দুর্বল ব্যাংকের অবসায়নের পথ এবার সহজ হচ্ছে
Published: 15th, March 2025 GMT
দুর্বল কোনো ব্যাংকের পরিচালনা বা অবসায়নের পথ সহজ করতে নতুন একটি আইন করছে অন্তর্বর্তী সরকার। সংসদ না থাকায় এটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে। সরকারের চিন্তা আগামী জুলাই মাসের মধ্যে অধ্যাদেশটি জারি করা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অধ্যাদেশের খসড়া ২ মার্চ ওয়েবসাইটে দিয়ে মতামত চেয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এতে আশানুরূপ সাড়া পড়েনি, তবে কিছু মতামত পাওয়া গেছে। আগামী সোমবার অংশীজনদের নিয়ে এ ব্যাপারে বৈঠক করবেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক। এ বৈঠকের পরই খসড়াটি চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার কথা।
কিছু ব্যাংকের অস্তিত্ব হুমকি বা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। মূলধন বা তারল্য অথবা দেউলিয়াত্বের কারণে এ ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে আমানতকারীদের স্বার্থের সুরক্ষা হবে তাহলে কীভাবে? এ ব্যাপারে তখন এগিয়ে আসতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। অধ্যাদেশ জারির উদ্দেশ্য হিসেবে এ কথাগুলো বলা হয়েছে।
বর্তমানে দুর্বল কোনো ব্যাংকের পরিচালনা বা অবসায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার মতো যথেষ্ট ক্ষমতা নেই। এ ক্ষমতা অর্জনের জন্যই প্রণয়ন করা হচ্ছে নতুন ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫। অধ্যাদেশটি পাস হলে এর অধীন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটি আলাদা বিভাগ গঠন করবে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ১৭ মার্চ অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠকের পর খসড়াটি চূড়ান্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর তা যাবে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের জন্য। উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন করলে নেওয়া হবে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং। এরপর তা অধ্যাদেশ আকারে জারি হবে।
এ অধ্যাদেশের ফলে কী লাভ হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে নাজমা মোবারেক বলেন, শুভ উদ্দেশ্যেই এ অধ্যাদেশ প্রণয়নের কাজ চলছে। এর অংশ হিসেবে দুর্বল ব্যাংকগুলোর সম্পদের মান পুনর্মূল্যায়ন করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক যদি মনে করে, কোনো ব্যাংক আর কার্যকর নয় বা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা নেই, দেউলিয়া হয়ে গেছে বা দেউলিয়া হওয়ার পথে রয়েছে, আমানতকারীদের পাওনা দিতে পারছে না বা না দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তখন এ ধরনের ব্যাংককে ভালো করার স্বার্থে নতুন অধ্যাদেশ অনুসারে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংকের সুবিধাভোগী মালিক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যাংকের সম্পদ বা তহবিল নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করলে এবং প্রতারণামূলকভাবে অন্যের স্বার্থে ব্যবহার করলেও বাংলাদেশ ব্যাংক রেজল্যুশন করার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। কোনো ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংক অস্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে, বিদ্যমান শেয়ার ধারক বা নতুন শেয়ার ধারকদের মাধ্যমে মূলধন বাড়াতে পারবে এবং ব্যাংকের শেয়ার, সম্পদ ও দায় তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে পারবে।
ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম ও কার্যকর পরিচালনা অব্যাহত রাখতে এক বা একাধিক ব্রিজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা এবং পরে সেগুলোকে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রিও করতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। নাইজেরিয়াতে ২০১১ সালে তিনটি ব্যাংক ব্যর্থ হলে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে ব্রিজ ব্যাংক স্থাপন করা হয়। ব্রিজ ব্যাংকের মাধ্যমে ওই ব্যাংকগুলোর সম্পত্তি ও দায় গ্রহণ করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রেও এ ধরনের উদাহরণ রয়েছে বলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
অধ্যাদেশ হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বোচ্চ দুই কার্যদিবসের জন্য কোনো দুর্বল ব্যাংকের সব ধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করতে পারবে। আর আংশিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করতে পারবে তিন মাসের জন্য।
ব্যাংক খাত সংকট ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল নামে একটি আন্তপ্রাতিষ্ঠানিক সংস্থা গঠনের কথা বলা হয়েছে অধ্যাদেশের খসড়ায়। এ কাউন্সিল সংকট ব্যবস্থাপনা কৌশল এবং আপৎকালীন বিকল্প পরিকল্পনা তৈরি করবে। কাউন্সিলের প্রধান হবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। অন্যদের মধ্যে একজন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান, অন্যজন অর্থসচিব। এ ছাড়া থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের তিনজন ডেপুটি গভর্নর।
খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংক সে ব্যাংকের অবসায়নের জন্য আদালতে আবেদন করবে। আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোনীত কাউকে অবসায়ক নিয়োগ দেবে। অবসায়ন আদেশ কার্যকর হওয়ার পর কোনো ব্যাংকের দায়ের ওপর সুদ বা অন্য কোনো মাশুল কার্যকর হবে না।
ব্যাংক স্বেচ্ছায় অবসায়নের প্রক্রিয়ায় যেতে পারবে বলেও খসড়ায় বলা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে না। লাইসেন্স প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার সাত কর্মদিবসের মধ্যে আমানত এবং দুই মাসের মধ্যে অন্যান্য দায় পরিশোধ করতে হবে।
যেসব ব্যক্তির কর্ম, নিষ্ক্রিয়তা ও সিদ্ধান্তের কারণে কোনো ব্যাংক ব্যর্থ হয় এবং ব্যাংকের ক্ষতি হয়, সে জন্য তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন। অধ্যাদেশের আওতায় জারি হওয়া বিধিবিধান অমান্যকারীরা ৫০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেছেন, সংকটে জর্জরিত ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণ এবং অধিগ্রহণ, পুনঃমূলধনীকরণে আইনগত প্রয়োগের জন্য ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ করা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য ব ক র যকর ক র পর দ র বল খসড় য় র খসড় হওয় র ধ করত ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
পাকিস্তান থেকে এলো ২৬ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল
পাকিস্তান থেকে ২৬ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন আতপ চাল নিয়ে একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। জাহাজে আসা চালের নমুনা পরীক্ষা শেষে সেগুলো খালাসের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
শনিবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইমদাদ ইসলামের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ৩১ জানুয়ারি সম্পাদিত
জি টু জি চুক্তির আওতায় পাকিস্তান থেকে ২৬ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন আতপ চাল নিয়ে এমভি মরিয়ম জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে।