এখন দল গোছানো ও নিবন্ধনের শর্তপূরণে মনোযোগ এনসিপির
Published: 15th, March 2025 GMT
আগামী নির্বাচনে সব আসনেই প্রার্থী দিতে চায় নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ লক্ষ্য সামনে রেখে দল গোছানো ও নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য শর্তপূরণে মনোযোগ দিয়েছে এর নীতিনির্ধারকেরা। সেই লক্ষ্যে একটি বিশেষ টিম গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।
জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতাদের গড়া এনসিপি আত্মপ্রকাশ করে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। এরই মধ্যে নতুন দল নিবন্ধনের আবেদন আহ্বান করে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এনসিপির বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, আগামী দুই মাসের মধ্যে দেশের অধিকাংশ জেলা, উপজেলা–থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দলীয় কমিটি গঠনের লক্ষ্য রয়েছে দলটির। যদিও ইসির গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী দল নিবন্ধনের জন্য ২০ এপ্রিলের মধ্যে আবেদন করতে হবে।
এনসিপি কোনো নির্বাচনী জোটে যাবে, নাকি এককভাবেই নির্বাচনে অংশ নেবে, নিবন্ধনের পর সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে দলটির উচ্চপর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে।দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, এই সময়ের মধ্যে শর্ত পূরণের চেষ্টা আছে তাদের। ইসিতে নিবন্ধিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক দলীয় কার্যালয় স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক কাজের প্রস্তুতি চলছে। রমজান মাসে এ ক্ষেত্রে অগ্রগতির সম্ভাবনা কম। এমতাবস্থায় নিবন্ধন আবেদনের সময় বাড়াতে ইসির কাছে আবেদন করতে পারে এনসিপি। তবে দল গোছাতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা তৃণমূল পর্যায়ে যোগাযোগ শুরু করেছেন। ঈদুল ফিতরের পর দল গোছানোর কাজ পুরোদমে শুরু হবে।
আরও পড়ুনজাতীয় নাগরিক পার্টির স্লোগান কি তবে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, নেপথ্যে কী০২ মার্চ ২০২৫এনসিপি কোনো নির্বাচনী জোটে যাবে, নাকি এককভাবেই নির্বাচনে অংশ নেবে, নিবন্ধনের পর সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে দলটির উচ্চপর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে।
নিবন্ধনের প্রস্তুতির জন্য একটি বিশেষ টিম গঠনের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব।
আর অন্তত ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকার থানায় দলীয় কার্যালয় থাকতে হবে, যার প্রতিটিতে সদস্য হিসেবে কমপক্ষে ২০০ জন ভোটার থাকবেন।কোনো দল দলীয় প্রতীক নিয়ে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইলে প্রথমে নিবন্ধনের জন্য ইসিতে আবেদন করতে হয়। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ অনুযায়ী, কোনো দল নিবন্ধন পেতে চাইলে তিনটি শর্তের যেকোনো একটি পূরণ করতে হবে: ১.
পাশাপাশি দলের গঠনতন্ত্রে কিছু বিধান স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হয়। যেমন কেন্দ্রীয়সহ দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ পদ নারী সদস্যদের জন্য সংরক্ষণ করা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বা ছাত্র এবং আর্থিক, বাণিজ্যিক বা শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা সংস্থার কর্মচারী বা শ্রমিক অথবা অন্য কোনো পেশার সদস্যদের সমন্বয়ে সহযোগী বা অঙ্গসংগঠন না থাকা।
তবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য কিছু শর্ত শিথিলের প্রস্তাব করেছে। তাদের প্রস্তাব হলো, নিবন্ধন পেতে ১০ শতাংশ জেলা ও ৫ শতাংশ উপজেলা বা থানায় দলের অফিস এবং দলটির কমপক্ষে পাঁচ হাজার সদস্য থাকতে হবে। যদিও এসব প্রস্তাব এখনো আইন হিসেবে কার্যকর হয়নি। অর্থাৎ নিবন্ধনের জন্য এখন পর্যন্ত আগের আইনই বহাল রয়েছে।
আপাতত কেন্দ্রীয় কার্যালয় খোঁজা হচ্ছে। এ ছাড়া দলের গঠনতন্ত্রও এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ঈদের আগে দলের দ্বিতীয় সাধারণ সভা হতে পারে। সেখানে এসব বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত হতে পারে।ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ ১০ মার্চ সাংবাদিকদের বলেছেন, নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে যাঁরা নিবন্ধিত হতে চান, তাঁরা আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত নির্ধারিত শর্ত পূরণ করে ইসির কাছে আবেদন করতে পারবেন। ইসি সেই আবেদন পর্যালোচনা করবে এবং নিবন্ধনের জন্য পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, তা সম্পন্ন করবে।
এনসিপির প্রথম সাধারণ সভা হয় গত ৭ মার্চ। সভা শেষে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, তাঁরা এখন দলের নিবন্ধনের শর্ত পূরণ মনোযোগী হচ্ছেন। তৃণমূলে সাংগঠনিক বিস্তার কার্যক্রম রমজান মাসে কিছুটা শুরু করেছেন, রোজার পর এটা পুরোদমে শুরু করা হবে। তার আগে ৪ মার্চ এনসিপির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, চলতি মাসের মধ্যে দলের গঠনতন্ত্র প্রণয়নের কাজ শুরু করা হবে।
