ওয়াশিংটনে নিযুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম রাসুলকে বহিষ্কার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার (১৫ মার্চ) মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্ট করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম রাসুলের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঘৃণা করার অভিযোগ এনেছেন।

পোস্টে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিখেছেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূতকে আমাদের মহান দেশে আর স্বাগত জানানো হবে না।”

আরো পড়ুন:

গাজার বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনা থেকে সরে আসার ইঙ্গিত ট্রাম্পের

যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় মস্কো যাচ্ছেন মার্কিন প্রতিনিধিরা

তিনি তাকে একজন ‘বর্ণবাদী রাজনীতিবিদ’ হিসাবে অভিহিত করে বলেছেন, “তার সঙ্গে আমাদের আলোচনা করার কিছু নেই।”

উল্লেখ্য, ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটছে। এই আবহে সেই দেশের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করা হলো। যা কি না মার্কিন ইতিহাসে খুব বিরল ঘটনা।

শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার এক্স পোস্টে, ডানপন্থি সংবাদমাধ্যম ব্রেইটবার্টের একটি প্রতিবেদন শেয়ার করেছেন, যেখানে ট্রাম্প প্রশাসন সম্পর্কে একটি অনলাইন বক্তৃতার সময় রাসুলের সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে রাসুল বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প যা শুরু করছেন তা হলো ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের ওপর আক্রমণ, যারা ক্ষমতায় আছেন, তাদের বিরুদ্ধে, দেশে.

.. এবং বিদেশে ক্ষমতার বিরুদ্ধে একটি আধিপত্যবাদকে একত্রিত করে।”

তিনি আরো বলেন, “ম্যাগা আন্দোলন ছিল খুব স্পষ্ট তথ্যের প্রতিক্রিয়া, যা দেখায় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক জনসংখ্যাগত পরিবর্তন হচ্ছে যেখানে ভোটারদের ... ৪৮ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ হয়ে উঠবে।”

এর জবাবে রুবিও তার পোস্টে রাসুলকে ‘পারসোনা নন গ্রাটা’ (অবাঞ্ছিত ব্যক্তি) হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এদিকে বহিষ্কার হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার দূত রসুল বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন দীর্ঘকাল। গাজায় যুদ্ধের জন্য ইসরায়েলি সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তিনি।

এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্যে মার্কিন সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। প্রমাণ ছাড়াই মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিযোগ ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের নতুন আইনে শ্বেতাঙ্গদের থেকে জমি কেড়ে নেওয়ার বিধান আছে। সেই আইনের পরিপ্রেক্ষিতেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে সাহায্য করা বন্ধ করেছিলেন ট্রাম্প। এরপর সম্প্রতি সেই একই আইনের কথা উল্লেখ করে ট্রাম্প দাবি করেন, দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ কৃষকরা চাইলে আমেরিকায় বসবাস করতে পারেন। শুধু তাই নয়, তাদের দ্রুত মার্কিন নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়েও আশ্বাস দেন ট্রাম্প। 

উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকায় জমির মালিকানা একটি বিতর্কিত বিষয়। বর্ণবাদের অবসানের তিন দশক পরেও বেশিরভাগ কৃষিজমি এখনও শ্বেতাঙ্গদের মালিকানাধীন এবং সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য সরকারের চাপের মধ্যে রয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা নতুন আইনকে ‘ভূমি অধিগ্রহণের অস্ত্র’ হিসেবে না দেখে, এটি একটি সাংবিধানিক অধিকার বলে দাবি করেছেন। তার মতে, “নতুন আইনটি মানুষের মধ্যে ভূমির অধিকার নিয়ে ন্যায্যতা আনার জন্য কাজ করছে।”

ঔপনিবেশিক ও বর্ণবাদী যুগের উত্তরাধিকারের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকায় জমির মালিকানার প্রশ্নটি রাজনৈতিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা কৃষ্ণাঙ্গদের তাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল এবং সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।

শ্বেতাঙ্গরা এখনও দক্ষিণ আফ্রিকার তিন-চতুর্থাংশ কৃষিজমির মালিক। ২০১৭ সালের সর্বশেষ ভূমি নিরীক্ষা অনুসারে, কৃষ্ণাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানরা দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ, কিন্তু তারা মাত্র ৪ শতাংশ জমির মালিক।

ঢাকা/ফিরোজ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম র ক ন পরর ষ ট র র জন য উল ল খ ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

