। আসামিপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু, মাসুদ হাসান চৌধুরী, মোহাম্মদ শিশির মনির প্রমুখ শুনানিতে অংশ নেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আবর র ফ হ দ র য় র জন য আবর র

এছাড়াও পড়ুন:

২০ বছর ধরে একসঙ্গে ইফতার

তখন সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়েছে। পশ্চিমের আকাশ থেকে রক্তিম আভা ছিটকে পড়েছে প্রকৃতিতে, গাছপালায়, ধানের খেতে। ধীরে আলো কমে আসছে। ধানখেতের ওপর অনেকটা নিচ দিয়ে সাদা বকের ঝাঁক রাত কাটাতে নিরাপদ ঠিকানার দিকে উড়ে চলছে। আর কিছু সময় পরই মাগরিবের আজান পড়বে। একটা শান্ত, কোলাহলহীন নিরিবিলি পরিবেশ চারদিকে। হঠাৎ সড়ক দিয়ে এক-দুটি গাড়ি ছুটে চলছে, শব্দ বলতে এটুকুই।

এ রকম একটি সময়ে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের উত্তরমুলাইম মল্লিকসরাই ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসাসংলগ্ন মাঠে চলছে ইফতারের আয়োজন। সারা দিনের রোজা শেষে একদল শিক্ষক-শিক্ষার্থী, পথচারী ও গ্রামের মানুষ মাটির আসনে ইফতারের জন্য সারিবদ্ধভাবে বসে প্রস্তুত হয়ে আছেন। প্রায় ২০ বছর ধরে এই স্থানটিতে এভাবেই ইফতারের আয়োজন করা হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ব্যক্তি এই ইফতারির ব্যবস্থা করেন।

গত বুধবার চাঁদনীঘাট-একাটুনা সড়ক ধরে কাউয়াদীঘি হাওর থেকে মৌলভীবাজার শহরে ফেরার পথে হঠাৎ করেই চোখে পড়ে একদল লোক উত্তরমুলাইম মল্লিকসরাই ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসাসংলগ্ন মাঠে সারি ধরে বসে আছেন। তাঁদের সবার সামনে ইফতারের প্যাকেট, পানির বোতল। তখন সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছে। সূর্য গোল হয়ে ঝুলে পড়েছে পশ্চিমের আকাশে। যেকোনো মুহূর্তে অন্ধকার নেমে আসবে। সবাই চুপচাপ বসে অপেক্ষা করছেন আজানের জন্য; আজান পড়লেই শুরু হবে ইফতার। স্থানীয় লোকজন জানালেন, রোজার প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত এভাবেই ওই স্থানটিতে ইফতারের সময় এ দৃশ্য দেখা যায়। প্রায় এক শ মানুষ একসঙ্গে বসে ইফতার করেন। সেদিন (গত বুধবার) ব্যক্তিগত উদ্যোগে কেউ একজন ইফতারি দিয়েছিলেন, তাই সবার সামনে ইফতারি প্যাকেট আকারে সাজিয়ে রাখা হয়েছিল।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে কিছু বেলা থাকতে উত্তরমুলাইম মল্লিকসরাই ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসাসংলগ্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ইফতারের প্রস্তুতি তখন শুরু হয়ে গেছে। কয়েকটি হাঁড়ি ও বৌলে আখনি, পেঁয়াজু ও ছোলা রাখা আছে। এ দিন ব্যক্তিগত আয়োজন ছিল না। উত্তরমুলাইম মল্লিকসরাই ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার সহযোগী প্রতিষ্ঠান উত্তরমুলাইম মল্লিকসরাই এতিমখানার উদ্যোগে ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। আগে থেকেই পাকা মাঠে কাপড়ের লম্বা চাদর বিছিয়ে রাখা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা ইফতারের প্লেট সেই চাদরের ওপর সাজিয়ে রাখছেন। ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে সমবেত হতে থাকেন মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, পথচারী ও গ্রামের লোকজন। পুরো প্রক্রিয়াটি বসে পর্যবেক্ষণ করছিলেন উত্তরমুলাইম মল্লিকসরাই এতিমখানা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. বাচ্চু মিয়াসহ অন্যরা।

