ডায়াবেটিস রোগীরা রোজা করবে কিনা এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগেন অনেকেই। কিংবা রোজা রাখলেও কি কি নিয়ম মানবেন এই বিষয়ে অনেকেই পুরোপুরি নির্দেশনা জানেন না। রোজা রেখে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয় কী, এ বিষয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ডা. মাসুদা পারভীন মিনু।

তিনি বলেন, ‘‘ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রোজা রাখা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, যা সঠিক পরিকল্পনা ও সতর্কতার সঙ্গে নিতে হবে। রোজার সময় দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকলে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা অতিরিক্ত কমে (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) বা বেড়ে (হাইপারগ্লাইসেমিয়া) যেতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে রোজা পালন করা উচিত।’’

মাসুদা পারভীন মিনুর পরামর্শ—
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি: রোজা রাখার উপযুক্ত কিনা তা নির্ধারণ করতে এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট বা ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ওষুধ ও ইনসুলিনের সময়সূচি ঠিক করা: রোজার সময় ওষুধ ও ইনসুলিনের ডোজ পরিবর্তন করা লাগতে পারে।
খাদ্যাভ্যাস পরিকল্পনা: সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্যকর ইফতার ও সেহরির পরিকল্পনা করা দরকার।
ইনসুলিন গ্রহণ ও ওষুধ ব্যবস্থাপনা: যারা ইনসুলিন নেন, তাদের ইনসুলিনের ডোজ ও সময় চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী সামঞ্জস্য করতে হবে।

আরো পড়ুন:

রোজা রেখে ইনহেলার ব্যবহার করা যাবে?

সংকট নিরসনে বিশেষ বিসিএসে নিয়োগ হবে ২ হাজার চিকিৎসক

সেহরির আগে: দীর্ঘমেয়াদি (Long-acting) ইনসুলিন নেওয়া যেতে পারে।
ইফতারের আগে বা পরে: স্বল্পমেয়াদি (Short-acting) ইনসুলিন প্রয়োজন হতে পারে।

যারা ওষুধ সেবন করেন, তারা মেটফরমিন ও সালফোনিলুরিয়া জাতীয় ওষুধের ডোজ পরিবর্তন করতে পারেন চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী।

খাবার ও জীবনধারা: সেহরি ও ইফতারে কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। যেমন শস্যজাতীয় খাবার, ডাল, শাকসবজি, কম মিষ্টিযুক্ত ফল।

পর্যাপ্ত পানি পান করুন: সেহরি ও ইফতারের মাঝে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা ভালো।

আরও যা মানতে হবে:  অতিরিক্ত মিষ্টি ও ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন। সুস্থ্যতার জন্য হালকা ব্যায়াম করুন, তবে অতিরিক্ত কসরত এড়িয়ে চলুন।

রক্তের সুগার পর্যবেক্ষণ:

রোজার সময় দিনে কয়েকবার গ্লুকোজ পরীক্ষা করুন।
শর্করা লেভেল ৪.

৫ mmol/L হলে প্রতি ঘণ্টায় পরীক্ষা করতে হবে।যদি রক্তে শর্করা ৩.৯ mmol/L (৭০ mg/dL) এর নিচে নেমে যায়, বা ১৬.৭ mmol/L (৩০০ mg/dL) এর বেশি হয়, তবে রোজা ভেঙে ফেলা জরুরি।

উল্লেখ্য, সঠিক প্রস্তুতি ও নিয়ম মেনে চললে ডায়াবেটিস রোগীরাও সুস্থভাবে রোজা রাখতে পারেন। তবে যাদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, কিডনি সমস্যা বা জটিলতা রয়েছে, তাদের জন্য রোজা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

ঢাকা/লিপি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ ক ৎসক র ইনস ল ন র সময় ইফত র

এছাড়াও পড়ুন:

ঠাকুরগাঁওয়ে কালবৈশাখীর তাণ্ডব, ফসল ক্ষতিগ্রস্ত 

ঠাকুরগাঁওয়ে কালবৈশাখীর ঝড়ের তাণ্ডব ও শিলাবৃষ্টিতে বাড়িঘর এবং ৬৫ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