রাশিয়া সফরে ট্রাম্পের দূত, ইউরোপের উদ্বেগ

ইউক্রেন সংকট ঘিরে বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক ও সামরিক তৎপরতা আরও জোরদার হয়েছে। যুক্তরাজ্য ও জার্মানির উদ্যোগে শুক্রবার ব্রাসেলসে ৫০টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ইউক্রেন প্রতিরক্ষা যোগাযোগ গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ এক বৈঠক। ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি জানিয়েছেন, এ বৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর চাপ আরও বাড়ানো।

বৈঠকে ইউক্রেনকে অতিরিক্ত ৫৮ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এই প্যাকেজের আওতায় রাডার সিস্টেম, অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মাইন এবং বিপুল পরিমাণ ড্রোন সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়া ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা সামরিক যান ও সরঞ্জাম মেরামতেও ব্যয় করা হবে এ অর্থের একটি অংশ।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ শুক্রবার রাশিয়ায় পৌঁছেছেন। ক্রেমলিন জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হতে পারে। এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে তা হবে উইটকফ ও পুতিনের মধ্যে তৃতীয় বৈঠক। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে উইটকফ পুতিনের সঙ্গে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় বৈঠক করে আমেরিকান শিক্ষক মার্ক ফোগেলকে মুক্ত করিয়েছিলেন। রাশিয়া সফরের আগে তিনি ওয়াশিংটনে রুশ আলোচক কিরিল দিমিত্রিয়েভের সঙ্গে বৈঠক করেন। দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ‘একটি সমঝোতা’ হয়েছে বলে জানা গেছে।

তবে এই আলোচনার মধ্যেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের মানবাধিকার কমিশনার দিমিত্র লুবিনেৎস জানিয়েছেন, রুশ সেনারা ১৩ মার্চ জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের পিয়াতিখাতকি গ্রামে চারজন নিরস্ত্র ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দিকে গুলি করে হত্যা করেছে। ইউক্রেন ও রাশিয়ার ড্রোন ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। লুবিনেৎস আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও জাতিসংঘের কাছে বিষয়টি তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, বরং রাশিয়ার একটি প্রাতিষ্ঠানিক নীতি, যা সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উৎসাহিত হচ্ছে।’ এ ঘটনায় যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু হয়েছে।

এরই মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচিত একটি বন্দিবিনিময় হয়েছে। বিশ্বাসঘাতকতার মামলায় রাশিয়ায় কারাবন্দি আমেরিকান নাগরিক ক্সেনিয়া কারেলিনাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র আর্থার পেত্রভ নামে এক রুশ-জার্মান নাগরিককে রাশিয়ার হাতে তুলে দিয়েছে। এই বিনিময় প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতা করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। কারেলিনার বাগদত্তা ক্রিস ভ্যান হেরডেন এই মুক্তির জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তবে আরও কয়েকজন মার্কিন নাগরিক এখনও রাশিয়ার হেফাজতে আছেন, যাদের মুক্তির জন্য চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের অংশ হিসেবে সম্প্রতি তুরস্ক ও ইস্তাম্বুলে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় কূটনৈতিক সম্পত্তি ফেরত দেওয়া, নিষেধাজ্ঞা শিথিলকরণ ও সরাসরি বিমান চলাচল শুরু করার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধক্ষেত্র ও কূটনৈতিক পরিসরে এই নতুন আলোচনাপ্রবাহ ইউক্রেন সংকটের সমাধানের পথ তৈরি করতে পারে, তবে এখনও বড় ধরনের অগ্রগতি অনিশ্চিত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ক্ষমতায়ন মানে অংশগ্রহণ নয় অংশীদারিত্ব কোথায়?
  • নববর্ষের সাতসকাল
  • আমার দেখা সাংগ্রাই
  • মায়ামির মায়া ছাড়তে পারছেন না মেসি
  • অবিরাম কাজ করেও যারা কোনো নাম-দাম পান না
  • চেন্নাই প্লে’অফ খেলবে, দাবি ব্যাটিং কোচের
  • এখনও পুরনো যেসব রীতিতে চৈত্রসংক্রান্তি পালন করেন রংপুরের মানুষ
  • এখনও পুরনো রীতিতে চৈত্রসংক্রান্তি পালন করেন রংপুরের মানুষ
  • রাশিয়া সফরে ট্রাম্পের দূত, ইউরোপের উদ্বেগ