উত্তরমুলাইম মল্লিকসরাই এতিমখানা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. বাচ্চু মিয়াসহ উপস্থিত লোকজন জানালেন, ১৯৭৩ সালে উত্তরমুলাইম ও মল্লিকসরাই এই দুই গ্রামের মানুষের উদ্যোগে উত্তরমুলাইম মল্লিকসরাই ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মাদ্রাসার সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ওই দুই গ্রামবাসীর উদ্যোগে ২০০৬ সালে গড়ে তোলা হয়েছে উত্তরমুলাইম মল্লিকসরাই এতিমখানা। এই এতিমখানা চালুর পর থেকেই প্রতি রমজান মাসে নিয়মিত ইফতারের আয়োজন করা হচ্ছে। এই ইফতারে মাদ্রাসা, এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও পথচারী, গ্রামের অনেক শামিল হয়ে থাকেন। সবাই মিলে শান্ত পরিবেশে ইফতার চলে। প্রতিদিন ৭০-৮০ থেকে প্রায় ১০০ জন মানুষ এখানে ইফতার করেন।

প্রতিদিনের ইফতারে আখনি, ছোলা ও পেঁয়াজু প্রায় নিয়মিত উপাদান। এর বাইরে ব্যক্তিগতভাবে যিনি ইফতারের আয়োজন করেন, তাঁদের কেউ কেউ বিভিন্ন ধরনের ফলসহ অন্য উপাদান দিয়ে থাকেন। উত্তরমুলাইম ও মল্লিকসরাই এই দুটি গ্রাম প্রবাসীবহুল। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই দুটি গ্রামের অনেক মানুষ বসবাস করেন। বেশির ভাগ প্রবাসীরাই ইফতারের ব্যবস্থা করেন। প্রবাসীরা তাঁদের দেশে অবস্থানরত আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে, অথবা নিজেরা সরাসরি আগেভাগে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। একদিনে যাতে একাধিকজন ইফতার না দেন, তাই আগেই জানিয়ে বুকিং দিতে হয়। মাঝে মধ্যে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইফতারের উদ্যোক্তা না থাকলে এতিমখানার আয়োজনে ইফতারের ব্যবস্থা হয়ে থাকে।

এতিমখানার বাবুর্চি আছেন, তিনিই ইফতারের রান্নাবান্না করেন। রোজার এই একটা মাস ঝড়-বাদল ব্যতীত খোলা আকাশের নিচে সবাই মিলে ইফতারে শামিল হয়ে থাকেন, মাটির আসনে বসে শান্ত পরিবেশে ইফতার করেন। সারিবদ্ধভাবে মাটির আসনে বসে এই ইফতারে কারও সঙ্গে কারও কোনো ভেদাভেদ থাকে না। প্রায় ২০ বছর ধরে একইধারায় ইফতারের এই আয়োজন চলে আসছে। এ ছাড়া অনেকে ইফতার ছাড়াও রাতের সেহরির আয়োজন করে থাকেন।

উত্তরমুলাইম মল্লিকসরাই ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল আবদুল হালিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে সবাই মিলে ইফতার করি। এর মধ্যে শিক্ষার্থী আছে, পথচারী আছেন। এলাকারও অনেকে আসেন। এখানে রোজার মাসে দারুল কিরাত প্রশিক্ষণ হয়ে থাকে। এ সময় (রোজার মাসে) স্থায়ী শিক্ষার্থী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রশিক্ষণ নিতে শিক্ষার্থীরা আসে। এলাকার অনেকে লন্ডন, আমেরিকায় থাকেন। কে কোনদিন ইফতারি দিবেন, আগে বুকিং দেন। অনেকে সাহ্‌রির খাবার দেন। প্রতিবছরই এখানে এরকম ইফতারি হয়ে থাকে।’

ততক্ষণে বেলা ফুরিয়ে গেছে। সূর্যের আলো নিভে যেতে শুরু করেছে। পাশের সবুজ ধানের মাঠ ছুঁয়ে উড়ে যাচ্ছে সাদা বকের ঝাঁক। কোলাহলমুক্ত সময়টি আরও শান্ত হয়ে উঠেছে। ইফতারের প্রস্তুতিও শেষ হয়ে গেছে। সবাই যার যার আসনে বসে আছেন। শুধু অপেক্ষা তখন আজানের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারীদের পোশাকে নজরদারি করতে মোবাইল অ্যাপ, সিসিটিভি, ড্রোন ব্যবহার করছে ইরান
  • বিশ্বরেকর্ডের পথে শাকিল
  • বাস্তবের জুটি আবার পর্দায়
  • ২০ বছর ধরে একসঙ্গে ইফতার
  • জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করতে যৌথ অভিযানে নামবে ডিএনসিসি-রাজউক
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শতাধিক পরীক্ষার্থী শাস্তি পাচ্ছেন
  • ফিলিপাইনে মাদকবিরোধী যুদ্ধের সব দায় নিলেন দুতার্তে
  • কাজ না করেই ১১ কর্মকর্তা কর্মচারী বেতন তোলেন
  • কাজ ছাড়াই বেতন তোলেন বেরোবির ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারী: দুদক