রবিবার (১৩ এপ্রিল) রাত ৩টার দিকে কালবৈশাখীর ঝড় জেলায় আঘাত হানে। ঘণ্টাব্যাপী প্রবল বাতাস ও শিলাবৃষ্টিতে বাড়িঘরে তেমন ক্ষতি না হলেও ফসলের ক্ষেত লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। 

বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠ সরেজমিন দেখা যায়, এই ঝড়ে বিশেষ করে ভুট্টা, পেঁয়াজ বীজ, আম, লিচু, পেঁপে, কলা, মরিচ, বিভিন্ন ধরনের সবজি ক্ষতি হয়েছে।

আরো পড়ুন:

‘সয়াল্যান্ডে’ ৪০০ কোটি টাকার ফলনের আশা

হবিগঞ্জের পাহাড়ে সজনের ফলনে চাষিরা লাভবান 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যমতে, ঠাকুরগাঁওয়ের পাঁচটি উপজেলা মিলে ৪৬ হাজার হেক্টর ভুট্টা, ৫৪৭ হেক্টর পেঁয়াজ বীজ, সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে আম ও লিচু চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৬৫ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

সদর উপজেলা আকচা মুন্সীপাড়া গ্রামের কৃষক মো. রবিউল ইসলাম। এক বছর আগে ১০ বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করেছিলেন। সব কিছু মিলিয়ে তার জমিতে গাছ ছিল ৪ হাজার। রাতে কালবৈশাখীর আঘাতে বাগানের প্রায় সব গাছ ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। বিশেষ করে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় কালো সোনা খ্যাত পেঁয়াজ বীজ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ভুট্টা ও মরিচ ক্ষেত ভেঙে মাটিতে লুটিয়ে গেছে। আম ও লিচুর গুটি ঝরে পড়েছে। এমন অবস্থা কৃষকরা উদ্বিগ্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কৃষক মো. রবিউল ইসলাম জানান, তার পেঁপের বাগানে ৪ হাজার গাছ ছিল। প্রতিটি গাছে বাঁশের খুঁটি দেওয়া থাকা সত্ত্বেও ঝড়ে বাগানের সাড়ে তিন হাজার গাছ ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। তার আশা ছিল, বাগান থেকে আরও ১০-১২ লাখ টাকা আয় করার কিন্তু সেই আশা ও স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। 

বেলাল হোসেন বলেন, রাত ৩টা দিকে প্রচণ্ড ঝড় ও বাতাসসহ শিলাবৃষ্টিতে অনেকের বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে। তার থেকেও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। আম, লিচু থেকে শুরু করে ভুট্টার অনেক ক্ষতি হয়েছে।

মশিউর রহমান নামে আম ও লিচু চাষি বলেন, রাতে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে আম ও লিচু ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা অকল্পনীয়।   

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মাজেদুল ইসলাম জানান, বৃষ্টি ফসলের জন্য উপকারী হলেও ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে আর ৫-৬ দিন গেলে পেঁয়াজ বীজ কৃষকরা মাঠ থেকে তুলতে পারতেন বা বীজগুলো পরিপক্ক হতো। কিন্তু এমন সময় ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে পেঁয়াজ গাছ ভেঙে পড়ে গেছে। এমন অবস্থা হয়েছে পেঁপে ও ভুট্টার ক্ষেত্রের। যদিও ভেঙে পড়া ভুট্টার গাছগুলো কৃষকেরা কর্তন করে গোখাদ্য হিসেবে বিক্রি করতে পারবে।

তিনি আরো জানান, ঝড়ে বিভিন্ন ফসলের ৬৫ হেক্টর জমি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কোন ফসল কত পরিমাণে ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। আগামী ৪-৫ দিনের মধ্যে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের ক্ষতিটা এবং কীভাবে কমানো যায়, সেই বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হবে। 

ঢাকা/হিমেল/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