তবে বর্তমান প্রক্রিয়ায়ও যদি এনসিপি ঢোকে, সারা দেশে সাড়ে চার শর বেশি নাগরিক কমিটি আছে। এটাকে কেবল কনভার্ট করলেই (দলীয় কমিটতে রূপান্তর) নিবন্ধনের শর্ত পূরণ হয়ে যায়। জেলা কার্যালয়, উপজেলা কার্যালয়ের যে শর্ত রয়েছে, সেগুলো পূরণ করা আমাদের জন্য কঠিন হবে না, ইনশাআল্লাহ।এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশিরএনসিপির দায়িত্বশীল দুজন নেতা গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় কার্যালয় স্থাপনসহ নিবন্ধনের শর্তের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এনসিপির ফেসবুক গ্রুপে বিভিন্ন পরামর্শ আসছে। তবে কার্যালয়ের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আপাতত কেন্দ্রীয় কার্যালয় খোঁজা হচ্ছে। এ ছাড়া দলের গঠনতন্ত্রও এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ঈদের আগে দলের দ্বিতীয় সাধারণ সভা হতে পারে। সেখানে এসব বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত হতে পারে।
নিবন্ধনের জন্য এনসিপি কোনো শর্ত রাখার পক্ষে নয় বলে জানান এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তবে বর্তমান প্রক্রিয়ায়ও যদি এনসিপি ঢোকে, সারা দেশে সাড়ে চার শর বেশি নাগরিক কমিটি আছে। এটাকে কেবল কনভার্ট করলেই (দলীয় কমিটতে রূপান্তর) নিবন্ধনের শর্ত পূরণ হয়ে যায়। জেলা কার্যালয়, উপজেলা কার্যালয়ের যে শর্ত রয়েছে, সেগুলো পূরণ করা আমাদের জন্য কঠিন হবে না, ইনশাআল্লাহ।’
এনসিপির দায়িত্বশীল আরেকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, আগামী সপ্তাহে এনসিপির একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনে যাবে। কমিশনের কাছে নিবন্ধনের আবেদন গ্রহণের সময় বাড়ানোর আবেদন করা হবে। মে-জুন পর্যন্ত সময় চাওয়া হতে পারে। পাশাপাশি সংস্কার কমিশনের সুপারিশও তুলে ধরা হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এনস প র কমপক ষ দল গ ছ ন বন ধ ন পর য পর য য় য় কম ট উপজ ল দলট র সদস য প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুরে কৃষকের জন্য বরাদ্দ সার বিক্রির চেষ্টা
ফরিদপুরে বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে বরাদ্দ করা সরকারি সার বিক্রির চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এ সময় স্থানীয়রা হাতেনাতে আটক করলে চেয়াম্যানের এক সহযোগী ও ভ্যানচালক সার ফেলে পালিয়ে যান। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ও কৃষি কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল থেকে ৩ বস্তা ইউরিয়া সার ও ৩ বস্তা ডিএপি সার জব্দ করে নিয়ে যায়।
সোমবার দুপুর ৩টার দিকে ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের কানাইপুর বাজারের খুচরা সার বিক্রেতা মনোরমা এন্টারপ্রাইজের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ওই দোকানে সারগুলো বিক্রির চেষ্টা করা হয়েছিল।
স্থানীয় বাবু সরদার নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ইউনুস নামে এক ব্যক্তি ভ্যানে করে সারগুলো নিয়ে আসেন। তিনি মনোরমা এন্টারপ্রাইজের সন্টুর দোকানে বিক্রির চেষ্টা করেন। এ সময় দোকানদার সার কিনতে অস্বীকার করলে আমি গিয়ে দেখি সরকারি সার। এ সময় ইউনুস দৌড়ে পালিয়ে যান। আমি পুলিশকে খবর দিই। পরে পুলিশ ও কৃষি কর্মকর্তারা সার নিয়ে যান।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি জেলা পাট অধিদপ্তর কর্তৃক প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে কানাইপুর ইউনিয়নে ২৪০ জন কৃষকের মাঝে বিতরণের তালিকা করা হয়। সম্প্রতি বরাদ্দকৃত সার ইউনিয়ন পরিষদে পাঠানো হয়। তবে এসব সার বিতরণ করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে কিছুই জানেন না সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা লতিফা আক্তার।
এসব সার বিতরণের দায়িত্বরত কর্মকর্তা জেলা পাট অধিদপ্তরের উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম দাবি করেন, ৬ এপ্রিল কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ২৪০ জনের মধ্যে ২০০ জনের মাঝে সার বিতরণ করা হয়েছে। প্রত্যেক কৃষকের মাঝে ৬ কেজি ইউরিয়া, ৩ টিএসপি, ৩ কেজি ডিএপি সার বিতরণ করা হয়। এছাড়া বাকি ৪০ জন কৃষক না আসায় সারগুলো পরিষদে রাখা হয়। পরবর্তীতে সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মো. আলতাভ হুসাইন বলেন, আজ বন্ধের দিন থাকায় বলা যাচ্ছে না, আমার পরিষদের সার কিনা। কারণ, চাবি রয়েছে সচিবের কাছে। পরিষদ খুললে গোডাউন দেখে বলতে পারব।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে কৃষি কর্মকর্তা ও প্রশাসনকে পাঠানো হয়েছে। তারা সারগুলো জব্দ করে নিয়ে এসেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।